১।
দানবটা এতদিন ঘুমিয়ে ছিল মাটির নিচে- কেউ তার নামনিশানা জানত না। হঠাৎ সে জেগে উঠল। আমরাই তাকে জাগালাম।
সত্তরের সময়কার কথা বলছি। বাংলাদেশের মানুষের খাওয়ার পানির উৎস ছিল পুকুর নদী খাল বিল। ওলা বিবির আছরে তখন দেশে বছরে আড়াই লাখ করে শিশু লাশ হচ্ছে।
আমাদের আন্তর্জাতিক শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরিস্থিতি এভাবে আর চলতে দিতে চাইলেন না। তাদের সমাধান ছিল একদম সহজ- আমাদের মাটির নিচে হাজার কোটি লিটার পানি মজুত হয়ে রয়েছে। পাতাল বলে সেখানে রোগজীবাণু থাকার আশঙ্কা নেই। সেই পানি একটা পাম্প জাতীয় কিছু দিয়ে তুলে নিলেই হয়। দেশের মানুষ এরপর থেকে আর নদীনালা থেকে পানি খেয়ে মরবে না, মাটির তলা থেকে বিশুদ্ধ পানি বের করে খাবে। ইউনিসেফ আর ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক টিউবওয়েল দিয়ে দেশটাকে ছেয়ে ফেলল।
দানবটাকে আমরা চিনতে পারলাম নব্বইয়ের শুরুর দিকে, যখন কিছু বিজ্ঞানী টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া শুরু করলেন। ব্যাপারটা যে আদৌ সম্ভব, এর আগে সেটা কারো মাথাতেই আসেনি। আশির দশকে পশ্চিমবঙ্গের দাদারা আমাদের জানিয়েছিলেন- দেখুন, আপনাদের দেশ থেকে বর্ডার ক্রস করে যারা আসে, তাদের কিন্তু অনেকের মধ্যেই আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আমরা সেটা আমলে নেইনি। বাংলাদেশের মত জিওলজিতে আসলে আর্সেনিক থাকার কথাও নয়। হিমালয় থেকে গঙ্গা যে কাদার সাথে আর্সেনিক দেশময় জড়ো করেছে তা বিজ্ঞানীরা জানতেন। সেটা নিয়ে তারা অত চিন্তা করেননি, কারণ সেই কাদার মধ্যে আর্সেনিকের পরিমাণ খুব বেশি ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে এই নদীবাহিত কাদার স্তর এতই পুরু যে ওপরের পানির এই স্তর ভেদ করে নিচে জড়ো হতে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়টাতে কাদার কোনাকাঞ্চিতে যত আর্সেনিক আছে, সব সুরসুর করে বের হয়ে পানির মধ্যে ঢোকে। ওপরের পরিষ্কার বৃষ্টির পানি নিচে গিয়ে হয়ে যায় আর্সেনিকের বিষাক্ত ঝোল।
সেই ঝোলই সত্তরের দশকে দেশের অজস্র নলকূপের উপশিরা বেয়ে পাতাল থেকে মর্ত্যে উঠে আসা শুরু করল। প্রথম প্রথম এই নলকূপ বিপ্লবের সময় গ্রামগঞ্জের অনেকে কুসংস্কার থেকে বলতেন- এই পানি শয়তানের পানি। তারা খুব ভুল বলেননি। আর্সেনিক সায়ানাইডের মত নয় যে খেলেই তৎক্ষণাৎ মৃত্যু। বছরের পর বছর আর্সেনিকঅলা পানি খেতে থাকলে তবেই সে চামড়া-ফুসফুস-যকৃত-মায় হৃদযন্ত্রে ক্যান্সারের আগুনটা ধরানো শুরু করে। শুধু তাই নয়, আর্সেনিক গর্ভবতী মায়েদের অমরার মধ্যে দিয়ে শিশুর দেহে চলে যেতে পারে- যেজন্য আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় শিশুদের মানসিক বৈকল্যের হার বেশি।
এই ধরণের "সাইলেন্ট কিলার" গোছের বিষ মানুষের জন্য আখেরে সায়ানাইডের থেকেও অনেক বেশি ক্ষতিকর- দেশজোড়া মানুষের হাতে-মুখে কালো ফুটকি সাদা হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের ব্যাপারটা বুঝে উঠতে অনেকদিন লাগল।
জনস্বাস্থ্য বা পাবলিক হেলথ সেক্টরে সরকারের সাথে বিজ্ঞানীদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে আমার চিন্তাটা এরকম। আমার দৃষ্টিতে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা একটা বিশাল দশাসই হাতির মত। তাকে তার দৈনন্দিন যাত্রাপথ কাজকর্ম থেকে অন্য দিকে ফেরানো সহজ নয়। বিশেষ করে আমাদের মত গরিব দেশে এমনিতেই সে কোটি মানুষের অর্বুদ সমস্যা নিয়ে হাঁসফাঁসিয়ে মরছে। তার মনযোগ যদি আপনি অন্য কোন স্বাস্থ্যসমস্যার দিকে নিতে চান, তাহলে এই সমস্যা যে আসলেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা- এই মর্মে আপনাকে অকাট্য প্রমাণ দাখিল করতে হবে, যাতে এই বিকট জগদ্দল রাষ্ট্রযন্ত্র অপ্রয়োজনীয় কিছুর দিকে খামোখা না এগোয়। বিজ্ঞানীদের কাজ হচ্ছে এই প্রমাণগুলো দাখিল করে হাতির মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা। এই প্রেক্ষিতে আর্সেনিকের মত একটা ব্যাপার বিজ্ঞানীদের জন্য আসলেই খুব ঝামেলার। যে বিষ আজ পেটে পড়লে বিশ বছর পরে গিয়ে ক্রিয়া ঘটায়, তার কার্যকারণের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করা আদৌ সহজ নয়। এই জন্যই তামাকের কোম্পানিরা এতদিন পর্যন্ত সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলো ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পেরেছিল, কারণ এর প্রভাব পড়ে দেরিতে।
তো এই প্রমাণ দাখিল করতে গিয়ে যে সমস্যাটাতে বিজ্ঞানীরা পড়লেন সেটা হচ্ছে বুঝে ওঠা যে আসলে দেশময় এর প্রভাব কতখানি। দেশের আটষট্টিহাজার গ্রামের প্রত্যেকটাতেই নলকূপ, প্রত্যেকটাতেই বিষক্রিয়া হবার সম্ভাবনা। গবেষকদের এক গ্রুপের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে নলকূপের সংখ্যা এক কোটি। তার মানে বাংলাদেশে আর্সেনিকের প্রভাব জানতে হলে এই এক কোটি নলকূপের পানি পরীক্ষা করতে হবে। তুলনার জন্য বলি- বাংলাদেশে চার বছর অন্তর অন্তর দেশব্যাপী যে পানির শুমারী হয়, তার অংশ হিসেবে খুব বেশি হলে ষোল হাজারের মত নলকূপের আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়। সে তুলনায় এক কোটি নলকূপ নিতান্তই অবাস্তব ব্যাপার। এই জরিপ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েই আলাদা গল্প লেখা হয়ে যাবে।
যাই হোক, দু'হাজার সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশানের রিপোর্টে বলা হল- বাংলাদেশের সাড়ে তিন থেকে সাত দশমিক সাত কোটি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে যাচ্ছে।
দেশের জন্য কাজ করার পূর্বশর্ত হল দেশের ট্র্যাজেডিগুলোকে চিনতে শেখা। চেরনোবিল বিস্ফোরণের কথা আমরা সবাই জানি। এই বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সারে মৃত্যুর সম্ভাবনা মোট চার হাজারের মত মানুষের। আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি বছরে তেতাল্লিশ হাজার।
সে তো অনেকদিন আগের কথা, এখন দেশের আর্সেনিক পরিস্থিতি কীরকম? বাংলাদেশে খাওয়ার পানির গুণাগুণ সংক্রান্ত তথ্যের সবচেয়ে ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল Multiple Indicator Cluster Survey। এই জরিপ ইউনিসেফ আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নেতৃত্বে দেশের প্রত্যেক জেলায় চার বছর অন্তর অন্তর হয়। এর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রত্যেক জেলায় গিয়ে প্রচুর বসতবাড়ি থেকে পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেন। জরিপটির সর্বশেষ রিপোর্ট বের হয়েছে ২০১৩ সালে। এই রিপোর্ট বলছে বাংলাদেশের সাড়ে বারো শতাংশ বসতবাড়ির পানিতেই আর্সেনিকের মাত্রা বিপদসীমার অধিক।
সাড়ে বারো শতাংশ মানে আট ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতি আটটা ঘরের একটাতে দানবটা এখনও রয়ে গেছে।
এই সংখ্যার মধ্যেও একটা বিশাল কিন্তু থেকে যায়। আর্সেনিকের যে বিপদসীমার কথা এখানে বলা হচ্ছে, সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপদসীমা নয়। বাংলাদেশ সরকার পানিতে ন্যূনতম যে পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে সেটাকে বিপজ্জনক মনে করে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ পেলেই ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান তাকে বিপজ্জনক বলে দেয়। আমরা এখনো আমাদের বিপদসীমা অত নিচে নামাইনি। এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপদসীমার কথা যদি বলেন, তাহলে বাংলাদেশের চারভাগের একভাগ বসতবাড়িই আর্সেনিক বিষক্রিয়ার শিকার।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশানের রিপোর্টটার লেখক বলেছিলেন, বাংলাদেশের এই ট্র্যাজেডির সাথে বিশ্বের আর কোন ঘটনারই তুলনা হয় না, হোক সে ভোপাল কিংবা চেরনোবিল। ভদ্রলোকের আরেকটা উক্তি- বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যা হল "the largest mass poisoning of a population in history"।
এরপর থেকে বাংলাদেশে আর্সেনিক নিয়ে কখনও ভাবতে বসলে এই কথাটা কয়েকবার মনে মনে আউড়ে নেবেন। The largest mass poisoning of a population in history.
এই দানবের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া একান্তই দুঃসাধ্য ব্যাপার, তবে এ নিয়ে যে গবেষকরা হাত গুটিয়ে আছেন তা নয়। আজকাল আর্সেনিক পরিহারের মোটামুটি সবচেয়ে সহজ এবং সর্বজনগ্রাহ্য উপায় হল গভীর নলকূপের পানি খাওয়া। আর্সেনিকযুক্ত পানি যে একদম পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত চলে গেছে তা কিন্তু নয়- এই পানি থাকে মোটামুটি মাটি থেকে বিশ থেকে একশ' মিটার গভীরতার মধ্যে। অর্থাৎ আপনার নলকূপ যদি তিনশ' ফুট বা তার কম গভীরতা থেকে পানি তোলে, তাহলে তাতে আর্সেনিক থাকার সম্ভাবনা। কিন্তু নলটাকে যদি আরো খানিকটা গভীরে ঢুকিয়ে দিতে পারেন- তাহলে নল এমন প্রাচীন মাটিতে গিয়ে ঠেকবে, যেখানকার পানি থেকে আর্সেনিক অনেক আগেই সাফ হয়ে গেছে। কাজেই সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হয় আমাদের প্রধান কাজ হবে দেশটাকে গভীর নলকূপে ছেয়ে ফেলা।
জনস্বাস্থ্যের কোন সমস্যারই সহজ সমাধান নেই। গভীর নলকূপের এমনিতে বাহ্যিক কিছু সমস্যা তো আছেই- এত নিচ পর্যন্ত নল বসাতে অনেকগুলো টাকা লাগে, যে সামর্থ অনেক পরিবারেরই নেই। কিন্তু এর চেয়ে সূক্ষ্ম একটা সমস্যা আছে, যেটা সাধারণ বুদ্ধিতে ধরা পড়ে না।
যেহেতু গভীর নলকূপ বসাতে পয়সা বেশি লাগে, কাজেই প্রতি গ্রামে সাধারণত এদের সংখ্যা থাকে কম। কোন পরিবারকে গভীর নলকূপ থেকে পানি আনতে গেলে অনেক দূর হাঁটতে হয়। পনেরো-বিশ লিটারের কলসি নিয়ে এতদূর হাঁটা যথেষ্ট কষ্টের কাজ, কাজেই সাধারণত এসব পরিবার একেবারে অনেকখানি পানি এনে বাসায় জমিয়ে রাখেন। সমস্যাটা সেখানেই- পানি বেশিক্ষণ ধরে রাখলে এর মধ্যে রোগজীবাণু বংশবিস্তারের সুযোগ পেয়ে যায়। এটা হচ্ছে গভীর নলকূপ ব্যবহারের একটা পরোক্ষ সমস্যা- আর্সেনিকমুক্ত পানি দিতে গিয়ে অন্যদিক দিয়ে আবার রোগজীবাণুঘটিত পানি দূষণের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।
এটা এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, কিন্তু সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বির এক গবেষণায় এই আশঙ্কাগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছে। গবেষকরা চাঁদপুরের প্রায় পাঁচশ পরিবারের পানির উৎস, ব্যবহার, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া, রোগজীবাণুর পরিমাণ ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখেছেন- প্রথমত, গভীর নলকূপ ব্যবহারকারী পরিবারগুলো আসলেই পানি অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ধরে জমিয়ে রাখেন। দ্বিতীয়ত, যাদের বাড়ি থেকে গভীর নলকূপ একটু দূরে, তাদের খাওয়ার পানি রোগজীবাণু দিয়ে দূষিত থাকার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের প্রায় দেড়গুণ।
মানুষের সমস্ত প্রযুক্তিতেই বোধহয় কোথাও না কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়।
২।
আর্জেন্টিনার এক শহরে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বিপদসীমার প্রায় একশ' গুণ।
এত ভয়াবহ পরীক্ষা সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশীদের দেননি। আমাদের নদনদী খালবিলের পানিতে আর্সেনিক নেই।ভূগর্ভস্থ পানির মজুদে হাত দিতে না গেলে আর্সেনিকের কথাই হয়ত আমরা জানতাম না। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার যে শহরের কথা বলছি, সেখানকার নদীনালার পানি আর্সেনিকে ভারী হয়ে আছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এত আর্সেনিক থাকা সত্ত্বেও এতে এসব এলাকার মানুষের সেরকম কোন সমস্যা হচ্ছে না। আর্সেনিকজনিত কোন জনস্বাস্থ্যের ক্রাইসিস এখানে হয়েছে, এমনটাও শোনা যায় না।
অথচ আর্সেনিক এখানে সবসময়ই ছিল। এখানকার মানুষ শবদেহ মমি করে রাখত। সেরকম এক সাতহাজার বছর পুরোনো মমির চুলে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। কোন কোন গবেষক মনে করেন, শবদেহ মমি করার এই সংস্কৃতিটাই আর্জেন্টিনায় এসেছে আর্সেনিক থেকে। আর্সেনিক বিষক্রিয়ার একটা পরিণতি হল গর্ভপাত। কোন সমাজে যদি শিশুমৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে, তাহলে এর সাথে আপোস করার জন্য সমাজ-সংস্কৃতিতে কোন না কোন একটা পরিবর্তন আনতেই হয়। সীমাহীন নিষ্ঠুরতা নিঃশব্দে মেনে নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। তাই এই এলাকার মানুষেরা তাদের শিশুদের দেহগুলো যত্ন করে মমি করে রাখা শুরু করল।
কিন্তু এসব সমস্যা পুরোনো। আজকের আর্জেন্টিনায় আর্সেনিক আছে ঠিকই, কিন্তু তার বিষদাঁত যেন নেই। কোন এক আশ্চর্য উপায়ে আতাকামা মরুভূমির মানুষগুলো হাজার হাজার বছর ধরে এই দানবের সাথে সহাবস্থান করে আছে।
জীববিজ্ঞান পড়ুয়া পাঠক হয়ত আঁচ করতে পারছেন এই রহস্যের সমাধান কোথায়। আর্জেন্টিনার আতাকামা মরুভূমির এই মানুষগুলোর বিবর্তন হয়েছে।
বিবর্তন শুনে আমাদের অনেকের মাথায় প্রথম যে ধারণাটা আসে সেটা হল বানর থেকে মানুষ হওয়া। আসলে বিবর্তন ব্যাপারটা আরো অনেক ব্যাপক। যেমন ধরুন দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে গিয়ে কিন্তু আমাদের বিবর্তন হয়েছে। মানুষের পেট লোহার মেশিন নয় যে এতে যা পড়বে সবই সে হজম করে ফেলবে। কাঠ আমরা চিবিয়ে খেতে পারিনা কেন? কারণ কাঠ ভেঙ্গেচুড়ে পরিপাক করে সেখান থেকে শক্তি বের করার কৌশল আমাদের শরীরের জানা নেই। দুধও একসময় সেরকম জিনিস ছিল। আমরা দুধ খাওয়া শুরু করেছি আজ থেকে মোটে হাজার দশেক বছর আগে, যখন আমরা পশুপালন করা শিখলাম। তার আগের আড়াই লাখ বছর আমরা বনের পশু আর গাছের ফল খেয়েই কাটিয়েছি। এই দুধ খাওয়া শুরু করার পর পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গার মানুষের জেনেটিক্সে একটা পরিবর্তন আসল- বিশেষ করে ইউরোপ ও আফ্রিকায়- যার ফলে আমাদের শরীর জিনিসটা হজম করতে শিখে গেল। এটাই বিবর্তন। পরিবেশের সুযোগ নেওয়ার স্বার্থে প্রাণিদেহে পরিবর্তন আনা, তা যত ছোটই হোক।
উপকার করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে বিবর্তন ঝামেলাও লাগিয়ে দেয়। যেমন আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার হার অনেক বেশি। ম্যালেরিয়ার জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে আমাদের রক্তের লোহিত কণিকায়। এই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে সেখানকার অনেকের লোহিত কণিকার আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেল, যাতে ম্যালেরিয়া এদের অতটা কাবু করতে না পারে। এদিকে বাঁধল নতুন ফ্যাকড়া- জেনেটিক্সে যে পরিবর্তনটার কারণে লোহিত কণিকার আকৃতি বদলায়, সেই একই কারণে মানুষের সিকল সেল অ্যানিমিয়া বলে একটা ভয়াবহ অসুখ হয়। ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচাতে গিয়ে বিবর্তন আফ্রিকায় এই রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিল। বিবর্তন অন্ধ- সে শুধু বোঝে কি করলে এখনকার পরিবেশে প্রাণীর উপকার হবে। সে উপকার করতে গিয়ে যে সে আরো বড় সমস্যা বাঁধিয়ে দিচ্ছে, সেটা সে সবসময় বোঝে না।
আর্জেন্টিনার মানুষদের বিবর্তন কীভাবে হল তা বুঝতে হলে আগে একটু জানতে হবে, আমাদের দেহে আর্সেনিক প্রবেশ করার পর কী ঘটে। মানবদেহ যখন দেখে তার রক্তে নতুন অজানা কিছু ঢুকছে, সে কখনোই তাকে অগ্রাহ্য করে না। হোক সে রোগজীবাণু বা আর্সেনিক বা অন্যকিছু, তাকে পরাস্ত করার কোন না কোন একটা ধান্দা সে করেই। সেই ধান্দা যে সবসময় সফল হবে, তা নয়। কাজেই আমাদের দেহ যখন বুঝতে পারে রক্তে আর্সেনিক ঢুকেছে, তার প্রথম চিন্তা দাঁড়ায়- কীভাবে এই বিষটাকে নির্বিষ করে ফেলা যাবে।
তো এই বিষ ঝাড়ার জন্য সে যেটা করে- আর্সেনিক পরমাণুর গায়ে টুক করে কিছু কার্বন-হাইড্রোজেন-অক্সিজেনের প্রলেপ দিয়ে দেয়। একবার প্রলেপটা লাগিয়ে দিতে পারলে আর ভয় নেই। প্রলেপঅলা আর্সেনিক কিছুক্ষণ দেহের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে বসে থাকে, তারপর সময়মত মূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়।
আর্সেনিকের বিষক্রিয়া হয় দেহের মধ্যে ঢোকার সময় থেকে এই প্রলেপটা লাগানোর আগ পর্যন্ত। যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রলেপ লাগানো হচ্ছে, ততক্ষণ সে বিষাক্ত। কাজেই কার দেহে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া কীরকম হবে- সেটা নির্ভর করে এই প্রলেপটা কে কত তাড়াতাড়ি লাগাতে পারছে। গবেষকরা যেটা দেখলেন- আতাকামা মরুভূমির এই মানুষগুলোর দেহে আর্সেনিকের ওপর এই প্রলেপটা পড়ে অস্বাভাবিক দ্রুত।
আর্সেনিকে প্রলেপ লাগানোর জন্য আমাদের দেহের একটা এনজাইম দায়ী। এই এনজাইমটা সবার দেহেই থাকে- কিন্তু কারো দেহে এর কার্যকারিতা বেশি, কারো দেহে কম। এই বেশকমটা হয় আমাদের মধ্যকার জেনেটিক পার্থক্যের জন্য। আতাকামা মরুভূমির মানুষের জেনেটিক্সে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার জন্য তাদের দেহের এই প্রলেপ-লাগানো এনজাইমের কার্যকারিতা বেশি। ব্যাপারটা খুব সহজে বোঝার জন্য একটা লাইট ও তার সুইচের কথা চিন্তা করুন। সাধারণত আমাদের বসতবাড়িতে যে লাইট থাকে, সেগুলো সুইচ টিপলে জ্বলে, সুইচ টিপলে নেভে। এবার চিন্তা করুন সুইচটা আরেকটু জটিল- সুইচটাতে আপনি যত জোরে চাপ দেবেন, বাতির উজ্জ্বলতা তত বাড়বে। আমাদের দেহের ব্যাপারগুলো অনেকটা এরকম। আর্সেনিকে প্রলেপ লাগানোর এনজাইম সবার শরীরেই আছে, কিন্তু আতাকামা মরুভূমির মানুষগুলোর দেহে এই এনজাইমের সুইচে চাপটা বেশি পড়ছে।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে এই ব্যাপারগুলো আমরা মোটামুটি জানতাম, কিন্তু এই সুইচটা যে আসলে ঠিক কোথায়, অর্থাৎ আমাদের ডিএনএর ঠিক কোন জায়গাটাতে যে এর বসবাস- তা আমাদের জানা ছিল না। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে সুইডেনের একটা গ্রুপ এই সমস্যার সমাধান করেছেন। একই সাথে তারা আরেকটা মজার ব্যাপার দেখিয়েছেন- এই জোরে-চাপ-খাওয়া-সুইচ যে শুধু আতাকামা মরুভূমির মানুষদের একচেটিয়া, তা কিন্তু নয়। সব জায়গাতেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে যাদের দেহে এনজাইমটা বেশি কার্যকর। আমাদের দেশেও মানুষের ডিএনএ ঘাঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে কারো সুইচে চাপ বেশি, কারো সুইচে কম। পার্থক্যটা হল মানুষের সংখ্যায়। আতাকামা মরুভূমির অধিকাংশ মানুষই এই জোরালো সুইচ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যান্য জায়গার মানুষের মধ্যে এরকম জোরালো সুইচ আছে বইকি, কিন্তু এরকম মানুষের সংখ্যা কম। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- কাঠ দিয়ে তৈরি বাড়ি আমাদের দেশেও আছে, আবার জাপানেও আছে। কিন্তু জাপানে ভূমিকম্প বেশি বলে তার সাথে খাপ খাইতে গিয়ে মানুষ কাঠের বাড়ি বেশি বানিয়েছে। একইভাবে আতাকামায় প্রয়োজন দেখে বিবর্তন অপেক্ষাকৃত বেশি মানুষের দেহে জোরালো সুইচটা সংরক্ষণ করেছে।
৩।
অন্যান্য প্রাণীর বিবর্তন আমরা হরহামেশাই দেখি। এখন যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে শোরগোল হচ্ছে, সেটা বিবর্তন বই কিছু নয়- রোগজীবাণুগুলো নিজেদের মধ্যে বিবর্তন ঘটিয়ে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে পাল্লা দিতে শিখে গেছে। একইভাবে আমরা যে ধানের নতুন জাতের কথা শুনি, সেটা বিবর্তন ঘটিয়েই সম্ভব হয়, যদিও সেটার জন্য প্রকৃতির চেয়ে মানুষই বেশি দায়ী। একই কথা প্রযোজ্য পোষা প্রাণীর ব্রিডিং এর ক্ষেত্রেও। কুকুর বিড়াল ঘোড়া গরু ভেড়া ইত্যাদির মধ্যে মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিবর্তন ঘটিয়ে এদেরকে তার কাজের উপযোগী করে নিয়েছে। আজ থেকে হাজার বছর আগে আরবের বেদুইন বিবর্তন শব্দটা হয়তো জানত না, কিন্তু তার প্রিয় ঘোড়ার বিবর্তন কীভাবে ঘটাতে হয় সেই ব্যবহারিক জ্ঞান সে ঠিকই রাখত। আমরা চাষবাস শুরু করার আগে ফুলকপি বাঁধাকপির চেহারা কীরকম ছিল সেটা গুগল করে দেখতে পারেন।
মানুষের মধ্যে বিবর্তনের দৃষ্টান্ত স্বাভাবিক কারণেই এখন পর্যন্ত মোটামুটি হাতেগোনা- একে তো আমরা পৃথিবীতে এসেছি খুব বেশিদিন হয়নি, আর আমাদের তো কেউ পোষ মানায় না। দুধ খাওয়ার অভ্যাসের উদাহরণ তো আগেই দিলাম। তিব্বত আর আন্দিজের মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে বসবাস করে- তাদের মধ্যে অক্সিজেন স্বল্পতার সাথে খাপ খাওয়ার জন্য বিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রেইনফরেস্টের অধিবাসীদের উচ্চতা কম হলে তাদের বিভিন্ন সুবিধা হয়, বিশেষ করে দেহে তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। আফ্রিকার অনেক গোষ্ঠির জেনেটিক্স দেখলে বোঝা যায়, বিবর্তন ঠেলে এদেরকে কম উচ্চতার দিকে নিয়ে গেছে।
এসবের প্রেক্ষিতে আমার জানতে ইচ্ছে করে বিবর্তনের ভবিষ্যৎটা আসলে কী। ঢাকা শহরের অবস্থা আজ যেমন আছে আগামী হাজার বছরেও যদি সেরকমই থাকে, তাহলে কি আমাদের মধ্যে বাতাসে সীসার বিষক্রিয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিবর্তন হয়ে যাবে?
এর সম্ভাবনা বোধহয় কম, কারণ এত কম সময়ের মধ্যে বিবর্তনের প্রভাব মোটামুটি সীমিত। আর্সেনিকের উদাহরণটাই ধরুন। সেই জোরালো সুইচ থাকলেই যে আপনি ইচ্ছেমত আর্সেনিক খেতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। শুধু সাধারণ মানুষের দেহে এর প্রভাব যত বেশি, আপনার দেহে তার থেকে খানিকটা কম হবে।
আরেকটা মজার উদাহরণ আমাদের দেশেই আছে। বাংলাদেশের একটা চিরাচরিত সমস্যার নাম কলেরা। সেই প্রাচীন মুনিঋষিদের যুগ থেকেই সে আমাদের সাথে আছে। আমাদের মধ্যে কী কলেরার সাথে খাপ খাওয়ার জন্য কোন বিবর্তন হয়েছে? হয়েছে। হার্ভার্ড আর আইসিডিডিআর,বির মিলিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় আসলেই কলেরার সাথে মোকাবেলার জন্য কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তাই বলে কলেরার ভয়াবহতা তো এই কারণে অতটা কমে নি। যতটা কমেছে সেটা সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কারণে- পানির গুণাগুণ বা পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য।
এদিক থেকে দেখলে আমরা মানুষের একটা স্বতন্ত্র সংজ্ঞায়ন পাই- প্রজাতি হিসেবে আমরাই প্রকৃতির সাথে মোকাবেলার জন্য বিবর্তনের ওপর সবচেয়ে কম নির্ভরশীল। আমাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমরা প্রকৃতির হাতে পুরোপুরি ছেড়ে দেই না, নিজেরাই আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যা পারার করি।
বিশ্ব উষ্ণায়ন আর সাগরময় প্লাস্টিক অবশ্য বলছে সেটা সবসময় খুব একটা কাজের কথা নয়।
———————-
পরিশিষ্ট
লেখায় সরলতার স্বার্থে আমি কিছু স্বাধীনতা ব্যবহার করেছি, যেগুলো একজন বিজ্ঞানী দেখলে বিরক্ত হতে পারেন। সেগুলো এই বেলা পরিষ্কার করে দেই।
প্রথমত, দেহের মধ্যে আর্সেনিকের বায়োকেমিস্ট্রি এরকম- আর্সেনিক মিথাইল ট্র্যান্সফারেজ এনজাইম একে প্রথমে মনোমিথাইল আর্সোনিক অ্যাসিড বানায়, তারপর ডাইমিথাইল আর্সোনিক অ্যাসিড। মনোমিথাইল ফর্মটা ক্ষতিকর। আতাকামার মানুষের মূত্রে ডাইমিথাইলের পরিমাণ বেশি, কাজেই তাদের মিথাইল ট্র্যান্সফারেজ আরো দ্রুত আর্সেনিককে ডাইমিথাইল গ্রুপ পরিয়ে দিতে পারছে। প্রলেপ বলতে এই ডাইমিথাইল মডিফিকেশানকেই আমি বোঝাতে চেয়েছি। বিবর্তনের জন্য পরিবর্তনটা মিথাইল ট্র্যান্সফারেজে সরাসরি আসে না, আসে এর রেগুলেটরি এলেমেন্টে। এটাই হচ্ছে সুইচ।
দ্বিতীয়ত, এ লেখায় আমি যেভাবে বিবর্তনের সংজ্ঞায়ন করেছি, সেটা দেখে অনেকেই ভ্রূ কুঁচকোবেন। পপুলেশান জেনেটিক্সের ভাষায় বিবর্তন হচ্ছে change in allele frequencies। সেভাবে দেখলে একটা পপুলেশানের জিন পুলের যত ধরণের পরিবর্তন সবই বিবর্তন বলে গণ্য হবে, মানুষের জন্ম মৃত্যু পর্যন্ত। আমি আসলে এখানে যেসব ঘটনাকে বিবর্তন বলছি, সেগুলো আসলে বিবর্তন নয়, বরং প্রাকৃতিক নির্বাচন। শব্দটা একটু গালভরা বলে বিবর্তন ব্যবহার করেছি, যেহেতু প্রাকৃতিক নির্বাচন বিবর্তন ঘটারই একটা প্রক্রিয়া।
তথ্যসূত্র
বাংলাদেশে আর্সেনিকের ইতিহাস ও প্রভাব সম্পর্কে চমৎকার একটা আর্টিকল লিখেছেন ফ্রেড পিয়ার্স। ইউনেস্কোর The Courier ম্যাগাজিনের জানুয়ারী ২০০১ সংখ্যায় আর্টিকলটি পাবেন, নাম Who is to blame for Bangladesh's Arsenic poisoning?
আইসিডিডিআর,বির গভীর নলকূপ সংক্রান্ত যে গবেষণাটার কথা বললাম, সেটার পেপার এই- Goel, V., Islam, M. S., Yunus, M., Ali, M. T., Khan, A. F., Alam, N., ... & Emch, M. (2019). Deep tubewell microbial water quality and access in arsenic mitigation programs in rural Bangladesh. Science of The Total Environment, 659, 1577-1584. এই পেপারটার একটা বৈশিষ্ট্য হল এখানে সিরাজুল ইসলাম স্যারের গ্রুপ এবং ইউনুস স্যারের গ্রুপ একসাথে কাজ করেছেন। প্রথমজনের বিশেষত্ব রোগজীবাণু নিয়ে গবেষণা, দ্বিতীয়জনের বিশেষত্ব আর্সেনিক। দু'জন একসাথে জোট বাঁধার ফলেই গভীর নলকূপের এই পরোক্ষ দিকগুলো আলোতে এসেছে।
আর্জেন্টিনার মানুষের আর্সেনিকে বিবর্তনের প্রথম পেপার এই- Schlebusch, C. M., Gattepaille, L. M., Engström, K., Vahter, M., Jakobsson, M., & Broberg, K. (2015). Human adaptation to arsenic-rich environments. Molecular biology and evolution, 32(6), 1544-1555. সায়েন্টিফিক পেপার পড়ার অত অভ্যাস না থাকলে এ ব্যাপারে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত কার্ল জিমারের একটা আর্টিকল পড়ে ফেলতে পারেন। আর্টিকলটির নাম An unlikely driver of evolution: Arsenic, বের হয়েছে ২০১৫ সালের ১২ মার্চ।
মানুষের মধ্যে বিবর্তন তথা প্রাকৃতিক নির্বাচনের অন্যান্য উদাহরণ জানতে চাইলে এই রিভিউ পেপারটা দেখতে পারেন- Fan, S., Hansen, M. E., Lo, Y., & Tishkoff, S. A. (2016). Going global by adapting local: A review of recent human adaptation. Science, 354(6308), 54-59.
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কলেরার বিরুদ্ধে বিবর্তনের প্রমাণ এই পেপারে- Karlsson, E. K., Harris, J. B., Tabrizi, S., Rahman, A., Shlyakhter, I., Patterson, N., ... & Sheikh, A. (2013). Natural selection in a bangladeshi population from the cholera-endemic ganges river delta. Science translational medicine, 5(192), 192ra86-192ra86.
Writer: Hassan uz Zaman Shamol
Tags:
স্বাস্থ্য