মাহির ভাই,পানি ছাড়া আপনি বাঁচতে পারবেন?
না।
বায়ু ছাড়া আপনি বাঁচতে পারবেন?
না, আরে ভাই তুমি কি বুঝ না এগুলো ছাড়া বাঁচা যায় না।
একটু দাঁড়ান ভাই। লাস্ট কোশ্চেন একটা। ডায়োড ছাড়া আপনি বাঁচতে পারবেন?
অ্যাহ! এইটা আবার কি? খায় নাকি মাথায় দেয়?
এটা খায়ও না, মাথায়ও দেয়না। এইটা ছাড়া পৃথিবীর সব কম্পিউটার,মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস অচল। আমি তো মোবাইল কম্পিউটার ছাড়া বাঁচতে পারব না। এখন আপনি বলেন ডায়োড ছাড়া কি আপনি বাঁচতে পারবেন?
অসম্ভব।
একটা বিষয় খেয়াল করেছেন, বায়ু সমুদ্রে বাস করে যেরকম আমরা বায়ুকে ভুলে যাই, ঠিক তেমনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডায়োড ব্যবহার করা হলেও আমরা ডায়োড সম্পর্কে জানতে ভুলে যাই।
হুমম, আচ্ছা আমাকে ডায়োড সম্পর্কে একটু খুলে বল।
একটু বড় হবে।ধৈর্য্য আছে আপনার?
হ্যাঁ, অবশ্যই। যেখানে কিছু জানা যাবে, শিখা যাবে সেখানে ধৈর্য এবং সময় দুটোই দেওয়া উচিত আমাদের।
একদম ঠিক বলেছেন।
এবার বল ডায়োড কাজ করে কিভাবে?
বলছি। তবে তার আগে সেমিকন্ডাক্টর, n-টাইপ,p টাইপ ডোপিং সম্পর্কে জানতে হবে।
ঠিক আছে।
প্রথমে সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কে বলি। যে সকল মৌলের পরমাণুতে স্বাভাবিক অবস্থায় মুক্ত ইলেকট্রন দেখা যায় না, কিন্তু তাপ দিলে ইলেকট্রন মুক্ত হয়, তাদের সেমিকন্ডাক্টর বলে। যেমন: সিলিকন,জার্মেনিয়াম ইত্যাদি। অর্থাৎ সেমিকন্ডাক্টর হচ্ছে কন্ডাক্টর আর ইনসুলেটর এর মাঝামাঝি। কন্ডাক্টরে স্বাভাবিকভাবেই মুক্ত ইলেকট্রন থাকে, যেখানে ইনসুলেটরে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। ইনসুলেটর এর ভ্যালেন্স এবং কন্ডাকশন ব্যান্ড এর গ্যাপ সেমিকন্ডাক্টরের চেয়ে বেশি হওয়ায় ইনসুলেটরে সেমিকন্ডাক্টরের মতই তাপ দেওয়া হলে ইলেকট্রন মুক্ত হয় না।
দাঁড়াও দাঁড়াও, ভ্যালেন্স ব্যান্ড,কন্ডাকশন ব্যান্ড মানে কি?
বলছি। পদার্থের পরমাণুর শেষ কক্ষপথে অবস্থিত সকল ইলেকট্রনের শক্তি একই স্তরে থাকে না। এরা ভিন্ন ভিন্ন স্তরে থাকে। তাই এদের শক্তির ভিন্ন ভিন্ন স্তরকে একটি ব্যান্ড বা পাল্লা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে যখন ইলেকট্রনসমূহ তাপ দেওয়ায় বা অন্য কোন কারণে উত্তেজিত হয়ে মুক্ত হয় তখনো ঐসকল ইলেকট্রনের শক্তি একই স্তরে থাকে না। তাই তাদের শক্তির ভিন্ন ভিন্ন স্তরকে একটি ব্যান্ড বা পাল্লা দিয়ে নির্দেশ করা হয়। একেই কন্ডাকশন ব্যান্ড বলে। এখন ভ্যালেন্স ব্যান্ড আর কন্ডাকশন ব্যান্ড এর মধ্যে যে পার্থক্য তাকেই ব্যান্ড গ্যাপ বলে। এখন ইনসুলটরের ব্যান্ড গ্যাপ সেমিকন্ডাক্টরের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায়, যে তাপ দিলে সেমিকন্ডাক্টর কিছু ইলেকট্রনকে মুক্ত করে, সেই তাপে ইনসুলেটর ইলেকট্রন মুক্ত করতে পারে না।
বুঝলাম। ক্যারি অন।
হুমম। তা এখন ডায়োড তৈরি করতে n-টাইপ,p টাইপ ডোপিং করে জোড়া দিতে হয়। এখন আসি n-টাইপ,p টাইপ ডোপিং কি।
তার আগে বল ডোপিং কি এবং কেন করা হয়?
গুড কোশ্চন। বোঝার সুবিধার্থে সিলিকনের n-টাইপ এবং p-টাইপ ডোপিং বিবেচনা করা যাক। আমরা জানি একটি সিলিকন চারটি সিলিকনের সাথে ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এমতাবস্থায় যদি আমরা সিলিকনকে তাপ দেই তাহলে কিছু মুক্ত ইলেকট্রন আমরা পাব। কিন্তু আমাদের যখন কন্ডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণ ইলেকট্রন লাগবে তখন আমরা কি করব। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ডোপিং করা হয়, যাকে খাঁটি বাংলায় "ভেজাল মেশানো" বলা হয়। এখন প্রশ্ন হলো কি ভেজাল মেশানো হয়। এক্ষেত্রে এমন পদার্থের পরমাণু মেশানো হয়, যাতে করে মুক্ত চার্জ পাওয়া যায়। কারণ আমরা জানি মুক্ত চার্জের প্রবাহ বলতেই বিদ্যুৎ প্রবাহকে বোঝানো হয়।
আচ্ছা এখন তুমি মুক্ত ইলেকট্রনের জায়গায় মুক্ত চার্জ বলছ কেন?
আপনার মনোযোগের প্রশংসা করতে হয়। একটু পরেই বুঝতে পারবেন। আমরা যদি চারটি সিলিকনের মাঝে একটি পঞ্চযোজী ফসফরাস পরমাণু আনি, তাহলে ফসফরাস পরমাণুটি একটি ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে চারটি সিলিকনের সাথে চারটি ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে বন্ধন তৈরি করবে। অর্থাৎ একটি ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা যদি কোটি কোটি ফসফরাস ডোপিং করি,তাহলে কোটি কোটি মুক্ত ইলেকট্রন পেয়ে যাব খুব সহজেই। একে n-টাইপ ডোপিং বলে। কেন বলে সেটা পরে বলছি। তার আগে p-টাইপ ডোপিং কি সেটা জেনে নেয়া যাক। যদি চারটি সিলিকনের মাঝে একটি ত্রিযোজী পরমাণু যেমন বোরন আনা হয় তাহলে বোরনের তিনটি ইলেকট্রন তিনটি সিলিকনের তিনটি ইলেকট্রনের সাথে শেয়ার করবে। কিন্তু আরেকটি সিলিকনের একটি ইলেকট্রন যে শেয়ার করা হলো না। তাই একটি হোলের সৃষ্টি হবে যেটি পজিটিভ চার্জ ক্যারিয়ার।
হোল বিষয়টা বুঝলাম না। আরেকটু স্পষ্ট করলে ভালো হয়।
অবশ্যই। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। হোল হচ্ছে একটি পরমাণুর নির্দিষ্ট স্থানে ইলেকট্রনের অনুপস্থিতি। যেমন-বোরন তার সর্বশেষ কক্ষপথের তিনটি ইলেকট্রন তিনটি সিলিকনের সাথে শেয়ার করেছে। ফলে চতুর্থ সিলিকনের একটি ইলেকট্রন কিন্তু শেয়ার হয়নি। এজন্য চতুর্থ সিলিকন আর বোরনের মাঝে ইলেকট্রনের অনুপস্থিতি দেখা যায়। একেই হোল বলে। যেহেতু হোল ইলেকট্রনের অনুপস্থিতি, তাই এর চার্জ পজিটিভ। এখন এই হোল পূরণের জন্য চতুর্থ সিলিকন থেকে একটি ইলেকট্রন আসে। যার ফলে ঐ সিলিকনে আবার একটি ইলেকট্রনের ঘাটতি দেখা দেয় তথা হোল দেখা যায়। ফলে আবারো পাশের সিলিকন থেকে ইলেকট্রন আসে হোল পূরণের জন্য এবং এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ইলেকট্রন হোলকে পূর্ণ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিকে চলাচল করছে ঠিকই, কিন্তু একটু ভিন্নভাবে যদি ভাবা হয়,তাহলে বলা যায় ইলেকট্রনের বিপরীত দিকে হোল চলাচল করছে। অর্থাৎ হোল এখানে পজিটিভ চার্জ ক্যারিয়ার। এরকম ডোপিংকে p-টাইপ ডোপিং বলা হয়।
আহ! এখন ক্লিয়ার হলাম। এবার বল n-টাইপ,p-টাইপ ডোপিং বলা হয় কেন?
দেখেন, একটি বিষয় ভালো করে বুঝতে হবে এখানে যে উভয় প্রকার ডোপিং-এই চার্জ ক্যারিয়ার হিসেবে ইলেকট্রন এবং হোল থাকে। কারণ-সিলিকনকে যখন তাপ দিতে থাকা হয়, তখন সেটি কিন্তু ইলেকট্রন ছেড়ে দেয়। ফলে যেখানে ইলেকট্রন থাকার কথা ছিল সেখানে একটি হোল সৃষ্টি হয়। এই হোল কে পূর্ণ করার জন্য পাশের সিলিকন থেকে একটি ইলেকট্রন আসে এবং আবারো হোলের সৃষ্টি হয় এবং তা পূর্ণ করার জন্য পাশের সিলিকন থেকে ইলেকট্রন আসে। আর এভাবেই এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। বিপরীত ভাবে চিন্তা করলে হোলও মুভ করছে তথা চার্জ ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এখন n-টাইপে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা, হোলের চেয়ে বেশি। কারণ: ডোপিং এর আগে থেকেই মুক্ত ইলেকট্রন এবং হোল ছিল। কিন্তু যখন পঞ্চযোজী ফসফরাস দিয়ে ডোপিং করা হয় তখন ফসফরাস একটি ইলেকট্রন ছেড়ে দেয়। এখন কোটি কোটি ফসফরাস ডোপিং করলে কোটি কোটি মুক্ত ইলেকট্রন পাওয়া যাবে। ফলে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা হোলের চেয়ে বেশি হবে। অন্যদিকে p-টাইপে হোলের সংখ্যা, মুক্ত ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি। কারণটা আপনি বলতে পারবেন?
হ্যাঁ। ডোপিং এর আগে মুক্ত ইলেকট্রন এবং হোলের সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু যখন ত্রিযোজী বোরন ডোপিং করা হয়, তখন একটি হোলের সৃষ্টি হয়। তাই যদি অসংখ্য বোরন ডোপিং করা হয়, তাহলে অসংখ্য হোলের সৃষ্টি হবে। ফলে হোলের সংখ্যা মুক্ত ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি হবে। ঠিক হয়েছে না?
একদম ঠিক বলেছেন! সুতরাং,যেহেতু ইলেকট্রনের চার্জ নেগেটিভ, তাই যে ডোপিং এ মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা,হোলের থেকে বেশি তাকে n-type ডোপিং বলা হয়। অন্যদিকে হোলের চার্জ পজিটিভ হওয়ায় যে ডোপিং এ হোলের সংখ্যা, মুক্ত ইলেকট্রন এর চেয়ে বেশি তাকে p-টাইপ ডোপিং বলা হয়। বুঝলেন?
হ্যাঁ,তার মানে n-টাইপ ডোপিং এর চার্জ নেগেটিভ এবং p-টাইপ ডোপিং এর চার্জ পজিটিভ।
না না। n-টাইপ ডোপিং এর মুক্ত চার্জ নেগেটিভ এবং p-টাইপ ডোপিং এর মুক্ত চার্জ পজেটিভ। সামগ্রিকভাবে চার্জ কিন্তু নিউট্রাল থাকে,ডোপিং করার পরেও।
কিভাবে?
দেখেন যখন n-টাইপ ডোপিং এ ফসফরাস একটি ইলেকট্রন ছেড়ে দেয়, তখন কিন্তু এটি পজিটিভ হয়ে যায়। অর্থাৎ যতগুলো ফসফরাস একটি করে ইলেকট্রন ছেড়ে দিবে, ততগুলো ফসফরাসের পজিটিভ আয়নের সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে p-টাইপ ডোপিং এ হোল সৃষ্টি হওয়ার পর বোরন একটি করে ইলেকট্রন গ্রহণ করে নেগেটিভ হয়ে যায়। অর্থাৎ যতগুলো হোল সৃষ্টি হয়, ততগুলো বোরনের নেগেটিভ আয়নের সৃষ্টি হয়। ফলে নেগেটিভ এবং পজিটিভ চার্জের সংখ্যা সমান হয়। আর এ কারণেই সামগ্রিকভাবে চার্জ নিউট্রাল থাকে।
ও, বুঝলাম।
এখন আসি ডায়োড বলতে কি বুঝায়। যদি সংজ্ঞা দেই তাহলে বিষয়টা এরকম দাঁড়ায় যে ডায়োড একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যা দুই প্রান্ত বিশিষ্ট হয় এবং মূলত তড়িৎ প্রবাহকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। আমরা সিলিকন দিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি। প্রথমত সিলিকনের একটি খণ্ড কে দুইটি প্রান্তে ভাগ করব। এর এক প্রান্ত n-টাইপ ডোপিং করা হবে এবং অন্য প্রান্ত p-টাইপ ডোপিং করা হবে। এখন আমরা জানি যে n-টাইপ ডোপিং এ চার্জ ক্যারিয়ার ইলেকট্রনের সংখ্যা,p-টাইপ ডোপিং এর চেয়ে বেশি। তাই ব্যাপন প্রক্রিয়ায় মুক্ত ইলেকট্রন,n-টাইপ থেকে p-টাইপের দিকে যাবে। অন্যদিকে p-টাইপ ডোপিং এ হোলের সংখ্যা,n-টাইপের চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যাপন প্রক্রিয়ায় হোল,p-টাইপ থেকে n-টাইপের দিকে যাবে। ইলেকট্রন এবং হোল যখন যথাক্রমে p-টাইপ ও n-টাইপ ডোপিং-এর খণ্ডে যাবে, তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে।n-টাইপ ও p-টাইপের সংযোগস্থলের আশেপাশের ইলেকট্রন ও হোল গুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ-ইলেকট্রন যখন সংযোগস্থল পার করে p-টাইপে প্রবেশ করবে তখন সেখানকার হোল গুলোর সাথে মিলে ধ্বংস করে দিবে। এখন একটি মজার ঘটনা ঘটবে। এতক্ষণ সংযোগস্থলের কাছাকাছি p-টাইপ ডোপিং এর স্থির নেগেটিভ বোরন আয়ন গুলো নিজেদের চার্জের প্রভাব দেখাতে পারছিল না। কারণ-মুক্ত হোলগুলোর পজিটিভ চার্জ। কিন্তু যখনই n-টাইপ থেকে আসা ইলেকট্রনগুলো সংযোগস্থলের কাছাকাছি p-টাইপ ডোপিং এর হোলগুলোকে ধ্বংস করে দিল, তখন সংযোগস্থলের কাছাকাছি নেগেটিভ বোরন আয়নগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে তথা নিজেদের প্রভাব দেখাতে পারবে।
কিভাবে?
যখন n-টাইপ থেকে ইলেকট্রনগুলো p-টাইপের দিকে আসতে যাবে তখন নেগেটিভ বোরনের ইলেকট্রিক ফিল্ডের কারণে বিকর্ষিত হবে। ফলে p-টাইপের দিকে ইলেকট্রন আর যেতে পারবে না। একইভাবে সংযোগস্থলের কাছাকাছি n-টাইপের ইলেকট্রনগুলো হোল দ্বারা ধ্বংস হওয়ার পর সংযোগস্থলের কাছাকাছি n-টাইপের পজিটিভ ফসফরাস আয়ন,p-টাইপ থেকে n-টাইপের দিকে হোল আসতে বাধা দিবে তথা বিকর্ষণ করবে। এখন এই সংযোগস্থলের কাছাকাছি উভয় পাশেই যে বাধা প্রদানকারী অঞ্চলের সৃষ্টি হয়, তাকে ডিপ্লেশন লেয়ার বলে। এখন এই ডায়োডের n-টাইপ ডোপিং-এর সাথে ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্ত এবং p-টাইপ ডোপিং-এর সাথে ব্যাটারীর পজিটিভ প্রান্ত যোগ করলে, ব্যাটারীর নেগেটিভ প্রান্ত n-টাইপ ডোপিং-এর মুক্ত ইলেকট্রনগুলোকে বিকর্ষণ এর কারণে একটি ধাক্কা দিবে। যার ফলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো ডিপ্লেশন লেয়ার পার করে p-টাইপ ডোপিং-এ প্রবেশ করবে। ফলে ডিপ্লেশন লেয়ার চিকন হয়ে যাবে। আবার ব্যাটারীর পজিটিভ প্রান্ত এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলোকে আকর্ষণ করবে। এভাবে ইলেকট্রনের প্রবাহ সৃষ্টি হবে। তদ্রূপভাবে ব্যাটারীর পজিটিভ প্রান্ত হোলকে বিকর্ষণ করবে। ফলে হোল ডিপ্লেশন লেয়ার পার করে n-টাইপ ডোপিং-এ প্রবেশ করবে এবং ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্ত দ্বারা আকর্ষিত হবে। এভাবে হোলের প্রবাহ দেখা যাবে। এখন উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে চার্জের প্রবাহ হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। একে ফরওয়ার্ড বায়াস বলা হয়। কারণ-মুক্ত চার্জগুলো সামনের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাটারির ভোল্টেজ অবশ্যই ডিপ্লেশন লেয়ারের ইলেকট্রিক ফিল্ড এর চেয়ে বেশি হতে হবে। তা না হলে মুক্ত চার্জগুলো ডিপ্লেশন লেয়ার পার করতে পারবে না।
তাহলে কি বিদ্যুৎ দুই দিকে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে না?
না না! বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে যেদিকে হোল প্রবাহিত হচ্ছে।
কেন? ইলেকট্রনের দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে না কেন?
দেখো যখন ইলেকট্রন সামনের দিকে এগুচ্ছে, তখন কিন্তু পেছনের দিক পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ইলেকট্রন সামনের দিকে আগাতে আগাতে পিছনের দিকে ক্রমান্বয়ে পজিটিভ চার্জ সৃষ্টি করছে। তাহলে বলা যায় ইলেকট্রনের প্রবাহের বিপরীত দিকে পজিটিভ চার্জের প্রবাহ হচ্ছে। মূলকথা-ইলেকট্রিক্যালি একটি নেগেটিভ চার্জ বাম থেকে ডানে যাওয়া যে কথা, একটি পজিটিভ চার্জের ডান থেকে বামে যাওয়া সেই একই কথা।যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়, তখন কেউ জানত না যে ইলেকট্রনের প্রবাহের কারণেই বিদ্যুতের সৃষ্টি হয়। তখন মনে করা হতো পজিটিভ চার্জের প্রবাহই বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক। এজন্যই বলা হয়ে থাকে ইলেকট্রন প্রবাহের দিক প্রচলিত বিদ্যুৎ প্রবাহের দিকের বিপরীত। এজন্য হোল যে দিকে প্রবাহিত হয় সেই দিকটিকেই বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক বলা হয়। যদি বিদ্যুৎ আবিষ্কারের সময়ই সবাই জানতো যে ইলেকট্রন প্রবাহের কারণেই বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়,তাহলে ইলেকট্রন প্রবাহের দিককেই বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক বলা হত। বুঝলেন?
হ্যাঁ, ফুললি ক্লিয়ারড।
তাহলে একটা প্রশ্ন করি। বলেন তো মূল কারেন্ট কিসের সমান হবে?
হোল প্রবাহের কারণে তৈরি হওয়া কারেন্টের সমান হবে।
হলো না। উত্তর হচ্ছে হোল এবং ইলেকট্রনের কারণে তৈরি হওয়া কারেন্ট।
কিভাবে?
হোল এবং ইলেকট্রন বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এখন ধরুন-পাঁচটি হোল বাম থেকে ডানে এবং পাঁচটি ইলেকট্রন ডান থেকে বামে প্রবাহিত হচ্ছে। একটু আগেই বলেছি একটি ইলেকট্রনের ডান থেকে বামে যাওয়া যে কথা, একটি পজিটিভ চার্জের বাম থেকে ডানে যাওয়া একই কথা। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো দশটি পজিটিভ চার্জ বাম থেকে ডানে গেল। প্রথম পাঁচটি পজিটিভ চার্জ হচ্ছে হোলের এবং পরের পাঁচটি পজিটিভ চার্জ সৃষ্টি হয়েছে পাঁচটি ইলেকট্রনের ডান থেকে বামে যাওয়ার কারণে। তাই মোট কারেন্ট হোল এবং ইলেকট্রনের কারণে সৃষ্ট হওয়া কারেন্টের সমান হবে। আশাকরি এবার ফুললি ক্লিয়ার্ড।
হ্যাঁ।
এবার আসি যদি n-type কে ব্যাটারির পজিটিভ প্রান্তের সাথে এবং p-টাইপ কে ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্তের সাথে যোগ করা হয় তাহলে কি হবে। এক্ষেত্রে ব্যাটারীর পজিটিভ প্রান্ত মুক্ত ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করবে এবং নেগেটিভ প্রান্ত হোলকে আকর্ষণ করবে।ফলে ডিপ্লেশন লেয়ার আরো বড় হয়ে যাবে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে না। যেহেতু মুক্ত চার্জ বিপরীত দিকে পিছনের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে, তাই একে রিভার্স বায়াস বলা হয়। এখন আপনাকে একটি প্রশ্ন করি। বলেন তো ডিপ্লেশন লেয়ার বড় হবার কারন কি।
মুক্ত চার্জগুলো ব্যাটারির উভয় প্রান্তে আকর্ষিত হলে, একটি বড় অঞ্চলজুড়ে স্থির ফসফরাস এবং বোরন আয়ন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। কারণ এখন তাদের নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য কোন ইলেকট্রন বা হোল নেই। ঠিক বললাম?
একদম। ডায়োড এভাবেই কাজ করে।
আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন যে এভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য এত কাহিনী না করে সরাসরি কন্ডাক্টর ব্যবহার করলেই তো হয়?
আমি এই প্রশ্নটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। দেখেন কপার,সিলভার ইত্যাদি কন্ডাক্টরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুক্ত ইলেকট্রন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিমান কন্ডাক্টিভিটি পাওয়া যাবে। এখানে আপনার হাতে কোনো কন্ট্রোল থাকবে না। কিন্তু আপনি যদি ডোপিং বেশি করেন তাহলে কন্ডাক্টিভিটি বেশি হবে এবং কম করালে কম হবে। এর মানে হচ্ছে আপনার হাতে কন্ট্রোল আছে। মোবাইল,কম্পিউটার ইত্যাদি যন্ত্রে কারেন্টের কন্ট্রোল রাখা খুবই দরকার। আপনি বলতে পারেন যে তাপ দিলে তো কন্ডাক্টরেরও কন্ডাক্টিভিটি বাড়ে। কিন্তু এই তাপ দিলে তো আপনার মোবাইল কম্পিউটার আর বাঁচবে না। আবার যদি কন্ডাক্টিভিটি কমানো লাগে, তাহলে কি করবেন। এজন্যই সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয় এবং এত কাহিনী করা হয়।
একদম ঠিক বলেছ তো। এভাবে তো ভেবে দেখিনি। তুমি ভাই খুব ভালো বুঝাও। এত কিছু জানো কিভাবে?
এটা কে আপনি এত কিছু ভাবতেছেন! এটা এমন কিছুই না। এগুলো আমি ইন্টারের বই পড়ে আর ইউটিউবে অন্যরকম পাঠশালার সোহাগ ভাইয়ের সেমিকন্ডাক্টর& ইলেকট্রনিক্স প্লেলিস্ট দেখে শিখেছি।
ও। খুব ভালো। বিজ্ঞানের প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হলাম।
ইটস মাই প্লেজার। আপনি অনেক ধৈর্যশীল। জানার প্রতি আপনার আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ। যাই হোক আজ উঠি। অন্য একদিন ট্রানজিস্টর কি সেটা বলবোনে। ডায়োড ব্যবহার করেই ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়। এই ট্রানজিস্টর সব মোবাইল,কম্পিউটার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়। তাই বলতে পারেন ট্রানজিস্টরের অপর নাম জীবন।
হ্যাঁ, তা আর বলতে। অপেক্ষায় থাকলাম।
আচ্ছা, আসি তাহলে।
ওকে বাই।
Writer: Kaif Rahman
Tags:
Technology