বায়োলজি রহস্য - ৪


অনেকেই বলেছিলো জুলজির ৭ম অধ্যায় মানে চলন ও অংগচালনা অধ্যায় নিয়ে পোস্ট করার জন্য। অতএব এই পোস্ট এ চলন ও অংগ চালনা ( Locomotion & Movement ) নিয়ে একটু আলোচনা করব।
প্রতিটা পোস্ট এ যেমন বলে থাকি , এই পোস্ট এর জন্য ও গাজী আজমল স্যার এর জুলজি বইটি পাশে রেখে পোস্ট টি পড়লে অনেক ভাল হবে।
.শুরু করা যাক তাহলে ;
Zoology_07 ; "Locomotion & Movement" / skeletal & muscle system

এই অধ্যায়ের জন্য খুব একটা suffix, prefix নেই। যেগুলো আছে সেগুলো আলোচনার মধ্যেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব, আমি যতটুকু পারি আর কি।
আর আমি যাস্ট স্পেসিফিক কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা করব, সাধারন থিওরি যা বইয়ে আছে তা শুধু শুধু টাইপ করে সময় নষ্ট হবে। যেগুলো বুঝার মত বিষয় সেগুলোই বলছি। অনেক্ষন ধরে বক বক করছি, আর না।
এবার লেকচার শুরু, কল্পনা করবা তুমি ভাইয়ার ক্লাস করতেছ।

আমাদের চলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কংকালতন্ত্র ও পেশিতন্ত্র। এই পোস্টএ কংকাল তন্ত্রের যতটুকু সম্ভব শেয়ার করব। আমাদের কংকাল তন্ত্র প্রধান ২ ভাগে বিভক্ত।
অর্থাৎ অক্ষীয়(axial skeleton) ও উপাংগীয় কংকাল (Appendicular skeleton). আমরা ত appendix শব্দের সাথে পরিচিত, তাই না? এপেন্ডিক্স থাকে সিকামে। এই শব্দটির মানে আসলে Accessory part,
মানে প্রধান অংশ না, আনুষংগিক বর্ধিত অংশ। ঠিক একইভাবে Appendicular skeleton মানে যেগুলো Axial part থেকে শাখা প্রশাখার মত বের হয়।যেমনঃ হাত, পা, বক্ষ অস্থিচক্র , শ্রোণি অস্থিচক্র।

By the way, একটা টিপস দেই মাঝখান দিয়ে। যখন তুমি Human physiology এর চ্যাপ্টার পড়বা , তখন নিজেকে ডাক্তার কল্পনা করবা। নিজেকে ইবনে সিনা ও ভাবতে পারো। যখন বোটানি পড়বা তখন নিজেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানি হিসেবে কল্পনা করবা। যখন পদার্থবিজ্ঞান পড়তে যাবা নিজেকে নিউটন, গ্যালিলিও হিসেবে কল্পনা করবা। যখন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান পড়বা তখন নিজেকে আইনস্টাইন, প্লাঙ্ক হিসেবে কল্পনা করবা। তড়িৎ রসায়ন পড়তে গেলে নিজেকে ফ্যরাডে কল্পনা করে পড়বা। এতে কি হবে ? যারা ফুটবল খেলো তারা অনেকেই রোনালদো না হয় মেসির মত হতে চায়, ওদের কৌশল গুলো অনুকরণ করে , কারন এর মধ্যে একটা
অনুপ্রেরণা আর আনন্দ পাওয়া যায়। আনন্দ ছাড়া যেকোন কাজ ই আসলে ফলপ্রসু হয় না। so, এই পোস্ট যখন পড়বা নিজেকে ডাক্তার কল্পনা করো।

বইয়ের মধ্যে দেওয়া আছে বিভিন্ন প্রকার অস্থির নাম ও সংখ্যা। খুব ঝামেলার না এগুলো? হুম, অনেকের কাছে হয়ত ঝামেলার ই বিষয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে Human physiology part এর যেকোন প্রশ্নের উত্তর করার জন্য তুমি "নকল" করার সুযোগ পাবা! অবাক হচ্ছো? অবাক হবার ই কথা।দেখো, তুমি human physiology চ্যাপ্টার এ যা যা পড় সব তোমার বডির মধ্যেই আছে।এই যে এত অস্থি, অস্থির নাম, সংখ্যা, সব ই তোমার দেহের মধ্যে আছে। টেকনিক হচ্ছে যখন পড়বা তখন নিজের বডির সাথে মিলিয়ে পড়বা, সবসময় আজমল স্যার যা বলবে তাই কেন বিশ্বাস করতে হবে? তুমি নিজেও একটু গবেষনা করে দেখো, আজমল স্যার সত্য বলছে কি না। আমাদের কংকালতন্ত্রে যা যা আছে সব ই আমরা বাইরে থেকে উপলব্ধি করতে পারি। so, এত প্যারা নিয়ে না বুঝে মখস্থ করার কি দরকার। নিউরন গুলো রে অন্য ভাল ভাল চিন্তায় কাজে লাগাও।

চল, এখন শিখি অক্ষীয় কংকাল । করোটির অস্থি গুলোঃ
করোটি হচ্ছে তোমার গলার উপরের অংশ।(পড়ার সময় নিজের দেহের সাথে মিলাবা) , এবার দেখো তোমার গলার উপরের অংশে কি কি আছে? মাথা, কান, নাক, মুখ এগুলোই । প্রধান অংশগুলো হচ্ছে মাথার খুলি, মুখমন্ডল, আর কানের অস্থি।

এবার আসি এদের নাম আর সংখ্যায়।
* মাথার খুলির অস্থিগুলো কে বলা হয় করোটিকার অস্থি বা Cranial Bones ( science এর সব ইংরেজি সহ পড়বা, স্পেশালি মানব দেহ)। খেয়াল করো, করোটি > করোটিকা। আমরা যেমন বলে থাকি , ধমনি ও ধমনিকা। করোটি বড় অংশ আর করোটিকা ছোট অংশ। এজন্যই করোটির অস্থি ২৯ টি। আর করোটিকা বা মাথার খুলির অস্থি ৮ টি।
এবার দেখব করোটিকা অস্থির নাম গুলো কি কি। ফ্রন্টাল /frontal- নাম দেখেই বুঝা যায় সামনের পার্ট মানে কপাল গঠন করে ।কপাল ত একটাই আমাদের। তাই frontal bone ত একটাই হবে, তাই না? এবার বল, আমাদের দেহের পাশ কয়টা? ২ টা। ডান আর বাম। so, মাথার ও ২ টা সাইড। মনে আছে, আগের একটা পোস্ট এ para- suffix এর কথা বলেছিলাম। প্যারা মানে পাশের দিকে বুঝায়। এখন তুমিই বল, প্যারাইটাল/parietal অস্থি কয়টা হবে? যেহেতু মাথার দুইপাশে থাকে, তাই ২ তা। মাথার উভয়পাশে প্যারাইটাল এর নিচে কান সংলগ্ন ২ টা অস্থি থাকে, এগুলো হল টেমপোরাল / temporal, করোটিকার বাকি অস্থি গুলো ( occipital, ethmoid, sphenoid ) ১ টা করে, মোট করোটিকার অস্থি ৮ টি। তারপর ও যদি তোমার ভাল না লাগে এইভাবে পড়তে, তাহলে তোমার জন্য বাজারে হরেক রকমের ছন্দ আছে।
যেমনঃ " PEFTOS"/ STEP OF/ ফেনীর POET ফ্রান্সে ইত্যাদি। কোনটা দিয়ে কি হবে নিজেই মিলাও।
________________________


কথা না বাড়িয়ে চলো পড়ালেখা শুরু করি!
হুম! প্রথমেই তোমার মুখের দিকে দেখো। কিভাবে দেখবা? যাইহোক কল্পনা করো তোমার মুখের মধ্যে কি কি অংশ আছে ? নাক, চোখ , মুখ, চোয়াল, থুতনি, গাল, কান ( কান যদিও আলাদা অংশ )।
চল এবার দেখে নেই, এই অংশ গুলো কি কি অস্থি নিয়ে গঠিত। তার আগে একটু বলি, নাকের medical term হচ্ছে ন্যাসাল/ nasal ( যেমনঃ ন্যাসাল ড্রপ ) , সুপেরিয়র মানে উপরে/বড়, ইনফেরিয়র মানে নিচে/ ছোট।
তারপর ল্যাক্রিমাল হচ্ছে চোখ সম্পর্কিত ( আসলে ল্যাক্রিমাল অস্থির নাম থেকে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থির নাম রাখা হয়েছে )।

ওহ! পাশে আজমল স্যার এর জুলজি বইটি পাশে রাখার কথা বলতে ভুলে গেছিলাম। বইয়ের সাথে মিলিয়ে পড়লে আরো সহজ হয়ে যাবে।

যাইহোক, মুখমন্ডলের অংশগুলোর গঠনের জন্য যেসব অস্থি লাগে , সেগুলো হচ্ছেঃ ম্যাক্সিলা/ maxila, ম্যান্ডিবল/mandible , জাইগোম্যাটিক/zygomatic, ন্যাসাল/nasal, ল্যাক্রিমাল/lacrimal, ইনফিরিয়র ন্যাসাল কংকা/inferior nasal ,ভোমার/ vomer, প্যালাটাইন/palatine, এই মোট ৮ প্রকারের ১৪ টি অস্থি নিয়ে মুখমন্ডল গঠিত।
এবার একটু খেয়াল করো, তোমার থুতনি কয়টা ? অবশ্যই ১ টা। থুতনি গঠনকারি অস্থিটির নাম হচ্ছে ম্যান্ডিবল ( Mandible ) , এখন তুমিই বলো তাহলে আমাদের ম্যান্ডিবল কয়টা হবে? ১ টাই তো! তারপর বলো
তোমার গাল কয়টা ? ২ টা, তাই না? গাল গঠন করে ম্যাক্সিলা অস্থি, তাই ম্যাক্সিলা ও ২টা। Wait! মুখস্থ করতে হবে না। এমনেই পাড়বা ভাই। তারপর যদি বলি , ল্যাক্রিমাল অস্থি কয়টি ? তুমি খুব ভালো করেই জানো,
তোমার চোখ ২ টি, আর ল্যাক্রিমাল যেহেতু চোখ রিলেটেড, তাই এই অস্থি ও ২ টা। then, জাইগোম্যাটিক ( zygomatic ) অস্থি ও ২ টা , কিভাবে বুঝলাম! আচ্ছা বলতো zygo- মানে কি? এর মানে জোড়, এইজন্যই
জাইগোম্যাটিক অস্থি ও ২ টা। আর আমাদের নাক যেহেতু ২ ভাগে বিভক্ত, তাই ন্যসাল ও ইনফিরিয়র ন্যসাল অস্থি ও ২ টা করে এবং প্যালেটাইন অস্থি ও ২ টা করে। ১৪ টা পূর্ণ হতে আর লাগে ১ টা , সেই মহাশয় হচ্ছেন ভোমার (vomer)। এবার ব্যাপার টা সহজ লাগছে কিনা জানিনা।
যদি তারপর ও কঠিন লাগে, তাহলে নিচের ছন্দগুলো তোমার জন্য।
*মামার জানালায় ভোমার পা ই*/ *ভোলা মামা জাপানে ইন*
কোনটা দিয়ে কি হবে নিজেরা কষ্ট করে মিলিয়ে নাও। মনে রেখো ২ জন ছাড়া মুখমন্ডলীয় অস্থির সবগুলো ২ টা করে। যেই ২ জন সিংগেল তাদেরকে
এইভাবে মনে রাখতে পারোঃ " ভুমি সিংগেল " , ভু তে ভোমার, মি তে ম্যান্ডিবল।

এখন মেরুদন্ড থেকে আলোচনা করব। বেশি কথা না বলে চলো শিখে ফেলি মেরুদন্ডের অস্থিগুলো। যখন এই সিরিজের পোস্টগুলো পড়বা তখন পাশে আজমল স্যার এর জুলজি বইটা রাখবা।

মেরুদন্ড আমরা সবাই চিনি। এটি আমাদের দেহের পেছনে থাকে। মেরুদন্ড অনেকগুলো অস্থি খন্ড নিয়ে গঠিত হয়। এদেরকে বলা হয় কশেরুকা বা vertebra । দেহের বিভিন্ন অঞ্চল অনুসারে সব ধরনের অস্থির ই বিভিন্ন নাম আছে । আচ্ছা আমরা বলি না যে, সে একটা নোয়াখাইল্লা, সে একটা বরিশাইল্লা, etc. কেনো বলি? কারন তাদের অবস্থান বা জন্মস্থান নোয়াখালি, বা বরিশালে। ঠিক একইভাবে আমদের দেহের অস্থি গুলোর ও নামকরণ করা হয়েছে। হয়ত তাদের অবস্থান অনুসারে, অথবা তাদের বৈশিষ্ট্য বা অন্য কোনো Source অনুসারে।
এবার তুমি তোমার পিঠের দিকে তাকাও। হা হা। তাকাতে তো পারবা না । ইমাজিন করো কি কি আছে? প্রথমে ঘার, তারপর পিঠ, তারপর কোমর বা কটি অঞ্চল, তারপর শ্রোনি অঞ্চল, তারপর সবার শেষে পুচ্ছ অঞ্চল।
গলা/ গ্রীবার medical term হচ্ছে নেক/neck ( only noun form ) অথবা সারভাইকাল / cervical ( adjective form- কারণ কশেরুকা শব্দের আগে বসে তাকে মডিফাই বা নির্দিষ্ট করে বুঝায় )। আর
বক্ষপিঞ্জর অঞ্চলকে বলা থোরাসিক/ Thoracic (adjective form ), কটি অঞ্চলের মেডিকেল টার্ম হচ্ছে লাম্বার / lumber ( adjective form ), শ্রোনি অঞ্চলের জন্য স্যাক্রাল/ sacral (sacral is an adjective but *sacrum* is a noun ), তারপর পুচ্ছ অঞ্চলের জন্য কক্কিজিয়াল/ coccygeal (coccygeal is an adjective but *coccyx* is a noun . আলীম স্যার বলেছেন এটি কোকিলের বা cuckoo ঠোটের সদৃশ হওয়ায় এরুপ নাম রাখা হয়েছে )।
এবার কি তাহলে বুঝা গেলো এদের নামকরণের রহস্য, কেন গলার দিকের কশেরুকার নাম সারভাইকাল কশেরুকা, বক্ষপিঞ্জরের পিছনের কশেরুকাগুলো নাম থোরাসিক কশেরুকা, কটি অঞ্চলের গুলোর নাম লাম্বার কশেরুকা, শ্রোনি অঞ্চলের গুলো স্যাক্রাল কশেরুকা , পুচ্ছ অঞ্চলের গুলো কক্কিজিয়াল কশেরুকা? হুম এদের অবস্থান এর কারনে বা গঠনের কারণে এরুপ নাম হয়েছে।

তারপর এর যেই কাজ , সেইটা হচ্ছে এদের সংখ্যা মনে রাখা। কিভাবে মনে রাখবো এদের সংখ্যা? তারজন্য ত কাউকে কেটে দেখা লাগবে তার কশেরুকা কয়টা !! যেহেতু কাটতে পারব না , তাহলে বই এ ছবি আছে ছবির দিকে তাকাও । বই এ সংখ্যা ও দেয়া আছে । মুখস্থ না করতে চাইলে , খেয়াল করো সারভাইকাল শব্দটিতে *স* আছে , আর স তে সারভাইকাল, স তে সাত (৭) , তারপর থোরাসিক / Thoracic এ T আছে , T তে twelve (১২), তারপর ৫৫৪, মানে লাম্বার ৫, স্যাক্রাল ৫, কক্কিজিয়াল ৪। হয়ে গেলো ৩৩ টা। কিন্তু কথা হচ্ছে পরিণত বয়সে স্যক্রাল গুলো মিলে ১ টা স্যাক্রাম হয়ে যায় আর কক্কিজিয়াল গুলো মিলে ১ টা কক্কিক্স হয়ে
যায়। তখন মোট অস্থি হয় ২৬ টি (৭,১২,৫,১,১,) । এই হলো আমাদের Backbone.

** প্রশ্নের মারপ্যাচ **
Ques: স্যাক্রাম / কক্কিক্স কয়টি ? মনে রাখবা স্যাক্রাম বা কক্কিক্স বললে উত্তর হবে ১ টি। আর স্যাক্রাল বললে ৫ টি , কক্কিজিয়াল বললে ৪ টি।
Ques: মেরুদন্ড কয়টি অস্থিখন্ড নিয়ে গঠিত? অস্থিখন্ড বললেই ৩৩, অন্যথায় ২৬। মনে থাকে জেনো।


Syed Faysel Ahammad Rajo

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম