কবিতাটি বুঝার জন্য, তোমাদের কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে। প্রতিটি লাইন পড়বা, আর মনের ভেতর ছবি এঁকে কল্পনা করবা। দু-একজন কল্পনা করেনি, তারা আজ এই কবিতা না বুঝে মুখস্থ করে।
তাহলে চলো, শুরু করি। কবিতার মূলভাবটা শুরুতেই বলে নেই। তাহলে তোমাদের জন্য অনেকটা ইজি হয়ে যাবে।
মূলকথাঃ
কবি এখানে তার কবিতার জয়গাথা তুলে ধরেছেন। কবি শুরুতেই তার কবিতাকে একটা "শাদা সত্যিকার পাখি"র সিম্বল এ তুলে ধরেন। যার সবকিছুতেই যেন বাঙলা প্রকৃতির ছাপ।
কবি দৃঢ়কন্ঠে নিজের কাব্যদর্শন এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি জানেন, তার কাব্যরচনার পথ মসৃণ নয়। এখানে রয়েছে বিচিত্র টানাপোড়েন ও জীবন-সংগ্রাম। এতদসত্ত্বেও একটা সময় সকল নিয়মকানুন, সকল বাধাবিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে জয় হয় কবিতার। কবি আহত হন, তাতে কি! তার কাছে তার কবিতার জয়ই মুখ্য।
এবার শুরু হবে, লাইন বাই লাইন এক্সপ্লেনেশন:
★>> আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি,
বসে আছে সবুজ অরণ্যে এক চন্দনের ডালে; <<
ব্যাখা:- কবি এখানে তার কবিতাসত্ত্বাকে একটি সাদা পাখির উপমায় প্রকাশ করেছেন, যে কিনা সবুজ বনের এক চন্দন গাছের ডালে বসে আছে।
★>> মাথার উপরে নিচে বনচারী বাতাসের তালে
দোলে বন্য পানলতা, সুগন্ধ পরাগে মাখামাখি
হয়ে আছে ঠোঁট তার। <<
ব্যাখা:- সেই সাদা পাখিটির উপরে নিচে রয়েছে বন্য পানলতা। যখন বনের মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়, তখন সেই পানলতাগুলো দোল খায়। আর পাখিটির ঠোঁট পরাগে মাখামাখি → এটা দ্বারা বোঝা যায়, যে পাখিটি ফুলের পরাগায়ন করে এসেছে।
★>> আর দুটি চোখের কোটরে
কাটা সুপারির রঙ, পা সবুজ, নখ তীব্র লাল
যেন তার তন্ত্রে মন্ত্রে ভরে আছে চন্দনের ডাল <<
ব্যাখা:- কবির অস্তিত্ব জুড়ে চিরায়ত গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। তার কাব্যিক দৃষ্টিতে কাটা সুপারির রঙ। পা সবুজ বলতে বাংলার সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা মাঠকে বুঝানো হয়েছে। আর নখ তীব্র লাল বলতে আকাশের রক্তরাঙা অরুণ আভাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মাটি থেকে আকাশে মেলে ধরা বাংলা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে কবির কাব্যের মাধ্যমে, কাব্যচেতনার মাধ্যমে।
আরেকটা ব্যাপার। চন্দন হল সুগন্ধি কাঠের গাছ। আর এর ফুল হল, লবঙ্গ (ঝাল-মিষ্টি স্বাদযুক্ত)। এখানে কবি তার কাব্যিক সত্তার বা কবিতাচেতনার মধুরতাকে চন্দনের ডালের সাথে তুলনা করেছেন।
★>> চোখ যে রাখতে নারি এত বন্য ঝোপের ওপরে।
তাকাতে পারি না আমি রূপে তার যেন এত ভয় <<
ব্যাখা:- বাংলা প্রকৃতির সৌন্দর্য কবিকে এতটাই মুগ্ধ করেছে, যে কবির কাব্যচেতনা হয়েছে আরো শক্তিমান। তাই কবি যেন তাকাতে পারেন না ঝোপের ওপরে থাকা পাখিটির দিকে। তার রুপ যেন তাক লাগিয়ে দিয়েছে কবিকে।
★>> যখনি উজ্জ্বল হয় আমার এ চেতনার মণি,
মনে হয় কেটে যাবে, ছিঁড়ে যাবে সমস্ত বাঁধুনি
সংসার সমাজ ধর্ম তুচ্ছ হয়ে যাবে লোকালয়। <<
ব্যাখা:- সৃষ্টির প্রেরণায় কবি চিরকালই উদ্বুদ্ধ হন, উজ্জ্বল হয় তাঁর চেতনার মণি। পৃথিবীর কোনো বিধিবিধান, ধর্মীয় নিয়মকানুন বা লোকালয় তাকে তখন দমিয়ে রাখতে পারে না। তখন সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়, এবং কবির কাছে একমাত্র সত্য হয়ে উঠে → চেতনার জগৎ। যে জগৎ তিনি গড়ে তোলেন শব্দ দিয়ে। এখানে এক সুগভীর বিচ্ছিন্নতাবোধ কবিকে আহত করে।
★>> লোক থেকে লোকান্তরে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি
আহত কবির গান। কবিতার আসন্ন বিজয়। <<
ব্যাখা:- "লোক" মানে ইহজগৎ, আর "লোকান্তর" শব্দটির দ্বারা পরজগৎ কে বুঝানো হয়েছে।
কবি বুঝিয়েছেন, কবি সকল প্রকার জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়েও নিজের কবিতার সার্বভৌমত্ব অর্জন করেন। তাইতো তিনি এ জগৎ থেকে পরবর্তী জগতেও তার কবিতার জয়গান শুনতে পান। তার সৃষ্টিকর্মের বিজয় ই তার বিচ্ছিন্নতাবোধের বেদনাকে প্রশমিত করে।
সজিব দত্ত
বিবিএ, ফিনান্স
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তাহলে চলো, শুরু করি। কবিতার মূলভাবটা শুরুতেই বলে নেই। তাহলে তোমাদের জন্য অনেকটা ইজি হয়ে যাবে।
মূলকথাঃ
কবি এখানে তার কবিতার জয়গাথা তুলে ধরেছেন। কবি শুরুতেই তার কবিতাকে একটা "শাদা সত্যিকার পাখি"র সিম্বল এ তুলে ধরেন। যার সবকিছুতেই যেন বাঙলা প্রকৃতির ছাপ।
কবি দৃঢ়কন্ঠে নিজের কাব্যদর্শন এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি জানেন, তার কাব্যরচনার পথ মসৃণ নয়। এখানে রয়েছে বিচিত্র টানাপোড়েন ও জীবন-সংগ্রাম। এতদসত্ত্বেও একটা সময় সকল নিয়মকানুন, সকল বাধাবিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে জয় হয় কবিতার। কবি আহত হন, তাতে কি! তার কাছে তার কবিতার জয়ই মুখ্য।
এবার শুরু হবে, লাইন বাই লাইন এক্সপ্লেনেশন:
★>> আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি,
বসে আছে সবুজ অরণ্যে এক চন্দনের ডালে; <<
ব্যাখা:- কবি এখানে তার কবিতাসত্ত্বাকে একটি সাদা পাখির উপমায় প্রকাশ করেছেন, যে কিনা সবুজ বনের এক চন্দন গাছের ডালে বসে আছে।
★>> মাথার উপরে নিচে বনচারী বাতাসের তালে
দোলে বন্য পানলতা, সুগন্ধ পরাগে মাখামাখি
হয়ে আছে ঠোঁট তার। <<
ব্যাখা:- সেই সাদা পাখিটির উপরে নিচে রয়েছে বন্য পানলতা। যখন বনের মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়, তখন সেই পানলতাগুলো দোল খায়। আর পাখিটির ঠোঁট পরাগে মাখামাখি → এটা দ্বারা বোঝা যায়, যে পাখিটি ফুলের পরাগায়ন করে এসেছে।
★>> আর দুটি চোখের কোটরে
কাটা সুপারির রঙ, পা সবুজ, নখ তীব্র লাল
যেন তার তন্ত্রে মন্ত্রে ভরে আছে চন্দনের ডাল <<
ব্যাখা:- কবির অস্তিত্ব জুড়ে চিরায়ত গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। তার কাব্যিক দৃষ্টিতে কাটা সুপারির রঙ। পা সবুজ বলতে বাংলার সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা মাঠকে বুঝানো হয়েছে। আর নখ তীব্র লাল বলতে আকাশের রক্তরাঙা অরুণ আভাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মাটি থেকে আকাশে মেলে ধরা বাংলা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে কবির কাব্যের মাধ্যমে, কাব্যচেতনার মাধ্যমে।
আরেকটা ব্যাপার। চন্দন হল সুগন্ধি কাঠের গাছ। আর এর ফুল হল, লবঙ্গ (ঝাল-মিষ্টি স্বাদযুক্ত)। এখানে কবি তার কাব্যিক সত্তার বা কবিতাচেতনার মধুরতাকে চন্দনের ডালের সাথে তুলনা করেছেন।
★>> চোখ যে রাখতে নারি এত বন্য ঝোপের ওপরে।
তাকাতে পারি না আমি রূপে তার যেন এত ভয় <<
ব্যাখা:- বাংলা প্রকৃতির সৌন্দর্য কবিকে এতটাই মুগ্ধ করেছে, যে কবির কাব্যচেতনা হয়েছে আরো শক্তিমান। তাই কবি যেন তাকাতে পারেন না ঝোপের ওপরে থাকা পাখিটির দিকে। তার রুপ যেন তাক লাগিয়ে দিয়েছে কবিকে।
★>> যখনি উজ্জ্বল হয় আমার এ চেতনার মণি,
মনে হয় কেটে যাবে, ছিঁড়ে যাবে সমস্ত বাঁধুনি
সংসার সমাজ ধর্ম তুচ্ছ হয়ে যাবে লোকালয়। <<
ব্যাখা:- সৃষ্টির প্রেরণায় কবি চিরকালই উদ্বুদ্ধ হন, উজ্জ্বল হয় তাঁর চেতনার মণি। পৃথিবীর কোনো বিধিবিধান, ধর্মীয় নিয়মকানুন বা লোকালয় তাকে তখন দমিয়ে রাখতে পারে না। তখন সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়, এবং কবির কাছে একমাত্র সত্য হয়ে উঠে → চেতনার জগৎ। যে জগৎ তিনি গড়ে তোলেন শব্দ দিয়ে। এখানে এক সুগভীর বিচ্ছিন্নতাবোধ কবিকে আহত করে।
★>> লোক থেকে লোকান্তরে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি
আহত কবির গান। কবিতার আসন্ন বিজয়। <<
ব্যাখা:- "লোক" মানে ইহজগৎ, আর "লোকান্তর" শব্দটির দ্বারা পরজগৎ কে বুঝানো হয়েছে।
কবি বুঝিয়েছেন, কবি সকল প্রকার জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়েও নিজের কবিতার সার্বভৌমত্ব অর্জন করেন। তাইতো তিনি এ জগৎ থেকে পরবর্তী জগতেও তার কবিতার জয়গান শুনতে পান। তার সৃষ্টিকর্মের বিজয় ই তার বিচ্ছিন্নতাবোধের বেদনাকে প্রশমিত করে।
সজিব দত্ত
বিবিএ, ফিনান্স
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়