ডিপ্রেশনঃ এক ভয়ংকর সংক্রামক স্নায়ুবিক ক্যান্সার



নাহ...লেখাটি মোটেই ক্লিকবেইট ক্ল্যাসিফাইড নয় আর নয়তো সাহ্যিতিক রূপকতা; বরং সহজাত স্বাভাবিক নির্লিপ্ত সুপ্ত সত্যতা!

লেখার শিরোনামে "ডিপ্রেশন" শব্দটা আজকাল যতোই সহজ প্রচলিত - এর বিপরীতে স্নায়ুবিক ক্যান্সার তবুও নাকি আবার সংক্রামক?!

 ক্যান্সার কিরূপে ভাইরাসের ভাষায় ভেসে সংক্রমিত হয় শুনি!?

আসুন সবার আগে জানি ডিপ্রেশন কি?

সহজ ভাষায় ডিপ্রেশন হলো মন খারাপ বা হতাশা কিংবা প্রাণোচ্ছলহীনতা বা সবকিছুতেই ভালো লাগে না লাগে না ভাব অথবা নাহ...ঠিক এসব শব্দে ড্রিপ্রেশন'কে ঠিক বোঝানো যাচ্ছে না; সুতরাং শব্দেন্দ্রিয়ভাবে যদিও ডিপ্রেশন খুবই সহজ আর সস্তা একটি স্নায়ুবিক তথা মানসিক সমস্যা তথাপি বিপরীতে ডিপ্রেশনের সংজ্ঞা ঠিক ততোটাই কমপ্লেক্স - ঠিক যেন যাবতীয় মানবিক সমস্যার শিকড় হতে শেখড়ের সম্মিলিত প্যাকেজের লাইট ভার্সন!


সমস্যা সমাধানের পূর্বে স্বরূপ অনুসন্ধান করা যাক:-

যাবতীয় জ্ঞাত কারণ কিংবা অজ্ঞাত কারণের হেতু মানসিক অবসন্নতা, হীনতা, প্রতিক্রিয়াশীল বিরূপ ভবাপন্নতা প্রভৃতির এক বা একাধিক প্রভাব'ই ডিপ্রেশন - যা কিনা আশা, ভরসা বা আস্থা [উদাহরণ হিসেবে প্রেম-ভালোবাসা মন্দ নিদর্শন নয় কিন্তু], অনুপ্রেরণা ও অনুপ্রেষণা হারিয়ে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে তুলে - এমনকি চূড়ান্ত পর্যায়ে মানুষকে আত্ন*হ*ত্যার দিকে প্ররোচিত করে আর বেঁচে থেকেও ভোতা অনুভূতির লাশের সংখ্যা তো আমাদের সমাজে সংখ্যাহীন!!!

সুতরাং ডিপ্রেশন'কে স্নায়ুবিক [স্নায়ু ভাবার্থে মানসিক] ক্যান্সার [যা কিনা আপন কোষের জেনেটিক কোডের গেলমালে আপনাকেই ধীরে ধীরে ভেতর হতে নিঃশেষিত করে দেয়] বলাটা আক্ষরিকতা না মানলেও অনাক্ষরিক অন্তত হতে পারে না!

এবার একটু কঠিন বায়োলজিক্যাল রসায়নিক ল্যাবে চোখ রাখলে দেখা যাবে আনন্দের রঙ্গিলা হরমোন ডোপমিন আর সুখানুভূতির রাঙ্গা সোরেটোনিন হরমোন আমাদের ব্রেইনের ইলেকট্রিক্যাল ইম্পালসে যে মধুর মানবিক তরঙ্গ তৈরী করে - এসবের বিপরীতে ঐ একই ডোপামিন আর সেরোটোনিনের সাথে নরপাইনফ্রাইন হরমোনের নিউরোট্রান্সমিটিং নেগেটিভ ইনআরশিয়া'ই দায়ী বটে] সুতরাং বলা যায় যে ডিপ্রেশন তৈরী করার আলাদা রাসায়নিক রসালো তরল আমাদের শরীরে উৎপন্ন হয়না বরং হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় একমাত্র কার্যকরণ!


ডিপ্রেশন কিভাবে সংক্রামক হয়?

প্রায় নব্বই এর দশকে অধিকাংশ বাংলা টিভি নাটকের গল্পে ভাবুক শ্রেণীর একদল নায়কের আবির্ভূত হতো যারা কিনা কবিতা আর রজনীগন্ধায় প্রেম বিয়োগে বিবাগী হতো কিংবা ভর সন্ধ্যায় ঘরের বাতি নিভিয়ে অনাড়ি ভঙ্গিতে শাড়ী পড়ে কিশোরী মুখ লুকিয়ে কাদঁতো - নাটকের স্ক্রিপ্টেড কাহিনী নয় বরং ঐ সময়ের প্যাশান এমনিভাবে তখনকার মানুষদের প্রভাবিত করতো এমনসব বাস্তব উদাহরণ আর দৃষ্টান্ত আপনি চারিদিক খুঁজলেই ঢের পাবেন!

শুধু তখনকার দিনেই এই মন খারাপ ছোঁয়াচে ছিলো এমনটা নয় বরং আজকের দিনেও এটা পরিবর্তিত টেকনোলজি'তে বিবর্তিত বিবর্ধিত ভয়ানক রূপ লাভ করেছে [সোস্যাল মিডিয়ায় এক শ্রেণীর মানুষ তো আছেই যারা ডিপ্রেশনকে প্যাশান করে নিয়েছে - কেউবা আবার ঐ প্যাশানটাকে নিয়ে ভাইরাল হতে প্রফোশনাল হয়েছেন - আবার প্যাশান কিংবা প্রফোশন কোনটার বালাই ছাড়া এইতো আপনি বা আমি কদাচিৎ তো ক্ষণেক্ষণে ডিপ্রেশন ভর করে নয়তো আমরাই ডিপ্রেশনে ভর করি,তাইনা?]


এখন আসা যাক ডিপ্রেশনের কেমোথেরাপিঃ

ডিপ্রেশনের সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা হলো কেমোথেরাপি কেননা ড্রাগ [এই ড্রাগ মানে মেডিসিন ভাবতে পারেন আবার চাইলে ড্যাশট্যাশটিং'ও ভাবতে পারেন] কিংবা বিশ্বাসী ধারার পানি পড়া - ঝাড়ফুঁক অথবা প্লাসিবোর হোম-ই-ও-প্যাথের চিকিৎসা আহামরি স্থায়ী চিকিৎসা হিসেবে ধরা চলে না - এইজন্য ডিপ্রেশনের কারণ মূল মন খারাপের হেতু'টা "সাইকোলজি এর কনসার্ন" - এ কোবাল্ট - 60 রেডিওআইসোটোপ তেজস্ক্রিতায় জ্বালিয়ে আলোক ঝলকানি তৈরী করতে হয়- এমন আলোক ঝলকানি যেন আপনার ডিপ্রেশনে জীবনীশক্তির স্পার্ক সৃষ্টি করে!

উচ্চবিত্ত আর বাইরের উন্নত দেশগুলোতে ডিপ্রেশন বিষয়টা শুরুতেই সিরিয়াসলি নেওয়ায় এবং সঠিক ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করে [এইজন্য দেখবেন তারা বুড়িয়ে গিয়েও কত্তো ইয়াং আর ইয়াংগুলাও ইয়া ইয়া সব ইনভেনশন ঘটায়] কিন্তু বাংলাদেশে আজও ডিপ্রেশন বিষয়টাকে হয়তো স্রেফ ফালতু ভাল্লাগেনা অথবা সিরিয়াস হলে মাথায় ছিট বলে উপেক্ষা করা হয় [এটার যথেষ্ট কারণ হিসেবে মন খারাপের জন্য ডাক্তার ফিসে টাকা খরচ মানে অপচয়ের অপচয় আরকি - এটায় শ্রেষ্ঠ কারন হওয়া উচিত] অথচ "ডিপ্রেশন দূর হলে আপনার ভেতর হতেই ড্যাশিং ডিসকাভারী ঘটে যেতে খুব পাড়ে"!

ওয়েট ওয়েট....বিজ্ঞান'ভিত্তিক লেখায় এসব কিসব লেখা পড়ছেন ভাবুন তো?!

এটাকে না জানি ভার্চুয়ালের মোটামুটি মানের মোটিভেশান মনে হচ্ছে না তো? --- হ্যা হ্যা হ্যা, ডিপ্রেশন দূর করার অন্যতম সেরা স্টেরয়েড ঔষধ হলো মোটিভেশান; তবে এই মোটিভেশান যদি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং হিসেবে গ্রহণ করেন তবে সেটার মাত্রা ও বিন্যাস ভাবা উচিত নয়তো মোটিভেশান শুনতে সুন্দর লাগলেও আফটার এ নাইট সবকিছুই অন্ধকার মনে হবে!

মোস্ট ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হলো এই ডিপ'লি ডার্ক ইফেক্টের কারণেই কিন্তু অনেকে মোটিভেশান স্পিকারদের মোটেই সহ্য করতে পারেন না [ সবটাই গালগপ্প / তার লাইফে হইছে কোই আমার লাইফে চেইঞ্জ হয়না ক্যান...... ] তাদের মোটিভেশান আন্তর্মনে মধুর মনে হলেও বহির্মনে মাকাল'ই মনে হয়!!!

সমাধান: মোটিভেশানের মূম মর্ম মোরাল হিসেবে মার্ক করে রাখুন - প্রতিদিনকার নিত্য জীবনে ঐসব এপ্লাই করা শুরু করে দিন!

মোটিভেশান যদি ডিপ্রেশনের আধারে এক আলোক স্পার্ক হয় তবে সেই আলো জ্বালিয়ে রাখতে জ্বালানীর কাজ করবে নিয়ত প্রতিপালন তথা প্র্যাকটিস [তেমনি এক দৃষ্টান্ত হলো মেডিটেশান যা শারীরিক নিয়মবৃত্ত রুটিনে সারাদিনের অপ্রসন্নতা ছাটিয়ে দেয়]।

সম্ভব হলে সবার আগে খোঁজ দ্যা সার্চ লাগান সত্যিই আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন কিনা? যদি এমন হয় যে আদতেই ডিপ্রেশনে ভুগছেন কিনা সেটাই বুঝতে না পারেন আর কনফিউশানে ক্লান্ত হউন তবে একরূপ নিশ্চিত আপনি ডিপ্রেশনে ভোগা উচ্চভোগী মানুষ!

এরপর আপনাকে খুজঁতে হবে ডিপ্রেশনের কারণ [সহজাতভাবে এটার কারণ অনুসন্ধান আপনি আত্ম-জিজ্ঞাসা তথা সেল্ফ কোশ্চেনিং এর মাধ্যমে জানতে পারবেন] যদি একান্তই দিকভ্রান্ত হউন তবে প্রেক্ষাপট যাচাই করুন। এরপর ঐ কারণ বা ফ্যাক্ট সমাধানের প্রয়াস নিন [অবশ্যই অবসর প্রয়োজন তবে তা সীমিত হওয়া উচিত]।

তবুও অনেক সময় হয়তো উচ্চ মানসিক বিভ্রাটে আপনাকে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের মেডিকেলে ট্রিট নিতে হতে পারে - যা ধরণ অনুযায়ী স্পেশালিষ্ট সাজেস্ট করবেন [রসায়ন আপনার মস্তিষ্কের তড়িৎ রাসায়নিক কারেন্টের লাইন মেরামত করবে মাত্র - আনন্দের মানসিক বাতি জ্বালানোর কর্তব্যটা তখনও কিন্তু আপনার ওপরই বর্তাবে - তাইতো ইচ্ছাশক্তি ইউনিভার্সালি মুখ্য]; একটু আধটু প্রেসক্রিপশনের ঔষধের জেনারা জানাজানি হলে আমরা প্রায় পরিলক্ষন করি যে ঐসব ঔষধের বেশীরভাগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ঘুম এবং হাইপারটেনশন ফ্রি এর সহিত আপেক্ষিকভাবে সম্পর্কিত [সুতরাং ডিসটিল ওয়াটারের প্লাসিবো যেমন হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় তেমনি আপনি চাইলে ঔষধ বিনা ভালো থাকার প্রাথমিক প্রচেষ্টা চালাতেই পারেন শুধুমাত্র "আমি ভালো আছি" এমন ভাবনাতে]!

শেষটাতে শুভকামনা রইলো - আপনার এক সুন্দর জীবনের জন্য!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম