"সন্মোহন" এই শব্দটির
সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত।
বিভিন্ন গল্পে, উপন্যাসে,টিভি শোতে অনেকেই
দেখেছি সন্মোহন অনেককে করতে । চলুন
আজ কি এই সন্মোহন ? কীভাবে এল এই
ধারণা ? কিভাবেই বা করতে হয় সন্মহন ?
এই সব প্রশ্নের উত্তর খোজা যাক।
Hypnotism শব্দটির অর্থ সন্মোহন ।
"হিপনোটিজম" শব্দটি এসেছে "হিপনোসিস" থেকে।
"হিপনোসিস" শব্দের অর্থ "ঘুম"।
স্বাভাবিক ঘুমের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য
থাকলেও "সন্মোহন ঘুম" ও "স্বাভাবিক ঘুম"
এক নয় । কারন এদের মাঝে বৈসাদৃশ্যও কম
নয়। তবে এটা বলা যায়, সন্মোহন জেগে থাকা ঘুমের একটা অন্তর্বর্তী অবস্থা।
সন্মোহনের ইতিহাসঃ
ভারত, চীন ও গ্রীসের প্রাচীন সভ্যতারআদিপর্বে ধর্মীও ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সন্মোহনের প্রচলন
ছিল। প্রাচীনযুগে সন্মোহনের যে মর্যাদা ছিল
মধ্যযুগে সে মর্যাদা হারিয়ে সন্মোহন
হয়ে দাড়ায় "ব্লাক ম্যাজিক" বা "ডাকিনীবিদ্যা"।তান্ত্রিকরা ও কিছু দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ সন্মোহন শক্তির দ্বারা ক্ষতি করতে পারে এমন ভ্রান্ত ধারণা সে যুগের মানুষের মাঝে বহুলভাবে প্রচলিত ছিল । কারন
তখনো সন্মোহন সম্পর্কে মানুষ তেমন
একটা অবগত ছিল না।
আধুনিক যুগের সন্মোহনের সূচনা আঠারশ
শতকের মাঝামাঝি সময়ে।ডক্টর মেসমার অনেক দুরারোগ্য রোগীকে সন্মোহিত করে মস্তিষ্কে ধারণা সঞ্চার (Suggestion) পাঠিয়ে সারিয়ে তুললেন ।
মেসমারের সন্মোহন চিকিৎসার এই
অভাবনীয় সাফল্যে ইউরোপে হৈ-চৈ পড়ে গেল। সন্মোহন পরিচিত হল "মেসমারিজম" নামে।
এরপর উনিশ শতকের মাঝামাঝি
স্কটল্যান্ডের ডাক্তার জেমস ব্রেইড এর সন্মোহন নিয়ে গবেষণা আবার আলোড়ন তুলল। তিনি সন্মোহনের নাম দিলেন "হিপনোসিস"(Hypnosis)।
ডক্টর জেমস ব্রেইড সন্মোহন ঘুমের ব্যাখ্যা করলেন
বটে, কিন্তু, সন্মোহনকারী ও সন্মোহিত বাক্তির
মাঝে সন্মোহনকালে কি ধরনের সম্পর্ক
গড়ে ওঠে সেই বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারলেন না। অতএব
জানা গেল না,
কিভাবে সন্মোহনকারী সন্মোহিত
বাক্তিকে প্রভাবিত করেন। অর্থাৎ এটুকু জানা গেল যে,
সন্মোহনকারী সন্মোহিতকে জেগে
থাকা ও ঘুমের একটা অন্তর্বর্তী অবস্থায় নিয়ে এসে সন্মোহিতের মস্তিষ্কে বিশেষ একটি ধারনার সঞ্চার
করতে থাকেন। সেই ধারনাটি সন্মোহিতের
মস্তিষ্কে পৌঁছে দিতে বারবার একঘেয়েভাবে আউরে যাওয়া হয়। সন্মোহনকারী ও সন্মোহিতের এই
যোগাযোগটিকে মনোবিজ্ঞানের
ভাষায় বলা হয় " সম্পর্ক" (Rapport)
উনিশ শতকের শেষ
দশকে প্যারিসে সার্কো এবং
নান্সিতে বার্নহাইম এর
নেতৃত্বে হিপনোসিস নিয়ে শুরু হয়
নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা ।
হিস্টিরিয়া ও সন্মোহনের মধ্যে কিছু
সাদৃশ্য লক্ষ্য করে শার্কো মতপ্রকাশ
করলেন - সন্মোহন হল তৈরি করা নকল
হিস্টিরিয়া। সন্মোহিত বাক্তির
সকলেই নিউরোটিক । সন্মোহনকারীর
ধারণা সঞ্চারণের ব্যাপারটিকে কোনও গুরুত্ত
দিলেননা তিনি।
বার্নহাইম মত প্রকাশ করলেন - সন্মোহন
ধারণা সঞ্চারণের ফল । অর্থাৎ সব
মানুষকেই সন্মোহিত করা যায়। অবশ্য
সন্মোহনের গভীরতা সব মানুষের ক্ষেত্রে সমান নয়।
আরও নতুন নতুন তত্ত্ব নিয়ে এলেন-মেতেল, জিমসেন, ভেরওরন এবং বেকটেরেফ। ভেরওরন বললেন,
সন্মোহন হল অতি জাগ্রত অবস্থা , অর্থাৎ
এই অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক থাকে সবচেয়ে সজাগ । বেকটেরেফ বললেন- সন্মোহন হল স্বাভাবিক ঘুমেরই
রকমফের। তারপর এলেন ফ্রান্সের এক বিখ্যাত
মনোবিজ্ঞানী সানেট। তিনি যে তত্ত্ব দিলেন
সেটা শার্কোর তত্ত্বের উন্নত সংস্করণ মাত্র।
ফ্রয়েড হাজির হলেন তার
সাইকো আনালিটিক Theory নিয়ে।
ফ্রয়েডের মতে, সন্মোহনকারী ও
সন্মোহিতের মধ্যে সম্পর্ক
গড়ে ওঠে পরস্পারিক প্রেম-ভালবাসার
ফলে। প্রেমে পড়া ও সন্মোহিত
হওয়া একই ধরনের ব্যাপার। ফ্রয়েডের
তত্ত্বে সন্মোহিত অবস্থার বিবরন
এবং সন্মোহিত ও সন্মোহনকারীর
মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির ব্যাখ্যা মেলে।
কিন্তু মেলে না সন্মোহিতের
স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ও সন্মোহনের
কারন। এর পড় এলেন পালভব। বললেন, সন্মোহন
আংশিক ঘুম । জেগে থাকা ও ঘুমের
একটা অন্তর্বর্তী অবস্থা । স্বাভাবিক
ঘুমে মস্তিস্কের কর্মবিরতি বা নিস্তেজনা (Inhibiation) বিনা বাধায় সারা মস্তিস্কে ও
দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সন্মোহন
ঘুমে বা হিপনোটিক ঘুমে মস্তিস্কের
যে অংশ সন্মোহনকারীর নির্দেশে ও
কণ্ঠস্বরে উদ্দীপ্ত হচ্ছে সেই অংশ
জেগে থাকে । মস্তিস্কের এই
জেগে থাকা অংশই সন্মোহিত বাক্তির
সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগের
একমাত্র পথ। সন্মোহনকারীর নির্দেশ
ছাড়া সন্মোহিতের পক্ষে কোনও কিছু
করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ সন্মোহিতের
স্বাধীন কোনও ইচ্ছে থাকলেও নিষ্ক্রিয় থাকে।
এইবার চলুন মনোবিজ্ঞানের দুই জন
সেরা বাক্তিত্ত পালভব ও ফ্রয়েডের
তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা যাক!
পালভব ও ফ্রয়েড যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন
তা পরস্পরবিরোধী । পালভব ও
ফ্রয়েডকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর
মনবিজ্ঞানিরা চালিয়ে যাচ্ছেন
ঠাণ্ডা-গরম লড়ায় । পালভব ও ফ্রয়েড দুজনই
সমসাময়িক। পালভব জন্মেছিলেন ১৮৪৮
সালে। মারা যান ১৯৩৬ সালে। ফ্রয়েড
জন্মেছিলেন ১৮৫৬ সালে। মারা যান
১৯৩৯ সালে। আমৃত্যু এই মনবিজ্ঞানিই
ছিলেন স্বতত্ত্বে আত্নপ্রত্যয়ী ও সক্রিয়।
মানসিকতার হদিস পেতে পালভব
মেতেছিলেন প্রকৃতিবিজ্ঞানের
পথে উচ্চ-মস্তিস্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার গবেষণায়,
আর ফ্রয়েড মানসিকতার সন্ধান
পেতে চেয়েছিলেন মস্তিস্কবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়ায়
মনের গভীরে। পালভব এগিয়ে গিয়েছিলেন
উচ্চ-স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার
বিজ্ঞান্সন্মত পরিক্ষা-নিরিক্ষার
পথে, ফ্রয়েড এগিয়ে ছিলেন
মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসক ও
রোগী দুইজনেরই মনসমিক্ষের পথে।
পালভবের আবিষ্কার "উচ্চ-মস্তিস্কের
স্নায়ুবিজ্ঞান" এবং ফ্রয়েডের
আবিষ্কার "অবচেতন মনের বিজ্ঞান"।
পালভবের তত্ত্বকে ঘিরে রয়েছেন
বস্তুবাদী(Objective) দৃষ্টিভঙ্গির
মনবিজ্ঞানিরা , আর ফ্রয়েডের
তত্ত্বকে ঘিরে রয়েছেন আত্মবাদী(Subjective) দৃষ্টিভঙ্গির মনবিজ্ঞানিরা ।
এই দুই তত্ত্বের বিরোধিতা রয়েছে ঘুম,
স্বপ্ন, শিশুমন, শিশুশিক্ষা, মনোবিকারের
কারন ও এর চিকিৎসা প্রভৃতি নানা বিষয়ে।
কোলের বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানর কৌশল ও
সন্মোহন ঘুম পাড়ানর কৌশল অনেকটা একই
ধরনের। শিশুদের ঘুম পাড়ানো হয়
একটানা একঘেয়ে সুরে গান গেয়ে।
সন্মোহন ঘুমের ক্ষেত্রেও
সন্মোহনকারী প্রায় একই ধরনের পদ্ধতির
আস্রয় নেন।
সন্মোহনকারী যাকে সন্মোহন
করতে চায় তাকে শুয়িয়ে দেয়
একটা সুন্দর নরম ছিমছাম বিছানায়। নরম
বালিশে মাথা রেখে সারা
শরীরটাকে হাল্কাভাবে ছড়িয়ে চিৎ
হয়ে সুয়ে থাকেন রুগী। ঘরে জ্বলে খুব কম
শক্তির নাইটলাম্প।
সন্মোহনকারী ধীরে ধীরে কিছুটা সুর
টেনে বলতে থাকেন,
"আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমিয়ে পড়ুন,
আপনার ঘুম আসছে, আপনার চোখের
পাতা ভারী হয়ে আসছে, কপালের ও
গালের পেশি শিথিল হয়ে আসছে,
ঘাড়ের পেশী শিথিল হয়ে আসছে,
এমনি করে হাত, বুক, পেট, কোমর,
পা ইত্যাদি অঙ্গ শিথিল হয়ে যাচ্ছে,
অবশ হয়ে যাচ্ছে, আপনার ঘুম আসছে, গভীর
ঘুম আসছে।
............বাইরের সব শব্দ আপনার
কাছে অস্পষ্ট হয়ে আসছে। বাইরের
গাড়ির শব্দ, কোলাহলের শব্দ, কোন শব্দই
আপনার কানে যাচ্ছে না। আমার
কথা ছাড়া অন্য কোন
কথা আপনি শুনতে পারছেন
না। আপনার হাত-পা ভারী হয়ে গেছে। ঘুম আসছে............"
সন্মোহনকারী টানা টানা একঘেয়ে
সুরে বলে যেতে থাকে। এই
কথাগুলো শুনতে শুনতে সন্মোহনের
ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে শুয়ে থাকা বাক্তি।
সন্মোহিত বাক্তির উদ্দেশ্যে সন্মোহনকারীর এই
কথা বা নির্দেশগুলোকে বলা হয়
"Suggestion" বাংলায় অনুবাদ
করে বলতে পারি "ধারনাসঞ্চার "
বা "চিন্তাসঞ্চার"।
অবশ্য আরও অনেক পদ্ধতির
সাহায্যে সন্মোহন-ঘুম আনা সম্ভব।
যে কোনও ইন্দ্রিয়কে মৃদু উদ্দীপনায়
উত্তেজিত করলেই ঘুম আসবে। পালভব ও
ফ্রয়েড দুজনেই সন্মোহিত অবস্থাকে এক
ধরনের ঘুমন্ত অবস্থা বলেই মত প্রকাশ
করেছিলেন।সন্মোহন সম্পর্কে আরও
জানতে হলে আমাদের ঘুম
সম্পর্কে দু একটা কথা জানা প্রয়োজন।
আমরা জীবনের প্রায় তিনভাগের
একভাগ ঘুমিয়ে কাটাই। মানুষ যখন ঘুমোয়
তখন কিন্তু তার সম্পূর্ণ মস্তিস্ক কর্মহীন হয়
না । কিছু মস্তিস্ক কোষ
জেগে থাকে বা আধা-ঘুমন্ত অবস্থায়
থাকে। সামগ্রিক ভাবে মস্তিস্ক কাজ
না করে বিস্রাম নিলেও কিছু
জেগে থাকে কোষের
সাহায্যে আমরা ঘুমের মধ্যেও
নড়াচড়া করি, পাশ ফিরি,
মশা কামড়ালে জায়গাটা চুলকাই, স্বপ্ন
দেখি ইত্যাদি অনেক কিছু করি । এই
অবস্থায় কিন্তু সব পেশীও শিথিল
হয়ে পড়ে না। ঘুমের মধ্যে মল-মুত্র নির্গমন
বাবস্থা না হারায় সেদিকে মস্তিস্ক লক্ষ্য রাখে।
ঘুমের গুরুত্ত মানুষের জীবনে অসীম।
পনের-কুড়ি দিন না খেয়ে থাকলে শরীর দুর্বল হয় বটে,
কিন্তু সাধারণ মানসিক ভারসামের
অভাব হয়না। অথচ পনেরো-কুড়ি দিন
না ঘুমিয়ে থাকলে প্রায়
ক্ষেত্রে মানসিক ভারসামের অভাব ঘটে।
এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন "অনেক
লোকই তো আছে যারা অনিদ্রা রোগে
ভোগে, তাদের তো মানসিক
ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে না ! "
অনিদ্রারোগ হল মস্তিস্কের বিশেষ
অসুস্থ অবস্থা। এই বিশেষ অবস্থায় ,
মস্তিস্কের অনেকগুলো কোষ দিনের ১৭/১৮ ঘণ্টা প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। রাতে ৬/৭ ঘণ্টা কোষগুলো গভীর ঘুম দিয়ে বিশ্রাম নেই এবং সজীব, সক্রিয়
হয়ে ওঠে। অধিকাংশ অনিদ্রা রোগীর
গভীর ঘুম হয়না বটে ,তবে আধা ঘুমন্ত
অবস্থার মধ্যে একটা সময় কাটে। এই সময়
মস্তিস্ককোষ তাদের প্রয়োজনীয়
বিশ্রাম নিয়ে নেয়। ফলে মস্তিস্ককোষের বিশেষ
কোন ক্ষতি হয়না। এই ধরনের আধোঘুম অবস্থায়
আমরা সুস্থ মানুষরা অনেক সময় কাটাই।
বাসে, ট্রেনে, ইজিচেয়ারে, অফিসের
চেয়ারে, অথবা বাসার বিছানায়
বসে অনেক সময় আমরা ঘুম ও জাগরণের
মাঝামাঝি একটা অবস্থায় থাকি।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থার
নাম " Hypnoid State" । অনিদ্রা রোগ এই
"Hypnoid State" এর দীর্ঘতম অবস্থা।
পালভবীও মনোবিজ্ঞানে ঘুমিয়ে পড়া থেকে
জেগে ওঠার মধ্যে চারটি প্রধান
পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে।
প্রথম পর্যায় প্রায় জাগ্রত অবস্থার মতো।
দ্বিতীয় পর্যায়-ও প্রায় প্রথম পর্যায়ের মতো, তবে,
ঘুমের গভীরতা প্রথম অবস্থার
চেয়ে দ্বিতীয় অবস্থায় বেশী।
একে বলে ফেজ অব ইকোয়ালিটি।
তৃতীয় পর্যায়ের নাম ফেজ অব
প্যারাডক্স।এই পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি।
শেষ এবং চতুর্থ পর্যায়ের নাম-ফেজ অব আলট্রা-প্যারাডক্স। এই পর্যায়ে আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি।সন্মোহিত অবস্থায় ঘুমের তৃতীয় পর্যায়
অর্থাৎ "প্যারাডক্সিকাল ফেজ"
দেখা যায়। ঘুমের এই পর্বকে বলা হয় R.E.M
(Rapid Eye Movement)।
স্বাভাবিক ঘুমে মস্তিস্কের প্রায় সব
স্নায়ুগুলো নিস্তেজ বা নিস্ক্রিয়
হতে থাকে এবং সারা দেহে এই
নিস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
এই নিস্তেজ বা নিষ্ক্রিয় অবস্থাকে বলা হয় "Inhibition"।
মস্তিস্কের কোন স্নায়ু উত্তেজিত
হলে এই উত্তেজনার ঢেউ
প্রথমে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই
ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাকে বলা হয়
"Irradiation"।
ঘুমিয়ে পড়লে আমাদের
ইন্দ্রিয়গুলো বাইরের উদ্দীপনায়
সাড়া দেয় না। আবার বিপরীতভাবে বলতে গেলে, বাইরের উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রবেশ করার
পথগুলো বন্ধ করে দিলে তাড়াতাড়ি ঘুম
আসে।
জার্মান ডাক্তার Strample তার এক বালক
রোগীর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন,
বালকটির একটি চোখ নষ্ট
হয়ে গিয়েছিল,একটি কানে শুনতে পেত না। দেহের
ত্বকের অনুভূতি শক্তিও নষ্ট
হয়ে গিয়েছিল। বালকটির সুস্থ চোখ ও
কানের দেখা ও শোনা কোন কিছু
দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার কিছুক্ষণের
মধ্যেই বালকটি ঘুমিয়ে পড়ত।
পালভবও এই ধরনের একটি রুগীকে তার
ইন্দ্রিয়-উপলব্ধি বন্ধ করে দিয়ে ঘুম পাড়াতেন।
মস্তিষ্কের স্নায়ুর অবসাদ থেকেই কেবল
ঘুম আসে এমনটি নয়। পালভবের মতে ঘুম
একধরনের "Conditioned Reflex" বা "শর্তাধীন
প্রতিফলন"।
ঘুমের ব্যাপারে নিয়মানুবর্তিতা বজায়
রাখলে সাধারণ ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটে না। কিন্তু একটা লোকের দীর্ঘ
ঘুমের পরেও একটা বিশেষ
পরিবেশে একজন একজন
সন্মোহনকারী তাকে "Suggest" দিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দিতে পারে।
সন্মোহনের ফলাফল নানা ধরনের রোগের উপরই হিপনোটিক সাজেশন বা সন্মোহন ধারণা সঞ্চারের
ফলাফল ব্যাপকভাবে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে
দেখা গেছে। দেখা গেছে অ্যাজমা,
কোলায়টিস, ইমনোটেনসি,
ফ্রিজিডিটি, মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলির
প্রতিফলন বিশৃঙ্খলা ইত্যাদিতে হিপনোটিক
সাজেশনের সাহায্যে খুব ভালো ফল
পাওয়া যায়। উন্মাদরোগের মধ্যে স্কিজোফ্রিনিয়া,
পারানইয়াতে হিপনোটিক সাজেশনে ভালই ফল পাওয়া যায়। অবশ্য এর সঙ্গে ওষুধও দিতে হয়।
এছাড়া যেকোনো রোগেই সাহায্যকারী চিকিৎসা হিসেবে হিপনোটিক সাজেশন
দেয়া যেতে পারে।
সন্মোহনের সাহায্যে সন্মোহনকারী এমন
অনেক ঘটনায় ঘটাতে পারেন
যেগুলো শুনলে প্রাথমিকভাবে অসম্ভব
বা অবাস্তব বলে মনে হয়।
সন্মোহনকারী সন্মোহিতকে যদি
সাজেশন দিতে থাকেন, '' এবার
তোমার ডান হাতের কজিতে একটা গনগনে লোহা খুব
সামান্য সময়ের জন্য ছোঁয়াবো ।
লোহাটা আগুনে পুরে টকটকে লাল
হয়ে রয়েছে, টকটকে লাল গরম
লোহাটা এবার তোমার
কজিতে ঠেকান হবে।
ফলে একটা ফোস্কা পড়বে। ভয় নেই, শুধু
একটা ফোস্কা পড়বে। এই সাজেশন
দেবার সঙ্গে সঙ্গে ডান
কজিতে ঠাণ্ডা লোহা ঠেকালেও
দেখা যাবে ওখানে Second Degree Burn
সৃষ্টি হয়ে ফোস্কা পড়েছে।
আধুনিক শরীরবিজ্ঞানে শিক্ষিত
অনেকের কাছেও আমার
কথাগুলো একান্তই অবিশ্বাস্য
বলে মনে হতে পারে। কারন,
শরীরবিজ্ঞান বলে শরীরের কোন
স্থানে প্রচণ্ড উত্তাপ লাগলে সেখানে অনেকগুলো আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বহু কোষ
ফেটে যায়। কোষগুলোর ভেতরের রস
বেরিয়ে আসে। এই কোষগুলোর রসই
ফোস্কায় জমা হওয়া রসের প্রধান অংশ।
শরীরবিজ্ঞানে এই ফোস্কা পড়ার
সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুর যোগাযোগ
না থাকলেও ফোস্কা পড়ার মুহূর্ত
থেকে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে
অটোনোমাস স্নায়ুতন্ত্রের কিছু প্রভাব
দেখা যায়, যা শরীরকে দুর্বল
করে বা মানসিক আঘাত(Shock) দেয়
কিংবা Peripheral Circulatory Failure
ইত্তাদির ক্ষেত্রে কাজ করে।
''অটোনোমাস নার্ভা সিস্টেমে''
সম্পর্কে নতুন ধারণা না থাকার দরুন
এবং উচ্চ মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ
সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবের দরুন
অনেকের কাছেই আমার কথাগুলো উদ্ভট
ও অবাস্তব মনে হতে পারে। এই
বিষয়ে অবগতির জন্য জানায়, ১৯২৭
সালে বহু চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের
সামনে V.Finne শুধুমাত্র হিপনোটিক
সাজেশনের দ্বারা একজন সন্মোহিতের
শরীরে ফোস্কা ফেলে দেখান । তারপর
আজ পর্যন্ত বহুবার প্রয়োগ করা হয়েছে।
একজন মনোযোগ দিয়ে সাজেশন
শুনলে তার পাঁচটি কর্ম-ইন্দ্রিয়ই নিয়ন্ত্রন
করা সম্ভব। নিয়ন্ত্রন করবেন সন্মহনকারী ।
নিয়ন্ত্রিত হবে সন্মোহিত মানুষটির
ইন্দ্রিয়গুলো। পাঁচটি কর্ম - ইন্দ্রিয় হল-
চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক।
সন্মোহিত অবস্থায় সন্মোহনকারী যদি সন্মোহিত
বাক্তিকে কাগজ ছুয়িয়েও বলেন ''ছুঁচ
ফোটাচ্ছি'' সে ছুঁচ ফোটাবার
যন্ত্রণা অনুভব করে চিৎকার করে উঠবে।
আবার যদি তাকে সাজেশন দেয়া হয়
''হাত অসাড় হয়ে গেছে'' তখন
ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পুরোটা হাতে ঢুকিয়ে
দিলেও সে টের পাবে না।
যদি সাজেশন দেয়া যায়
যে সিগারেটের স্বাদ টক বা ঝাল
বা মিষ্টি তবে সিগারেট পান
করে সে বলবে সিগারেটের স্বাদ টক
বা ঝাল বা মিষ্টি। তাকে যেমন
বলা হবে সে তেমনি স্বাদ পাবে।
সন্মোহন কীভাবে করবেন ?
সন্মোহন কীভাবে করবেন তা জানারআগে সন্মোহন নিয়ে আরও একটু
আলোচনা করে নিলে ভালো হয়।
আমরা চিন্তা করি মস্তিষ্কের
স্নায়ুকোষের সাহায্যে। অর্থাৎ
আমাদের চিন্তা -ভাবনা মস্তিষ্কের
কাজ কর্মের ফল। সন্মোহন হল মস্তিষ্কে -স্নায়ুকোষে কোন একটি ধারণকে সঞ্চার
করা বা পাঠানো। একথা আগেই
আলোচনা করেছি ।
মনে করুন, টিভিতে জুরাসিক পার্ক
দেখছেন। দেখতে দেখতে এতটায় মগ্ন
যে, বাইরের জগতের সঙ্গে আপনার
চেতনার সম্পর্কটা ছিন্ন হয়ে গেছে।
সমস্ত চিন্তা চেতনা জুড়ে শুধু ছবির জগত।
ডাইনোসর কে ঘিরে রোমাঞ্চকর সব
কাণ্ডকারখানা । মা কাঁধধরে ধাক্কা দেয়ায়
মগ্নতা ভঙ্গ হল।
"কিরে তখন থেকে কলিংবেল
বেজে যাচ্ছে হুস নেই ? , যা তলায়
গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে আয়। "
মার কথাগুলো শুনেই
কানে আসতে লাগলো কলিংবেলের
আওয়াজ। আশ্চর্য ! অথচ মা'র কাছ
থেকে ধাক্কা খাওয়ার আগেও এই
আওয়াজটা হচ্ছিল। কিন্তু খেয়াল
করতে পারেননি । টিভির দিকে গভীর
মনঃসংযোগের জন্য টিভির বাইরের
জগতের সঙ্গে মনের যোগাযোগ ছিন্ন
হওয়ার পরিণতিতেই এমনটা হয়েছে।
মনে করুন, ফুটবল খেলার দিনগুলির কথা।
খেলা শেষ হবার পর একসময় আপনার
খেয়াল হয়েছে পায়ের ক্ষতের দিকে।
খেলার দিকে মনোযোগ এতটায় ছিল
যে তখন এই আঘাতের
কথা খেয়ালি হয়নি। তারপর পায়ের
বাথা অনুভব করায়
এতক্ষণে নজরে এসেছে ক্ষত ।
এই দুটি উদাহরণ হাজির করলাম তার
থেকে একটা জিনিস নিশ্চয়
বুঝতে পেরেছেন কোন
কিছুতে গভীরভাবে মনঃসংযোগ
করলে পরিপার্শ্বের অপরাপর
বিষয়ে মনঃসংযোগ শিথিল হয়ে যায় ।
সন্মোহন করার সময় একজন সন্মোহন
করে এবং অপরজন সন্মোহিত হয়। দুজনেরই
গভীর মনঃসংযোগের প্রয়োজন হয়।
সে মনঃসংযোগ সন্মোহিতের জ্ঞাত
অনুসারে না হয়ে অজ্ঞাত অনুসারে হতে পারে।
কিন্তু মনঃসংযোগহীন সন্মোহন কখনই সম্ভব নয়।
সন্মোহন করার আগে যাকে সন্মোহিত
করব তাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত
করে নেয়াটা খুবই জরুরী। তাই
সন্মোহনের আগে এ নিয়ে তার
সাথে একটা মোটামুটি আলোচনা করে
নেয়া যেতে পারে। সেটা আদ
ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা হতে পারে। এই
আলোচনাটি প্রয়োজন ।
বাক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য
সন্মোহন করার আগে তার সাথে সন্মোহন
বিষয়ে আলোচনা সেরে নেবার
উদ্দেশ্য হল --
(ক) সন্মোহনের সম্পর্কে অলীক ভয় দূর করা।
(খ) সন্মোহনের কার্যকারিতা ও
উপকারিতা ।
(গ) সন্মহোনের ক্ষেত্রে রোগীর চূড়ান্ত
মনোযোগ ও সহযোগিতার
প্রয়োজনীয়তা ।
প্রয়োজনে দুই একটি সন্মোহনের ঘটনার
কথা উল্লেখ করতে হয় ।
এটা গেল যাকে সন্মোহিত করবেন
তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার প্রথম
ধাপ । এবার আসি দ্বিতীয় ধাপে।
রোগীর ক্ষেত্রে যেভাবে সাজেশন
দেয়া হয় --রোগীদের সাজেশন দেবার বেলায়
সাধারণত তাকে সুন্দর ও আরামদায়ক
বিছানায় সবার বাবস্থা করে দেয়া হয়।
ঘড়ে জোড়াল আলো নিভিয়ে দিয়ে জালিয়ে দেয়া
হয় নাইট লাম্প । নাইট লাম্প
এমনভাবে লাগাতে হবে যেন
সন্মোহিত বিছানায় শুয়ে চোখ মেলার
পর বাল্বটিকে দেখতে না পায়। খুব
লো ভলিওমে , উত্তেজক নয় , মনকে আরাম
দেয়ার মতো বাজনার ক্যাসেট
চালাবার বাবস্থা রাখতে পারলে তো আরও
ভালো।যাকে সন্মোহিত
করা হবে তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত
করতে প্রথম ধাপ অতিক্রম করুন। দ্বিতীয়
ধাপে বলুন "আমি আপনাকে সাজেশন
দিব। অর্থাৎ কিছু কথা বলব। আপনি খুব মন
দিয়ে কথাগুলো শুনতে থাকবেন। এই
শোনার ফলে আপনার মধ্যে একটা আধ ঘুম,
আধ জাগরন অবস্থার তৈরি হবে। তারপর
আপনার সমস্যা মেটাতে সাজেশন দেব।
সমস্যা মিটে যাবে।"
রোগী বিছানায় আরাম করে শুলেন। পুরুষ
হলে ট্রাউজারে সার্ট
গোজা থাকলে সার্টটা ট্রাউজার
থেকে বের করতে বলুন। কোমরে বেল্ট
থাকলে খুলতে বলুন । খুলে ফেলতে বলুন
চশমা ঘড়ি ইত্যাদি । ট্রাউজার কোমরে টাইট
হলে হালকা করে বোতাম
খুলে হালকা হয়ে শুতে বলুন ।
মেয়েদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার
বা প্যান্ট কোমরে টাইট
হলে হালকা করে পড়তে বলুন।
ব্রা ডিলে করে পড়তে বলুন।
ঘড়ি চশমা ইত্যাদি একইভাবে খুলে
রাখতে বলুন। মেয়েদের ক্ষেত্রে কোন
পুরুষ সন্মোহিত করতে চাইলে ঝুকি না নিয়ে মহিলার
কোনও সঙ্গীকে ঘরে বসাবার
বাবস্থা করুন । নয়ত ভয় বা অস্বস্তির জন্য
আপনার কাছে মহিলাটির স্বাভাবিক
হবার সম্ভাবনা বেশ কিছুটা কম থাকে ।
এছাড়াও মহিলার তরফ থেকে কোন
অভিযোগ এড়াতে সঙ্গীকে ঘরে রাখা জরুরী।
বড় লাইট বন্ধ করে নাইট লাম্প
জ্বেলে দিন। বাজিয়ে দিন খুব
লো ভলিওমে মনকে প্রশান্ত করার
মতো বাজনা । তারপর শুরু করুন সাজেশন
দেয়া । প্রতিটি বাক্য চার - পাঁচ বার
করে ধীরে, সামান্য টেনে, গভীর
বাক্তিত্তপূর্ণ গলায় বলে যেতে থাকুন --
সাজেশনের বাক্য গুলো এই ধরনের
----------
"একমনে আপনি এবার আমার
কথাগুলো শুনতে থাকুন । আপনার ঘুম
পাচ্ছে। ঘু...ম। চোখের পাতায়
নেমে আসছে ঘুম । চোখের
পাতাগুলো ভারী হয়ে আসছে ।
আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন ।
এভাবে চিন্তা শূন্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়তে আপনার
ভালো লাগছে । আপনার কপালের
চিন্তার রেখাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে ।
কপালের পেশীগুলো নরম শিথিল
হয়ে আসছে । আপনার চোয়ালের
পেশী নরম , শিথিল হয়ে যাচ্ছে ।
আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন । ঘু...ম ।"
"আপনার চোখের
পাতা ভারী হয়ে গেছে । দু - চোখের
পাতায় নেমে আসছে ঘুম । আপনার
কাঁধটা নিয়ে ভাবুন । ডান কাধের
পেশী শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে । আপনার
ডান কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত
পেশীগুলো নরম, শিথিল হয়ে যাচ্ছে ।
ডান হাতের কনুই থেকে কজি পর্যন্ত
ভাবুন । কনুই থেকে কজি পর্যন্ত
পেশীগুলো নরম ও শিথিল হয়ে যাচ্ছে ।
হাতের তালু ও আঙ্গুলের পেশীগুলো নরম,
শিথিল হয়ে যাচ্ছে । ডান হাতটা ভারী হয়ে বিছানায়
পড়ে আছে। ডান হাতটা ভারী হয়ে গেছে ।"
একইভাবে বা কাঁধ থেকে সাজেশন
দেয়া শুরু করে হাত ভারীতে শেষ করুন ।
"আপনার বুকের কথা ভাবুন । বুকের
পেশিগুল শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে ।"
"আপনার শ্বাস- প্রশ্বাসের কাজ ধীরে ও
গভীরভাবে হচ্ছে।
আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন ।
এভাবে চিন্তা শূন্য হয়ে ঘুমাতে আপনার
ভালো লাগছে ।"
"আপনার পেটের পেশিগুলো শিথিল, নরম
হয়ে যাচ্ছে । "
"ডান পায়ের থাইয়ের
পেশিগুলো নিয়ে ভাবতে থাকুন।
থাইয়ের পেশিগুলো নরম, শিথিল
হয়ে যাচ্ছে। ডান পায়ের কাফের
পেশী নিয়ে ভাবুন ।
পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে ।
ডান পায়ের পাতা ও আঙ্গুলের
পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে আসছে ।
ডান পা'টা ভারী হয়ে যাচ্ছে।
ভারী হয়ে বিছানার উপর পড়ে আছে ।"
একইভাবে বা পা নিয়ে সাজেশন দিন ।
সাজেশন শেষে বাস্তবিকই
পরীক্ষা করতে চান --- সন্মোহন
করতে পেরেছেন কিনা, তবে এই ধরনের
সাজেশন দিন --
"আপনার ডান হাতটায়
বেধে দেয়া হয়েছে বিরাট
একটা গ্যাসবেলুন। গ্যাসবেলুনের
টানে আপনার হাতটা হালকা মনে হচ্ছে। ডান
হাতটা একটু একটু করে উপরে উঠছে"
দেখতে পাবেন সাজেশনের
সঙ্গেসঙ্গে সন্মোহিতের ডান হাত
বিছানা ছেড়ে একটু একটু
করে করে উপরে উঠে যাচ্ছে।
এবারে আমরা আসি বিভিন্ন রোগ
বা সমস্যায় সাজেশনের রকমফের
প্রসঙ্গে ।
সাজেশনের রকম ফের --------
সন্মোহিত করা তো শেখানো গেলো।
কিন্তু কেন সন্মোহন করা । কোনও
সমস্যা সমাধানের জন্য ?
তাহলে সন্মোহিতকে প্রয়োজনীয়
সাজেশন দিতে হবে । নাকি শুধুই
সন্মোহন নিয়ে খেলা ।
খেলা হলে কিছুক্ষন সন্মোহিত অবস্থায়
রাখার পর সাজেশন দিতে থাকুন ----
"আপনার ঘুম ভাঙছে"
সাজেশনে ঘুম না ভাঙলে বুঝবেন
ঘুমটা একটু কড়া হয়ে গেছে ।
তালি বাজান বা দু
আঙ্গুলে চুটকি বাজান
এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙার সাজেশন
দিন। সন্মোহন অবস্থা থেকে রোগী স্বাভাবিক
অবস্থায় ফিরে আসবেন ।
মানব মন অতি জটিল তাই পরিশেষে শুধু
একটি কথায় বলব ,
"বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ
পৃথিবী থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বহু
বিষয়ে গান অর্জন করলেও মানুষ তার মন
বা মস্তিস্ক সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই
জানতে পারেনি "
Shemanto Reza
Tags:
Science