বিদ্যুৎ চমকানোর আলো চলে যেতেই সব অন্ধকার, আর কিছুই দেখা গেল না। ফারাবী সাবিহার কানের কাছে মুখ নিল এবং বলল, তুমি থাকো, আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে আনছি। ফারাবীর পদশব্দ শুনতে পেল সাবিহা। এখনো শুয়ে আছে বিছানায়, ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। ফারাবী একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে আনলো। সাবিহা বিছানায় শুয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ফারাবীর দিকে।
- কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ফারাবী বলল
- একটু আগে, কি হয়েছিল তোমার? সাবিহা বলল
- কখন?
- মাত্রই তো কেমন যেন করছিলে।
- কোথায় আমি তো ঠিক আছি।
ফারাবীকে ভালো করে লক্ষ্য করলো সাবিহা, সে আগের মতোই স্বাভাবিক। তাহলে কি সাবিহার মনের সন্দেহ ছিল! তবে, সে তো নিজের চোখে দেখেছিল ফারাবীকে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যেতে। এমন সময় কারেন্ট চলে এলো। এগিয়ে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল ফারাবী। লাইটের আলোয় কোনো প্রকার অসস্থী ভাব দেখা গেল না তার মাঝে। যেমনটা লাইট জ্বালানোর সময় দেখা গিয়েছিল।
পরদিন সকালে। একটা হলদে পাখি এসে জানালার পাশের টেবিলে রাখা ফারাবী ডায়েরিটির উপর বসলো, বাহিরে পাখিদের অসংখ্য কিচিরমিচির। ফারাবীর মুখে রোদ পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল ওর। মৃদু বাতাসে টেবিলে রাখা ডায়েরিটির পৃষ্ঠাগুলো উড়তেই ভয় পেলে ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে চলে গেল হলুদ পাখিটি। ডায়েরিটি বন্ধ করে ফারাবী তার ড্রোয়ারে ঢুকালো। ফ্রেস হতে চলে গেল ওয়াসরুমে। দরজা বন্ধ করে টেপ ছাড়লো, ঠান্ডা পানিতে হাত ধুয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই চোখ বড় হয়ে আসে তার! ভয়ে দেয়ালের উপর ছিটকে পড়লো। তার মুখে রক্ত! দেখে মনে হচ্ছে যেন কাউকে সে চিবিয়ে খেয়েছে। আঙুল দিয়ে দেখে সে, সামান্য শুকিয়ে এসেছে রক্তগুলো। তাড়াহুড়ো করে টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে ওয়াসরুম থেকে বের হয় ফারাবী। বের হয়েই ইউনিফোর্ম পড়তে শুরু করলো। ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে চাচ্ছে না। গতরাতের কথা মনে পড়ে তার, সাবিহা চিৎকার করে বিছানার উপর পড়েছিল। এটুকুই মনে আছে তার, তবে কি দেখে ভয় পেয়েছিল! মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠে। এমন সময় ভেতর থেকে সাবিহার ডাক শোনা গেল। ফারাবী দেখে যাও নিউজে কি বলছে!
- হ্যাঁ আসছি।
ইউনিফোর্মের বোতাম লাগাতে লাগাতে ড্রইং রুমে সাবিহার পেছনে এসে দাঁড়ায় ফারাবী। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ বলছে,
প্রতিদিনের মতো আজও একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তবে এবার খ্রিষ্ট পাড়ায় নয় বরং হয়েছে আমাদের কাছেই সাভার সেনানিবাসের ভেতর। পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে পুরোপুরি ভাবে কাল্পনিক নয় আবার পুরোপুরি ভাবে বাস্তবিকও নয়। কিছু কিছু অদ্ভুত ঘটনার কারণে এদের অস্থিত্বকে স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করা যায়না। তেমনই অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই পৃথিবীতে সত্যিই ভ্যাম্পায়ারদের অস্থিত্ব রয়েছে। এতদিন যারা এই মৃত্যুগুলো দেখে সিরিয়াল কিলিং ভেবেছিল তাদের ধারণা ভুল। এসব মৃত্যুর পেছনে রয়েছে এক ভয়ানক ভ্যাম্পায়ারের হাত, এবং আজ তা হয়েছে সাভার সেনানিবাসে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভ্যাম্পায়াররা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। জনসাধারণদের ঘরের বাহিরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
- তার মানে, এবার আমাদের শহরেও এসএ পড়েছে! ফারাবী বলল
- তুমি না বললে এখানে আসতে পারবে না? সাবিহা বলল
- বলেছিলাম তো কিন্তু কিভাবে কি বুঝতে পারছি না।
- প্লিজ বাহিরে যেও না।
- কি বলো! আমাকে যেতেই হবে। আমি গিয়ে দেখছি কোথায় মৃত্যু হয়েছে।
- ফারাবী দাঁড়াও!
সাবিহার কথা না শুনেই ক্যাপ মাথায় পড়ে নিল ফারাবী, বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। গতরাতের বৃষ্টির কারণে ভিজে আছে প্রকৃতি। রাস্তার পাশে ছোটখাটো গর্তগুলোতে পানি জমে আছে, ভরে উঠেছে প্রতিটি নালা। সামনের ভীড় দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায় সে। লোকজনের প্রচন্ড ভীড়, তার মাঝে সাংবাদিক, পুলিশ ও কিছু সেনাবাহিনীর সদস্য। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে হাত রাখলো ফারাবীর কাঁধে। পেছন ফিরে সজীবকে দেখে ফারাবী বলল,
- কি হয়েছে এখানে?
- ভ্যাম্পায়ার তার শিকার ধরেছিল।
- কে মারা গিয়েছে?
- শুনলাম কোনো ব্যবসায়ী, রাত করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বেচারা একদম উপরে চলে গেছে।
- সিসি ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়েছে?
- সেটার মিশনই তো চলছে, তোকে নিতে এসেছিলাম আমি চল।
দ্রুত অফিসের দিকে যায় ফারাবী ও ক্যাপ্টেন সজীব। অফিসে ঢুকে দেখে সবাই ব্যস্ত, কম্পিউটার নিয়ে। কম্পিউটারে চলছে গতরাতের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ। ফারাবী ও ক্যাপ্টেন সজীবকে ঢুকতে দেখে উঠে স্যালুট দেয় সৈনিক সাদি।
- সালাম স্যার! স্যালুট দিয়ে সৈনিক সাদি বলল
- কি অবস্থা কিছু ধরা পড়েছে? ফারাবী বলল
- না স্যার, যেখানে মৃত্যুটা হয়েছে তার আশপাশে থাকা চারটি ক্যামেরার ফুটেজ চ্যাক করা হলো অথচ কিছু দেখা গেল না। সৈনিক সাদি বলল
- সজীব, এমনও তো হতে পারে যে রক্ত অন্য কোথাও খেয়েছে। তবে যে কেউই হোক, তাকে অবশ্যই গেট থেকে প্রবেশ করতে হবে। ফারাবী বলল
- হুম। সাদি, গেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাও। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- অকে স্যার!
একটি ফুটেজ অন করে সাদি, স্পষ্ট গেট দেখা যাচ্ছে ফুটেজটিতে। মন দিয়ে দেখছে ফারাবী ও ক্যাপ্টেন সজীব। হঠাৎ সেই ব্যবসায়ী লোকটিকে প্রবেশ করতে দেখা গেল।
- আরে! এটা তো সেই লোকটিই না? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- শিকার চলে আসলো অথচ শিকারির খবর নেই। ফারাবী বলল
একের পর এক ফুটেজ দেখা হলো। তাতে ভ্যাম্পায়ার তো দূরের কথা, একটি বিড়ালও চোখে পড়েনি। রাত একটা, দুটা, তিনটা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সৈনিক সাদি, শুধুই নির্জর প্রকৃতি প্রতিটি ফুটেজে।
- আশ্চর্য! ভোর হয়ে গেল অথচ ভ্যাম্পায়ারের ছায়াটাও দেখতে পেলাম না। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- এর মানে কি? ক্যান্টনমেন্টে তো যেই সেই পথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়না। ফারাবী বলল
- শুনেছিলাম ভ্যাম্পায়াররা নিজেদের একটি বাদুরেও পরিণত করতে পারে। আমার মনে হয় স্যার সেখাবেই ক্যান্টনম্যান্টে এসেছিল। সৈনিক সাদি বলল
- ওহ হ্যাঁ! ফারাবী মনে আছে? আমরা অপারেশনে গিয়ে বাদুর দেখেছিলাম। হতে পারে কথাটি সত্য। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- বুঝতে পারছি না কি যে.... ..
ফারাবী কথাটি শেষ করার আগেই ফুটেজে কিছু একটা দেখে অবাক হয়। গেটের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখলো, লোকটি প্রবেশ করার সময় বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে! বিষয়টি দেখে বেশ অবাক হয় তারা তিনজন।
- কি ব্যাপার! বারবার পেছনে কি দেখছিল! ফারাবী বলল
- কিছুর উপস্থিতি টের পেয়েছিল মনে হয়। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- হতে পারে, তবে কেসটি আমার কাছে অন্যরকম বলে মনে হচ্ছে সজীব। এটা হার্নের কাজ হতে পারে না। ফারাবী বলল
- কিভাবে বুঝলি? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- বুঝিস না, হার্নের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং তার সম্পর্কেও আমার যথেষ্ঠ জানা। হার্ন এভাবে লুকিয়ে আক্রমণ করবে না। ফারাবী বলল
- তার মানে আজ অবধি যারা হার্নের শিকার হয়ে ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়েছে এটা তাদের কাজ? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- আমি নিশ্চিত নই, তবে আমার তাই মনে হচ্ছে। আর সে এমন কেউ হবে যে সেনানিবাসের কোথায় কি আছে তা খুব ভালো করেই জানে। ফারাবী বলল
- ঠিক বুঝলাম না স্যার? সৈনিক সাদি বলল
- কি বলিস ভাই কিছুই তো বুঝি না! ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- নইলে তুই-ই বল, কোনো ক্যামেরায় ভ্যাম্পায়ারটি ধরা পড়লো না কেন? ফারাবী বলল
- উত্তর সহজ, যে জায়গায় আক্রমণ করেছিল সে জায়গায় কোনো ক্যামেরা ছিল না। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- তাহলে গেটে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে ঢুকেছিল? নাকি তোর কোয়ার্টারে আশ্রয় নিয়েছিল যেন রাতে বের হতে পারে? ফারাবী বলল
- তাও তো কথা! মাথা চুলকালো ক্যাপ্টেন সজীব।
- আমার মনে হয়.... ...
কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় ফারাবী, প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। কিছু একটা অস্পষ্ঠ ভাবে চোখে ভাসছে। রাতের পরিবেশ, একটি লোকের আর্তনাদ, ধাওয়া করা। তবে, এসব কেন তার মনে আসছে!
কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক, টেবিলের উপর হাত রেখে ফারাবী হাপাতে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে শুরু করে তার।
- কিরে শরীর খারাপ নাকি? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- না। হঠাৎ কি সব যেন মাথায় আসছিল। ফারাবী বলল
- কি স্যার? সৈনিক সাদি বলল
- ঠিক বুঝতে পারিনি, অস্পষ্ঠ ছিল সব।
চেয়ারে বসে পড়ে ফারাবী। সৈনিক সাদি তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন সজীব আরেকটি ফুটেজ অন করে নতুন কিছুর আশায়।
রাত হয়েছে অনেক। মাঝেমাঝে কুকুরের হাকে নীরবতা ভাঙছে। পুরোপুরি নির্জন পথ, রাত জাগা পাখিরাও বুঝি ঘুমিয়েছে আজ। এপাশ ওপাশ করছে ফারাবী, ঘুম হালকা হয়ে আসছে হয়তো। পাশে চুপ করে ঘুমোচ্ছে সাবিহা। শোয়া থেকে উঠে বসে ফারাবী। তার চোখগুলো লালচে। সামনে দেয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো, রাত ৩টা ১৬মিনিট। শরীর থেকে কাথা সরিয়ে উঠে পড়ে ফারাবী, বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।
ক্যান্টনমেন্টে কড়া নজরে পাহারা দিচ্ছে একজন ওয়াচম্যান। ঘুমে হাই উঠছে তার। তবুও বাধ্য হয়ে ডিউটি করছে। হঠাৎ তার ঘুম ঘুম চোখে কারো ছায়া দেখা গেল! চিৎকার করে বলল, কে ওখানে? এতরাতে কি করছো? ওপাশ কোনো উত্তর এলো না। লাঠি হাতে এগিয়ে গেল ওয়াচম্যান। সামনে গিয়ে দেখতেই বেশ অবাক হলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে ফারাবী।
- স্যার! আপনি এতরাতে এখানে? ওয়াচম্যান বলল
ফারাবী কোনো উত্তর দিল না। ওয়াচম্যান পুনরায় বলল, স্যার চুপ করে আছেন কে? কথাটি শেষ করা মাত্র আচমকাই তার গলা টিপে ধরে ফারাবী! শ্বাস নিতে না পেরে ফারাবীর হাত চেপে ধরে ওয়াচম্যান, দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে তার। হঠাৎ তার কলারে ধরে তীক্ষ্ন দাঁত বের করে ফারাবী, ভয়ে জমে যায় ওয়াচম্যান। এমন সময় ফারাবী ওয়াচম্যানের ঘাড় কামড়ে ধরে!
পরদিন সকালে, প্রতিদিনের মতোই একটি সুন্দর সকাল। আজ আর হলদে পাখিটা আসেনি ফারাবী রুমের জানালায়। প্রতিদিনের মতো ফ্রেস হতে ওয়াসরুমে যায়, আয়নাতে তাকাতেই চমকে উঠে! আবারো তার মুখে রক্ত! এসব কি হচ্ছে! প্রতিদিন এমন ভয়ানক ঘটনা হচ্ছে কিভাবে! বিভিন্ন প্রশ্ন এসে গ্রাস করে ফারাবীকে। এবং সেদিন শোনা যায় সাভার সেনানিবাসের ভেতর নতুন এক মৃত্যুর সংবাদ। রাত যত গভীর হয় আলো সহ্য করা তত কষ্টের হয়ে উঠে ফারাবীর দ্বারা, মাঝে মাঝে ভয়ানক কিছু করে বসে। উপায় না পেয়ে ফারাবী এক ভ্যাম্পায়ার বিশেষজ্ঞের নিকট যায়। সব শুনে বিশেষজ্ঞ বললেন,
- তোমার কথা আমি বুঝেছি, তার আগে বলো তুমি কি করো?
- আমি সেনাবাহিনী অফিসার, এইযে আমার আইডি কার্ড। আইডি কার্ড এগিয়ে দিয়ে ফারাবী বলল
হাত বাড়িয়ে আইডি কার্ডটি নিয়ে দেখে বলে
- হুম সেনাবাহিনীর লোক, আমার কথা তুমি বিশ্বাস করবে বলে মনে হয়না।
- করতাম না, তবে এখন করতে আমি বাধ্য।
- কেন?
- আপনাকে শুধু বর্তমান অবস্থাটাই বলেছি কিন্তু এর আগে আরো ঘটনা আছে।
- কি ঘটনা?
- আমার বন্ধুকে দেখতে হসপিটেল গিয়েছিলাম, ফেরার সময় আসছিলাম খ্রিষ্ট পাড়ার পথ ধরে। গাড়ি পাইনি বলে পায়ে হেঁটেই রওনা দিলাম। তখন এক লোককে চোখে পড়ে আমার, লোকটি খুব অদ্ভুত ছিল। পরদিন যখন তার বাড়িতে গেলাম, তখন সে তার জীবন কাহিনী বলল এবং ভ্যাম্পায়ারের রূপে আমার উপর আক্রমণ করলো। আমি কোনোভাবে সেখান থেকে বেঁচে ফিরি। পরদিন যখন দল নিয়ে সে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলাম, তখন একটা বাদুর আমার ঘাড়ে কামড় বসায়। তারপর কি হলো তাতো বলেছি।
কথাগুলো বলে বিশেষজ্ঞ রবার্ট উইলের উত্তরের অপেক্ষায় করতে থাকে ফারাবী। রবার্ট উইল এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
- একটি বাদুর কামড় দিয়েছিল তাইনা?
- হ্যাঁ, রক্তচোষা বাদুর ছিল।
- ওটা বাদুর ছিল না বাবা।
- মানে?
- ওটা ভ্যাম্পায়ার ছিল, ভ্যাম্পায়াররা প্রয়োজনে নিজেদের একটি বাদুরেও পরিণত করতে পারে। সে তোমার সব রক্ত খেতে পারেনি কারণ বাদুর হয়ে থাকলে তাদের ক্ষমতা অতি কম হয়ে আসে।
- এর সমাধাণ কি?
- তুমি ভ্যাম্পায়ার হওয়ার পর যদি তোমার উপর তীব্র আলো এসে বেশিক্ষণ পড়ে তাহলে তোমার ভেতরের এই ভ্যাম্পায়ারের সত্ত্বাটি চলে যাবে।
- কিন্তু মি. উইল, ভ্যাম্পায়ারের রূপ নেওয়ার পর তো আমার কিছুই মনে থাকে না।
- সেটাই সমস্যা, স্বাভাবিক তীব্র আলো তোমার ভ্যাম্পায়ারের সত্ত্বাটির কিছুই করতে পারবে না।
- আপনি কি একটু সাহায্য করতে পারবেন না?
- তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবো, এছাড়া উপায় নেই। একটু বসো।
চেয়ার ছেড়ে ফারাবীর পেছনের দেয়ালে থাকা বক্সের দিকে এগিয়ে যান মি. উইল। যেতে যেতে বললেন, যত সময় যাবে তত তোমার ভেতরের ভ্যাম্পায়ারের সত্তাটির ক্ষমতা বাড়বে, একসময় তুমি মানুষ রূপে ফিরে আসতে পারবে না। কথাটি শেষ করতেই মি. উইলের দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তীক্ষ্ন দাঁত বের করে! দাঁত বেয়ে লালা পড়ছে, চোখ লালচে! মূহুর্তেই প্রচন্ড চিৎকারে ভরে উঠে সমস্ত ঘর।
পরদিন সকালে, সেনানিবাস।
- ফারাবী গতকালের মতো আজও একজন.. ..
- মারা গেছে তাইতো? ফারাবী বলল
- কিভাবে বুঝলি? ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- নিউজে দেখলাম, এবারও মেবি সিসি ক্যামেরা ব্যর্থ। ফারাবী বলল
- সেনাবাহিনীর নামে সবাই সমালোচনায় জড়িয়েছে, বলছে সেনানিবাসের ভেতর খুন হচ্ছে অথচ সেনাবাহিনীরা ঘুমোচ্ছে। ক্যাপ্টেন দিব্য বলল
- এই আরেক জায়গায় মার্ডার হয়েছে!
উত্তেজিত কন্ঠে ক্যাপ্টেন সজীব বলল, পত্রিকায় বড় করে লেখা, ভ্যাম্পায়ারদেরই শিকার হলেন ভ্যাম্পায়ার বিশেষজ্ঞ! কথাটি শুনে উত্তেজিত হয়ে ফারাবী জিজ্ঞেস করলো,
- কোথায়?
- এক ভ্যাম্পায়ার বিশেষজ্ঞ, রবার্ট উইল। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
নামটি শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো ফারাবীর, মি. উইল মারা গেছে! অবিশ্বাস্য! দ্রুত ক্যাপ্টেন সজীবের হাত থেকে পেপারটি ছিনিয়ে নিয়ে দেখে, পেজ জুড়ে মি. উইলের মৃতদেহের ছবি। সজীব সত্য বলছিল, মি. উইল ভ্যাম্পায়ারের শিকার হয়েছে। নিজের অজান্তেই ফারাবীর গাল বেয়ে পেপারের পৃষ্ঠার উপর লনতা জলের ফোটা এসে পড়ে। সে ফোটায় ভিজে যেতে থাকে বরার্ট উইলের ছবি।
সেদিন রাতে, ডিউটি শেষ হওয়ার পরও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেকিংয়ে ব্যস্ত মেজর রুমেল। একের পর এক ফুটেজ চালানো হচ্ছে, তবে ব্যর্থ। প্রায় পুরো সেনানিবাসের ক্যামেরা চেক করার পর একটি ফুটেজ বের করে। এটিই অবশিষ্ঠ ফুটেজ। নয়তো গতবারের মতো এবারো ব্যর্থ হতে হবে সেনাবাহিনীকে। হঠাৎ মেজর রুমেল ফুটেজে ওয়াচম্যানের সাথে কাউকে দেখতে পায়! উত্তেজিত হয়ে বলে, সাদি থামো, রিমাইন্ড করো! রিমাইন্ড করে সৈনিক সাদি, জায়গা মতো আসতেই জুম করার নির্দেশ দেয় মেজর রুমেল। ফুটেজটি জুম করা হয়। চেহারা সামান্য স্পষ্ঠ হতেই গায়ের সব লোম খাঁড়া হয়ে যায় সবার!
ফারাবী!
(চলবে...)
লিখাঃ ফারহান আহমেদ ফারাবী
দ্যা হন্টেড নাইট (শেষ পর্ব)
- কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ফারাবী বলল
- একটু আগে, কি হয়েছিল তোমার? সাবিহা বলল
- কখন?
- মাত্রই তো কেমন যেন করছিলে।
- কোথায় আমি তো ঠিক আছি।
ফারাবীকে ভালো করে লক্ষ্য করলো সাবিহা, সে আগের মতোই স্বাভাবিক। তাহলে কি সাবিহার মনের সন্দেহ ছিল! তবে, সে তো নিজের চোখে দেখেছিল ফারাবীকে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যেতে। এমন সময় কারেন্ট চলে এলো। এগিয়ে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল ফারাবী। লাইটের আলোয় কোনো প্রকার অসস্থী ভাব দেখা গেল না তার মাঝে। যেমনটা লাইট জ্বালানোর সময় দেখা গিয়েছিল।
পরদিন সকালে। একটা হলদে পাখি এসে জানালার পাশের টেবিলে রাখা ফারাবী ডায়েরিটির উপর বসলো, বাহিরে পাখিদের অসংখ্য কিচিরমিচির। ফারাবীর মুখে রোদ পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল ওর। মৃদু বাতাসে টেবিলে রাখা ডায়েরিটির পৃষ্ঠাগুলো উড়তেই ভয় পেলে ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে চলে গেল হলুদ পাখিটি। ডায়েরিটি বন্ধ করে ফারাবী তার ড্রোয়ারে ঢুকালো। ফ্রেস হতে চলে গেল ওয়াসরুমে। দরজা বন্ধ করে টেপ ছাড়লো, ঠান্ডা পানিতে হাত ধুয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই চোখ বড় হয়ে আসে তার! ভয়ে দেয়ালের উপর ছিটকে পড়লো। তার মুখে রক্ত! দেখে মনে হচ্ছে যেন কাউকে সে চিবিয়ে খেয়েছে। আঙুল দিয়ে দেখে সে, সামান্য শুকিয়ে এসেছে রক্তগুলো। তাড়াহুড়ো করে টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে ওয়াসরুম থেকে বের হয় ফারাবী। বের হয়েই ইউনিফোর্ম পড়তে শুরু করলো। ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে চাচ্ছে না। গতরাতের কথা মনে পড়ে তার, সাবিহা চিৎকার করে বিছানার উপর পড়েছিল। এটুকুই মনে আছে তার, তবে কি দেখে ভয় পেয়েছিল! মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠে। এমন সময় ভেতর থেকে সাবিহার ডাক শোনা গেল। ফারাবী দেখে যাও নিউজে কি বলছে!
- হ্যাঁ আসছি।
ইউনিফোর্মের বোতাম লাগাতে লাগাতে ড্রইং রুমে সাবিহার পেছনে এসে দাঁড়ায় ফারাবী। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ বলছে,
প্রতিদিনের মতো আজও একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তবে এবার খ্রিষ্ট পাড়ায় নয় বরং হয়েছে আমাদের কাছেই সাভার সেনানিবাসের ভেতর। পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে পুরোপুরি ভাবে কাল্পনিক নয় আবার পুরোপুরি ভাবে বাস্তবিকও নয়। কিছু কিছু অদ্ভুত ঘটনার কারণে এদের অস্থিত্বকে স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করা যায়না। তেমনই অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই পৃথিবীতে সত্যিই ভ্যাম্পায়ারদের অস্থিত্ব রয়েছে। এতদিন যারা এই মৃত্যুগুলো দেখে সিরিয়াল কিলিং ভেবেছিল তাদের ধারণা ভুল। এসব মৃত্যুর পেছনে রয়েছে এক ভয়ানক ভ্যাম্পায়ারের হাত, এবং আজ তা হয়েছে সাভার সেনানিবাসে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভ্যাম্পায়াররা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। জনসাধারণদের ঘরের বাহিরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
- তার মানে, এবার আমাদের শহরেও এসএ পড়েছে! ফারাবী বলল
- তুমি না বললে এখানে আসতে পারবে না? সাবিহা বলল
- বলেছিলাম তো কিন্তু কিভাবে কি বুঝতে পারছি না।
- প্লিজ বাহিরে যেও না।
- কি বলো! আমাকে যেতেই হবে। আমি গিয়ে দেখছি কোথায় মৃত্যু হয়েছে।
- ফারাবী দাঁড়াও!
সাবিহার কথা না শুনেই ক্যাপ মাথায় পড়ে নিল ফারাবী, বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। গতরাতের বৃষ্টির কারণে ভিজে আছে প্রকৃতি। রাস্তার পাশে ছোটখাটো গর্তগুলোতে পানি জমে আছে, ভরে উঠেছে প্রতিটি নালা। সামনের ভীড় দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায় সে। লোকজনের প্রচন্ড ভীড়, তার মাঝে সাংবাদিক, পুলিশ ও কিছু সেনাবাহিনীর সদস্য। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে হাত রাখলো ফারাবীর কাঁধে। পেছন ফিরে সজীবকে দেখে ফারাবী বলল,
- কি হয়েছে এখানে?
- ভ্যাম্পায়ার তার শিকার ধরেছিল।
- কে মারা গিয়েছে?
- শুনলাম কোনো ব্যবসায়ী, রাত করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বেচারা একদম উপরে চলে গেছে।
- সিসি ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়েছে?
- সেটার মিশনই তো চলছে, তোকে নিতে এসেছিলাম আমি চল।
দ্রুত অফিসের দিকে যায় ফারাবী ও ক্যাপ্টেন সজীব। অফিসে ঢুকে দেখে সবাই ব্যস্ত, কম্পিউটার নিয়ে। কম্পিউটারে চলছে গতরাতের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ। ফারাবী ও ক্যাপ্টেন সজীবকে ঢুকতে দেখে উঠে স্যালুট দেয় সৈনিক সাদি।
- সালাম স্যার! স্যালুট দিয়ে সৈনিক সাদি বলল
- কি অবস্থা কিছু ধরা পড়েছে? ফারাবী বলল
- না স্যার, যেখানে মৃত্যুটা হয়েছে তার আশপাশে থাকা চারটি ক্যামেরার ফুটেজ চ্যাক করা হলো অথচ কিছু দেখা গেল না। সৈনিক সাদি বলল
- সজীব, এমনও তো হতে পারে যে রক্ত অন্য কোথাও খেয়েছে। তবে যে কেউই হোক, তাকে অবশ্যই গেট থেকে প্রবেশ করতে হবে। ফারাবী বলল
- হুম। সাদি, গেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাও। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- অকে স্যার!
একটি ফুটেজ অন করে সাদি, স্পষ্ট গেট দেখা যাচ্ছে ফুটেজটিতে। মন দিয়ে দেখছে ফারাবী ও ক্যাপ্টেন সজীব। হঠাৎ সেই ব্যবসায়ী লোকটিকে প্রবেশ করতে দেখা গেল।
- আরে! এটা তো সেই লোকটিই না? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- শিকার চলে আসলো অথচ শিকারির খবর নেই। ফারাবী বলল
একের পর এক ফুটেজ দেখা হলো। তাতে ভ্যাম্পায়ার তো দূরের কথা, একটি বিড়ালও চোখে পড়েনি। রাত একটা, দুটা, তিনটা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সৈনিক সাদি, শুধুই নির্জর প্রকৃতি প্রতিটি ফুটেজে।
- আশ্চর্য! ভোর হয়ে গেল অথচ ভ্যাম্পায়ারের ছায়াটাও দেখতে পেলাম না। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- এর মানে কি? ক্যান্টনমেন্টে তো যেই সেই পথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়না। ফারাবী বলল
- শুনেছিলাম ভ্যাম্পায়াররা নিজেদের একটি বাদুরেও পরিণত করতে পারে। আমার মনে হয় স্যার সেখাবেই ক্যান্টনম্যান্টে এসেছিল। সৈনিক সাদি বলল
- ওহ হ্যাঁ! ফারাবী মনে আছে? আমরা অপারেশনে গিয়ে বাদুর দেখেছিলাম। হতে পারে কথাটি সত্য। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- বুঝতে পারছি না কি যে.... ..
ফারাবী কথাটি শেষ করার আগেই ফুটেজে কিছু একটা দেখে অবাক হয়। গেটের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখলো, লোকটি প্রবেশ করার সময় বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে! বিষয়টি দেখে বেশ অবাক হয় তারা তিনজন।
- কি ব্যাপার! বারবার পেছনে কি দেখছিল! ফারাবী বলল
- কিছুর উপস্থিতি টের পেয়েছিল মনে হয়। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- হতে পারে, তবে কেসটি আমার কাছে অন্যরকম বলে মনে হচ্ছে সজীব। এটা হার্নের কাজ হতে পারে না। ফারাবী বলল
- কিভাবে বুঝলি? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- বুঝিস না, হার্নের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং তার সম্পর্কেও আমার যথেষ্ঠ জানা। হার্ন এভাবে লুকিয়ে আক্রমণ করবে না। ফারাবী বলল
- তার মানে আজ অবধি যারা হার্নের শিকার হয়ে ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়েছে এটা তাদের কাজ? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- আমি নিশ্চিত নই, তবে আমার তাই মনে হচ্ছে। আর সে এমন কেউ হবে যে সেনানিবাসের কোথায় কি আছে তা খুব ভালো করেই জানে। ফারাবী বলল
- ঠিক বুঝলাম না স্যার? সৈনিক সাদি বলল
- কি বলিস ভাই কিছুই তো বুঝি না! ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- নইলে তুই-ই বল, কোনো ক্যামেরায় ভ্যাম্পায়ারটি ধরা পড়লো না কেন? ফারাবী বলল
- উত্তর সহজ, যে জায়গায় আক্রমণ করেছিল সে জায়গায় কোনো ক্যামেরা ছিল না। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- তাহলে গেটে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে ঢুকেছিল? নাকি তোর কোয়ার্টারে আশ্রয় নিয়েছিল যেন রাতে বের হতে পারে? ফারাবী বলল
- তাও তো কথা! মাথা চুলকালো ক্যাপ্টেন সজীব।
- আমার মনে হয়.... ...
কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় ফারাবী, প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। কিছু একটা অস্পষ্ঠ ভাবে চোখে ভাসছে। রাতের পরিবেশ, একটি লোকের আর্তনাদ, ধাওয়া করা। তবে, এসব কেন তার মনে আসছে!
কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক, টেবিলের উপর হাত রেখে ফারাবী হাপাতে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে শুরু করে তার।
- কিরে শরীর খারাপ নাকি? ক্যাপ্টেন সজীব বলল
- না। হঠাৎ কি সব যেন মাথায় আসছিল। ফারাবী বলল
- কি স্যার? সৈনিক সাদি বলল
- ঠিক বুঝতে পারিনি, অস্পষ্ঠ ছিল সব।
চেয়ারে বসে পড়ে ফারাবী। সৈনিক সাদি তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন সজীব আরেকটি ফুটেজ অন করে নতুন কিছুর আশায়।
রাত হয়েছে অনেক। মাঝেমাঝে কুকুরের হাকে নীরবতা ভাঙছে। পুরোপুরি নির্জন পথ, রাত জাগা পাখিরাও বুঝি ঘুমিয়েছে আজ। এপাশ ওপাশ করছে ফারাবী, ঘুম হালকা হয়ে আসছে হয়তো। পাশে চুপ করে ঘুমোচ্ছে সাবিহা। শোয়া থেকে উঠে বসে ফারাবী। তার চোখগুলো লালচে। সামনে দেয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো, রাত ৩টা ১৬মিনিট। শরীর থেকে কাথা সরিয়ে উঠে পড়ে ফারাবী, বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।
ক্যান্টনমেন্টে কড়া নজরে পাহারা দিচ্ছে একজন ওয়াচম্যান। ঘুমে হাই উঠছে তার। তবুও বাধ্য হয়ে ডিউটি করছে। হঠাৎ তার ঘুম ঘুম চোখে কারো ছায়া দেখা গেল! চিৎকার করে বলল, কে ওখানে? এতরাতে কি করছো? ওপাশ কোনো উত্তর এলো না। লাঠি হাতে এগিয়ে গেল ওয়াচম্যান। সামনে গিয়ে দেখতেই বেশ অবাক হলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে ফারাবী।
- স্যার! আপনি এতরাতে এখানে? ওয়াচম্যান বলল
ফারাবী কোনো উত্তর দিল না। ওয়াচম্যান পুনরায় বলল, স্যার চুপ করে আছেন কে? কথাটি শেষ করা মাত্র আচমকাই তার গলা টিপে ধরে ফারাবী! শ্বাস নিতে না পেরে ফারাবীর হাত চেপে ধরে ওয়াচম্যান, দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে তার। হঠাৎ তার কলারে ধরে তীক্ষ্ন দাঁত বের করে ফারাবী, ভয়ে জমে যায় ওয়াচম্যান। এমন সময় ফারাবী ওয়াচম্যানের ঘাড় কামড়ে ধরে!
পরদিন সকালে, প্রতিদিনের মতোই একটি সুন্দর সকাল। আজ আর হলদে পাখিটা আসেনি ফারাবী রুমের জানালায়। প্রতিদিনের মতো ফ্রেস হতে ওয়াসরুমে যায়, আয়নাতে তাকাতেই চমকে উঠে! আবারো তার মুখে রক্ত! এসব কি হচ্ছে! প্রতিদিন এমন ভয়ানক ঘটনা হচ্ছে কিভাবে! বিভিন্ন প্রশ্ন এসে গ্রাস করে ফারাবীকে। এবং সেদিন শোনা যায় সাভার সেনানিবাসের ভেতর নতুন এক মৃত্যুর সংবাদ। রাত যত গভীর হয় আলো সহ্য করা তত কষ্টের হয়ে উঠে ফারাবীর দ্বারা, মাঝে মাঝে ভয়ানক কিছু করে বসে। উপায় না পেয়ে ফারাবী এক ভ্যাম্পায়ার বিশেষজ্ঞের নিকট যায়। সব শুনে বিশেষজ্ঞ বললেন,
- তোমার কথা আমি বুঝেছি, তার আগে বলো তুমি কি করো?
- আমি সেনাবাহিনী অফিসার, এইযে আমার আইডি কার্ড। আইডি কার্ড এগিয়ে দিয়ে ফারাবী বলল
হাত বাড়িয়ে আইডি কার্ডটি নিয়ে দেখে বলে
- হুম সেনাবাহিনীর লোক, আমার কথা তুমি বিশ্বাস করবে বলে মনে হয়না।
- করতাম না, তবে এখন করতে আমি বাধ্য।
- কেন?
- আপনাকে শুধু বর্তমান অবস্থাটাই বলেছি কিন্তু এর আগে আরো ঘটনা আছে।
- কি ঘটনা?
- আমার বন্ধুকে দেখতে হসপিটেল গিয়েছিলাম, ফেরার সময় আসছিলাম খ্রিষ্ট পাড়ার পথ ধরে। গাড়ি পাইনি বলে পায়ে হেঁটেই রওনা দিলাম। তখন এক লোককে চোখে পড়ে আমার, লোকটি খুব অদ্ভুত ছিল। পরদিন যখন তার বাড়িতে গেলাম, তখন সে তার জীবন কাহিনী বলল এবং ভ্যাম্পায়ারের রূপে আমার উপর আক্রমণ করলো। আমি কোনোভাবে সেখান থেকে বেঁচে ফিরি। পরদিন যখন দল নিয়ে সে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলাম, তখন একটা বাদুর আমার ঘাড়ে কামড় বসায়। তারপর কি হলো তাতো বলেছি।
কথাগুলো বলে বিশেষজ্ঞ রবার্ট উইলের উত্তরের অপেক্ষায় করতে থাকে ফারাবী। রবার্ট উইল এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
- একটি বাদুর কামড় দিয়েছিল তাইনা?
- হ্যাঁ, রক্তচোষা বাদুর ছিল।
- ওটা বাদুর ছিল না বাবা।
- মানে?
- ওটা ভ্যাম্পায়ার ছিল, ভ্যাম্পায়াররা প্রয়োজনে নিজেদের একটি বাদুরেও পরিণত করতে পারে। সে তোমার সব রক্ত খেতে পারেনি কারণ বাদুর হয়ে থাকলে তাদের ক্ষমতা অতি কম হয়ে আসে।
- এর সমাধাণ কি?
- তুমি ভ্যাম্পায়ার হওয়ার পর যদি তোমার উপর তীব্র আলো এসে বেশিক্ষণ পড়ে তাহলে তোমার ভেতরের এই ভ্যাম্পায়ারের সত্ত্বাটি চলে যাবে।
- কিন্তু মি. উইল, ভ্যাম্পায়ারের রূপ নেওয়ার পর তো আমার কিছুই মনে থাকে না।
- সেটাই সমস্যা, স্বাভাবিক তীব্র আলো তোমার ভ্যাম্পায়ারের সত্ত্বাটির কিছুই করতে পারবে না।
- আপনি কি একটু সাহায্য করতে পারবেন না?
- তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবো, এছাড়া উপায় নেই। একটু বসো।
চেয়ার ছেড়ে ফারাবীর পেছনের দেয়ালে থাকা বক্সের দিকে এগিয়ে যান মি. উইল। যেতে যেতে বললেন, যত সময় যাবে তত তোমার ভেতরের ভ্যাম্পায়ারের সত্তাটির ক্ষমতা বাড়বে, একসময় তুমি মানুষ রূপে ফিরে আসতে পারবে না। কথাটি শেষ করতেই মি. উইলের দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তীক্ষ্ন দাঁত বের করে! দাঁত বেয়ে লালা পড়ছে, চোখ লালচে! মূহুর্তেই প্রচন্ড চিৎকারে ভরে উঠে সমস্ত ঘর।
পরদিন সকালে, সেনানিবাস।
- ফারাবী গতকালের মতো আজও একজন.. ..
- মারা গেছে তাইতো? ফারাবী বলল
- কিভাবে বুঝলি? ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- নিউজে দেখলাম, এবারও মেবি সিসি ক্যামেরা ব্যর্থ। ফারাবী বলল
- সেনাবাহিনীর নামে সবাই সমালোচনায় জড়িয়েছে, বলছে সেনানিবাসের ভেতর খুন হচ্ছে অথচ সেনাবাহিনীরা ঘুমোচ্ছে। ক্যাপ্টেন দিব্য বলল
- এই আরেক জায়গায় মার্ডার হয়েছে!
উত্তেজিত কন্ঠে ক্যাপ্টেন সজীব বলল, পত্রিকায় বড় করে লেখা, ভ্যাম্পায়ারদেরই শিকার হলেন ভ্যাম্পায়ার বিশেষজ্ঞ! কথাটি শুনে উত্তেজিত হয়ে ফারাবী জিজ্ঞেস করলো,
- কোথায়?
- এক ভ্যাম্পায়ার বিশেষজ্ঞ, রবার্ট উইল। ক্যাপ্টেন সজীব বলল
নামটি শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো ফারাবীর, মি. উইল মারা গেছে! অবিশ্বাস্য! দ্রুত ক্যাপ্টেন সজীবের হাত থেকে পেপারটি ছিনিয়ে নিয়ে দেখে, পেজ জুড়ে মি. উইলের মৃতদেহের ছবি। সজীব সত্য বলছিল, মি. উইল ভ্যাম্পায়ারের শিকার হয়েছে। নিজের অজান্তেই ফারাবীর গাল বেয়ে পেপারের পৃষ্ঠার উপর লনতা জলের ফোটা এসে পড়ে। সে ফোটায় ভিজে যেতে থাকে বরার্ট উইলের ছবি।
সেদিন রাতে, ডিউটি শেষ হওয়ার পরও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেকিংয়ে ব্যস্ত মেজর রুমেল। একের পর এক ফুটেজ চালানো হচ্ছে, তবে ব্যর্থ। প্রায় পুরো সেনানিবাসের ক্যামেরা চেক করার পর একটি ফুটেজ বের করে। এটিই অবশিষ্ঠ ফুটেজ। নয়তো গতবারের মতো এবারো ব্যর্থ হতে হবে সেনাবাহিনীকে। হঠাৎ মেজর রুমেল ফুটেজে ওয়াচম্যানের সাথে কাউকে দেখতে পায়! উত্তেজিত হয়ে বলে, সাদি থামো, রিমাইন্ড করো! রিমাইন্ড করে সৈনিক সাদি, জায়গা মতো আসতেই জুম করার নির্দেশ দেয় মেজর রুমেল। ফুটেজটি জুম করা হয়। চেহারা সামান্য স্পষ্ঠ হতেই গায়ের সব লোম খাঁড়া হয়ে যায় সবার!
ফারাবী!
(চলবে...)
লিখাঃ ফারহান আহমেদ ফারাবী
দ্যা হন্টেড নাইট (শেষ পর্ব)