QR code বা Quick Response code সাধারণ কিছু হলেও, এটা ডেটা সংরক্ষণ সক্ষম। আমাদের দেশে এর তেমন প্রচলন না থাকলেও, বাহিরের দেশগুলোতে সর্বস্তরে এর প্রচলন রয়েছে এবং মানুষের প্রত্যহিক কর্মকাণ্ডেরও একটি অংশ। ১৯৪০ এর দশকে এর পেটেন্ট হলেও বাণিজ্যিক ভাবে কার্যক্রম শুরু হয় ৬০' এর দশকে এবং ৮০' এর দশকে সম্পুর্ন রূপে চালু হয়। তখনকার জেবরার মতো সাদা কালো ডোরাকাটা প্যাটার্নের পদ্ধতি এখনও অনুসরণ করা হয় যা বিশেষ স্ক্যানারের দরকার হয় একে ডিকোড করা হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যে দ্বিতীয় প্রজন্মের 2D বারকোড এর স্থান দখল করে। চলুন দেখে নেওয়া যাক আসলে এই কোড কাজ কীভাবে করে!
2D বারকোডঃ
আপনার পার্সেল, চিঠি, বিল, টিশার্ট, প্যাকেজিং এর একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে সাদা ও কালো রঙের বর্গক্ষেত্র, যা দেখতে অনেকটা অক্ষর ছাড়া পাজেল বা ক্রসওয়ার্ডের মতো। এগুলোতে দুই মাত্রিক (2D) বারকোড এবং সাধারণ বারকোডের মতো দ্রুত মেশিং পাঠ্য। যেখানে সাধারণ বারকোড একমাত্রিক লাইন ব্যবহার করা হয়, 2D বারকোড সাদাকালো বর্গক্ষেত্রের আকৃতি ও প্রচুর তথ্যযুক্ত হয়।
2D বার কোডের সাধারণ সুবিধাঃ
যেখানে একমাত্রিক লাইনে কয়েক ডজন থেকে সর্বোচ্চ ২৫৬টি কোডযুক্ত হতো সেখানে সাধারণ QR কোডে ২০০০ কোড মজুত করে রাখা যায় (এখানে প্রতিটা কোড অবশ্যই ০ অথবা ১)।
বিল্ড ইন ইরোর চেকিং পদ্ধতি থাকায় এর ভুল ক্রুটি খুবই কম। যদি কোনো কোডে ক্ষতি হয় তবে সহজে বের করা যায় এবং কিছু বা পুরো কোড পুর্নপাঠ সম্ভব হয়।
সাধারণ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ক্যামেরা দিয়ে সহজে রিড করা সম্ভব।
2D বারকোড ম্যাসেজ আকারেও টেক্সট সেন্ড করা যায়।
আর তথ্য এনক্রিপ্ট করলেও রাখা সম্ভব এতে।
2D বারকোডের বিভিন্ন প্রযুক্তি-
সব 2D বার কোড দেখতে প্রায় একরকম হলেও, কাছে থেকে দেখলে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাবে। এর মধ্য কিছু 2D বারকোড জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত আর কিছু এখনও প্রাইভেটভাবে ব্যবহৃত হয়। কয়েক ধরণের এমন বারকোড হলো-
১. QR code:
১৯৯০ সালে জাপানে প্রথম ব্যবহার শুরু হলে কিছু সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এটা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত 2D বার কোড। এর মাইক্রো ভার্সনও রয়েছে যা অল্প ডেটা সংরক্ষণে সক্ষম। এর বিভিন্ন ধরণ রয়েছে যেমন, IQR Code (অনেক তথ্য সংরক্ষণ করে), SQRC(নিরাপদ, এনক্রিপ্ট ডেটা বহন করে), FrameQR (ট্রেডিশনাল কোড কিন্তু মানুষের পাঠ্যযোগ্য ছবি থাকে)।
২. Aztec code:
মাঝে ষাঁড়ের চোখের মতো বর্গক্ষেত্র, চারদিকে বিভিন্ন প্যাটার্নে তৈরী করা হয়েছে।
৩.. MaxiCode:
এরও মাঝে ষাঁড়ের চোখের মতো, চারিদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্র থাকে।
৪. PDF417:
এটা অনেকটা Qr কোষের মতো দেখতে, বিভিন্ন প্যাটার্ন ব্যবহৃত হয়।
৫. Semacode:
জাতীয় পরিচয় পত্রে এই ধরণের প্যাটার্ন ব্যবহৃত হয়। এই বারকোডের নাম 'Data-matrix code' যা ISO স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। অন্যান্য বারকোড থেকে অনেকটা আলাদা।
📷
2D বারকোডের মধ্যে QR কোড সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহার ও তৈরী পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ। এটা মেশিং পড়তে পারে, মানুষের জন্য নয়, তবে এই বারকোড দেখে এর বিভিন্ন অংশ দেখে তথ্য বোঝা সম্ভব। যদিও প্রতিটা কোড আলাদা হয়, তবে কমন পয়েন্ট ও দিক রয়েছে। এটা কীভাবে ডেটা ধারণ করে (নিচের ছবি অনুযায়ী) তার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
📷
১. Quiet zone:
একটা ফাঁকা সাদা বর্ডার প্রিন্ট তথ্য থেকে অন্যান্য অংশ আলাদা রাখে।
২. Finder patterns:
বড়ো তিনটা কালো ও সাদা বর্গক্ষেত্র QR কোড নির্ণয় করা যায়। অন্যান্য বারকোডে এগুলো থাকে না।
৩. Alignment pattern:
এই অংশটি কোডটিকে সোজাভাবে স্ক্যানে সহায়তা করে। কোড যত বড়ো হবে এর আকারো তত বড়ো হবে।
৪. Timing pattern:
এটা আনুভূমিক ও লম্বভাবে তিনটা Finder patterns এর মধ্যে থাকে এবং সাদা ও কালো রঙের বিকল্প। এই প্যাটার্ন QR কোড এ পৃথক পৃথক তথ্য সনাক্তে সহায়তা করে এবং কোডে ক্ষতি বা নষ্ট হলেও বেশ কার্যকরী।
5. Version information:
QR কোডের ৪০টি ভার্সনের স্ট্যান্ডার্ড আছে, এই ভার্সনের তথ্য (দুইটা finder patterns এর কাছাকাছি স্থানে) সহজে বোঝা সম্ভব যা নির্দিষ্ট কোডে ব্যবহৃত হয়।
৬. Data cells:
প্রতিটা সাদা ও কালো স্কয়ার সাধারণ বিশিষ্ট্যের মতো নয়। বরং এতে আসল ডেটা সংযুক্ত থাকে।
৭. Format information:
এই প্যাটার্নে ভুলের পরিমাণ ও ডেটা মাস্ক প্যাটার্নের তথ্য থাকে।
📷
2D বারকোড প্রযুক্তির ব্যবহার:
নাসা প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানদের একটা যারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল তাদের মহাকাশযানে! কারণ স্পেস সাটলে একবার বসালেই হতো, পেপার লেভেল এর চেয়ে অনেক বেশি তথ্য প্রদান করা যেত।
বারকোডের একটা বড়ো সুবিধা হলো Url লিংক প্রদান করা। কার্ড বা কোথাও লিংকের জন্য বড়ো স্পেস না দিয়ে বারকোড ব্যবহার করা হয়। এতে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে সহজে সাইট প্রবেয় করা যায়।
এছাড়া টিকেট সিস্টেম, পার্সেলের মতো জায়গায় ব্যবহৃত হয়।
পন্যের প্রাইজ ট্যাগ এবং পেমেন্ট ট্যাগ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
ওয়াইফাই পার্সওয়ার্ড শেয়ার, বা তথ্য আদান প্রদানে ডিভাইস পরিচিতি দেওয়ার সময়।
এছাড়া গুগল অথেনটিকেটরের মতো ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা এর মাধ্যমে করা হয়।
QR কোড স্ক্যানের উপায়:
সাধারণত রিডেবল স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করা হয়।
তবে স্মার্টফোনের ক্ষেত্র অ্যাপল ও স্যামসাং বিল্ড-ইন এই সুবিধা দিয়েছে।
অন্যান্য ব্রান্ডের ফোনে রিসেন্ট ফোনগুলোতে সাধারণ ক্যামেরা অ্যাপসেই স্ক্যান সুবিধা দিয়েছে।
তবে ফোন কিছুটা পুরাতন হলে প্লেস্টোর/ অ্যাপস স্টোর থেকে থার্ড পার্টি অ্যাপস নামিয়ে নিতে হবে।
QR code বানানোর উপায় কী?
অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইটে QR code বানানোর সুবিধা পাওয়া যায়।
শুধু নির্দিষ্ট নাম বা ওয়েব লিংক দিলেই সাইট QR কোড বানিয়ে দিবে।
এমন একটি সাইট- https:// www.the-qrcode-g enerator.com/
সোর্স:
Writer: Rownok Shahriar
Tags:
Technology