বিপর্যয় (সাইন্স ফিকশন)

কল্পবিজ্ঞান


১.
মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে প্রিতম।আজ সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা উন্মুক্ত করবে পুরো পৃথিবীর কাছে।এই প্রযুক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বিশেষ করে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে উদ্ভাবনটি।সে খুবই উৎফুল্ল।শেষ অতিথিটি ঢোকার পর বন্ধ হয়ে গেল হলরুমের দরজা।সেনাবাহিনীর অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আজ উপস্তিত আছে প্রিতম এর সামনে।মাইক্রোফোন হাতে নিল প্রিতম...

“এখানে উপস্থিত সকল দর্শককে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।” স্পিকারের শব্দে পুরো হলরুম গমগম করে উঠলো।
“আজ আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার নতুন উদ্ভাবিত ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে।আপনারা জানেন,বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে,বিশেষ করে বিভিন্ন সামরিক কাজে ড্রোন ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে।শত্রুর গরিবিধির উপর নজর রাখা থেকে শুরু করে,মহাকাশে রকেট পাঠানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন।এসব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ড্রোনের আকার ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো প্রিতম।তার পেছনে কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠলো বিভিন্ন ড্রোনের ছবি।কোথাও ড্রোনের সাহায্যে মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে,কোথাও ড্রোনের সাহায্যে পণ্য পরিবহন হচ্ছে,কোথাও বা মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হচ্ছে এই ড্রোনের সাহায্যে।

“কিন্তু এবার আমি আপনাদের সামনে নিয়ে আসছি এমন এক প্রযুক্তি,যা যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের,বিশেষ করে স্নাইপারদের সাহায্য করবে।সাধারণত শত্রুরা বিভিন্ন গোপন জায়গায় লুকিয়ে থেকে আমাদের সৈনিকদের উপর হামলা করে।সেক্ষেত্রে স্নাইপারদের কাজ থাকে তাদের মারার।কিন্তু আমার উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির সাহায্যে খুব সহজেই শত্রুদের মারা সম্ভব।আপনাদের সামনেই উপস্থাপন করছি ব্যাপারটা!”
সামনে হাত বাড়িয়ে দিল প্রিতম।একটা ন্যানো ড্রোন উড়ে এসে তার হাতের উপর বসলো।দূর থেকে কেউ দেখতে পাবে না।তাই একটি ক্লোজ ভিউ ক্যামেরা চালু করলো সে।পুরো ড্রোনটার ছবি ভেসে উঠলো স্ক্রিনে।

“আপনারা নিশ্চয় দেখতে পেয়েছেন ড্রোন টিকে।এর চারটি পাখা আছে।যার সাহায্যে খুব সহজেই ভারসাম্য বজায় রেখে ছুটতে পারবে এটি।ছোট একটা প্লাস্টিকের বক্স রয়েছে এর পেটে।”
প্রিতম যেগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিল সেগুলোর এনিমেটেড চিত্র ফুটে উঠলো পিছনের স্ক্রিনে।

“এই বক্সেই থাকবে বিস্ফোরক।যখনই কোনো মানুষের বা বস্তুর সংস্পর্শে আসবে তখনই বিস্ফোরণ ঘটবে।ছোট একটি বিস্ফোরণ। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অনেক।কোনো মানুষের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে বিস্ফোরণে।”
হাতের রিমোটের একটা বোতামে চাপ দিল সে।পিছনে মঞ্চের নিচ থেকে উঠে এল একটি ম্যানিকুইন।ড্রোনের ভেতর কয়েকটি তথ্য সেট করলো সে।সাথে সাথে ছুটে গেল ড্রোনটি।মূহুর্তের মধ্যেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল ম্যানিকুইনের মাথাটি।সবাই বিস্ময়ে হতবাক।

“আপনারা দেখলেন ব্যাপারটা।মূলত ফেস রিকগনিশন অথবা ডিএনএ ম্যাচিং এর মাধ্যমে কাজ করে ড্রোনটি।কোনো অপরাধীর ছবি অথবা ডিএনএ সিকোয়েন্স যদি ড্রোনেটিকে জানিয়ে দেওয়া হয় তবে সে যেখানেই থাকুক না কেন,তাকে খুঁজে বের করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মেরে ফেলবে ড্রোনটি।সবচেয়ে বড় সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে এটি,কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হবে না। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের নিরাপত্তা আরও দশগুণ বেড়ে যাবে।এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০০ ড্রোন রয়েছে আমাদের স্টকে।এই সংখ্যাটা পরে আরও বাড়াব” হাততালি দিয়ে উঠলো সবাই!

“কিন্তু এই প্রযুক্তির খারাপ দিকটির ব্যাপারেও ভেবেছি আমরা।বিশৃঙ্খলতাবাদীদের হাতে পরলে কি হতে পারে তাও ভেবেছি আমরা।দারুণ সর্বনাশ হয়ে যাবে।দশমিনিটের একটা ভিডিও তৈরি করেছি আমরা।”
পুরো হলরুম অন্ধকার হয়ে গেল।স্ক্রিনে শুরু হলো ভিডিওটি।হঠাৎই ছোট বড় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো হলরুম।

২.
চারদিকে এম্বুলেন্সের শব্দ,পুলিশের গাড়ি ঘিরে রেখেছে সিটি সেন্টারকে।উপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছে।কিছুক্ষণ আগে একটা জঙ্গি হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।বাইরে বিভিন্ন সাংবাদিকরা আপডেট তথ্য দিয়ে যাচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলোকে।
কেউ বলছে,‘শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মারা গিয়েছে ২৪ জন,আহত ৩০ জন!’ কোথাও আবার বলছে,‘কোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি না করেই মারা হয়েছে মানুষগুলোকে।কীভাবে মারা হয়েছে তা সম্পর্কে নিশ্চিত নন পুলিশের লোকেরা।’
আহত লোকগুলোর অবস্থাও খারাপ।কেউ কিছু বলতে পারছে না।তবে অনেকের ধারণা কোনো রকম ড্রোনের সাহায্যেই হামলাটি হয়েছে।

সারা দিনজুড়েই পুরো নিউজফিড ভরে রয়েছে এই হামলার খবরে।তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে কোনো রকম মডিফাইড ড্রোনের সাহায্যেই হামলাটি হয়েছে!

৩.
‘মা,আমি বেরুচ্ছি।তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।’
‘সাবধানে যাস্।কালকে একটা ভয়ঙ্কর হামলা হলো।আমার তো চিন্তাই হচ্ছে।আচ্ছা আজকে না গেলে হয় না।’
‘কি বলছ মা?আজকে না গেলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে।’
‘ঠিক আছে, যাওয়ার সময় রাস্তায় থাকতে ভিডিও কল দিস্।নাহলে আমার খুব চিন্তা হবে।’
‘আচ্ছা মা,নিশ্চয়ই দিব।’
মাকে এইকথা বলে সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে গেল রিভান।রাস্তায় দাঁড়াতেই সামনে এসে দাঁড়াল অফিস বাসটি।উঠে গেল বাসে।চলতে শুরু করলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসটি।

‘কি হে রাকিব!কি খবর?’
‘এই তো ভালো আছি রিভান।তোর কি খবর?’
‘ভালো।তবে চিন্তায় আছি গতকালের ব্যাপারটা নিয়ে।মাও আসার সময় অনেক ভয় পেয়েছিল।আসতেই দিতে চায়নি।’
‘হ্যাঁ।আমারও একই অবস্থা।’
হঠাৎ ব্রেক কষল বাসটি।
‘কি হল আবার?’একটু জোরেই বলল রাকিব।

‘সামনে প্রচুর জ্যাম।তাই বাস থামিয়েছি।’বলল ড্রাইভার!
পুরো রাস্তা জুড়ে জ্যাম।তবে জ্যামের কারণটি জানতে পারেনি কেউই।বাসের হেলপার খবর নিয়ে আসলো কে বা কারা রাস্তায় অনেক গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছে।তাই এই জ্যাম!তবে এটা পুরোপুরি নিশ্চিত খবর নয়।জানালা বন্ধ থাকায় বাইরে থেকেও খবর নিতে পারছে না তারা।খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার!

৪.
‘হ্যাঁ,বস।রাস্তায় জ্যাম লাগিয়ে দিয়েছি।’
‘ঠিক আছে।তাহলে ড্রোনগুলোকে ছাড়া শুরু কর।’
‘বস,সবাইকে মারতে পারবে তো ড্রোনগুলো?’
‘হ্যাঁ,নতুন সিস্টেম সেট করা হয়েছে, যার ফলে কোনো মানুষ আহত অবস্থায় থাকবে না।হা.হা.হা...’

প্রায় ৫০০টি ড্রোন ছেড়ে দিল বিশৃঙ্খলতাবাদীরা।

৫.
‘হ্যালো মা।কি করছো?’
‘এই তো টিভি দেখছি।এখনো দেখাচ্ছে ব্যাপারগুলো!’
‘আহ,মা।আর চিন্তা করো না।দেখ সবই ঠিক আছে।’
‘আচ্ছা।ভিডিও কল দিয়েছিস বলে ভালো লাগলো।’

হঠাৎ বাইরে মানুষদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেল।কিছু চিৎকার চেচামেচি শোনা যাচ্ছে।
ভিডিও অন রেখেই মা'র সাথে কথা বলতে লাগলো রিভান।

‘মা,বাইরে খুব চেচামেচি হচ্ছে।তুমি চিন্তা করো না।ব্যাপারটা দেখছি।’
কিন্তু কথা শেষ করার আগেই তাদের গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়ল ২০ টি ড্রোন।১০ টি বিস্ফোরিত হয়ে গেল সাথে সাথেই।১০ জন মৃত।বাসের সিটের নিচে লুকিয়ে পড়ল রিভান।
‘কি হলো,রিভান?এত আওয়াজ কিসের?’ কেঁদে উঠল রিভানের মা।
আরো ৯ টি বিস্ফোরণ হলো।একটি তো খুব কাছেই।কেঁপে উঠলো রিভান।তার মা অনবরত জিজ্ঞেস করেই চলছে।হঠাৎই দেখলো একটি ড্রোন এগিয়ে আসছে তার দিকে।একটি বিস্ফোরণ।তারপরই রক্তে লাল হয়ে গেল মোবাইলের স্ক্রিন।ফুটে উঠলো রিভানের মায়ের আর্তচিৎকার!

৬.
হলরুমে আবার আলো ফুটে উঠলো।সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্ক্রিনের দিকে।এতক্ষণ সত্যিই ভয়ানক দৃশ্য প্রচারিত হয়েছিল!
‘দেখলেন তো কি ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এই প্রযুক্তি।তাই আপনাদের এই ব্যাপারে সাবধান হতে,”
কথা শেষ করার আগেই মোবাইলে রিঙটোন বেজে উঠলো প্রিতমের।
মোবাইল কানে দিয়ে কিছুক্ষণ কথা শুনলো সে।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মঞ্চের ভেতর।কিছুক্ষণ আগে তার কোম্পানির সবচেয়ে সুরক্ষিত ভল্ট ভেঙ্গে ড্রোনগুলো বেরিয়ে গেছে।হ্যাক হয়েছে তার পুরো ড্রোন সিস্টেমটি।পৃথিবীর সামনে ঘনিয়ে আসছে বড় বিপর্যয়!

Writer: Rajesh Mozumder

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম