Cell বা কোষ

কোষ কি?
জীবদেহ গঠনের একক হলো কোষ। অথবা বলতে পারেন জীব গঠিত হয় মূলত কোষ দিয়ে। একটি কমন ও যুক্তিমূলক উদাহরণ আছে।
একটি বড় বিল্ডিং গড়তে যেমন অনেকগুলো মানে অসংখ্য অসংখ্য ইটের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনিও একটা জীব গঠনের জন্য অসংখ্য অসংখ্য কোষের প্রয়োজন হয়।
কোষের গঠনের আগে আমাদেরকে কোষের প্রকারভেদ নিয়ে একটু জানতে হবে।

শরীরবৃত্তীয় কাজের ওপর ভিত্তি করে কোষ দুই প্রকার।
১| Somatic Cell or দেহ কোষ :
এই কোষগুলো একটি জীবের দেহ গঠন করে।
২| Gamete Cell or জনন কোষ :
এই কোষগুলো জীবের বংশবৃদ্ধি ঘটায়।

আবার নিউক্লিয়াসের গঠনের ওপর ভিত্তি করে কোষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১| Prokaryotic Cell বা আদি কোষ :
এই কোষের নিউক্লিয়াস কোষের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। নিউক্লিয় ঝিল্লি, ক্রোমোজোম ইত্যাদি থাকে না৷ তাছাড়াও এই ধরনের কোষে মাইট্রোকন্ডিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলার, গলজি বস্তু, লাইসোজোম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না
২| Eukaryotic Cell or প্রকৃত কোষ :
এই কোষে নিউক্লিয়াস সুগঠিত। এখানে নিউক্লিয়াসের সকল বস্তুই বিদ্যয়মান থাকে। তাছাড়াও মাইট্রোকন্ডিয়া,রাইবোজোম, উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্লাস্টিড, প্রাণির ক্ষেত্রে সেন্টিওল ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে।

Nucleus এর ক্রমোজোমের ওপর ভিত্তি করে কোষকে আবার আরও দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
 Deplied Cell :
এই কোষের নিউক্লিয়াসে দুই সেট ক্রোমোজোম থাকে। তাই একে 2n দ্বারা লিখা হয়।
২| Haploid Cell :
এই সব কোষের নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজম থাকে এক সেট। তাই একে n দ্বারা লিখা হয়।

একটা কোষে কি কি থাকতে পারে?
একটা কোষে অনেক প্রকার অঙ্গাণু থাকতে পারে৷ তবে তার মধ্যে কয়েকটা অঙ্গাণু প্রায় সকল কোষেই পাওয়া যায়। তার মধ্যে আমি কয়েকটা অঙ্গাণু নিয়ে নিচে লিখলাম।
১| কোষ প্রাচীর বা Cell Wall :
দুটা কোষকে যেটি আটকিয়ে রাখে তাকে বলা হয় কোষ প্রাচীর। মধ্য ল্যামেলা, প্রাইমারি প্রাচীর ও সেকেন্ডারি প্রাচীর নিয়ে এটি গঠিত। মূলত মধ্য ল্যামেলাই দুটো কোষের মধ্যে অবস্থান করে। তার ওপর ঘন সেলুলোজ জমা হয়ে প্রাইমারি প্রাচীর গঠিত হয়। আর শেষে আর সেলুলোজ জমা হয়ে সেকেন্ডারি প্রাচীরও গঠিত হয়। সেকেন্ডারি প্রাচীর মূলত পরিণত কোষে মানে যে কোষ স্থায়ী হয়ে গেছে সেই কোষে গঠিত হয়।
২| Cell Membrane বা কোষ ঝিল্লি :
কোষ প্রাচীরের পরে অবস্থিত দ্বিস্তরী লিপোপ্রোটিন দিয়ে গটিত পর্দাটিকে বলা হয় কোষ ঝিল্লি। এটি কোষের আকার আকৃতি প্রদান করে। কোষের মধ্যে বিভিন্ন বস্তুর চলাল নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি কাজ করে থাকে।
৩| গলজি বস্তু বা Golgi Body :
কোষের মধ্যে সিস্টার্নি, ভ্যাকুওল ও ভ্যাসিকেল নিয়ে গঠিত বস্তুটিকে বলা হয় গলজি বস্তু। বিজ্ঞানী গলজি এটি প্রথম বিড়াল ও প্যাঁচার মস্তিষ্ক কোষে অবিষ্কার করেব জন্য তার নামনুসারে এটির নামকরণ করা হয়। সিস্টার্নি ৩-৭ টি নলাকার পর্দাবেষ্টিত দুই মাথা গোল, আটকানো ও মোটা আর মধ্যভাগটা একটু চিকন অঙ্গাণু নিয়ে গটিত। সিস্টার্নির মধ্যভাগ আরও সরু হয়ে গিয়ে এক সময় মধ্যভাগটা পাতলা হয়ে ছিড়ে যায়। ফলে দুইপাশে দুট বড় বড় গোল অঙ্গানু থাকে এদেরকে বলা হয় ভ্যাকুওল। ভ্যাকুওল আস্তে আস্তে ছোট হয়ে ছোট গহ্বরের পরিণত হয় যাকে বলা হয় ভ্যাসিকল। ধারণা করা হয়, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলার থেকে গলজি বস্তুর সৃষ্টি হয়।
৪| লাইসোজোম বা Lysosome:
কোষের গলজি বস্তু থেকে সৃষ্ট, গলজি বস্তুর কাছে অবস্থিত ও কোষীয় পরিপাকে অংশগ্রহণকারী অঙ্গাণুটির নাম হলো লাইসোজোম।
ফ্যাগোসাইটিসস ও পিনোসাইটিসস প্রক্রিয়ার মধ্যমে কোষে অনুপ্রবেশকৃত জীবাণুকে বিগলিত করতে পারে লাইসোজোম। এছাড়াও প্রতিকূল পরিবেশে Autolysis প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাইসোজোম কোষকে ধ্বংস করে দেয়। আবার Autophagic Vacuoles গঠনের মাধ্যমে কোষের মাইট্রোকন্ডিয়া, রাইবোজোম ও এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলারকে পরিপাক করে ফেলে।
লাইসোজোম মূলত কোষের ধ্বলসমূলক কাজ করে। মানে বলতে পারে কোষের ডাকাত হলো লাইসোজোম। তাবে সব ডাকাত কিন্তু সব সময় খারাপ কাজ করে না। কারণ তারাও ত মানুষ। আর এখানেও লাইসোজোম যে শুধু ধ্বংসই করে তা কিন্তু নয় এটি কোষ বিভাজনের প্রেরণ ও কেরাটিন সৃষ্টিতে সাহায্য করে থাকে।

৫| Endoplasmic Renticulm :
একক ঝিল্লি দিয়ে গঠিত, কোষের সাইট্রোপ্লাজমে বিস্তৃতভাবে অবস্থান করে এবং নিক্লিয়ার ঝিল্লি ও কোষ ঝিল্লির মধ্যে সংযোগ সৃষ্টিকারী অঙ্গাণুটির নাম হলো এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলাম।
এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলামকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলাম :
যে এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলামের গায়ে কোনো রাইবেলোজম থাকে না তাকে বলা হয় মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলাম।
খ) অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলাম :
যে এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলামের গায়ে রাইবোজোম অঙ্গাণু যুক্ত থাকে তাকে বলা হয় অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেন্টিকুলাম।

৬| Ribosome :
কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণকারী অঙ্গাণু যা বেশির ভাগই সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে তাকে বলা হয় রাইবোজোম।
রাইবোজোমকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।
ক) 70S রাইবোজোম :
এই রাইবোজোম সাধারণত আদি কোষে দেখা যায়। এর দুটি উপস্তর রয়েছে।
i) 50S and ii) 30S
এতে 23S, 16S ও 5S এর তিনটি rRNA অণু এবং 52 প্রকার প্রোটিন অণু থাকে।
খ) 80S রাইবোজোম :
এটি মূলত প্রকৃত কোষে পাওয়া যায়।
এ রাইবোজোমেরও দুটি উপস্তর রয়েছে।
i) 60S and ii) 40S
এতে 28S, 18S, 5.8S ও 5S এর চারটি rRNA অণু রয়েছে এবং 80 প্রকার প্রোটিন অণু থাকে।

৭। Mitochondria :
এত বড় কোষের জন্য ত শক্তির প্রয়োজন৷ কিন্তু এই শক্তি কোথা থেকে আসে?
হুম,,, শক্তি আসে খাদ্য থেকে। কিন্তু ঐ খাদ্য প্রথমেই কোষে ব্যবহৃত শক্তি রুপে থাকে না। কোষে ব্যবহৃত শক্তির রুপে রুপান্তর করার অঙ্গাণুটির নাম হলো মাইটোকন্ড্রিয়া

৮। Plastids :
এই কোষীয় অঙ্গাণুটি মূলত উদ্ভিদ কোষে থাকে। প্রাণী কোষে তাকে না। এি অঙ্গাণুটির জন্য উদ্ভিদ রঙ্গিন দেখায়। তাছারাও এই অঙ্গাণুটির মাধ্যমে উদ্ভিদ শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে৷

৯। Centriole :
এটি মূলত প্রাণী কোষে থাকে। তবে কিছু উদ্ভিদ কোষেও এদেরকে দেখা যায়। এরা কোষ বিভাজনের সময় এক ধরনের রশ্মি নির্গত করে। যার কারণে বিষুম অঞ্চলের ক্রোজোমগুলো মেরু অঞ্চলে চলে আসে। এটি সাধারণ কোষের নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থান করে।

১০। Nucleus :
কোষের যাবতী কাজের নিয়ন্ত্রণ করে কোষের নিউক্লিয়াস। এটি সাধারণত কোষের মধ্যে অবস্থান করে। তবে কোষ গহ্বর বড় হলে এটি কোষের এক পাশে চলে যায়। নিউক্লিয়াসেই মূলত কোষের প্রায় সকল জিন অর্থাৎ DNA অবস্থান করে।

১১। Cell Vacuoles :
কোষের মধ্যে ফাঁকা স্থানটিকে বলা হয় কোষ গহ্বর।
এই ত একটি কোষের সাধারণ গঠন। তবে এগুলোর পাশাপাশি একটি কোষের আরও অনেক কিছুই থাকতে পারে।
নিচে কয়েকটা লিংক দেওয়া হলো। সেগুলোতে গিয়ে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।














লেখকঃ Asraful Islam

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম