হিউম্যান জেনম প্রজেক্ট


অনেক গেমস এ গেমারদের সুবিধার জন্য ম্যাপ দেয়া থাকে। কেন? যাতে করে গেমার এর বুঝতে সুবিধা হয় তার মিশনটা কমপ্লিট করার জন্য কোথায় কীভাবে এপ্রোচ করতে হবে।
আমাদের কোষের মধ্যে রয়েছে ক্রোমোসোম আর তাতে আছে DNA। কিছু ডি,এন,এ তে রয়েছে জিন। জিন হলো DNA এর একটা অংশ যা একটা জীবের গঠন কীরূপ হবে তা নির্ধারণ করে এবং পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্য সন্তানের দেহে নিয়ে যায়।
তো গেমারদের মতো যদি আমাদের কাছে জিন এর একটা ম্যাপ থাকত, তাহলে কেমন হত? ওয়েল, তেমন কিছুই হত না, খালি ম্যাপটা আমাদের মাথার উপ্রে দিয়ে যাইত !!!
কারণ আমরা কেবল ভার্চুয়াল জগতেরই গেমার। এইক্ষেত্রে গেমার হলেন জিনবিজ্ঞানী ও মাইক্রোবায়োলজিস্টরা। তারা একইসাথে হ্যাকারও!!! কীভাবে?
১৯১১ সালের ঘটনা। Alfred Sturtevant নামক এক বিজ্ঞানী Drosophilla নামক এক প্রাণীর জিন ম্যাপ বের করে ফেললেন !!! সেটা আবার কী?

জিন ম্যাপ বলতে বুঝায় জিনগুলা কোন কোন ক্রোমোসোমের ভিতরের DNA এর কোথায় আছে তা খুঁজে বের করা। অনেকটা গেমের কই কই মিশনের কাজ আছে তা জেনে যাওয়া।
তো বিজ্ঞানীরা যদি same ভাবে মানুষের জিন ম্যাপ বের করে ফেলতে পারে, তাহলে তারা জেনে যাবে তাদের “মিশন” এর লোকেশন কোথায়। তাদের মিশনগুলা কী ছিল একটু জেনে নেই।

১। এর মাধ্যমে যেসব ভাইরাস আমাদের আক্রমণ করে তাদের জিন কীরকম তা বুঝা যাবে। মানে আমাদের ক্ষতি করার জন্য তাদের যে কর্মপরিকল্পনা, তা আমরা জেনে যাব।

২। ক্যান্সার এর সময়ে দেহের জিন এ যে আকস্মিক পরিবর্তনগুলো (Mutation) হয়, সেগুলো জানা যাবে এবং ক্যান্সারকে শায়েস্তা করতে আরও ভাল ব্যবস্থা নেয়া যাবে। 

৩। আরও যেসব জিনগত রোগ যেমন: বংশগত ডায়াবেটিস, হিমোফিলিয়া এসব ব্যাপারে আরও ভাল ধারণা পাওয়া যাবে এবং এদের শায়েস্তা করার পথে এগুনো যাবে।

৪। এছাড়াও ফরেনসিক মেডিসিন, নৃতত্ত্ববিদ্যা,
 বিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড়সড় অগ্রগতি হবে।
কিন্তু এসব করতে গেলে খালি জিন কোথায় আছে এটা জানলেই হবে না! মিশনগুলো বেশ কঠিন এবং এ কাজে আমাদের Cheat code প্রয়োজন। 

জিন তথা DNA হলো De-oxy riboNucleic Acid. এটা মানে কী বুঝায়? কয়েকটা সমীকরণ দেখি, যেটা থেকে DNA পাওয়া যাবে:

৫ কার্বন ওয়ালা ‘রাইবোজ’ নামক সুগার যেটার ২ নং কার্বনে অক্সিজেন নাই = ডিঅক্সিরাইবোজ
ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার + নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষার = নিউক্লিওসাইড
নিউক্লিওসাইড + ফসফেট গ্রুপ = নিউক্লিওটাইড
অনেকগুলা নিউক্লিওটাইড = পলিনিউক্লিওটাইড = নিউক্লিক এসিড
নিউক্লিক এসিড + নিউক্লিক এসিড = DNA
মানুষের একটা ক্রোমোসোমে ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) এরও বেশি নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষার থাকে। এগুলাই ২টা নিউক্লিক এসিডকে জোড়া লাগিয়ে DNA তৈরি করে। ক্ষারগুলো হলো:
১। Adenine (A)
২। Guanine (G)
৩। Thymine (T)
৪। Cytosine (C)
এই বিলিয়ন বিলিয়ন ক্ষারগুলো কীভাবে থাকে? ATTCGATC ………. এরকম করে ৬০০ কোটির উপরে।
এটাই হলো সেই কাঙ্ক্ষিত “Cheat code” 
যেটাকে বলে “Base sequence” ।

তো মানুষের এই Gene এর ম্যাপ বের করা আর Base sequence বের করা, এটা ১৯১১ সালে চিন্তাও করা যায় নি। পরে ১৯৫৩ সালে Watson & Crick DNA এর structure আবিষ্কার করে ১৯৬২ সালে নোবেল পেয়ে গেলেন। এরপরে Friedrich Sanger DNA এর এই Base sequence করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেললেন এবং ১৯৮০ সালে তার জীবনে দ্বিতীয়বারের মত নোবেল পেয়ে গেলেন। এরপরই বিজ্ঞানীরা এই map এবং cheat code বের করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। শুরু হয় “Human Genome Project” নামে Billion Dollar এর Project।

১৯৮৩ সাল। ক্যারি মুলিস নামের এক অখ্যাত ব্যক্তি ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্র্যান্সিসকোতে Cetus Corporation এ DNA chemist হিসেবে কাজ করতেন। তার কাজ ছিল রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে RNA থেকে DNA এর ছোট ছোট টুকরা তৈরি করা, যেগুলোয় মাত্র ২০ জোড়া base থাকত। এগুলোকে বলে “primer”।
এক শুক্রবারে তিনি গার্লফ্রেন্ডসহ ঘুরতে যান। তিনি সবসময়ে ভাবতেন কী করে নতুন কিছু আবিষ্কার করা যায়। হঠাৎ করেই তার মাথায় একটা অভিনব আইডিয়া চলে আসল!!! তিনি তাড়াতাড়ি করে ল্যাবে ফেরত আসেন এবং তার আইডিয়া সবাইকে জানান। তারপরে তার আইডিয়া মত কাজ শুরু করেন। এভাবেই প্রথম PCR machine তৈরি হলো। বিজ্ঞানের প্রায় সব আবিষ্কারই অনেক বিজ্ঞানীর অনেকদিনের চিন্তা ও শ্রমের ফসল। কিন্তু এই গুরত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি মুলিস হঠাৎ করেই কেমনে কেমনে করে ফেললেন তা তিনি নিজেও জানেন না। পরে তিনি ১৯৯৩ সালে নোবেল পান, তার প্যাটেন্টটি ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হয়।
প্রশ্ন হলো PCR machine আবার কী জিনিস?

মানুষের DNA এর মত এত জটিল DNA এর base sequence করাটা চাট্টিখানি কথা না। এর জন্য প্রথম দরকারি মেশিন হলো একটা ফটোকপি মেশিন! তবে এটা দিয়ে লেখা নয়, DNA copy করা হয়।
এই মেশিন এর নাম PCR machine। প্রশ্ন হলো এই PCR দিয়ে কী বুঝায় । PCR = Polymerase Chain Reaction। আমাদের দেহেও কিন্তু DNA থেকে DNA copy হয়, সেখানে যেই enzyme কাজ করে, তার নাম DNA polymerase. DNA polymerase enzyme ব্যবহার করা হয় বলে মেশিনটার এরকম নাম।
এর ভিতরে chain reaction হয়, ফলে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই মিলিয়ন মিলিয়ন DNA copy তৈরি হয়ে যায়।
তবে এ কাজে সাধারণ polymerase না, Taqpol নামের এক ধরণের polymerase ব্যবহার করা হয়। Thermus aquaticus নামক অণুজীব থেকে এটা সংগ্রহ করা হয়।
এ কাজে তাপমাত্রা বারবার পরিবর্তন করা হয় Thermocycler দিয়ে।
প্রথমে টিউবের মধ্যে DNA, primer, Taqpol নিয়ে PCR এ ঢুকানো হয়। Thermocycler এর মাধ্যমে তাপমাত্রা ৯৪-৯৬ ডিগ্রি সে. করা হয়। ফলে একটা DNA double helix ভেঙ্গে আলাদা হয়ে দুইটা single helix DNA হয়ে যায়। তারপর তাপমাত্রা ৫৫-৬০ এর মধ্যে রাখা হয়। ফলে primer, single helix দুটার যে অংশের সাথে complementary, সে অংশে লেগে যায়। তারপরে তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রি সে. করা হয়। এ ধাপে taqpol এর প্রভাবে পিচ্চি primer টা বড় হয়ে single helix এর সমান হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ একেকটা single helix কিন্তু double helix হয়ে গেল।
এভাবে একটা DNA থেকে দুইটা পেলাম। তারপরে আবার তাপমাত্রা ৯৪-৯৬ ডিগ্রি সে. করা হয় ... এই চক্র চলতে থাকে। দুইটা থেকে চারটা হয় ... চারটা থেকে আটটা ... পুরো প্রসেসটাই computer এর সাহায্যে করা হয়। এভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন DNA এর কপি তৈরি হয়ে যায় ঘন্টাখানেকের মধ্যেই !!!


Writer: Ahmad Salman Sirajee

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম