কি ভাবে সুপারনোভা তৈরী হয়?



সেই সুদূর অতীত থেকেই মানুষ রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করে আসছে। আধুনিক মহাকাশ পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার আগে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে অন্তত সাত আটবার রাতের আকাশ দেখে মানুষ আশ্চর্য হয়ে গেছে। একটি নতুন, চকচকে, উজ্জ্বল নক্ষত্রের আকস্মিক উপস্থিতিতে অবাক হওয়ারই কথা। পূর্বে না দেখা নতুন আলোক বিন্দুটি আকাশে ফুটে ওঠে। কিছু সময়ের জন্য উজ্জ্বল হতে দেখা যায় এবং তারপর ধীরে ধীরে কয়েক মাস বা কয়েক বছরের মধ্যে বিবর্ণ হয়ে যায়। অবশেষে এটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়।

1572 সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে (Tycho Brahe) এদের নামকরণ করেছিলেন stella nova (নতুন তারা)। এই ঘটনাগুলি এখন সুপারনোভা হিসাবে স্বীকৃত। একটি বিশাল নক্ষত্র বা নাক্ষত্রিক মৃতদেহ (stellar corpse) একটি অনিয়ন্ত্রিত ফিউশন বিক্রিয়ার (runaway fusion reaction) মধ্য দিয়ে যায়, এটির চারপাশের নাক্ষত্রিক ধ্বংসাবশেষকে ব্যাপকভাবে উজ্জ্বল করে এবং আলোকিত করে। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিস্তারিতভাবে তাদের দুটি ভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন, হয় তারার অবশিষ্টাংশ থেকে উদ্ভূত বা একটি বিশাল নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় পতন (core collapse) থেকে। যদিও আমরা তারার জীবন-মৃত্যু সম্পর্কে আরও অনেক কিছু শিখেছি। আমরা এখন জানি যে সুপারনোভা তৈরির ছয়টি ভিন্ন উপায় আছে।

নক্ষত্র যখন প্রথম জন্মগ্রহণ করে, তখন তাদের একটি বৈশিষ্ট্য থাকে যা তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি নির্ধারণ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা হলো সেই নক্ষত্রটির ভর। একটি নক্ষত্র যদি সূর্যের ভরের প্রায় 40% এর কম হয় তবে সেটি শুধুমাত্র হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিবর্তিত করতে পারে। যখন এই ধরনের একটি তারার জ্বালানী ফুরিয়ে যায়, তখন সমগ্র বস্তুটি একটি সাদা বামনে পরিণত হয়।

তারাটি যদি সূর্যের মতো হয়, আমাদের সূর্যের ভরের 40% থেকে প্রায় 8 গুণ, সেই তারাটি কেন্দ্রে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে ফিউশন করতে সক্ষম হবে। যখন তারাটির হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে, তখন কেন্দ্রটি সংকুচিত হতে শুরু করবে। এই ঘটনা তারাটিকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং এমন একটি তাপমাত্রায় পৌঁছায় যাতে কেন্দ্রে থাকা হিলিয়াম কার্বনে পরিণত হতে সক্ষম হয়। যার ফলে তারাটি একটি লোহিত দানবে পরিণত হয়। যখন এটির হিলিয়াম ফুরিয়ে যায়, তখন বাইরের স্তরগুলি বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। এরফলে একটি বিশাল শ্বেত বামন নক্ষত্রকে ঘিরে একটি গ্রহীয় নীহারিকা (planetary nebula) তৈরি করে। এটি আমাদের সূর্যের চূড়ান্ত পরিণতি।

কিন্তু মূল তারাটি যদি আরও বড়ো হয় সে তার কেন্দ্রে কার্বন উৎপাদন অবধি থেমে যায় না। তখন এটি এমন তাপমাত্রা পর্যন্ত উত্তপ্ত হয় যা কার্বনকে অক্সিজেনে, অক্সিজেনকে আরও ভারী উপাদানে করতে করতে পর্যায় সারণীতে আরও নীচে নামতে থাকে। যখন অবশেষে লোহা, নিকেল এবং কোবাল্টের মতো উপাদানগুলিতে পৌঁছায় তখন কিছু আকর্ষণীয় ঘটনা ঘটে। এই উপাদানগুলি হল মহাবিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল নিউক্লিয়াসগুলির মধ্যে অন্যতম। এদের প্রতি একক ভরের জন্য binding energy সর্বোচ্চ। আপনি যদি দুটি লোহার নিউক্লিয়াসকে একত্রে ফিউজ করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনাকে অত্যন্ত বেশি শক্তি ব্যয় করতে হবে।

তার পরিবর্তে নক্ষত্রের কেন্দ্রটি শুধু ভেঙে পড়ে (collapses), শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত ফিউশন বিক্রিয়া (runaway fusion reaction)। এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ ধরনের সুপারনোভা তৈরী করে, তা হলো একটি কোর-কোলাপ্স (core-collapse) সুপারনোভা।

তবে সুপারনোভা তৈরী হওয়ার এটিই একমাত্র উপায় নয়। যদি মূল নক্ষত্রটি সেই কোর-কোলাপ্স সীমায় পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট বড় না হয়, তবে এটি যে সাদা বামনটিকে অবশিষ্ট রেখে গেছে তার এখনও সুপারনোভা স্ট্যাটাস অর্জনের সুযোগ রয়েছে। শ্বেত বামনদের অভ্যন্তরে কোনো পারমাণবিক ফিউশন ঘটে না এবং তাই মহাকর্ষীয় পতনের বিরুদ্ধে নাক্ষত্রিক অবশিষ্টাংশকে ধরে রাখার জন্য বিকিরণ চাপের কোনো নতুন উৎস নেই।

সেই পতনকে প্রতিহত করার জন্য সেই তার কাছে যা আছে তা হল পাউলি এক্সক্লুশন নীতি (Pauli Exclusion Principle) থেকে উদ্ভূত একটি কোয়ান্টাম বল। এই নীতি অনুযায়ী যে কোনও দুটি ফার্মিয়ন একই কোয়ান্টাম অবস্থা দখল করতে পারে না। এর মধ্যে রয়েছে প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন। এই কোয়ান্টাম নিয়মই শ্বেত বামনদের আরও ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে।

তবুও, যদি সেটি একটি নির্দিষ্ট ভরের প্রান্তিক সীমা অতিক্রম করে, তখন তারাটি সেই কোয়ান্টাম বাধা অতিক্রম করে এবং সেই ঘটনা একটি অনিয়ন্ত্রিত ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করে। তখন শ্বেত বামন নক্ষত্রটি বিস্ফোরিত হয় এবং একটি ভিন্ন শ্রেণীর সুপারনোভা উৎপন্ন হয়। সেটা হলো thermal runaway supernova.

সুতরাং, আমরা কোর কোল্যাপ্স সুপারনোভা এবং থার্মাল রানওয়ে সুপারনোভা পেয়েছি। তার মানে কি মাত্র দুটি আলাদা পদ্ধতি আছে?

ঠিক তা নয়। এই দুটি প্রকারের সুপারনোভা তৈরি করার একাধিক উপায় রয়েছে এবং প্রতিটি প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

🛑 শ্বেত দানব তারকার ভর যদি সূর্যের 1.4 গুণের কম হয়, তবে সেটি স্থিতিশীল হবে। এই ভরের সীমাকে চন্দ্রশেখর সীমা (Chandrasekhar limit) বলা হয়। যদি এটি তার চেয়ে বেশি বড়ো হয়, তবে অভিকর্ষের তীব্র চাপে শ্বেত বামনের কেন্দ্রে থাকা উপাদানটি আবারও পারমাণবিক ফিউশন শুরু করবে। এটি একটি ফিউশন চেইন বিক্রিয়া শুরু করবে যা সম্পূর্ণ শ্বেত বামনকে ধ্বংস করবে এবং একটি Type Ia সুপারনোভা তৈরি করবে।

মহাবিশ্বের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক তারকা একাধিক নক্ষত্র সিস্টেমের (multiple star system) অন্তর্গত। এই সিস্টেমের কোনো একটি নক্ষত্র যদি শ্বেত বামন হয় তাহলে সে তার সঙ্গী নক্ষত্রের কাছ থেকে ভর চুরি করতে পারে। সমস্ত "স্বাভাবিক" নক্ষত্রের চেয়ে শ্বেত বামন নক্ষত্ররা বেশি ঘন হওয়ায় প্রায়ই একটি মাল্টি-স্টার সিস্টেমের মধ্যে এই ঘটনা দেখা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শ্বেত বামনের ভর বৃদ্ধি পেতে পেতে চন্দ্রশেখর সীমা অতিক্রম করলেই তা সুপারনোভায় বিস্ফোরিত হয়।

🛑 এই ভর চুরি করা পদ্ধতি অবশ্যই ধীর গতিতে চলে। এভাবে শ্বেত বামনটি ধীরে ধীরে সেই ক্রিটিক্যাল ভর সীমার (চন্দ্রশেখর সীমা) দিকে অগ্ৰসর হতে থাকে। এই সীমাটি অতিক্রম করার একটি আকস্মিক উপায় আছে, যদি শ্বেত বামনটি অন্য নক্ষত্র বা নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশের সাথে মিশে যায়। যদি একটি শ্বেত বামন অন্য একটি শ্বেত বামনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তবে এটি কেবল চন্দ্রশেখরের সীমা অতিক্রম করবে না, বরং এটির আরও বাইরে যেতে পারে। তখন আবার তৈরী হবে Type Ia সুপারনোভা।

🛑 যদি প্রথমে একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় আট গুণের কম হয় তখন তার কেন্দ্রে পারমাণবিক ফিউশনের মাধ্যমে কার্বন উৎপাদন করাই হলো লাইনের শেষ পর্যায়। যদি এর থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে এবং সম্ভবত 8 থেকে 10 গুণ সৌর ভর দিয়ে নক্ষত্রটি শুরু হয়, সে কার্বনে অতিরিক্ত হিলিয়াম নিউক্লিয়াস যোগ করার ক্ষমতা অর্জন করবে। এরপর সেই নক্ষত্র অক্সিজেন, নিয়ন এবং তারপর ম্যাগনেসিয়াম পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।

কেন্দ্রে O/Ne/Mg এর মিশ্রণের সাথে, ম্যাগনেসিয়াম একটি বিশেষ পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটাতে পারে যার নাম ইলেকট্রন ক্যাপচার (electron capture) যা ম্যাগনেসিয়ামকে সোডিয়ামে রূপান্তরিত করে। এটি নক্ষত্রের কেন্দ্রে ডিজেনারেসি চাপকে (degeneracy pressure) কিছুটা কমিয়ে দেয়। এর ফলস্বরূপ কেন্দ্রে অতিরিক্ত মহাকর্ষীয় পতন ঘটে এবং তার তাপমাত্রা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এরপরেই শুরু হয় কোর কোলাপ্স সুপারনোভা, এবং অবশিষ্টাংশ নিউট্রন তারকা তৈরি করে। নিউট্রন তারকা তৈরী হওয়ার জন্য এটিই সর্বনিম্ন ভর।

🛑 মূল নক্ষত্রটির ভর যদি দশ গুণের চেয়ে বেশি হয়, তার কেন্দ্রে ভারী, আরও ভারী মৌলিক উপাদান তৈরি হতে পারে যখন প্রকৃতি নিজেই ঘোষণা করে যে এটি আর নিউক্লিয়াস ফিউজ করার জন্য শক্তির দিক থেকে অনুকূল নয়। কার্বন থেকে অক্সিজেন থেকে সিলিকন এবং সালফার, তা থেকে আয়রন, কোবাল্ট আর নিকেল। তারপর নক্ষত্রের আর কোথাও যাওয়ার নেই।

তখন কেন্দ্রে আর কোন অতিরিক্ত বিকিরণের চাপ তৈরি হয় না এবং কোরটি ইতিমধ্যেই চন্দ্রশেখরের সীমা অতিক্রম করে। এখানেই কোর কোলাপ্সের সূচনা যা অবশিষ্টাংশ হিসাবে একটি নিউট্রন তারকা অথবা ব্ল্যাক হোল তৈরী করার জন্য সুপারনোভার জন্ম দেয়। এই আয়রন কোর কোলাপ্স (iron core collapse) মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া সমস্ত সুপারনোভা গুলির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

🛑 সূর্যের চেয়ে দশগুণের চেয়ে বেশি ভারী নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে আরও একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটতে পারে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে লোহার চেয়ে ভারী মৌলগুলি তৈরী হতে পারে। এটি একটি বিরল প্রক্রিয়া দ্বারা গঠিত হয় যার মধ্যে নিউট্রন কণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াকে rapid neutron-capture process বা r-process বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একটি মুক্ত নিউট্রন একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে বন্দী হয়, যা উচ্চতর পারমাণবিক ভর সংখ্যা সহ একটি নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এখানে সমস্যা হল মুক্ত নিউট্রন সহজাতভাবে অস্থির কণা যা বিটা-ক্ষয় প্রক্রিয়ার (beta decay process) মধ্য দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রোটন, একটি ইলেক্ট্রন এবং একটি অ্যান্টিনিউট্রিনো গঠন করে। কার্যকরীভাবে r-process সক্রিয় করার জন্য, নিউট্রনগুলিকে তাদের ক্ষয়ের চেয়ে দ্রুত ক্যাপচার করতে হবে। তাই নিউট্রন সমৃদ্ধ পরিবেশ প্রয়োজন। দুটি নিউট্রন তারার একত্রিত হওয়ার সময় এরকম একটি পরিবেশ তৈরি হয়। এই r-process nucleosynthesis অন্যান্য মহাজাগতিক বিস্ফোরণের সময়ও দেখা যায়। এরকম একটি বিস্ফোরণ কোলাপসার (collapsar) নামে পরিচিত।

নক্ষত্রের প্রথম সুপারনোভার পর তার অবশিষ্টাংশ যদি নিউট্রন স্টারের পরিবর্তে একটি ব্ল্যাক হোল গঠন করে, তবে বেশিরভাগ নক্ষত্র ব্ল্যাক হোলের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে এবং অন্তত সেই সময়ের জন্য খুব কম উপাদান বের হয়ে যাবে। ব্ল্যাক হোল যে নক্ষত্রটি তৈরি করেছিল তার ভর যদি 20-30 গুণ সৌর ভরের হয় এবং সত্যিই দ্রুত ঘুরতে থাকে তবে এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। এই নক্ষত্রের বৃহৎ কৌণিক ভরবেগের কারণে এর মোট ভরের একটি বড় ভগ্নাংশ তৎক্ষণাৎ নির্গত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু নির্গত উপাদান রিলেটিভিস্টিক (relativistic) গতিতে ত্বরান্বিত হতে পারে (আলোর গতির সাথে তুলনীয়)। এর ফলে উচ্চ-শক্তি বিশিষ্ট ফোটনের একটি স্রোত তৈরি করে যাকে গামা-রে বিস্ফোরণ (gamma-ray bursts বা GRB) বলা হয়। গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ ছাড়াও, অবশিষ্ট নিক্ষিপ্ত উপাদান [যা রিলেটিভিস্টিক নয় কিন্তু এখনও সত্যিই দ্রুত গতিতে চলছে (প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 20,000 কিমি)] একটি নিয়মিত সুপারনোভার মতো বিস্ফোরণ তৈরি করতে পারে। একটি দ্রুত ঘূর্ণায়মান বিশাল নক্ষত্রের এই বিস্ফোরণটিই হলো কোলাপসার।

কোলাপসার থেকে নির্গত হওয়া উপাদান গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ এবং সুপারনোভাকে শক্তি দিতে পারে। যেহেতু এই উপাদানটির অনেক বেশি পরিমাণে কৌণিক ভরবেগ রয়েছে, তাই এটি নবগঠিত ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একটি ডিস্ক তৈরি করতে পারে। এই ডিস্কের বেশিরভাগই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্ল্যাক হোল দ্বারা সংগৃহীত হবে ও ডিস্কের উপাদানগুলিকে ধ্বংস করবে। ডিস্কের প্রবল গতিতে ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পতনের প্রতিক্রিয়ায় ডিস্কের একটি কিছু অংশকে বের করে দিতে পারে। এই অংশটি অত্যন্ত বেশি নিউট্রন কণা সমৃদ্ধ এবং এখানেই r-process nucleosynthesis ঘটে। এই প্রক্রিয়ার ফলে সোনা, রূপা, প্লাটিনাম, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি মৌলগুলি উৎপন্ন হতে পারে।

🛑 কিছু নক্ষত্র অনেক বড়ো হয়, সূর্যের ভরের 100 গুণ বা তারও বেশি। এদের কেন্দ্রের তাপমাত্রা এত বেশি হতে পারে যে কিছু ফোটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তির সীমানায় পৌঁছে যেতে পারে, প্রতি ফোটনে 511,000 ইলেকট্রন-ভোল্ট। যখন এই ধরনের তাপমাত্রায় দুটি ফোটন মিথষ্ক্রিয়া করে তখন তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইলেক্ট্রন-পজিট্রন জোড়ায় রূপান্তরিত হবে। আইনস্টাইনের E = mc^2 এর মাধ্যমে, বিশুদ্ধ শক্তি পদার্থ এবং প্রতিপদার্থে রূপান্তরিত হতে পারে।

এই ঘটনা নক্ষত্রটির জন্য একটি মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনে। যখন এটি ঘটে, ফোটনের চাপ কমে যায়, যা মহাকর্ষীয় পতনকে শুরু করে। এরফলে কেন্দ্রে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায় এবং আরও ফোটনকে ম্যাটার-অ্যান্টিম্যাটার জোড়ায় রূপান্তরিত করে, চাপকে আরও কমিয়ে দেয়। খুব কম সময়ের মধ্যেই এর হার এতো বেশি হয়ে যায় যে কেন্দ্রে অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ফিউশন এত দ্রুত হয় যে পুরো নক্ষত্রটি ধ্বংস হয়ে যায়, কোন অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকে না। এটি হাইপারনোভা বা সুপার-লুমিনাস সুপারনোভার উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এই ধরণের সুপারনোভা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল কোর-কোলাপ্স সুপারনোভা। একে Pair-instability সুপারনোভা বলে।

🛑 আরও বৃহত্তর মূল নক্ষত্রের দিকে যান, সূর্যের ভরের প্রায় 250 গুণ বা আরও ভারী। সেখানে Pair-instability সবে শুরু হয়েছে।এই আরও উচ্চতর তাপমাত্রায় ফোটন অত্যধিক শক্তির সাহায্যে কেন্দ্রে উপস্থিত ভারী পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে আঘাত করতে পারে এবং তাদের থেকে প্রোটন, নিউট্রন বা এমনকি হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের মতো কণাকে বের করে দিতে পারে (প্রতিটি নিউক্লিয়াস দুটি প্রোটন এবং দুটি নিউট্রন দিয়ে তৈরি)।

এই ঘটনা Pair-instability চেয়ে নক্ষত্রের জন্য আরও বিপর্যয়কর ভবিষ্যৎ ডেকে আনে। নক্ষত্রের বিশাল ও অতি উত্তপ্ত কেন্দ্র জুড়ে খুব দ্রুত আলোক বিভাজন বা photo-disintegration প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে। শূন্য মাধ্যমে আলোর গতির প্রায় 25% এর কাছাকাছি গতিতে কেন্দ্রটি ভেঙ্গে পড়বে। সমগ্ৰ কোরটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে। একটি গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ সহ একটি অত্যুজ্জ্বল সুপারনোভা বিস্ফোরিত হবে। এটি একটি বিশাল ব্ল্যাক হোল গঠন করে।

বিশ্বাস করুন বা না করুন, সমস্ত তারাই কোনও দিন একটি সুপারনোভার অংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি নক্ষত্র যদি একটি নির্দিষ্ট ভর সীমার উপরে জন্মগ্রহণ করে তবে তার কোরটি শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়বে এবং সেটি সুপারনোভার মাধ্যমে একটি নিউট্রন তারকা বা একটি ব্ল্যাক হোল তৈরি করবে। যদিও এমন ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি থাকতে পারে যা কখনও কখনও এই সরল চিত্রটিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

উল্টো দিকে সেই নক্ষত্রটি যদি কম ভর নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, তবে সেটি তখনও একটি সাদা বামন তৈরি করবে এবং মহাবিশ্বের প্রতিটি শ্বেত বামনের সুপারনোভা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কে জানে, ভবিষ্যতে সম্ভবত আমরা আরও অন্য কোনো উপায় আবিষ্কার করবো! সবসময় শেষে শেখার জন্য আরো কিছু থেকে যায়, তাই না?

লিখাঃ সরোজ নাগ।

সঙ্গের ছবিটি কাল্পনিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম