Microchip মাইক্রোচিপ



অনেকেই মাইক্রোচিপ কথাটা কখনো না কখনো শুনে থাকবেন।মাইক্রোচিপের ব্যবহার ব্যপক।ব্যবহার অনুযায়ী এটিকে  মাইক্রোচিপ,আইসি(ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট), মাইক্রো কম্পিউটার, মাইক্রো প্রসেসর ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। মাঝে মাঝে কিছু হলিউড মুভিতে দেখা যায় একটি ছোট চিপ মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তার লোকেশন ট্র্যাক করা হয় কিংবা ওই ব্যাক্তি অটোম্যাটিকালি অনেক কাজ করতে পারেন ওই হিডেন চিপের সাহায্যে। যেমন, গাড়ির দরজা অটোম্যাটিকালি খুলে যাওয়া বা বাড়ির ইলেক্ট্রনিক গেইট অই চিপ স্ক্যান করে খুলে ফেলা। এমন অনেক কাজ করতে দেখা যায়। এইতো মাত্র কিছুদিন আগেই করনা টিকার সাথে মাইক্রোচিপ শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুজব উঠলো। বস্তুত এই মাইক্রোচিপ টা কি? আর কিভাবেই বা এতো ছোট একটা বস্তু কাজ করে?আসলেই কি মাইক্রোচিপ এর সাহায্যে এতোকিছু করা সম্ভব? খুব শিগ্রই আশা করি উত্তর পাবেন।শেষ অবধি পড়ুন


★মাইক্রোচিপ কি?

মাইক্রোচিপ হলো অত্যন্ত ছোট একটা Integrated circuit(সমন্বিত বর্তনী)। ইন্টিগ্রেটেড শব্দটি এসেছে মূলত ইন্টিগ্রেটর শব্দটি থেকে যার অর্থ সমন্বয়। অনেক গুলো বর্তনী একত্র করে এই সার্কিট তৈরী করা হয়। এই বর্তনী গুলো হলো এক একটি ট্রান্জিস্টার।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটে লক্ষ কোটি ট্রান্জিস্টার থাকতে পারে। এগুলো এতোই ছোট যে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও এদের গঠন ভালোভাবে দেখা যায় না।


★তাহলে কিভাবে তৈরী করা হলো এই ট্রান্জিস্টার? 

১৯৪৭ সালে আমেরিকার বেল লেবরেটরিজ পরীক্ষাগারে উইলিয়াম শাকলি এবং তার দল ট্রান্জিস্টার তৈরী করেন।তারা বের করেন যে সঠিক পরিস্থিতিতে ইলেকট্রনগুলি কিছু কেলাসের পৃষ্ঠতলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এই প্রতিবন্ধকতাকে নিয়ন্ত্রণ করে কীভাবে কেলাসের ভেতর দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে ব্যাপারে তারা গবেষণা করেন। এভাবে কেলাসের ভেতর দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে তারা এমন একটি যন্ত্রাংশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেন, যা কিছু নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক কাজ সম্পাদন করতে পারত, যেমন সংকেত বা সিগনালের বৃহদীকরণ। এই কাজগুলি তার আগে ভ্যাকুয়াম টিউব তথা বায়ুশূন্য নলের মাধ্যমে সম্পাদন করা হত। তারা এই নতুন যন্ত্রাংশের নাম দিলেন ট্রানজিস্টর। এটি ছিলো ট্রান্জিস্টার এর আদি কথা। ক্রমে ক্রমে ট্রান্জিস্টার থেকে সব তার সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তৈরী হয় সম্পূর্ণ ধাতব ট্রান্জিস্টার। একটি মাত্র ধাতব পাতের উপরে সম্পূর্ণ ট্রান্জিস্টার ডিজাইন করতে সক্ষম হন জ্যাক কিবলি এবং রবার্ট নয়েস ১৯৫৮ সালে। ধিরে ধিরে এই ট্রান্জিস্টার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে।


★ ট্রান্জিস্টার তৈরীর প্রসেস

সিলিকনের সাথে ফসফরাস এবং সিলিকনের সাথে বোরন যোগ করে যথাক্রমে অর্ধপরিবাহী n conductive layer এবং p conductive layer তৈরী করা হয়। এই n-type এবং p-type কে একত্র করে ডায়োড তৈরী করা হয়। দুইটা ডায়োড একত্র করে npn(negative positive negative)কিংবা pnp(positive negative positive) ট্রান্জিস্টার তৈরী করা যায়। প্রতিটি ট্রান্জিস্টার এর তিনটা পা থাকে, বেস-ইমিটার-কালেক্টর। npn ট্রান্জিস্টার এর বেজে কারেন্ট দিলে কালেক্টর থেকে ইমিটারে কারেন্ট প্রবাহিত হবে।আর pnp ট্রান্জিস্টারের বেজে কারেন্ট দিলে কালেক্টর থেকে ইমিটারে কারেন্ট ফ্লো হবে না।কারেন্টের গতি রোধ হবে।এটা হলো সুইচ হিসেবে ট্রান্জিস্টারের ব্যবহার। এছাড়াও এমপ্লিফায়ার হিসেবেও(লো সিগনালকে হাই সিগনালে রুপান্তর) ট্রান্জিস্টার ব্যবহার করা হয়। একটি সিলিকনের পাতলা পাতের উপর Electron beam lithography প্রযুক্তির মাধ্যমে কোটি কোটি ট্রান্জিস্টার প্রিন্ট করা যায়। যেগুলো একটি চুলের চেয়ে ১০ হাজার গুন ছোটও হতে পারে।আগেই বলেছি ট্রান্জিস্টার সিগনাল বর্ধিতকরন এবং সুইচ অন অফ করতে ব্যবহার হয়। সুইচ অন অফ বলতে বুঝায় কারেন্ট আছে এবং কারেন্ট নেই। কারেন্ট আছে মানে 1 এবং কারেন্ট নেই মানে হলো 0। ট্রান্সমিটারে কারেন্ট ফ্লো হওয়া এবং না হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে। একটি ট্রান্জিস্টার সেকেন্ডে ৫০হাজার বারও অন অফ হতে পারে। এটি নির্ভর করে ট্রান্জিস্টার এর ক্ষমতার উপর। ট্রান্জিস্টারের ডাটা শিটে এর সক্ষমতার তথ্য দেওয়া থাকে। দুটি ট্রান্জিস্টার এর মাধ্যমে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজের সবচেয়ে ছোট একক ১বিট তৈরী করা যায়। আর একটি মাইক্রোচিপে থাকে লক্ষ লক্ষ ট্রান্জিস্টার। যেগুলো একিসাথে কোটি কোটি বিট প্রসেস করতে পারে। আর এইসকল বিট প্রসেস করার মাধ্যমেই আপনি আপনার ফোনে গেমস খেলতে পারছেন,ভিডিও দেখতে পারছেন,ক্যালকুলেশান করতে পারছেন। কম্পইউটার যেহেতু আমাদের ভাষা বুঝে না তাই তাকে বুঝাতে হয় সুইচ অন অফ বা মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ পদ্ধতিতে। 


★ মাইক্রোচিপের ব্যবহার

কম্পিউটারের প্রসেসর, মেমরি, মোবাইলের প্রসেসর,সেন্সরসহ বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসেই মাইক্রোচিপ ব্যবহার করা হয় যা থাকে বহু ট্রান্জিস্টার এর সমন্বিত বর্তনী সংক্ষেপে যাকে আইসি বলা হয়।এছাড়াও বর্তমানে জীবন কে আরো সহজ করার জন্য উন্নত দেশগুলোতে অনেক মানুষ নিজের শরীরের মধ্যে মাইক্রোচিপ ইনজেক্ট করছে। যেগুলো প্রত্যেকটি এক একটি চালের সমান। এসকল মাইক্রোচিপের রয়েছে নিজস্ব আইডেন্টিটি। প্রতিটা মাইক্রোচিপে বিভিন্ন তথ্য ইনপুট করা থাকে যেগুলো হতে হ্যান্ডহোল্ড স্ক্যানারের মাধ্যমে সিগনাল সংগ্রহ করা যায় এবং ইনফরমেশানে কনভার্ট করা যায়। এভাবেই মাইক্রোচিপ ব্যবহারকারী একটি মানুষের আইডেন্টিটি   শনাক্ত করতে পারে স্ক্যানার এবং অটোম্যাটিকালি এই চিপের মাধ্যমে বিভিন্ন এক্সেস নিতে পারে ব্যক্তি। তাছাড়াও মাইক্রোচিপের সাহায্যে ব্যাক্তির লোকেশন ট্র্যাক করাটাও অস্বাভাবিক কিছু না। উন্নত দেশ গুলোতে বিভিন্ন পোশা প্রানির গায়ে চিপ ঢুকানো হয় যাতে করে প্রাণিটি হারিয়ে গেলে তার শরীরে ঢুকানো চিপের মাধ্যমে আবার তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এরকম বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে মাইক্রোচিপের। যা বলে শেষ করা যাবে না।

Writer: Adri Anan

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম