স্পেস স্টেশনে মানুষ দীর্ঘকাল থাকে কিভাবে? অতদিনের অক্সিজেন কি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়?

স্পেস স্টেশনে মানুষ দীর্ঘকাল থাকার জন্য তাকে অবশ্যই ট্রেনিং করানো হয়।মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে তাদেরকে সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মহাশূন্যে বাতাস নেই তাই বায়ুশূন্য পরিবেশে সব সময় থাকতে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য অনেক দিন ধরে নাসার গবেষণাগারে কৃত্রিম বায়ুশূন্য কক্ষে অনুশীলন করতে হয়।



মহাকাশচারী হওয়ার জন্য একজন শিক্ষানবীস যখন সব ধরনের যোগ্যতা অর্জন করে তখনই তাকে স্পেস স্টেশনে কাজ করার জন্য যেতে পারে। যারা আমেরিকার নাগরিক তারা নাসা (NASA) থেকে ট্রেনিং করতে পারেন আর ইউরোপের নাগরিকদের ট্রেনিংয়ের জন্য আছে ESA (ইউরোপীয়ান স্পেশ এজেন্সি) যা জার্মানিতে অবস্থিত, ESA এর সদস্যভুক্ত দেশ হলেই তারা সেখানে ট্রেনিং করতে পারেন। NASA এর ট্রেনিংয়ের মেয়াদ প্রায় দুই বছর।

মহাকাশে এমন অনেক তেজষ্ক্রিয় রশ্মি আছে, যা মানবদেহের ঠিক কি ক্ষতি করতে পারে তা এখনো অজানা। সে কারণে মহাশূন্যে মানুষকে পরতে হয় বিশেষ ধরণের পোশাক - যাকে বলে স্পেস স্যুট। স্পেস স্যুট এর মধ্যে তাপমাত্রা ও বায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয় - যাতে মানুষ তার মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে।

কোনও মানুষের মহাকাশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটানোর রেকর্ড হল ভ্যালারি পলিয়াকভ এর, তিনি ৪৩৭ দিন অবস্থান করেছিলেন যা প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক চারশ কিলোমিটার উপর থেকে পরিভ্রমণ করে।মহাকাশযানে অভিকর্ষ বল হয় শূন্য। তাই পৃথিবীতে আমরা যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারি, মহাকাশচারীরা ততটা করতে পারেন না।তাদের চলাফেরা আর স্বাভাবিক কাজকর্মে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তবে তারাও অবসর সময়ে আমাদের পৃথিবীর মানুষের মতো স্পেস স্টেশনের সহকর্মীদের সঙ্গে হাসি,ঠাট্টা,আনন্দ করতে পারেন, ফেইসবুক বা Quora তে লগ ইন করতে পারেন । হয়তো খুব তাড়াতাড়ি হয়তো তারা উচ্চগতির ইন্টারনেট পারবেন, সেরকমই শুনছি। অবসর সময়ে যেমন, ব্রাউজ করে, গান শুনা, মুভি দেখা, কিংবা বই পড়ে তারা সময় কাটাতে পারেন। বলা হয় যে মহাকাশ ষ্টেশন পৃথিবীকে ৪৫ মিনিট পর পর ঘুরে আসে বলে সেখানকার মহাকাশচারীরা ২৪ ঘণ্টায় ১৬টি সূর্যাস্ত দেখতে পান।

পানির ব্যবস্থা

এক লিটার বিশুদ্ধ পানি মহাকাশযানে নিয়ে যাওয়ার খরচ হয় ৪৮ হাজার ডলার!তাই সেখানে পানি নিয়ে যাওয়া খুব ব্যয়বহুল। তাহলে পানির ব্যবস্থা কি? ঘাম এবং মূত্র থেকে তৈরি পানি দিয়েই মহাকাশে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন মহাকাশচারীরা।নাসার গবেষকরা মূত্র নিয়ে অনেকদিন গবেষণা করেন এবং এমন একটি শোধনযন্ত্র তৈরি করেন যার মাধ্যমে মহাকাশচারীর মূত্রকে পানিতে পরিণত করা যায়। মহাকাশযানের কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে এই যন্ত্র বা ডিস্টিলারি কাজ করে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনগুলোতে মহাকাশচারীদের ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পানির ব্যাগ দেওয়া হয়। সেই ব্যাগের গায়ে চাপ দিলে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি বের হয় যা খুবই সীমিত আকারে।

টয়লেট তারা কিভাবে করেন এটা একটা গোপন কিন্তু কৌতুহলী প্রশ্ন যেহেতু অভিকর্ষ বল শুন্যঃ

মহাকাশচারীরা ভরশূন্য পরিবেশে নিশ্চয়ই আমাদের মতো সহজ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক কাজ সারতে পারেন না। মহাকাশযানের ভরশূন্য পরিবেশের কারণে বিশেষ টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হয়। একে বলে ‘স্পেস টয়লেট’ বা ‘জিরো গ্র্যাভিটি টয়লেট’। পৃথিবীতে অভিকর্ষ বল কাজ করে, তাই আমরা বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দিলেই তা নিচে চলে যায়। কিন্তু মহাকাশে জিরো গ্র্যাভিটির জন্য এক ধরনের ফ্যানযুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার টাইপের কমোড ব্যবহার করা হয়। এতে বায়ু প্রবাহের বাধ্যমে দূষিত বায়ু, কঠিন ও তরল বর্জ্য অপসারণ করা হয়। আমরা যেমন একই কমোডে মল-মূত্র ত্যাগ করি তেমনি মহাকাশচারীদের ব্যবস্থা কিন্তু সে রকম নয়। তারা মূত্রত্যাগ করে আলাদা ভ্যাকুয়াম টিউবে। মেয়েরা চাইলে সেটা মূত্রদ্বারেই লাগিয়ে নিতে পারেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। এসব বর্জ্য রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় পুনরায় ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সায়েন্স ফিকশন মুভিগুলোতে দেখা যায় এসব বর্জ্য দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। হায় ! এই জীবনের জন্য অনেকেই লালায়িত।

অতদিনের অক্সিজেন কি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব?

মহাকাশে মানব বসতির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হল অক্সিজেন। পানি ছাড়া মানুষ দুই চার ঘন্টা বাচতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া মানুষ এক মুহুর্তও বাচতে পারবে না। যদিও মহাকাশচারীরা কিছু অক্সিজেন সাথে করে মহাকাশে নিয়ে যায় কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল, তা শুধু সংক্ষিপ্ত সফরের জন্য কিন্তু দীর্ঘ সময়ে থাকার জন্য তাদের নিজস্ব অক্সিজেন তৈরির ব্যবস্থা আছে।

পৃথিবীতে আমরা দেখি গাছ অক্সিজেন নির্গমন করে আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, স্পেশ স্টেশনেও কিছু গাছ আছে যার উদ্দেশ্য হল গবেষণার জন্য অর্থাৎ জিরো গ্র্যাভিটিতে গাছ বাচতে পারে কিনা? জিরো গ্র্যাভিটির কারনে পানি গাছের শিকড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না।
NASA এর মতে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে একজন লোকের প্রতিদিন ০.৮৪ কেজি অক্সিজেন দরকার।

আমরা জানি যে পানির অনুর মধ্যে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন আছে। NASA এবং রাশিয়ার 'ইলেকট্রন সিস্টেম (Elektron) ' উভয়েই ইলেকট্রন বিশ্লেষনের মাধ্যমে পানিকে ভেঙে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করে। এই পদ্ধতি সবচেয়ে জনপ্রিয়। এইভাবেই তারা তাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পান। এইজন্য তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ বড় ধরনের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে সংগ্রহ করে।

ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি হয়। নিচে চিত্রে বিক্রিয়া দেখানো হল-(কিবোর্ডের সমস্যার কারনে প্রতীকগুলা ঠিকঠাক ভাবে ব্যাবহার করা যায় নি।এজন্য দুঃখিত,কষ্ট করে একটু ৪ নং ছবিটা দেখে নিন)

ক্যাথোড যে বিক্রিয়া ঘটে-
2H20 + 2e ->H2 (g) + 2 OH (aq).

এনােডে বিজারন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ইলেকট্রন
সরিয়ে অক্সিজেন উৎপাদন করা হয়।

2H20 (I) -> 02 (g) + 4 e + 4H*

উপরে উৎপন্ন হাইড্রোজেন গ্যাস এবং মানুষের
নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড।


Writer: Sajid Rahman

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম