পরিচিতি: পাথরকুচি গাছ একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়। পাতা মাংসল ও মসৃণ, আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো। পাতার চারপাশে আছে ছোট ছোট গোল খাঁজ। এই খাঁজ থেকে নতুন চারার জন্ম হয়। মুল কান্ডের অগ্রভাগে গুচ্ছবদ্ধ নিম্নামুখি ফুল হয়। দেখতে ঝালর বাতির মত। ভিতরে ফাঁপা। ফুল লম্বায় এক থেকে দেড় ইঞ্চি হয়ে থাকে। পুস্পের বাহিরের দিকে সবুজ লাল ও সাদা দাগ থাকে। শীতকালে ফুল ও গ্রীস্মকালে ফল হয়। কখনো কখনো- বিশেষ করে গাছ বুড়ো হয়ে গেলে- গাছেই ওই খাঁজ থেকে চারা গজায়। গাছ থেকে খাঁজকাটা একটি পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে চারা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও ভারতে এই গণের কয়েকটি প্রজাতি পাওয়া যায়। কাঁকরমাটিতে সহজেই জন্মে, তবে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় দ্রুত বাড়ে এবং মানুষের সমান উঁচু হয়ে যায়। কোথাও কোথাও কফপাতা নামে পরিচিত। আরেকটি নাম পাটিয়াপুরি। নানা রকশ ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ এ গাছের পাতা প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে চিকিৎসার ক্ষেত্রে। চলুন তাহলে আজ জেনে নেই পাথরকুচি গাছ ও এর নানা রমক ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।
পাথরকুচি পাতার ঔষদি গুনাগুন গুলি হলোঃ
➢ কিডনির পাথর অপসারণ: পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে। দিনে দুবার ২ থেকে ৩টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।
➢ পেট ফাঁপা: অনেক সময় দেখা যায় পেটটা ফুলে গেছে, প্রসাব আটকে আছে, আধোবায়ু, সরছে না, সেই ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস গরম করে সিকি কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। আধো বায়ুরও নিঃসরণ হবে, ফাঁপাটাও কমে যাবে।
➢ মেহ, সর্দি, মুত্র রোধে, রক্তপিত্তে, পেট ফাঁপায়, শিশুদের পেট ব্যথায়, মৃগীরোগে পাথরকুচির ঔষধী গুনাগুন রয়েছে।
➢ শিশুদের পেট ব্যথায়ঃ শিশুর পেটব্যথা হলে, ৩০-৬০ ফোঁটা পাথর কুচির পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার ঊপশম হয়।
➢ কাটাছেঁড়ায়: টাটকা পাতা পরিমাণ মত হালকা তাপে গরম করে কাটা বা থেতলে যাওয়া স্থানে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
➢ মৃগী রোগেঃ রোগাক্রান্ত সময়ে পাথরকুচির পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের ঊপশম হবে।
➢ সর্দিতেঃ যে সর্দি পুরান হয়ে গেছে সেই ক্ষেত্রে এটি বিশেষ উপযোগী। এই কফ বিকারে পাথরকুচি পাতা রস করে সেটাকে একটু গরম করতে হবে এবং গরম অবস্থায় তার সাথে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। ৩ চা চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন হয়। তা থেকে ২ চা চামচ নিয়ে সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে হবে। এর দ্বারা পুরান সর্দি সেরে যাবে এবং সর্বদা কাসি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
➢ শরীর জালাপোড়ায়ঃ দু চামচ পাথর কুচি পাতার রস আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুবেলা সেবনে শরীরের জালাপোড়া দুর হয়
➢ পাইলস: পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস্ ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
➢ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।
➢ বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
➢ কলেরা, ডাইরিয়া বা রক্ত আমাশয়: তিন মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার জুসের সাথে ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে এসব রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।
➢ পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সাথে সাথেই এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে। যারা ত্বক সম্বন্ধে সচেতন, তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
➢ পাথরকুচি পাতা জন্ডিসের মহাঔষধ। লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা করতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী।