সিনেমা ও বিবিধ

চেন্নাই এক্সপ্রেস সিনেমাটা নিশ্চয়ই দেখেছেন? নর্থ ইন্ডিয়া আর সাউথ ইন্ডিয়ার এক অদ্ভুত যুগলবন্দী দেখিয়েছেন রোহিত শেঠী। রজনীকান্তের প্রতি ট্রিবিউট হিসেবে ‘ লুঙ্গি ডান্স’ এর অনন্য সংযোজনও ছিলো এই ছবিতে।এটা অবশ্য শাহরুখের মার্কেটিং গিমিক ছিলো ; রজনীকান্তের তারিফ হলে সাউথে এন্ট্রি একটু ইজি হয়, এই আর কি! গানটা চার্টবাস্টার ছিলো ; তবে তামিলিয়ানরা খুব সহজভাবে নেয়নি জিনিসটা। রজনীকান্ত তাঁর কোন ছবিতেই ‘মোছ’ কে রাউন্ড করে ঘুরিয়েছেন এমনটা খুব একটা দেখা যায়নি ( অন্য অভিনেতারা যদিও হরদমই করেন সেটা ; তাঁর মেয়ের জামাই ধানুশ প্রথম সারিতেই থাকবেন)। নারিয়েল পানি সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো কেরালায় ; আর লাচ্ছি হলো পাঞ্জাবে। তাই ‘ কোকোনাট মে লাচ্ছি মিলাকে ‘ এটাও সহজভাবে নেয়নি থামিজানরা। কথা হলো, সাউথ এরকমই! নায়ক আবার লুঙ্গি পরে কেমনে? ধানুশ আবার অভিনেতা হয় কেমনে? এনটিআর জুনিয়রের মত এরকম পেটমোটা মানুষ কেমনে নায়কের রোলে আসে?

সিনেমা


বিষয়টা আসলে কালচারাল সেনসিটিভিটির। সাউথের লোকজন অতিমাত্রায় কালচার সেনসেটিভ। নিজেদের কালচার সিনেমাতে তুলে ধরায় তাঁদের জুড়ি মেলা ভার।তাই নায়কের চেয়ে সাউথ অনেক বেশী অভিনেতা সেন্ট্রিক। সিনেমাতেই তাদের ইডলি, ডোসা এতটাই নিপুণভাবে তাঁরা তুলে ধরে ক্রস বর্ডার দর্শকও আজকাল এই খাবারগুলো এক নামেই চিনে। মেরসাল মুভির কথাই ধরুন না ; প্যারিসের এয়ারপোর্টে বিজয়কে লুঙ্গি পরে যাওয়ার জন্য জঙ্গি হিসেবে সাসপেক্ট করা হয় ; কিন্তু ডিরেক্টর বেশ নিপুণভাবে দেখিয়েছেন কেন প্রত্যেকেরই একটা কালচারাল আইডেন্টিটি দরকার এবং সিনেমা সেটা তুলে ধরার একটা যথার্থ মাধ্যম হতে পারে। আর হতে ইম্প্যাক্ট ক্রিয়েশনের যথার্থ পথ। একই কথা প্রযোজ্য, ঝাল্লিকাট্টু সিনেমার ক্ষেত্রেও। ঝাল্লিকাট্টু তামিলনাড়ুর এক ধরণের বিশেষ ‘বুল ফাইট ‘। এর পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অ্যানিমেল এক্টিভিস্টরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। এটাও তামিলিয়ান কালচার ; কিন্তু সিনেমায় এর নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট গুলো তুলে ধরা হয় এবং তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারকে নড়েচড়েও বসতে হয়। একই ঘটনা দেখা গিয়েছে এ. আর মুরোগাদোসের সরকার সিনেমাতে। ভারতের সংবিধানের একটা অনুচ্ছেদ ( ৪৯ পি) পরিবর্তনে বাধ্য হয় কেন্দ্র সরকার ;এই সিনেমার সরাসরি ইমপ্যাক্ট বলা যায় যেটাকে। আসলে, সিনেমা নিছকই কালচারাল এন্টারটেইনার নয় কখনোই। আবার কালচারাল অ্যাগ্রেসন বন্ধ বা বাড়িয়ে দিতে সিনেমার কোন জুড়ি মেলা ভার। ( বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা ‘ভারতীয় অ্যাগ্রেসন ‘ বলে পরিচিত) পোঙ্গাল বা সংক্রান্তি এসব বিষয়কে সাউথের ফিল্ম যেভাবে ডেপিক্ট করে তেমনটা আমাদের এই দেশে ভাবা সম্ভব?

ধরুন, তাদের সিনেমার কারণেই পোঙ্গাল বহির্বিশ্বে একটা পরিচিতি পেয়েছে। বেশ বড় রকমের একটা ট্যুরিস্ট রেভিনিউর উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পোঙ্গাল ফেস্টিভ্যাল তামিলনাড়ু রাজ্যের জন্য। আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা কোথাও ফোকাস করিয়েছি আমরা?সাউথের কাঞ্চিভারাম সিল্ক এর নাম জগতজোড়া! তারা এটা নিয়ে রীতিমতো মুভি বানিয়েছে ; প্রমোশনের নতুন ত্বরীকা বের করেছেন তাঁরা।এমন ক্রাফট আমাদের কিন্তু অভাব নেই ; সেটাকে রিপ্রেজেন্টেই যত গলদ! Kakka Kakka নামে একটা সিনেমা রয়েছে ড্রাগ মাফিয়া রিলেটেড। পরে অবশ্য হিন্দিতেও ফোর্স নামে রিমেড হয় সিনেমাটা। এই ছবির জের ধরেই তামিলনাড়ু রাজ্যে বেশ বড় ধরণের এন্টি ড্রাগ রেইড হয়। ‘( আমাদের এখানে সম্প্রতি কি হয়েছে নিশ্চয়ই জানেন)। পাঁচ রুপির ডক্টর ‘ মেরসাল সিনেমার জের ধরে তামিলের স্বাস্থ্যখাতও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। সিনেমা এতটাই ইম্প্যাক্ট তৈরী করেছে সাউথে যে জয়ললিতা( আম্মা নামে পরিচিত), করুণানিধি, এনটিআর সিনিয়র সহ বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীই এসেছেন সাউথ ইন্ডাস্ট্রিগুলো থেকে।কমল হাসানের মত অভিনেতাও জড়িয়েছেন রাজনীতিতে।

আর এই ইম্প্যাক্ট প্রমাণ করে সিনেমা নিছকই এন্টারটেইনার নয়, এর পরিধি আসলে বিশাল।রাজনীতি, অর্থনীতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস কোন কিছুই বাদ যায়না এর অ্যামবিট থেকে।উরাধুরা ফিল্মের বাইরে সাউথের এই দিকটা আসলে অজানা থেকে যায়।


Writer: Ridwanul Islam

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম