ফল অফ বাগদাদঃ বাগদাদ আক্রমণ, মোঙ্গলদের কাছে বাগদাদ নগরীর পতনের কাহিনী (পর্ব ১)


ফল অফ বাগদাদকে বাংলায় রূপান্তর করলে হয়, বাগদাদের পতন। ভাষান্তর যতোটাই সহজ ও সাবলীল, এই বাক্যের তাৎপর্য ও পেছনের ইতিহাস ততোটা সহজ নয়। বরঞ্চ অনেকটাই অপ্রীতিকর, এবং ইসলামী খিলাফাহর শাসনের অনুরাগীদের জন্য এক স্বপ্নভঙ্গের নাম।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে, Strong men create good times. Good times create weak men. Weak men create hard times. অর্থাৎ, বীরেরা সুসময় নিয়ে আসে, তাগিদের অভাবে সুসময় মানুষকে দূর্বল করে দেয়; আর তাদের এই দূর্বলতাই পরবর্তীতে তাদের দূঃসময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এবং এই কথাটা বাগদাদের পতনের ক্ষেত্রে শতভাগ যথার্থ। কারণ যদি পতনের হেতুর দিকে আলোকপাত করা হয়, তবে দেখা যাবে, উক্ত কারণেই বাগদাদকে এতো চরম মূল্য দিতে হয়েছে। আর অবসান ঘটেছে এক সময়ের শানশওকতময় খিলাফাহর।
নবীর উম্মাহ হিসেবে আমাদের সবারই চাওয়া, খিলাফাহর সুশাসন আবারও ফিরে আসুক পৃথিবীর বুকে। কিন্তু বর্তমান ক্যাপিটালিজম ও অন্যান্য ভোগবাদী রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থার কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে কি একে ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রথমে নিজের আদর্শকে ভালোমতো বোঝা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। আর যখনই এসে পড়ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা, মোঙ্গলদের হাতে বাগদাদের পতনের ইতিহাসটাও জানা আবশ্যক। কারণ বাগদাদের সেই আক্ষেপের কাহিনী থেকেই উপলব্ধি করতে পারবেন খুব ভালোভাবে কেন আমাদের মুসলিম উম্মাহদের স্বপ্নের খিলাফাহর শাসন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে।
ইতিহাস শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষাকে অনুভব করুন।

(এক)
মসুলের আমিরের কাছে দুটি চিঠি এসেছে। একটা বাগদাদের খলিফার কাছ থেকে, পরেরটা এসেছে তাতার ইলখানের কাছ থেকে।
মসুলে বাস করে হাজারো কারিগর। এখানে জুতোর ফিতা থেকে শুরু করে তৈরি করা হয় বড়ো বড়ো সিজ ইঞ্জিনও।
আমির চিঠি দুটো পড়লেন।
বাগদাদের খলিফা তাকে উন্নতমানের কিছু সেতার আর বেহালা পাঠাতে অনুরোধ করেছেন৷
মোঙ্গল ইলখানের চিঠিটা অন্যরকম। তিনি চেয়েছেন সিজ ইঞ্জিন।
আমিরের বুঝতে অসুবিধা হলো না, কে কী উদ্দেশ্যে চিঠিগুলো পাঠিয়েছেন।
মোঙ্গল ইলখান বাগদাদ অবরোধ করতে চান আর আব্বাসিয়া খলিফা চান সংগীতের আসর আরও জমিয়ে তুলতে। আমির বদরুদ্দিন আফসোস করে উঠলেন, হায় ইসলামি জাহান! তোমার নেতৃত্ব আজ কার হাতে?
দজলা,ফোরাত,ভলগা আর ওনেনা নদীতে অনেক জল গড়িয়ে গেছে।
জোচি খানেরমৃত্যুর পর মোঙ্গলদের বিজয়ের ঝান্ডা কিপচাক স্তেপের বহু পশ্চিমে উচিয়ে নিয়ে গেছেন বাটু খান,বার্কি খান আর ওর্দা খানেরা।এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্ষীয়ান জেনারেল সুবুদাই বাহাদুর।মোঙ্গলদের আক্রমণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে জনপদের পর জনপদ।
রাশিয়াতে অন্তত ছয় লাখ,হাঙ্গেরির প্রতি দুজনের একজন,ইউক্রেনের দুই লাখ,বোহেমিয়ার প্রতি দুইজনের একজন,পোল্যান্ডের লাখের উপর মানুষ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে।রোমানিয়ার রাজ্যগুলোকে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল মোঙ্গলরা।গ্রেট হাঙ্গেরিয়ান প্লেইনে যতদূর দেখা যায় শুধু লাশ আর লাশ।
মোঙ্গলদের লক্ষ্য ছিল আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত তাদের পতাকা উড়িয়ে দেয়া,কিন্তু ভিয়েনা অবরোধের আগে কারাকোরাম থেকে খবর এলো খান-ই-খানান ওগেদেই খান মারা গেছেন।পবিত্র বুরখান খালদুনে কুরুলতাই ডাকা হয়েছে,সেখানে নতুন খাকান নির্বাচন করা হবে।
খাকান কে না হতে চায়,ঘোড়ার মুখ পূর্বদিকে ঘোরালেন বাটু খান।
পতনের মুখ থেকে বেঁচে গেল ইউরোপ।
কারাকোরামে গিয়ে বাটু খান দেখলেন রাজনীতি যুদ্ধের চেয়ে অনেক জটিল। বাটু খানের শৌর্য-বীর্যের খবর জানা ছিল বোবজিগিন (চেঙ্গিজের পরিবার) পরিবারের সবারই। ছেলে যে বাবা ও দাদার মতোই মহাবীর হয়েছে, সে নিয়ে কারও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু রাজনীতির কূটচালে বাটুকে ঘোল খাইয়ে দখল নিলেন ওগেদেই খানের ছেলে গুয়ুক খান।
গুয়ুক খান ভালোভাবেই জানতেন, যুদ্ধ লেগে গেলে বাটুর সামনে তিনি টিকবেন না। বাটু খানকে তাই আগা খান (খানদের সম্মানিত বড় ভাই) উপাধিতে ভূষিত করা হলো।
বাটু খান ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি বুঝলেন, মোঙ্গলভূমি ছেড়ে চলে আসা তার বাবার সঙ্গে রাজধানীর যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা আর কোনো দিন ঘুচবে না। গুয়ুক খান ওগেদেই খানের সন্তান ছিলেন। চাঘাতাই খান আর ওগেদেই খানের সন্তানরা নিজেদের ক্ষমতাকে তলুই খান ও জোচি খানের সন্তানদের বিরুদ্ধে টিকিয়ে রাখতে জোট গড়লেন।
মোঙ্গল প্রিন্সদের উপর বাটু খানের ব্যক্তিত্ত্বের ব্যাপক প্রভাব ছিল। তিনি দ্রুত চাচা তলুই খানের সন্তানদের সঙ্গে একটা রাজনৈতিক জোট গড়ে ফেললেন। নিজের যেহেতু খান হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, সরাসরি সিংহাসনে যাওয়ার বদলে তিনি খানদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মাধ্যমে মোঙ্গল সাম্রাজ্যকে পরিচালনা করবেন৷
সুযোগ এলো ১২৪৮ সালে। গুয়ুক খান মারা যাওয়ার পর দ্রুত তলুই খানের বড় ছেলে, বাটু খানের একান্ত অনুগত মোঙ্কি খানকে ক্ষমতায় বসালেন বাটু খান।
মোঙ্কি খান ক্ষমতায় গিয়েই আগে ওগেদেই খান আর চাঘাতাই খানের ছেলেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন পীড়ন চালালেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা খানের ওপর কালো জাদু করেছে।
এই অপরাধের শাস্তি ছিল কেবল মৃত্যুদন্ড। এইসব ঝামেলা শেষ হতে হতে চলে এলো ১২৫৪ সাল।
বাটু খানের আর ইউরোপ জয় করা হয়ে উঠলো না। বুবুদাই মারা গেছেন আরো সাত বছর আগে।
১২৫৫ সালে বাটু খানও মারা গেলেন। তার জায়গায় কিপচাক খানাতের সোনালি লাল ঝান্ডা হাতে নিলেন তার ছোটো ভাই, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা বারকি খান।
ঘরের ঝামেলা সামলে উঠে আবার বিশ্বজয়ের দিকে নজর দিলো মোঙ্গলরা।
মধ্যপ্রাচ্যে মোঙ্গল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল ইরাক পর্যন্ত। ইরাকের উত্তরে মসুল ছিল কুর্দি আমির বদরুদ্দিন লুলুর অধীনে। আর দক্ষিণে ছিল বাগদাদ, মধ্যযুগের স্বপ্ন, আরব্য রজনীর শহর বাগদাদ।
বাগদাদের খলিফা তখন আল মুস্তাসিম। তার প্রধান দুই কাজ ছিল বাগদাদের বাহাসের ময়দানে গিয়ে ইসমাইলি আর আশয়ারিদের বাহাস শোনা, আর নর্তকীদের সঙ্গে গান আর মদে ডুবে থাকা।
ওগেদেই খানের আমল থেকে মোঙ্গলরা দাবি করে আসছিল, বাগদাদের খলিফাকে মোঙ্গলদের বশ্যতা স্বীকার করে নিতে হবে।
খলিফা ভাবতেন, কিছু উপহার পাঠিয়ে এই বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করবেন। কিন্তু মোঙ্কি খান খলিফাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, তোমাকে অবশ্যই আমার বশ্যতা স্বীকার করে আমার দরবারে আসতে হবে। অন্যথায় তোমাদের ধ্বংস করতে আমি হালাকুকে পাঠাচ্ছি।
-
(দুই)
বাগদাদের সমাজ তখন দারুণভাবে বিভক্ত ছিল। যেকোনো প্রশ্নে এই সমাজ হাজারো মত, হাজারো পথ, হাজারো ফোরকায় বিভক্ত হয়ে যেতো।
মাজহাব আর ফোরকা তাদের এতো আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে, ঘাড়ের ওপর আটত্রিশ বছর ধরে নিশ্বাস ফেলা মোঙ্গল বিপদকে তারা অনুধাবন করতে পারেনি।
খলিফার দরবার ছিল ভাঁড়, কবি আর গল্পকথকদের আড্ডাখানা। সঙ্গে ছিল দরবারি আলেম, যারা যেকোনো ব্যাপারে খলিফার মতের সপক্ষে কুরআন-হাদিস ব্যাখ্যা বের করত, হোক তা মনগড়া।
আল মুস্তাসিমের বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে ছিল না কোনো ধারণা। তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করতো উজির ইবনে আল আলকামির পরামর্শের ওপর। নিজে কোনো দিন যুদ্ধ করেননি, সামরিক বিষয়েও তার ছিল না কোনো রকম অভিজ্ঞতা।
যৌক্তিকভাবে ধর্মীয় বিষয়ের ফয়সালা করার শুভ উদ্দেশ্য এক সময় যে বাহাস শুরু হয়েছিল, কালে কালে সেই বাহাস পরিণত হয়েছিল বিভেদের হাতিয়ারে।
বাগদাদের সমাজকে হুঁশিয়ার করার চেষ্টা যে করা হয়নি, তা নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে মুজাহিদরা এসে মোঙ্গিল বিপদ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু যে সমাজের মাথায় পচন, তার পতন আর কে ঠেকাতে পারে?
হালাকু খান বাগদাদ জয় করতে আসছে শুনে অপদার্থ আল মুস্তাসিম এই বিষয়ে ইবনে আল আলকামির মত চাইলেন।
আলকামি জানালেন, "বাগদাদে তাতারিরা হামলা চালালে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মুসলিমরা বাগদাদ রক্ষা করতে অগ্রসর হবে। আপনার কোনো ভয় নেই।"
কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আলকামি তা আল মুস্তাসিমকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। তার পরিকল্পনা ছিল বাগদাদ মোঙ্গলদের হাতে তুলে দিয়ে মোঙ্গলদের সঙ্গে সমঝোতা করে শিয়াদের রক্ষা করা।
প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব থেকে বাগদাদের খলিফা ছিলেন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।
পশ্চিমে আইয়ুবি শাহজাদারা নিজেদের ভেতর যুদ্ধে ব্যস্ত, মিশরে ইতোমধ্যেই তারা ক্ষমতা হারিয়েছে। উত্তর-পশ্চিমে সেলজুক রুমের পতন হয়েছে। আর পূর্বের দিল্লি সালতানাত থেকে সাহায্য আসার যে একমাত্র পথ, সেই ইরান-আফগানিস্তান মোঙ্গলদের দখলে।
খলিফা আন নাসির খাওয়ারিজম শাহকে আক্রমণ করতে একদিন যাদের চিঠি লিখেছিলেন, সেই মোঙ্গলরাই তার বংশকে একদিন ধ্বংস করবে, তা তিনি ভাবতেও পারেননি।
মোঙ্গলরা বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে এলো বাগদাদের দিকে।
মোঙ্গল যোদ্ধা প্রায় এক লাখ। তাতার, উইঘুর, কিরগিজ আর কিপচাক আরও একলাখ। সেইসঙ্গে আর্মেনিয়া থেকে আনা চল্লিশ হাজার ক্রুসেডার, জর্জিয়া থেকে আনা আরও চল্লিশ হাজার ক্রুসেডার, সঙ্গে চীনা যোদ্ধা মিলিয়ে সেনাবাহিনীর মোট আকার দাঁড়ালো তিন লাখে। এক লাখকে রিজার্ভ রেখে বাকি দুই লাখ নিয়ে বাগদাদের দিকে এগোতে থাকলেন হালাকু। এই অভিযানে বাগদাদের দেয়াল ভাঙতে তিনি সঙ্গে এনেছিলেন এক হাজার চীনা প্রকৌশলী আর প্রায় দশ হাজার কারিগর।
তারা যখন বাগদাদের কাছাকাছি এসে গেল, তখন খলিফার সেনাপ্রধান দাওয়াতদার সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি তাদের বাধা দেবেন।
খলিফা এতে খুব একটা ভরসা পেলেন না। আলকামিও বাধা দিলেন। কিন্তু দাওয়াতদারের পক্ষে শহরের উলামারা শক্তিশালী মত পেশ করায় খলিফা লড়াইয়ের অনুমতি দিলেন।
দাওয়াতদারের বিশ হাজার যোদ্ধার বেশিরভাগই ছিল কুর্দি গোত্রগুলো থেকে আনা ভাড়াটে যোদ্ধা। আর একটা অংশ ছিল খলিফার দাস সৈনিকদের বিশেষ বাহিনী।
১২৫৮ সালের ১১ জানুয়ারি দজলা নদীর তীরে মোঙ্গলদের দশ ভাগের এক ভাগ যোদ্ধা নিয়ে লড়াইয়ে নামলেন দাওয়াতদার। দফায় দফায় তুমুল যুদ্ধের পর মোঙ্গলরা পালাতে বাধ্য হলো। সন্ধ্যার দিকে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠলো দাওয়াতদারের বাহিনী। রাতভর চললো ভোজ।
সকালে উঠে দাওয়াতদার দেখলেন তার পায়ের তলার মাটি কাঁপছে।
তার বাহিনী যে চরে ক্যাম্প করেছিল, মোঙ্গলরা সেটার তিন দিকে পরিখা খনন করে রাতের ভেতরে চরটাকে নদীর মধ্যে নিয়ে গেছে।
নদীর স্রোতে কিছুক্ষণ পর ডুবে যেতে থাকলো দাওয়াতদারের ক্যাম্প। যারা সাঁতরে তীরে উঠলো, সবাইকে হত্যা করলো মোঙ্গলরা। পালাতে পারলো মাত্র চারজন, যাদের একজন দাওয়াতদার নিজে। এটাই ছিল বাগদাদের খলিফার শেষ প্রতিরোধ।
উপায়ান্তর না দেখে খলিফা জরুরি ভিত্তিতে শহরের নিরাপত্তা দেয়াল মেরামতের নির্দেশ দিলেন, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
খলিফার চিঠি গেল আইয়ুবি আর মামলুকদের কাছে। কিন্তু অন্যের বিপদে যারা পাশে দাঁড়ায় না, তারা নিজের বিপদে কাউকে পাশে পায় না, এটাই স্বাভাবিক।
২৯ জানুয়ারি হালাকু খান অবরোধ শুরু করলেন।
অসংখ্য সিজ ইঞ্জিন, র্যাম, ক্যাটাপুল্ট আর গানপাউডার ব্যবহার করে বাগদাদের শতাব্দীর প্রাচীন দেওয়ালকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হলো।
বাগদাদ থেকে অল্প কিছু তরুণ প্রাণপণে লড়াইয়ে নামল।
এই যুবকদের বীরত্বের কারণে প্রথম তিন দিন অত্যন্ত শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করেও মোঙ্গলরা দেয়ালের ওপরে উঠতে হিমশিম খাচ্ছিল। কিন্তু সময় পেরোনোর সাথে সাথে শহরের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে লাগল।
গান পাউডারের বিস্ফোরণে নানা জায়গায় শহর রক্ষা দেয়ালে ফাটল তৈরি হতে থাকল। সেই সঙ্গে মোঙ্গলদের আগুনের তিরের বৃষ্টিতে দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে লড়াই করাও অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল।
প্রায় দশ দিনের অবরোধের পর যেখানে বাগদাদবাসীর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার, সেখানে তারা সন্ধি করে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিল। বাগদাদ থেকে প্রধান উজির ইবনে আলকামির নেতৃত্বে তিন হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তির এক দল গেল হালাকু খানের কাছে সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে।
হালাকু খান তাদের সবাইকে মেরে বস্তায় ভরে লাশ বাগদাদে পাঠিয়ে দিলেন।
(চলবে..)
[মোঙ্গলদের হিংস্র আক্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে এবং উসমানী খিলাফাহ বা অটোমান সাম্রাজ্যকে আরো ভালোভাবে জানতে হলে  মুহাম্মাদ সজল ভাইয়ের লেখা সানজাক ই উসমানঃ অটোমানদের দুনিয়ায় বইটি পড়ুন]    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম