ভালো লাগার চরমতম একটা বিষয় সায়েন্স ফিকশন। ক্ষুদ্র জীবনে লেখার চেষ্টাও করেছি। তবে পড়েছি বেশি। সেই আলোকে যারা সায়েন্স ফিকশন পড়তে ও লিখতে চান, তাদের জন্য আমার অভিজ্ঞতা ও জানার পরিধি থেকে কিছু বিষয়। ভুলভ্রান্তি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সোর্স উল্লেখ করিনি। কারণ সম্পূর্ণ নিজের মেমরির উপর আস্থা রেখে লিখেছি।
.
বড় ধরণের কোনো ভুল থাকলে নোটিশ করার অনুরোধ রইলো। আপডেট করে দেবো সেই অনুসারে। অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবাই।
সায়েন্স ফিকশন কী?
=> সংজ্ঞা দেয়াটা একটু কঠিন। সাহিত্যের একটা জনপ্রিয় জনরা হচ্ছে সায়েন্স ফিকশন।
.
=> বাংলা ভাষায় প্রথম সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসেবে জগদীশচন্দ্র বসুকে ভাবা হয়। তবে কারও কারও মতে হেমলাল দত্ত।
.
=> বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বইয়ের নাম: তোমাদের জন্য ভালোবাসা।
.
=> বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন পত্রিকা মৌলিক। সম্পাদক আহসান হাবীব।
.
=> বাংলা ভাষায় সায়েন্স ফিকশনকে বলা হয় “কল্পবিজ্ঞান” বা “বিজ্ঞান কল্পকাহিনী” বা শুধুই “কল্পকাহিনী”।
.
=> সায়েন্স ফিকশনকে যদি সংজ্ঞাকারে বলা হয় তাহলে বলতে হবে এরকম করে: বিজ্ঞান বিষয়টাকে প্রাধান্য দিয়ে যে সাহিত্য রচনা করা হয়, সেটাই সায়েন্স ফিকশন। অর্থাৎ সায়েন্স ফিকশনে বিজ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে। আর সেই বিজ্ঞানটা অবশ্যই লজিক্যাল অর্থে হতে হবে।
.
.
সায়েন্স ফিকশন কেন?
=> মানুষ অদ্ভুত অসাধারণ কিছু পছন্দ করে। যা সে পারে না, তাও সে পারতে চায়। এই বিষয়টা সায়েন্স ফিকশনে থাকে বলেই মানুষ সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করে।
.
=> উদাহরণ: মানুষ অতীতে যেতে চায়, ভবিষ্যতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই বিষয়গুলো সায়েন্স ফিকশনে দেখানো হয়েছে। এইচ. জি. ওয়েলসের অসাধারণ সায়েন্স ফিকশন “টাইম মেশিন” সেটা করে দেখিয়েছে বলে পাঠকের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিলো বইটা।
.
=> সায়েন্স ফিকশন মানুষের ভাবনার জগৎকে সুপ্রসারিত করে অবধারিতভাবে। যা অন্য কোনো সাহিত্যে সম্ভব নয়।
.
সায়েন্স ফিকশন কীভাবে?
=> প্রশ্ন হলো কীভাবে সায়েন্স ফিকশন লেখা সম্ভব? একটা সাধারণ গল্প আর সায়েন্স ফিকশনের তফাৎ কোথায়?
.
=> যেকোনো একটা লেখা শুরু করার জন্য ব্রেইন স্টর্মিং অনেক বড় একটা ব্যাপার। যে লেখক যতো বেশি পরিমাণে ব্রেইন স্টর্মিং করতে পারেন, তিনি তত সফল লেখক। আর সায়েন্স ফিকশনে সর্বোচ্চ ব্রেইন স্ট্রর্মিং করতে হবে, হয়।
.
=> বিজ্ঞান না জেনে সায়েন্স ফিকশন লিখতে যাওয়া বোকামী। অন্তত বিজ্ঞানের বেসিক ও কমন বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
.
=> প্রচুর বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর পাশাপাশি নন-ফিকশন বিজ্ঞান, ক্ল্যাসিক্যাল বিজ্ঞান সম্পর্কেও জানতে হবে।
.
কাদের সায়েন্স ফিকশন পড়তে হবে?
=> নাম বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমি শুধু তিনজনের নাম বলবো: জুলভার্ন, আইজ্যাক আসিমভ এবং স্ট্যান লী।
.
=> বর্তমানে বাংলাদেশেও প্রচুর সায়েন্স ফিকশন লেখা হচ্ছে। কিন্তু গুণগত মান খুবই কম। বিশেষ করে নতুন সায়েন্স ফিকশন লেখকরা “সায়েন্স ফিকশন” এবং “সায়েন্স ফ্যান্টাসি” এই দু’টো বিষয়ের তফাৎ সম্ভবত জানেন না!
.
“সায়েন্স ফিকশন” বনাম “সায়েন্স ফ্যান্টাসি”
=> বাংলাভাষায় জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা “নিরুদ্দেশের কাহিনী”-কে বলা হয় প্রথম বিজ্ঞান গল্প। যেখানে দেখা যায় একজন চুলের তেল মেখে ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে যেকোনো বৈরী আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যা আদৌ বিজ্ঞানসম্মত কোনো বিষয় নয়।
.
=> অর্থাৎ:- যে লেখাটা বিজ্ঞাননির্ভর নয়, কিন্তু বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত কাল্পনিক ভাবনা মাত্র, সেটা হচ্ছে সায়েন্স ফ্যান্টাসি।
.
=> আর:- যে লেখাটা বিজ্ঞাননির্ভর, এবং বিজ্ঞানটা কল্পনাপ্রসুত নয়, বরং ঐ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নতুন একটা বিষয়ের অবতারণা করা হচ্ছে লেখায়, সেটাই সায়েন্স ফিকশন।
.
সায়েন্স ফিকশন লিখতে হলে...
=> বিজ্ঞান জানতে হবে, শুদ্ধ বিজ্ঞান।
=> কল্পনা করে বিজ্ঞানের অবতারণা করা যাবে না, বরং বিজ্ঞানের উপস্থিতিতে কল্পনা করতে হবে।
=> মানুষ তার পরিধির বাইরে কল্পনা করতে পারে না, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
=> এমন কোনো বিষয় আনা যাবে না, যেটা প্রচলিত বিজ্ঞানের সাথে মিলে না।
=> বেসিক বিজ্ঞান, ক্ল্যাসিক্যাল বিজ্ঞান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
=> অযথা কাল্পনিক তথ্য দেয়া যাবে না।
=> ভবিষ্যতে কী হবে শুধু সে কথা লিখে যাওয়া মানেই সায়েন্স ফিকশন নয়। বর্তমান ঘটনা নিয়েও সায়েন্স ফিকশন হতে পারে।
সংক্ষিপ্ত সময়ে যা মাথায় এসেছে লিখলাম।
ভালো থাকুন সবাই অনেক অনেক।
লিখাঃ পান্থ বিহোস
সদস্য, থ্রিলার কমিউনিটি
সদস্য, থ্রিলার কমিউনিটি