মর্গে নতুন দুইজন ছেলে মেয়েকে চাকরি দেওয়ার পর পর ই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল। প্রথম দিন লাশের গায়ে কামড়ের দাগ, আর পরদিন ই লাশ উধাও!! কি কারণে এমন হচ্ছে? নতুন দুইজনের এতে কি কোন হাত আছে? আর যদি থাকেই এত অল্প দিনে এত লোমহর্ষক ঘটনা ঘটানো সম্ভব না! এদের কি পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে? নাকি এদের পিছনেও অন্য কারো হাত আছে? মর্গের কোণে পড়ে থাকা চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে এসব ভাবছিলেন ফরেনসিক স্পেশালিষ্ট ডা.রফিক স্যার। ঘোর কাটলো কাল্লুর ডাকে।
--আসসালামু আলাইকুম স্যার। স্যার কি ঘুমায়া গেছেন?
--নারে কাল্লু। খুব দুশ্চিন্তায় আছি রে।
--কি নিয়া স্যার?
--এইযে লাশ উধাও হয়ে গেলো এর পিছনের রহস্য কি?
--স্যার এর আগেও নাকি বাংলাদেশের কোন হাসপাতাল থেকে লাশ উধাও হয়ে যেতো?
--হ্যা। দুইটা লাশ উধাও হইছিল। তবে অনেক লাশের সাথে খারাপ কিছু হয়েছিল।
--কে/কারা করতো এগুলো?
--যারা সারাক্ষণ লাশের সাথে থাকে তাদের ই একজন।
--আপনার কি মনে হয় আমি এমন কাজ করতে পারি?
--আরেহ না। তুই আমার বিশ্বস্ত লোক। অনেক বছর যাবত আমার সাথে আছিস। তোর উপর আমার ভরসা আছে।
--তাহলে স্যার কে করতে পারে এমন কাজ?
--জানিনা। প্রচুর ভাবতে হবে। আচ্ছা নতুন যে দুইজন জইন করল ওরা কই রে?
--স্যার রাজিয়া এখনো আসেনি। গতকাল নাকি শরীর খারাপ করছিলো। তাই তাড়াতাড়ি চলে গেছিল। আর আরিফ নিচে আছে। রাজিব ছুরিতে শান দিতেছে। আজ অনেক লাশ এসেছে। বাহিরে প্রচুর মানুষ। আমি বাহিরে বসে ছিলাম। একেকজন এসে হাত, পা ধরে বলতেছে তাদের লাশটা তাড়াতাড়ি কেটে সেলাই করে দিয়ে দিতে।
.....
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার। তারপর আস্তে আস্তে বললেন,,,
-দেখলি কাল্লু আমরা সারাজীবন শুধু বন্ধু,বান্ধব,পরিবার, পরিজন নিয়েই ভাবি। অথচ মরার পর কি হবে ভাবিনা। এইযে দেখ, আজ যে লাশ হয়ে শুয়ে আছে, কে জানি কত দাঁতভাঙা পরিশ্রম করেছে পরিবারের জন্য! সংসারে সুখ আনার জন্য,না খেয়ে হয়ত সন্তানের জন্য প্রিয় খাবারটা নিয়ে আসতো সব সময়। অথচ মরার পর আর কেউ নেই তার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কবরে দিতে পারলেই বাঁচে। এটাই জীবন রে!!
--হুম স্যার। স্যার অনেক কাজ আছে। চলেন শুরু করে দেই।
--কি কি কেইস আছে?
--স্যার একটা বাচ্চা ছেলে ছাদে ঘুড়ি উড়াতে যেয়ে পরে গিয়ে মারা গেছে, দুইটা রেইপের কেস, একটা সড়ক দুর্ঘটনা, দুইটা খুন, দুইটা ফাঁসি, একটা বিষ খেয়ে মারা যাওয়ার কেস!
--সবার আত্নীয় আছে বাহিরে?
--না স্যার। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া লোকটার কোন আত্নীয় আসে নি। হয়ত এখনো খোঁজ পায়নি। টিভি,পেপারে দেখে হয়ত জানতে পারবে।
--আচ্ছা তাহলে এক কাজ কর। এই লাশটা আলাদা করে রাখ। যেহেতু এটা বেওয়ারিশ লাশ এটা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ৬ মাস, ১ বছর পরেও কেউ না নিতে আসলে গণকবর দিতে হবে।
--আচ্ছা স্যার যাচ্ছি।
,,,,,,,,,,
কাল্লুকে কাজ শুরু করতে বললেন। কাল্লু আর রাজিব তাদের পাকা হাতে যত দ্রুত সম্ভব লাশগুলো কেটে সেলাই করে দিতে লাগলো। পুরো মর্গ রক্তে ভেসে গেলো। বিশ্রী এক গন্ধে পুরো রুম ছেয়ে গেছে। সব লাশ আত্নীয়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হল। বাকি পরে রইলো বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করার কেইসটা। ভিকটিম একজন মেয়ে মানুষ। তাই স্যার চেয়ারে বসে যেই থানা থেকে লাশ এসেছে সেই থানা থেকে দেওয়া কেইস ফাইলটা পড়া শুরু করলেন। এমনও হতে পারে পুরো ফাইলটা পড়েই স্যার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে ফেলতে পারবেন। প্রায় ২০ মিনিট সময় নিয়ে ফাইল শেষ করে কাল্লুকে লাশ কাটতে বললেন।
কাল্লু তার দক্ষ হাতে নাভির নিচ থেকে গলা অব্ধি কাটলো। তারপর বুকের হাড্ডি কেটে একে একে হৃদপিন্ড, লিভার, ফুসফুস,স্টমাক,ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত সব কাটলো। লিভার আর স্টমাকের কিছু অংশ সে প্রিজার্ভ করে রাখল কেমিক্যাল এক্সামিনিশানের জন্য।এই সেম্পলটুকু অন্য জায়গায় পাঠাতে হবে উন্নত যন্ত্রপাতি দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য। স্যার মেয়েটার তলপেটে হাত দিল। কিছু একটা সন্দেহ হল। কাল্লুকে বললেন খুব যত্ন সহকারে জরায়ু পরীক্ষা করতে। জরায়ু দেখতে গিয়েই মৃত্যুর কারণ মোটামুটি নিশ্চিত করলেন ডা রফিক স্যার। জরায়ুতে একটা বাচ্চা আছে। হাত পা এখনো ভালভাবে ডেভেলপ করেনি,খুউব ই অল্প কিছুদিন হবে কনসিভ করেছে মেয়েটা। স্যার এবার কাল্লুকে বুঝাতে লাগলেন, যেহেতু মেয়েটা অল্পবয়সী, অবিবাহিতা তাহলে মেয়েটার হয়ত প্রেমিক ছিল যার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে কনসিভ করে গেছে,আর এখন ছেলেটা মেয়েটাকে মেনে নিচ্ছে না। নিষ্পাপ বাচ্চাটার আর এই দুনিয়া দেখা হল না। একজনের পাপের ফল আরেকজনকে ভোগ করতে হয়।
,,,,..........
দুইদিন পর। মর্গে সবাইকে ডাকলেন স্যার। সামনে উপস্থিত কাল্লু,রাজিব, আরিফ, রাজিয়া। গতকাল রাতে আবারও লাশ উধাও হয়েছে। এবার একটি না। দুই দুইটি লাশ। বিপদের এই আগামবার্তার মাঝেও অল্প একটু স্বস্তি যে, লাশ দুটোই বেওয়ারিশ লাশ। অনেকদিন হয়ে গেল। কেউ নিতে আসেনি। কিন্তু তারপরও লাশ হারিয়ে যাওয়া, অন্য লাশের হাতে,পায়ে কামড়ের দাগ নিশ্চয়ই কোন পার্ভাট মানুষের কাজ। তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতেই হবে। নয়ত দেখা যাবে, সকালে আসা লাশ বিকালে উধাও হয়ে গেলো! মিডিয়াতে জানাজানি হয়ে গেলো। তখন সবার চাকরি যাবে। স্যার রীতিমতো ধমকাতে লাগলেন সবাইরে। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর কাল্লুই বললো ঃ
--স্যার একটা কাজ করা যায়।
--কি কাজ?
--স্যার আপাতত কয়েকদিন আমরা যে চারজন আছি তারা একেক দিন করে মর্গ পাহারা দেই। যদি আমাদের বাইরে কেউ কাজটা করে থাকে তাহলে সে নিশ্চিত ধরা পড়বেই।
কাল্লুর কথা শেষ হতে না হতেই রাজিয়া আবদার করে বসলো-
স্যার আমি মেয়ে মানুষ। লাশ এমনিতেই ভয় পাই। পেটের দায়ে এখানে চাকরি করি। দিনে লাশ ঘরে থাকি,রাতে রুমে গিয়ে ঘুমাতে পারিনা, খেতে পারিনা। কাল্লু ভাইদের রান্না করার কথা ছিলো। তাও করিনা। কাজ শেষ হলেই দৌড়ে বাসায় চলে যাই। রাতে এসব লাশ স্বপ্নে দেখি। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি। আমি না থাকলে হয়না স্যার?
রাজিয়ার কথা শেষ হতে আরিফ ও কাল্লু দুজনই রাজিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বললো। অগত্যা স্যার সেদিন আরিফকে পাহারায় থাকতে বললো। আর পরদিন রাতে কাল্লুকে ঠিক করে স্যার চলে গেলেন।
পরদিন সকাল ১১ টা। প্রায় ৪০ জন মেডিকেল স্টুডেন্ট নিয়ে স্যার লাশকাটা ঘরে ঢুকলেন। আজ অন্য মেডিকেল থেকে আসা এইসব ছেলেমেয়েদের পোস্ট মর্টেম দেখাবেন। কাল্লুকে ডাকা হলো। দরজা খুলতেই দেখা গেল আরও ভয়ানক এক ঘটনা। মেঝেতে আরিফের লাশ পড়ে আছে।লাশের গায়ে কোন কাপড় চোপড় নেই,হাত পায়ের মাংস নেই, মাথাটা ফাটিয়ে মগজ টাও বের করে রাখা, বুকের ওপর ধারালো ছুরির আঘাত, মেঝেতে গড়িয়ে পড়া রক্ত জমাট বেঁধে গেছে,রক্তের উপর দিয়ে হেটে যাওয়া পায়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! ছাত্র ছাত্রীরা ভয়ে দৌড়ে মর্গ থেকে বের হয়ে গেলো।
(চলবে..)
জহিরুল হক জাবেদ
--আসসালামু আলাইকুম স্যার। স্যার কি ঘুমায়া গেছেন?
--নারে কাল্লু। খুব দুশ্চিন্তায় আছি রে।
--কি নিয়া স্যার?
--এইযে লাশ উধাও হয়ে গেলো এর পিছনের রহস্য কি?
--স্যার এর আগেও নাকি বাংলাদেশের কোন হাসপাতাল থেকে লাশ উধাও হয়ে যেতো?
--হ্যা। দুইটা লাশ উধাও হইছিল। তবে অনেক লাশের সাথে খারাপ কিছু হয়েছিল।
--কে/কারা করতো এগুলো?
--যারা সারাক্ষণ লাশের সাথে থাকে তাদের ই একজন।
--আপনার কি মনে হয় আমি এমন কাজ করতে পারি?
--আরেহ না। তুই আমার বিশ্বস্ত লোক। অনেক বছর যাবত আমার সাথে আছিস। তোর উপর আমার ভরসা আছে।
--তাহলে স্যার কে করতে পারে এমন কাজ?
--জানিনা। প্রচুর ভাবতে হবে। আচ্ছা নতুন যে দুইজন জইন করল ওরা কই রে?
--স্যার রাজিয়া এখনো আসেনি। গতকাল নাকি শরীর খারাপ করছিলো। তাই তাড়াতাড়ি চলে গেছিল। আর আরিফ নিচে আছে। রাজিব ছুরিতে শান দিতেছে। আজ অনেক লাশ এসেছে। বাহিরে প্রচুর মানুষ। আমি বাহিরে বসে ছিলাম। একেকজন এসে হাত, পা ধরে বলতেছে তাদের লাশটা তাড়াতাড়ি কেটে সেলাই করে দিয়ে দিতে।
.....
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার। তারপর আস্তে আস্তে বললেন,,,
-দেখলি কাল্লু আমরা সারাজীবন শুধু বন্ধু,বান্ধব,পরিবার, পরিজন নিয়েই ভাবি। অথচ মরার পর কি হবে ভাবিনা। এইযে দেখ, আজ যে লাশ হয়ে শুয়ে আছে, কে জানি কত দাঁতভাঙা পরিশ্রম করেছে পরিবারের জন্য! সংসারে সুখ আনার জন্য,না খেয়ে হয়ত সন্তানের জন্য প্রিয় খাবারটা নিয়ে আসতো সব সময়। অথচ মরার পর আর কেউ নেই তার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কবরে দিতে পারলেই বাঁচে। এটাই জীবন রে!!
--হুম স্যার। স্যার অনেক কাজ আছে। চলেন শুরু করে দেই।
--কি কি কেইস আছে?
--স্যার একটা বাচ্চা ছেলে ছাদে ঘুড়ি উড়াতে যেয়ে পরে গিয়ে মারা গেছে, দুইটা রেইপের কেস, একটা সড়ক দুর্ঘটনা, দুইটা খুন, দুইটা ফাঁসি, একটা বিষ খেয়ে মারা যাওয়ার কেস!
--সবার আত্নীয় আছে বাহিরে?
--না স্যার। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া লোকটার কোন আত্নীয় আসে নি। হয়ত এখনো খোঁজ পায়নি। টিভি,পেপারে দেখে হয়ত জানতে পারবে।
--আচ্ছা তাহলে এক কাজ কর। এই লাশটা আলাদা করে রাখ। যেহেতু এটা বেওয়ারিশ লাশ এটা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ৬ মাস, ১ বছর পরেও কেউ না নিতে আসলে গণকবর দিতে হবে।
--আচ্ছা স্যার যাচ্ছি।
,,,,,,,,,,
কাল্লুকে কাজ শুরু করতে বললেন। কাল্লু আর রাজিব তাদের পাকা হাতে যত দ্রুত সম্ভব লাশগুলো কেটে সেলাই করে দিতে লাগলো। পুরো মর্গ রক্তে ভেসে গেলো। বিশ্রী এক গন্ধে পুরো রুম ছেয়ে গেছে। সব লাশ আত্নীয়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হল। বাকি পরে রইলো বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করার কেইসটা। ভিকটিম একজন মেয়ে মানুষ। তাই স্যার চেয়ারে বসে যেই থানা থেকে লাশ এসেছে সেই থানা থেকে দেওয়া কেইস ফাইলটা পড়া শুরু করলেন। এমনও হতে পারে পুরো ফাইলটা পড়েই স্যার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে ফেলতে পারবেন। প্রায় ২০ মিনিট সময় নিয়ে ফাইল শেষ করে কাল্লুকে লাশ কাটতে বললেন।
কাল্লু তার দক্ষ হাতে নাভির নিচ থেকে গলা অব্ধি কাটলো। তারপর বুকের হাড্ডি কেটে একে একে হৃদপিন্ড, লিভার, ফুসফুস,স্টমাক,ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত সব কাটলো। লিভার আর স্টমাকের কিছু অংশ সে প্রিজার্ভ করে রাখল কেমিক্যাল এক্সামিনিশানের জন্য।এই সেম্পলটুকু অন্য জায়গায় পাঠাতে হবে উন্নত যন্ত্রপাতি দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য। স্যার মেয়েটার তলপেটে হাত দিল। কিছু একটা সন্দেহ হল। কাল্লুকে বললেন খুব যত্ন সহকারে জরায়ু পরীক্ষা করতে। জরায়ু দেখতে গিয়েই মৃত্যুর কারণ মোটামুটি নিশ্চিত করলেন ডা রফিক স্যার। জরায়ুতে একটা বাচ্চা আছে। হাত পা এখনো ভালভাবে ডেভেলপ করেনি,খুউব ই অল্প কিছুদিন হবে কনসিভ করেছে মেয়েটা। স্যার এবার কাল্লুকে বুঝাতে লাগলেন, যেহেতু মেয়েটা অল্পবয়সী, অবিবাহিতা তাহলে মেয়েটার হয়ত প্রেমিক ছিল যার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে কনসিভ করে গেছে,আর এখন ছেলেটা মেয়েটাকে মেনে নিচ্ছে না। নিষ্পাপ বাচ্চাটার আর এই দুনিয়া দেখা হল না। একজনের পাপের ফল আরেকজনকে ভোগ করতে হয়।
,,,,..........
দুইদিন পর। মর্গে সবাইকে ডাকলেন স্যার। সামনে উপস্থিত কাল্লু,রাজিব, আরিফ, রাজিয়া। গতকাল রাতে আবারও লাশ উধাও হয়েছে। এবার একটি না। দুই দুইটি লাশ। বিপদের এই আগামবার্তার মাঝেও অল্প একটু স্বস্তি যে, লাশ দুটোই বেওয়ারিশ লাশ। অনেকদিন হয়ে গেল। কেউ নিতে আসেনি। কিন্তু তারপরও লাশ হারিয়ে যাওয়া, অন্য লাশের হাতে,পায়ে কামড়ের দাগ নিশ্চয়ই কোন পার্ভাট মানুষের কাজ। তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতেই হবে। নয়ত দেখা যাবে, সকালে আসা লাশ বিকালে উধাও হয়ে গেলো! মিডিয়াতে জানাজানি হয়ে গেলো। তখন সবার চাকরি যাবে। স্যার রীতিমতো ধমকাতে লাগলেন সবাইরে। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর কাল্লুই বললো ঃ
--স্যার একটা কাজ করা যায়।
--কি কাজ?
--স্যার আপাতত কয়েকদিন আমরা যে চারজন আছি তারা একেক দিন করে মর্গ পাহারা দেই। যদি আমাদের বাইরে কেউ কাজটা করে থাকে তাহলে সে নিশ্চিত ধরা পড়বেই।
কাল্লুর কথা শেষ হতে না হতেই রাজিয়া আবদার করে বসলো-
স্যার আমি মেয়ে মানুষ। লাশ এমনিতেই ভয় পাই। পেটের দায়ে এখানে চাকরি করি। দিনে লাশ ঘরে থাকি,রাতে রুমে গিয়ে ঘুমাতে পারিনা, খেতে পারিনা। কাল্লু ভাইদের রান্না করার কথা ছিলো। তাও করিনা। কাজ শেষ হলেই দৌড়ে বাসায় চলে যাই। রাতে এসব লাশ স্বপ্নে দেখি। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি। আমি না থাকলে হয়না স্যার?
রাজিয়ার কথা শেষ হতে আরিফ ও কাল্লু দুজনই রাজিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বললো। অগত্যা স্যার সেদিন আরিফকে পাহারায় থাকতে বললো। আর পরদিন রাতে কাল্লুকে ঠিক করে স্যার চলে গেলেন।
পরদিন সকাল ১১ টা। প্রায় ৪০ জন মেডিকেল স্টুডেন্ট নিয়ে স্যার লাশকাটা ঘরে ঢুকলেন। আজ অন্য মেডিকেল থেকে আসা এইসব ছেলেমেয়েদের পোস্ট মর্টেম দেখাবেন। কাল্লুকে ডাকা হলো। দরজা খুলতেই দেখা গেল আরও ভয়ানক এক ঘটনা। মেঝেতে আরিফের লাশ পড়ে আছে।লাশের গায়ে কোন কাপড় চোপড় নেই,হাত পায়ের মাংস নেই, মাথাটা ফাটিয়ে মগজ টাও বের করে রাখা, বুকের ওপর ধারালো ছুরির আঘাত, মেঝেতে গড়িয়ে পড়া রক্ত জমাট বেঁধে গেছে,রক্তের উপর দিয়ে হেটে যাওয়া পায়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! ছাত্র ছাত্রীরা ভয়ে দৌড়ে মর্গ থেকে বের হয়ে গেলো।
(চলবে..)
জহিরুল হক জাবেদ
Tags:
ভৌতিক গল্প