আমরা জানি আমাদের কাছে সূর্য হলো আলো এবং উষ্ণতার মৌলিক উৎস। একই সাথে তা পৃথিবীর জীবনের মৌলিক কারণও বটে। তবে বিচার করতে গেলে দেখা যায় সেই সূর্যই আমাদের মারাত্মক বিপদ তৈরী করার সুযোগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে।
আমরা সবাই জানি সূর্যের দিকে কখনও সরাসরি তাকাতে নেই। এর আলোর আউটপুট এত শক্তিশালী যে প্রায় 150 মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে থেকেও এটি আপনার চোখকে ঝলসে দিতে পারে। আমরা এও জানি যে সূর্যের আলোর অতিবেগুনি বর্ণালীতে ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলো আপনার ত্বকের কোষ-কলার ক্ষতি করতে পারে, যা রোদে পোড়া থেকে ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত বেশ কিছু সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। কিন্তু এই বিপদগুলি সম্পর্কে আলোচনা করছি না। প্রায় 5 বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্য একটি লোহিত দানব হয়ে ফুলে উঠবে, মহাসাগরগুলি স্রেফ বাষ্প হয়ে উবে যাবে, সমগ্ৰ পৃথিবী ঝলসে যাবে সেই সত্যতা নিয়েও কোনো কথা বলতে চাইছি না। তার পরিবর্তে সুপার সোলার ফ্লেয়ারের সাথে যুক্ত একটি উদ্বেগজনক আশঙ্কা শেয়ার করতে চাই যাকে coronal mass ejections বা CME বলা হয়। আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনের জন্য বিদ্যুতের উপর নির্ভর করেন, তাহলে সূর্য একটি CME ব্যবহার করে আপনার জন্য মারাত্মক বিপর্যয় নিয়ে অপেক্ষা করছে।
সূর্যের উপরিপৃষ্ঠটি অতি উত্তপ্ত প্লাজমা, চৌম্বক ক্ষেত্র, তীব্র শক্তি সম্পন্ন ফোটন ইত্যাদির একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মিশ্রণ যা সেখানে আপনার শরীরের প্রতিটি অনুকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি সূর্যের গভীরে গঠিত হয় যা আয়নিত গ্যাসের ঘূর্ণিপাক থেকে তাদের শক্তি সংগ্ৰহ করে। এই ক্ষেত্রগুলি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। সেগুলি কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দশক সময়কালের মধ্যে আকার এবং চরিত্র পরিবর্তন করে। যখন তারা সূর্যের গভীরে তৈরি হয়, তখন সৌর পৃষ্ঠে চৌম্বক ক্ষেত্র রেখাগুলি বিস্তীর্ণ বৃত্তচাপের (vast arcs) আকারে আবির্ভূত হয়। সাধারণত আর্কগুলি সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে ওঠে শুধুমাত্র নীচে নেমে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কখনও কখনও, যখন পরিস্থিতি অনুকূল হয় তখন উত্তপ্ত প্লাজমাকে সঙ্গে নিয়ে চৌম্বকীয় লুপগুলি সৌর পৃষ্ঠ থেকে আলাদা হয়ে মহাকাশে উড়ে যাবে। এটিই হলো একটি করোনাল মাস ইজেকশন বা CME.
[ আরও বিশদে বলতে গেলে শক্তিশালী CME সাধারণত শুরু হয় যখন সূর্যের নীচের করোনার মধ্যে থাকা খুব বেশী বাঁকানো চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কাঠামোয় (flux ropes) খুব বেশি স্ট্রেস উৎপন্ন হয় এবং একটি কম স্ট্রেসযুক্ত কনফিগারেশনে ফিরে আসে। এই প্রক্রিয়াকে চৌম্বক পুনঃসংযোগ বা magnetic reconnection বলে। এটি একটি সৌর ফ্লেয়ারের আকারে তড়িৎচুম্বকীয় শক্তির আকস্মিক নির্গমন হিসেবে নিক্ষিপ্ত হতে পারে। যখন এটি সাধারণত সূর্য থেকে দূরে অতি বৃহৎ ত্বরণ সম্পন্ন প্লাজমার সাথে মিশে থাকে তখনই CME উৎপন্ন হয়। এই ধরনের CME সাধারণত সূর্যের শক্তিশালী এবং বেশী স্ট্রেস সম্পন্ন চৌম্বকীয় প্রবাহের (magnetic flux) অঞ্চলে স্থানীয় ক্ষেত্রগুলির (localized fields) সাথে সংঘটিত হয়, যেমন সৌরকলঙ্কের (sunspot) সাথে যুক্ত সক্রিয় অঞ্চল। CME এমন স্থান থেকেও ঘটতে পারে যেখানে তুলনামূলকভাবে শীতল এবং ঘন প্লাজমা আটকে থাকে এবং ভিতরের করোনা পর্যন্ত প্রসারিত চৌম্বকীয় প্রবাহ দ্বারা ঝুলে থাকে (suspended), যাকে ফিলামেন্ট এবং solar prominence বলে। যখন সেই "flux rope" গুলি পুনরায় সজ্জিত হয়, তখন ঘন ফিলামেন্ট বা prominence সৌর পৃষ্ঠে আবার ভেঙে পড়তে পারে এবং শান্তভাবে পুনরায় শোষিত হতে পারে, অথবা একটি CME হতে পারে। ব্যাকগ্ৰাউন্ডে থাকা সৌর বায়ুর গতির চেয়ে দ্রুতবেগে গতিশীল CME একটি শক ওয়েভ তৈরি করতে পারে। এই শক তরঙ্গগুলি তাদের আগে চার্জযুক্ত কণাগুলিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। যার ফলে বিকিরণ ঝড়ের সম্ভাবনা বা তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ]
এর একটি যদি আমাদের গ্ৰহের দিকে আসে, তখন এটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। একটি সাধারণ CME অত্যধিক শক্তিতে প্রায় এক বিলিয়ন টন প্লাজমা মহাকাশে নিক্ষেপ করে। CME গুলি সূর্য থেকে বাইরের দিকে 250 কিমি/সেকেন্ড থেকে শুরু করে 3000 কিমি/সেকেন্ডের কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করে। বেশিরভাগই আমাদের জন্য ক্ষতিকারক নয়। যদিও মাঝে মাঝে, একটি CME পৃথিবীতে আঘাত করে। যখন এটি হয় তখন এটি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা একে 'মহাকাশ আবহাওয়া' (space weather) বলেন।
একটি তথাকথিত 'উচ্চ-প্রযুক্তি সম্পন্ন' সভ্যতা হয়ে ওঠার আগে, পৃথিবীর সাথে একটি CME এর সংঘর্ষ বিপদের কারণ ছিল না। আসলে এটি সুন্দর মেরুজ্যোতি (auroras) তৈরি করতে পারে। (অরোরা হল পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে চার্জযুক্ত কণার প্রবাহের কারণে আলোর নির্গমন।)
কিন্তু এখন যেহেতু আমরা বিদ্যুতের উপর খুব বেশি নির্ভর করি, একটি CME তে চার্জযুক্ত কণার বিশাল প্রবাহ আমাদের বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে। পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি-মহাকাশের পরিবেশে, CME থেকে আয়োনাইজিং বিকিরণ স্যাটেলাইট এবং মহাকাশ স্টেশনগুলিকে ছিটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই মহাকাশ ঝড়গুলি মহাকাশচারীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। এই কারণেই স্পেস স্টেশনে একটি বিশেষ প্রতিরক্ষা মূলক ব্যাবস্থা রয়েছে যাতে কোনও CME আঘাত করলে কোনো ক্ষতি না হয়।
কিন্তু আপনার এবং আমার জন্য আসল সমস্যা হল বৈদ্যুতিক পাওয়ার গ্রিড। এই মহাকাশ ঝড়ের চুম্বকত্ব বিদ্যুৎ লাইনগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, এবং বিরাট পরিমাণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হতে পারে। এই প্রভাবের একটি বিশেষ শক্তিশালী উদাহরণ 13 মার্চ, 1989 সালে ঘটেছিল। একটি মারাত্মক মহাকাশ ঝড় কানাডার কুইবেকে system-wide failure -এর কারণ হয়েছিল। পৃথিবীতে আঘাত হানা ঝড়ের সূচনা থেকে মোট ব্ল্যাকআউট পর্যন্ত সময় ছিল মাত্র 90 সেকেন্ড, এবং এর ফলে প্রায় 6 মিলিয়ন মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল।
আসল দুঃস্বপ্নের দৃশ্য হল একটি সুপার CME আমাদের গ্রহে আঘাত করছে এবং মহাদেশ জুড়ে অপ্রতিরোধ্য পাওয়ার গ্রিড ভেঙ্গে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে যদি এরকম কিছু ঘটে, বিদ্যুৎ ফিরে পেতে কয়েক মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। সেই দীর্ঘ সময়ের কারণ হল সমস্ত ট্রান্সফরমারগুলির প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাক-আপগুলির কোনও বড় আকারের সেট নেই। কল্পনা করুন সারা দেশে টানা ছয় মাস বিদ্যুত নেই! এর ফলে কী কী হতে পারে তা আপনাদের কল্পনার কাছেই ছেড়ে দিলাম।
আমরা জানি যে এই ধরনের সুপার CME সত্যিই ঘটতে পারে। আসলে হয়তো ইতিমধ্যেই এরকম একটি ঘটনার সময় হয়ে গেছে। গত 1 সেপ্টেম্বর, 1859 তারিখে পৃথিবী জুড়ে সমস্ত বৈদ্যুতিক লাইন দ্বারা সংযুক্ত টেলিগ্রাফ লাইন একটি বিশাল CME পৃথিবীতে পড়ার সাথে সাথে বৈদ্যুতিক স্পার্ক বিচ্ছুরণ করতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে "ক্যারিংটন ইভেন্ট" (Carrington Event) বলে অভিহিত করেছেন। এটি ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়গুলির মধ্যে একটি। সেই CME প্রায় 150 মিলিয়ন কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়ে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী Richard Carrington সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এই ঘটনা প্রথম সনাক্ত করেছিলেন।
সারা বিশ্ব জুড়ে আকাশ পর্যবেক্ষণকারীদের হতবাক করে দিয়ে মেরুজ্যোতি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তার লাভ করে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী অরোরা বোরিয়ালিস দক্ষিণে কিউবা এবং হনলুলু, হাওয়াই, অন্যদিকে জাপান এমনকি চীন পর্যন্ত দেখা যায়। আর অরোরা অস্ট্রালিস সান্তিয়াগো, চিলি পর্যন্ত উত্তরে দেখা গিয়েছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসে যে টেলিগ্রাফ মেশিন থেকে স্ফুলিঙ্গ ঝরছে, অপারেটররা বৈদ্যুতিক শক প্রাপ্ত হচ্ছে। সে এক বিভ্রান্তিমূলক অবস্থা। সংবাদ পত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরের দিন যখন টেলিগ্রাফ কর্মীরা কাজে ফিরে আসেন, তখনও ক্যারিংটন ইভেন্টের প্রভাবগুলি অনুভূত হচ্ছিল। বায়ুমণ্ডল তখনও খুব আয়নিত অবস্থায় ছিল। আমেরিকার বোস্টন শহর থেকে পোর্টল্যান্ড শহরে কোনো রকম ব্যাটারীর সংযোগ ছাড়াই শুধুমাত্র অরোরাল কারেন্ট (auroral current) ব্যবহার করে টেলিগ্ৰাফে বার্তালাপ করা সম্ভব হয়েছিল।
পৃথিবীতে এরপরে 1921, 1960, উপরে উল্লেখিত 1989 সালে পৃথিবীতে CME আপতিত হয়। 2012 সালের 23শে জুলাই বড়ো ধরনের সৌরঝড় দেখা গিয়েছিল যদিও তা অল্পের জন্য পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যায়।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতে যদি আজ একটি ক্যারিংটন ইভেন্ট ঘটে এটি আমাদের বৈদ্যুতিক শক্তি, জিপিএস এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনেক দিনের জন্য সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেবে। যদিও সৌর ঝড় খুব কমই মানুষের জীবনের জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করে, ESO এর বিজ্ঞানীদের মতে এটি তড়িৎচুম্বকীয় প্রভাবের মাধ্যমে মহাকাশ ভিত্তিক যোগাযোগ, নেভিগেশন এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস পরিষেবা থেকে শুরু করে স্থলভাগে বৈদ্যুতিক শক্তি বিতরণ ব্যবস্থা পর্যন্ত সবকিছুই দীর্ঘদিনের জন্য অকেজো করে দেবে। এর সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবস্থা গভীর ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
NOAA এর বিজ্ঞানীরা মনে করেন একটি অতি বৃহৎ CME পৃথিবীতে প্রায় 500 বছর অন্তর অন্তর আসতে পারে।যদিও ক্যারিংটন ইভেন্টের অর্ধেক তীব্রতা সহ সৌর CME প্রায় 50 বছর পর পর ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও আমরা নিশ্চিত হতে পারি না যে পরবর্তী ক্যারিংটন-স্তরের ঘটনা কখন ঘটবে কারণ মহাকাশ আবহাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা অত্যন্ত কঠিন।
National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) এর Space Weather Prediction Center এর বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন সূর্যের অঞ্চলগুলি বিশ্লেষণ করেন। তারা নিয়মিত ভাবে সূর্যের একটি সক্রিয় অঞ্চল থেকে পৃথিবীর দিকে আসা সৌর ঝড় এবং/অথবা CME এর সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে চলেছেন। NASA-এর একটি মহাকাশযানের বহর রয়েছে - যা সম্মিলিতভাবে Heliophysics Systems Observatory (HSO) নামে পরিচিত। এটি সূর্য এবং সৌরজগতের উপর এর প্রভাব, মহাকাশ আবহাওয়ার প্রভাব সহ অধ্যয়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে৷ HSO বেশ কয়েকটি হেলিওস্ফিয়ারিক (heliospheric), জিওস্পেস (geospace) এবং গ্রহের মহাকাশযান নিয়ে গঠিত যা সূর্যকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে চলে এবং এর কার্যকলাপ পরিমাপ করে। এই উপগ্রহগুলির মধ্যে রয়েছে পার্কার সোলার প্রোব যা সূর্যকে "স্পর্শ" করার সাহসী মিশনে প্রেরিত হয়েছে।
আমাদের সূর্য যেকোনো সময় পৃথিবীর দিকে এই আঘাত করতে প্রস্তুত। যদিও পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত coronal mass ejections সম্পর্কে খবরাখবর রাখছেন কিন্তু তা যদি আসে তখন আমাদের প্রতিরোধ করার কোনো উপায় নেই। গবেষকরা এর দরুণ উৎপন্ন বিপদকে যতোটা সম্ভব কমানোর লক্ষ্যে ভাবনা চিন্তা করছেন।
লিখাঃ সরোজ নাগ
তথ্যসূত্র – 1) National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA).
2) ESA Space Weather Service Network.
3) NASA
4) Wikipedia.
চিত্র পরিচিতি – 1) Solar and Heliospheric Observatory (SOHO) মহাকাশ যান থেকে 27 ফেব্রুয়ারী, 2000 তারিখে নেওয়া একটি CME এর ছবি। সৌজন্যে SOHO, ESA & NASA.
2) সূর্যের করোনা থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়া সৌর পদার্থের একটি দীর্ঘ ফিলামেন্ট যা 31শে আগষ্ট, 2012 সালে তৈরী হয়েছিল। সৌজন্যে – NASA Goddard Space Flight Center.
3) International Space Station থেকে তোলা মেরুজ্যোতির ছবি। সৌজন্যে – ISS Expedition 23 crew.