বস্তর ভর (mass) কী?



গতকাল একটি বিজ্ঞান গ্রুপে একজনকে জিজ্ঞেস করতে দেখলাম, "বস্তুর ভর (mass) কী জিনিস?"

গ্রুপের সদস্যদের অনেকেই যে যার মত করে প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার চেস্টা করেছে। সবার উত্তরেই কমবেশি যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে, সেটি হল "কোন বস্তুতে উপস্থিত মোট পদার্থের পরিমাণই হল ঐ বস্তুর ভর। অর্থাৎ বস্তুটি যতটা stuff নিয়ে গঠিত, তার পরিমাণই হল বস্তুটির ভর।"

ভরের এই ধরণের সংজ্ঞা থেকে প্রকৃতপক্ষে ভরের পেছনের আসল বিষয়টিকে অনুধাবন করা যায় না, এবং গ্র‍্যান্ড স্কেলে সংজ্ঞাটিকে ভুলও বলা চলে। তাই ভাবলাম বিষয়টি নিয়ে একটু লেখার চেস্টা করি।

"ভর কী" প্রশ্নটি শুনতে খুব সহজ মনে হলেও এটির উত্তর কিন্তু অতটা সহজ নয়। প্রথমেই আমি নিউটনীয় বলবিদ্যা দিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করব।  

নিউটনীয় বলবিদ্যা অনুসারে, এই মহাবিশ্বের তিনটি জিনিস ধ্রুবক- মানে যে কোন পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে এদের কোন পরিবর্তন হয় না। এই তিনটি জিনিস হলঃ (১) বস্তুর ভর (mass) (২) সময় (time) এবং (৩) স্থান (space)।

নিউটন মনে করেছিলেন বস্তু স্থির থাকুক আর গতিশীল থাকুক, কোন একজন পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে এর ভর সব সময় একই থাকবে। অর্থাৎ ২ কেজি ভরের একটি বস্তু একজন পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে স্থির বা গতিশীল, যাহাই হোক না কেন, এর ভর সব সময় ২ কেজিই থাকবে। মূলত এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই নিউটনের গতি বিষয়ক সূত্রাবলি ও নিউটনীয় বলবিদ্যা গড়ে উঠেছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে নিউটনীয় বলবিদ্যায় বস্তুর ভরকে যে কোন অবস্থাভেদে সব সময় অপরিবর্তনীয়ই ধরা হয়।

পদার্থবিজ্ঞান না জানা যে কেউ-ই দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে ভরের সংজ্ঞাকে দাড় করাতে চাইলে প্রাথমিকভাবে হয়ত "কোন বস্তুতে মোট পদার্থের পরিমাণকেই ঐ বস্তুর ভর" হিসেবে দাড় করাতে চাইবে। সংজ্ঞাটি বেশ সহজ-সরল এবং প্রাঞ্জল, আমাদের সচরাচর জ্ঞান-ক্ষুধা নিবারণের জন্যও যথেস্ট। কিন্তু প্রকৃতির নিগূঢ় রহস্যকে বুঝতে হলে আমাদেরকে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে দৃষ্টিপাত করতে হয় আরও গভীরে। আসলে আমাদের সব দেখা সঠিক নয়, সব অনুমানও সব সময় সত্য নয়।

একটি এক কেজি ভরের বাটখারা এবং এবং একটি মালবাহী ট্রাকের কথা বিবেচনা করা যাক। যদি জিজ্ঞেস করা হয় কোনটির ভর বেশি, তবে যে কেউই এক গাল হেসে উত্তর দেবে, "এটি কোন প্রশ্ন হল, ট্রাকের ভর বাটখারাটির ভর থেকে হাজার গুন বেশি।" কারণ, ঐ যে, ট্রাকটি যা দ্বারা গঠিত, তার পরিমাণ বাটখারাটি যা দ্বারা গঠিত, তার থেকে হাজার গুন বেশি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই বাটখারাটির ভরই আবার ট্রাকটির ভর থেকে লক্ষ গুন বেশি হওয়া সম্ভব। সেই আলোচনায় একটু পরে যাচ্ছি।

ভরের সবচেয়ে সহজ সংজ্ঞা হল, "কোন বস্তুতে উপস্থিত মোট পদার্থের পরিমাণই হল ঐ বস্তুর ভর"।  কিন্তু এই সংজ্ঞাটি পরিপূর্ণ নয়, কোন বস্তুর ভরের সাথে বস্তুটিতে উপস্থিত পদার্থের পরিমাণের সম্পর্ক খুবই ঠুনকো। উপস্থিত পদার্থের পরিমাণ দ্বারা বস্তুটির ভর নির্ণীত হয় না, ভরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক জটিল বিষয়াদি। 

যাহোক, উপরের সংজ্ঞার থেকে আমরা ভরের অধিকতর ভালো সংজ্ঞা দিতে পারি, সেটি হল, "ভর হল কোন বস্তুর জড়তার পরিমাপক (mass is the measure of inertia of an object) একটি রাশি। যার জড়তা যত বেশি, তার ভর তত বেশি।"

এখন স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে, জড়তা কী জিনিস? জড়তা হল পদার্থ যে অবস্থায় আছে, চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার প্রবণতা। অর্থাৎ কোন একটা বস্তু স্থির থাকলে সে চিরকাল স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে সে একই বেগ নিয়ে চিরদিন চলতে চায়। এই বিষয়টি তো আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অহরহই দেখতে পাই, যেমন কারো সাপেক্ষে একটা স্থির চেয়ার হঠাৎ নিজ থেকে চলা শুরু করে না, এটি চিরকালই স্থির থাকতে চায় যদি না কেউ এটির উপর কোন ধরণের বল প্রয়োগ করে। অন্য কথায় যতক্ষণ পর্যন্ত এটির উপর প্রযুক্ত সব বলের যোগফল শূণ্য হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি স্থিরই থাকে; যখনই এটির উপর প্রযুক্ত সব বলের যোগফল অশূণ্য হয়, তখনই এটি লব্ধি বলের দিকে একটা গতি লাভ করে। 

একটি ঘর্ষণবিহীন মসৃণ তল এবং দুটি সলিড মার্বেল বিবেচনা করা যাক। মার্বেল দুটির একটি অপরটির তুলনায় বেশ বড়। এবার মার্বেল দুটিকে মসৃণ তলটির উপর পাশাপাশি রেখে সমপরিমাণ বল প্রযুক্ত করে ধাক্কা মারা হোক। দেখা যাবে যে একই পরিমাণ বল প্রযুক্ত করা সত্ত্বেও বড় মার্বেলটিতে যে পরিমাণ গতির সঞ্চার ঘটেছে, ছোট মার্বেলটিতে সে পরিমাণ গতির সঞ্চার ঘটে নি। আমরা বলি নড়নের ক্ষেত্রে বড় মার্বেলটির আলসেমি ছোটটার থেকে বেশি। অর্থাৎ সব কন্ডিশন একই থাকা সত্ত্বেও বড়টার জড়তা বা চলতে চাওয়ার অনাগ্রহতা ছোটটার থেকে বেশি। যেহেতু চলতে যাওয়ার অনাগ্রহতা বা জড়তাই হল ভরের পরিমাপক, তাই আমরা বলি বড় মার্বেলটির ভর ছোট মার্বেলটির ভর থেকে বেশি। একই কথা প্রযোজ্য মার্বেল দুটি মসৃণ তলটিতে একই বেগ নিয়ে গতিশীল থাকলে সে অবস্থার ক্ষেত্রেও। মার্বেল দুটি একই বেগ নিয়ে মসৃণ তলটিতে গতিশীল থাকলে ছোট মার্বেলটি অপেক্ষা বড় মার্বেলটিকে থামাতে আমাদেরকে এটির গতির বিপরীতে ছোট মার্বেলটিতে প্রয়োগকৃত বল অপেক্ষা বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়।  কারণ ঐ একই- বড় মার্বেলটি গতিশীল থাকলে তার উক্ত গতিশীলতা ধরে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা ছোট মার্বেলটির গতিশীলতা ধরে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা থেকে বেশি।

এবার বুঝা গেল তো "ভরকে" কেন কোন বস্তুর জড়ার পরিমাপক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়?

ওকে, সে না হয় বুঝা গেল, কিন্তু সচরাচর ভরকে যে কোন বস্তুতে উপস্থিত মোট পদার্থ বা stuff-এর পরিমাণ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়, তার তাহলে কী হবে? 

শুনতে অবাক লাগলেও আসল সত্যটা হল কোন বস্তুর মোট ভরে ঐ বস্তুটিতে উপস্থিত পদার্থের অবদান খুবই সামান্য থাকে। 

আশ্চর্য লাগছে তাই না? বিষয়টি খোলাসা করা যাক তাহলে। 

আমরা আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান যত বস্তু দেখি, তার সবই পরমাণু দ্বারা গঠত। পরমাণুকে ভাঙলে আমরা তিন ধরণের কণিকা পাইঃ ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। এদের ভিতরে প্রোটন ও নিউট্রন হল কম্পোজিট (composite) কণিকা এবং এদের ভর ইলেকট্রনের ভর থেকে অনেকগুন বেশি। একটি প্রোটন একটি ইলেকট্রন অপেক্ষা প্রায় ১৮৪০ গুন এবং একটি নিউট্রন একটি ইলেকট্রন অপেক্ষা প্রায় ২০০০ গুন ভারি। তাই বলা যেতে পারে পরমাণুর ভরের প্রায় সবটাই আসে মূলত নিউট্রন ও প্রোটনের ভর হতে। 

কম্পোজিট কণিকার অর্থ হল এরা প্রকৃতির একেবারে মৌলিক কণিকা নয় (আগে যেরকমটি ভাবা হয়েছিল), বরং এদেরকেও বিভাজন করা সম্ভব হয়েছে এবং এরা আরো সূক্ষ্ম কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। কম্পোজিট কণিকার খুব সুন্দর উদাহরণ হল প্রোটন ও নিউট্রন। এরা কোয়ার্কের (quarks) সমন্বয়ে গঠিত। একটি প্রোটনকে ভাঙলে দুটি আপ কোয়ার্ক (up quark) ও একটি ডাউন কোয়ার্ক (down quark) পাওয়া যায় (p-->uud)। অপরদিকে একটি নিউট্রনকে ভাঙলে দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্ক পাওয়া যায় (n-->udd)।

এবার আসা যাক আসল ঘটনায়। 

একটি আপ কোয়ার্কের ভর ~ 3 MeV/c^2, একটি ডাউন কোয়ার্কের ভর ~ 7 MeV/c^2 (আপাতত ভরের একক MeV/c^2 নিয়ে ভাববার এত দরকার নাই, ধরে নিন এটা kg এর মতই একটি একক, শুধুমাত্র এর আগের সংখ্যাটির দিকে খেয়াল রাখলেই চলবে)।

এবার একটি প্রোটনের ভরের দিকে নজর দেয়া যাক। একটি প্রোটনের ভর হল 938.27 MeV/c^2. 

হা হা, এটি কেমন করে সম্ভব? গাঞ্জাখুরি ব্যাপার হয়ে গেল না? কারণ, হিসেব অনুযায়ী একটি প্রোটনের ভর হওয়া উচিৎ ছিল দুটি আপ কোয়ার্কের ভর ও একটি ডাউন কোয়ার্কের ভরের যোগফলের সমান অর্থাৎ (2×3+7)=13 MeV/c^2. তাহলে একটি প্রোটনের এই এক্সটা 925.27 MeV/c^2 ভর এল কোথা থেকে?

একই কথা প্রযোজ্য একটি নিউট্রনের ক্ষেত্রেও। একটি নিউট্রনের ভর হল 939.56 MeV/c^2. কিন্তু হিসেব অনুযায়ী এর ভর হওয়া উচিৎ ছিল 17 MeV/c^2 (দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্কের ভরের যোগফলের সমান)।

আসলে প্রোটন ও নিউট্রনের ভরের মূল উৎস কোয়ার্কের ভর নয়, অন্য কিছু। প্রোটন ও নিউট্রনের মোট ভরের মাত্র 1℅ আসে কোয়ার্ক-এর ভর থেকে, বাদ বাকি 99% আসে কোয়ার্কগুলোর গতিশক্তি ও এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল গ্লুয়ন ফিল্ডের (gluon field) বাইন্ডিং এনার্জি বা বন্ধন শক্তি থেকে যেটি কোয়ার্কগুলিকে একত্রে বাইন্ড (bind) করে প্রোটন ও নিউট্রন গঠন করে। 

তাই বলা যায় একেবারে সূক্ষ্মতম লেভেলে আমাদের পরিমাপকৃত ভরের 99%-ই সাধারণ পদার্থ বা ম্যাটার না, বরঞ্চ কয়েক ধরণের শক্তির বহিঃপ্রকাশ (গতিশক্তি, গ্লুয়ন ফিল্ডের বাইন্ডিং এনার্জি ইত্যাদি)। 

আশা করি স্পষ্ট করতে পেরেছি যে কেন কোন বস্তুতে উপস্থিত মোট পদার্থের পরিমাণ বস্তুটির মোট ভরকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি বরং মোট ভরের সামান্য একটু অংশকেই (~1%) প্রতিনিধিত্ব করে।

এবার একটু রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতায় আসা যাক। আগেই বলেছি যে নিউটনীয় বলবিদ্যায় বস্তুর ভরকে ধ্রুবক ধরা হয়। অর্থাৎ নিউটনীয় বলবিদ্যা অনুসারে কোন বস্তু একজন পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে স্থির বা গতিশীল যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, পর্যবেক্ষক সব সময় ঐ বস্তুটির ভর একই মাপবেন। কিন্তু এটি সঠিক নয়। বরং কোন একজন পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে একটি বস্তু গতিশীল থাকলে ঐ পর্যবেক্ষক বস্তুটি তার সাপেক্ষে স্থির থাকলে যে ভর মাপতেন, তার থেকে বেশি মাপবেন। পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে গতিশীল অবস্থায় বস্তুর ভর (যেটিকে আপেক্ষিক ভরও বলা হয়ে থাকে) যদি m এবং স্থির অবস্থায় বস্তুটির ভর যদি mo হয়, তবে এদের মধ্যে সম্পর্ক হলঃ

                                      m=mo/√(1-v^2/c^2) 

এখানে v হল গতিশীল বস্তুটির বেগ এবং c হল আলোর বেগ। এই সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, বস্তুটির বেগ যত বৃদ্ধি পাবে, ততই আপেক্ষিক ভর m বাড়তে থাকবে। এই জন্যই বলেছিলাম একটি এক কেজি ভরের বাটখারার ভর একটি মালবাহী ট্রাক থেকেও বেশি হওয়া সম্ভব। উপরের সমীকরণটি থেকে আরও দেখা যায় যে, v=c হলে অর্থাৎ বস্তুটি আলোর বেগে সমান বেগে চললে এর ভর অসীম হয়, তাই কোন বস্তুর পক্ষেই আলোর বেগের সমান বেগে চলা সম্ভব নয়। 

বেগ বৃদ্ধি পেলে আপেক্ষিক বা গতিশীল ভর m বাড়ার অর্থ কী? তাহলে কী বস্তুটিতে শূন্য থেকে এক্সটা ভর যোগ হচ্ছে?

মোটেই না। এটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য আমি আরেকটি বহুল পরিচিত বিখ্যাত সমীকরণের আশ্রয় নিচ্ছি, সেটি হল-

                                            E = mc^2

এটি সেই আইনস্টাইনের বিখ্যাত ভর-শক্তি সমতুল্য সমীকরণ। এই সমীকরণের বামপাশ অর্থাৎ E কোন বস্তুর আপেক্ষিক শক্তি (relativistic energy which is equal to the rest-mass energy + kinetic energy) নির্দেশ করে এবং ডান পাশের m, যেখানে  m=m0/√(1-v^2/c^2) বস্তুর আপেক্ষিক ভর  নির্দেশ করে। বস্তুটি স্থির থাকলে এই সমীকরণের রূপ দাঁড়ায়, Eo = mo c^2. তখন বস্তুটির সমস্ত শক্তিই rest mass energy (Eo) হিসেবে আবির্ভূত হয়।

কোন বস্তুকে স্থির থেকে গতিশীল করতে হলে আমাদেরকে কাজ করে একে গতিশীল করতে হয়।  এই কাজ বস্তুটিতে গতিশিক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়। এই এক্সটা গতিশক্তিই ভরের রূপ হিসেবে বস্তুটির ভর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে (উপরের সমীকরণের দিকে তাকালেই এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে, m = E/c^2)। বস্তুটির গতি যতই বৃদ্ধি পায়, ততই এর ভর বৃদ্ধি পায়, অন্যকথায় ততই এর inertia বা জড়তা বৃদ্ধি পায়। এরপরও বস্তুটিকে আরো বেগে গতিশীল করতে হলে আমাদেরকে এই অতিরিক্ত inertia বা জড়তার বিরুদ্ধে আরও বেশি কাজ করতে হয়। যদি বস্তুটিকে আমরা আলোর বেগে সমান বেগে গতিশীল করতে চাই, তবে আমাদেরকে বিপুল (অসীম) পরিমাণ শক্তি খরচ করে কাজ করে বস্তুটিকে গতিশীল করতে হবে। এই পরিমাণ শক্তি মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুকে পুড়িয়েও পাওয়া সম্ভব নয়, তাই কোন বস্তুকে, এমন কী একটি ইলেকট্রনকেও, আমাদের পক্ষে আলোর বেগে সমান বেগে গতিশীল করা সম্ভব নয়। 

এই পর্যায়ে এসে এবার হয়ত আমরা ভরের একেবারে চূড়ান্ত সংজ্ঞা দিতে পারি। কোন বস্তুতে উপস্থিত মোট শক্তি E হলে ঐ বস্তুর ভর m হবে, 

                                               m = E/c^2

অর্থাৎ ভর হল কোন বস্তুতে উপস্থিত মোট শক্তির পরিমাপ (the measure of the content of energy an object occupies) (অবশ্যই শুধুমাত্র পদার্থের পরিমাপ নয়)। হতে পারে এই শক্তি গতিশক্তি, বাইন্ডিং এনার্জি (binding energy) অথবা অন্য কোন প্রকার শক্তি। একটু বাড়িয়ে বললে বলা যায়, ভর এবং শক্তি হল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, they are the two different manifestations of the same thing. 

ভর কী, সেটা না হয় বুঝা গেল কিন্তু কোন বস্তু কীভাবে ভর অর্জন করে?

সেই গল্প না হয় অন্য আরেক দিন করা যাবে।

-----------------------------

রিপন বিশ্বাস

(ছবি সংগৃহীত): ভর কীভাবে স্থান-সময়কে বাকাঁতে পারে (সর্তকতাঃ এটি একটি চতুর্মাত্রিক ঘটনার দ্বিমাত্রিক উপস্থাপনা মাত্র)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম