ব্যয় ও ব্যয়ের শ্রেণীবিভাগ

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করবো ব্যয় এবং তার শ্রেণীবিভাগ নিয়ে কিন্তু তার আগেই আমরা একটি মৌলিক ধারণা ক্লিয়ার করি।
প্রথমেই ব্যয় খরচ ও ক্ষতির মধ্যাকার পার্থক্য দেখে নেই।

💠মনে করো তুমি আজ বাজার থেকে ১০ টাকা দিয়ে একটি কলম কিনলা। কলমে ১০ টাকা সমমূল্যের কালি আছে যা তুমি ব্যবহার করতে পারবা। ৩ দিন কলমটি ব্যবহার করে তুমি খেয়াল করলা যে কলমে এখনও অর্ধেক অর্থাৎ ৫ টাকার কালি বাকি আছে। বাকি ৫ টাকার কালি তুমি এই ৩ দিনে ব্যবহার করে ফেলেছো। এখন লিখতে যেয়ে মনে করো শিসটা ভেঙ্গে গেলো। তাহলে এখানে ১০ টাকার বিনিময়ে যে কলমটা কিনলা এটা হচ্ছে ব্যয় যার দ্বারা একটি সম্পত্তি অর্জিত হচ্ছে। তারপর ৫ টাকার কালি ব্যবহার করলা এটা হচ্ছে খরচ। অর্থাৎ সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে খরচ হয়। আর ৫ টাকার কালি থাকা অবস্থায় কলমটির শিস ভেঙ্গে কলমটি যে অকেজো হয়ে গেলো এটা হচ্ছে ক্ষতি। অর্থাৎ সম্পত্তির যে অংশ আর ব্যবহার করা যাবেনা তা ক্ষতি।

আশা করি সবাই ব্যয়, খরচ আর ক্ষতির পার্থক্য বুঝতে পেরেছো।

ব্যয় ও ব্যয়ের শ্রেণিবিভাগ


হিসাববিজ্ঞানে বিভিন্ন ধরণের ব্যয় রয়েছে। এখন চলো বিস্তারিত আলোচনা করা যাক,

স্থায়ী ব্যয়ঃ
যে ব্যয় এককপ্রতি পরিবর্তনশীল কিন্তু মোট পরিমাণ স্থির সেটিই স্থায়ী ব্যয়।যেমন কারখানা দালানের ভাড়া,অফিস ভাড়া,বেতন ইত্যাদি। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি স্থায়ী ব্যয় কেন এককপ্রতি পরিবর্তনশীল আর মোট পরিমাণে স্থির।
মনে করি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা ভাড়া বাবদ স্থায়ী ব্যয় ১০,০০০ টাকা। জানুয়ারী মাসে সেই কারখানায় মোট ৫০০ একক পণ্য উৎপাদিত হলো। তাহলে এককপ্রতি স্থায়ী ব্যয় হবে- ১০,০০০÷৫০০=২০ টাকা। আবার ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য উৎপাদিত হলো ১,০০০ একক। তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসে একক প্রতি স্থায়ী ব্যয় হবে- ১০,০০০÷১,০০০= ১০ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বাড়লে এককপ্রতি স্থায়ী ব্যয় কমে আর উৎপাদন কমলে ব্যয় বাড়ে।
তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো? কারখানা ভাড়া বাবদ প্রদত্ত ১০,০০০ টাকা স্থায়ী ব্যয় কিন্তু সেইম থাকলো কারণ ৫০০ একক পণ্য উৎপাদন করলে কারখানা ভাড়া ১০,০০০ টাকা দিতে হবে আবার ১,০০০ পণ্য উৎপাদন করলেও ১০,০০০ টাকাই দিতে হবে।
এজন্যই বলা হয় স্থায়ী ব্যয়ের মোট পরিমাণ স্থির কিন্তু এককপ্রতি পরিবর্তনশীল***

পরিবর্তনশীল ব্যয়ঃ
এটি স্থায়ী ব্যয়ের বিপরীত। একক প্রতি স্থির কিন্তু মোট পরিমাণ পরিবর্তনশীল। যেমন:কাঁচামালের ব্যয়,কারখানা শ্রমিকের মজুরী।
মনে করি প্রতিটি বলপেন তৈরীর জন্য শ্রমিকের মজুরী দিতে হবে ২ টাকা। এখন যদি আমরা ৫০০ বলপেন উৎপাদন করি তাহলে মজুরি দিতে হবে ১,০০০ টাকা। আবার ৬০০ বলপেন উৎপাদন করতে চাইলে মজুরী দিতে হবে ১,২০০ টাকা। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে একক প্রতি পরিবর্তনশীল ব্যয় অর্থাৎ মজুরী ব্যয় সবসময় ২ টাকাই থাকবে। উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে মোট পরিবর্তনশীল ব্যয়ের পরিমাণটা পরিবর্তিত হবে।
এজন্য বলা হয় পরিবর্তনশীল ব্যয় একক প্রতি স্থির কিন্তু মোট পরিমাণ পরিবর্তনশীল***

আধা পরিবর্তনশীল ব্যয়ঃ
এই ব্যয়ের একটা অংশ স্থির আর আরেকটা অংশ পরিবর্তনশীল। যেমন :- বিদ্যুৎ বিল,টেলিফোন বিল।
বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে মিটার ভাড়া স্থির। অন্যদিকে ব্যবহার অনুসারে বিদ্যুৎ বিল একেক মাসে একেক রকম আসে। মিটার ভাড়া (স্থির) এবং বিদ্যুৎয়ের ব্যবহার এই দুইটার সমন্বয়ে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করা হয়।

নিমজ্জিত ব্যয়ঃ
যে ব্যয় অতীতে সংঘটিত হয়েছিল এবং বর্তমানে যে ব্যয় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করা যায়না সেটিই নিমজ্জিত ব্যয় বা Sunk Cost ।নিমজ্জিত ব্যয় কখনো উদ্ধার করা যায়না। যেমন একটি ভবন তৈরীর সময় মাটির নিচে পিলার দেওয়ার জন্য যে ব্যয় করা হয় সেটি নিমজ্জিত ব্যয়।

প্রাসঙ্গিক ব্যয়ঃ
যে ব্যয় ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ সেটিই প্রাসঙ্গিক ব্যয়। যেমন: একটি পণ্য তৈরী করতে ব্যয় হবে ৫০,০০০ টাকা আর সেই পণ্য যদি বাজার থেকে কেনা হয় তাহলে ব্যয় হবে ৫২,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে পণ্য তৈরীর ব্যয় ও বাহির হতে ক্রয়ের ব্যয় প্রাসঙ্গিক ব্যয় হিসাবে গণ্য হবে কারণ এগুলো একটা আরেকটার বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়ে যেকোন একটি বিকল্প গ্রহণ করবে।

অপ্রাসঙ্গিক ব্যয়ঃ
যে ব্যয় প্রতিস্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন কাজে আসেনা সেটিই অপ্রাসঙ্গিক ব্যয়। যেমন উপরের উদাহরণের সাহায্যে বলা যায় যে,প্রতিস্ঠান যদি ৫২,০০০ টাকা দিয়ে ঔ পণ্য বাজার থেকে কিনতে চায় তাহলে প্রতিস্ঠানের কাউকে বাজারে যেতে হবে। মনে করি বাজারে যেতে রিক্সা ভাড়া লাগলো ৫০ টাকা। এই রিক্সা ভাড়ার ৫০ টাকাই হচ্ছে অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় যা প্রতিস্ঠানের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে আসবেনা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
১. উৎপাদন ব্যয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান — কাঁচামাল।
২. যেসব খরচ উৎপাদনের সাথে সরাসরি জড়িত নয় সেগুলো — পরোক্ষ খরচ।
৩. পন্য বা সেবা সৃষ্টির জন্য খরচের সমষ্টি হলো — উৎপাদন ব্যয়।
৪. ব্যয়ের অতিবাহিত অংশ হলো — খরচ।
৫. অতিবাহিত ব্যয়ের যে অংশ থেকে সুবিধা পাওয়া যায় না তা — ক্ষতি।
৬. ব্যয়ের বিনিময়ে অর্জিত হয় — স্থায়ী সম্পদ।

এই ছিল এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলোর বিস্তারিত আলোচনা। কোথাও না বুঝলে কমেন্ট করে জানাও। 

"সবার জন্য শুভকামনা রইলো🖤"

Maruf Hossain Munna

Instructor of Accounting
Executive of SILSWA

BBA, Department of Marketing
Faculty of Business Studies
University of Dhaka

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম