নিউক্লিয়ার ফিশন ও পজিট্রন হাইপোথিসিস


নিউক্লিয়ার রিয়েকশন বলতেই আমাদের মেইন ফোকাসটা রাখতে হবে নিউক্লিয়াসের উপর। এধরনের রিয়েকশনে আমরা ভাড়ী নিউক্লিয়াসকে ভাঙতেও পারি, আবার ভাড়ী নিউক্লিয়াস বানাতেও পারি।
ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে যখন টুকরো টুকরো হালকা নিউক্লিয়াসে রুপান্তরিত হয় তখন তাকে আমরা বলি নিউক্লিয়ার ফিশন, আর ঠিক বিপরীতভাবে হালকা নিউক্লিয়াস মিলে যখন একটি করে বড় নিউক্লিয়াস তৈরী করে, তাকে বলি নিউক্লিয়ার ফিউশন। যদিও আমার লিখার কথা নিউক্লিয়ার ফিশন নিয়ে, কিন্তু ফিশনের কথা বলতে গেলেই দেখা যায় ফিউশনের কথা উঠে আসে, Atom bomb এর কথা বলতে গেলে Hydrogen Bomb এর কথা চলে আসে।
তাই ফিশন বিক্রিয়ার সাথে তাদের লিংকেজটা বুঝানোর জন্য আমি মাঝে মাঝে তাদের নিয়েও একটু আধটু আলোচনা করবো।

যায় হোক! ফিশন ও ফিউশন দুটো প্রকৃিয়াতেই দেখা যায় বিপুল পরিমাণের এনার্জি উৎপন্ন হচ্ছে। সুতরাং, একটি প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন দুটি ভিন্ন বিক্রিয়াতেই প্রচুর পরিমাণে এনার্জি উৎপন্ন হচ্ছে??
আচ্ছা, তার আগে বলুন, আপনি Mass defect ও Binding Energy সম্পর্কে জানুন তো?-- নাহ্! না জানলেও কোন সমস্যা নেই। আরটিকেলটি লিখছিই তো আপনাদের
জানানোর জন্য।

ধরুন, আপনার কাছে একটি Mass spectrometer ডিভাইস আছে, যার মাধ্যমে আপনি নিউক্লিয়াসের ভর মাপবেন। মাপার পর দেখলেন, নিউক্লিয়াসটির ভর ৩৬কেজি (যাস্ট ধরলাম কিন্তু)
আচ্ছা, নিউক্লিয়াসে থাকে কি? প্রোটন ও নিউট্রন। হ্যাঁ, আপনি সেই নিউক্লিয়াসটতে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলেন সেখানে ২ টি নিউট্রন ও ২ টি প্রোটন রয়েছে। এদের ভর আবার আলাদা করে মাপলেন। দেখলেন তারা প্রত্যেকের ভর ১০ কেজি করে, সুতরাং থিওরিটিকেললি মোট ভর হবার কথা ৪০কেজি। কিন্তু প্র্যাকটিকেললি দেখলেন নিউক্লিয়াসের ভর ৩৬ কেজি, কিন্তু কেন? বাকি ৪ কেজি কৈ?
এই যে ৪ কেজি কম পরে গেল একে বলে Mass defect বা ভরত্রুটি।

এবার আসি Binding Energy তে।
ধরুন-- আপনি একটি নতুন শহরে পড়তে গেলেন, ওখানে গিয়ে তো আপনাকে আগে থাকার জন্য একটি বাসা খুঁজতে হবে। বাসা পেলেন কিন্তু ওটার ভাড়া ১৫০০ টাকা। কিন্তু আপনি দিতে পারবেন ১০০০ টাকা। সুতরাং সেই বাসায় আপনার থাকা হচ্ছে না। একটু পর আপনার আরেক বন্ধু সেই বাসাটি দেখলো, তারও আপনার মত সমস্যা। কোইনসিডেন্টলি আরো একজন সেই বাসাটি দেখলো তারও আপনাদের মত সমস্যা। তিন জন তিনজনের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন ৩ জন একসাথে একবাসায় থাকবেন, যেটার ভাড়া হবে ৩০০০ টাকা, যেন প্রত্যেকে ১০০০ করে পেই করতে পারুন, ওরকম একটি বাসা পেয়েও গেলেন। কিছুদিন একসাথে থাকার পর দেখা গেল আপনাদের মাঝে খুব ঝগড়া হচ্ছে। কেউ কেউকে সহ্য করতে পারছেন না। হঠাৎ একদিন রাগ করে ৩ জনই বাসা ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন। আবার যখন সেই সিংগেল বাসাগুলো দেখতে গেলেন, ওখানে দরজায় বড় বড় করে লিখা আছে "ভাড়া -১৫০০ টাকা।" তখন তিনজনেরই মনে পরে গেল, আমাদের তো ৫০০ টাকা কম আছে। সো, কিছু করার নেই, তিনজনকেই আবার প্রচন্ড রাগ নিয়ে আগের বাসায় ফিরে আসতে হল। একসাথে থাকতে চায়ছেন না, তবুও নিজের ইচ্ছে বিরুদ্ধে কি যেন আপনাদের একসাথে থাকতে ফোর্স করছে। সেই কি যেন'টা কি? -- ঐ ৫০০ টাকায় তো? হ্যাঁ,সেই কম পরে যাওয়া ৫০০ টাকা কোথাও থেকে পেয়ে গেলেই আপনি তাদের ছেড়ে এক্ষুণি চলে যাবেন। মুক্ত হয়ে যাবেন। অর্থাৎ এই ৫০০ টাকায় এখানে বাইন্ডিং এনার্জি।

পরমানুর নিউক্লিয়াসেও ব্যাপারটি তেমন।
অনেকগুলো প্রোটন একসাথে নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে। একই চার্জ বিশিষ্ট হওয়ায় তাদের মাঝে অনেক অনেক বিকর্ষণ কাজ করলেও বাইন্ডিং এনার্জি তাদের একসাথে জোটবদ্ধ করে রাখে। আর এই বাইন্ডিং এনার্জি আসে ভর ত্রুটি বা Mass defect থেকে। যেই ৪ কেজি পরিমান ভর কম পরে গেছিলো সেই ৪ কেজি ভর এনার্জিতে রুপান্তরিত হয়ে গেছে, আইনস্টাইনের ভর শক্তি সমীকরণ অনুযায়ী।যার কিছু অংশ ব্যবহৃত হয় বাইন্ডিং এনার্জি হিসেবে, আর কিছু অংশ রেডিয়েশন হিসেবে বের হয়ে আসে। যদি আপনি পরমানুটির নিউক্লিয়াসে সেই হারিয়ে যাওয়া এনার্জি দিতে পারুন দেখবেন প্রতিটা নিউট্রন প্রোটন মুক্ত হয়ে ফ্রি স্টেটে চলে আসবে। আর সেই প্রতিটা মুক্ত কণিকার আলাদা আলাদা ভর হবে ১০ কেজি। আবার এক করলে দেখা যাবে মোট ভর ৩৬ কেজি, আলাদা করলে প্রত্যেকের ভর ১০ কেজি।
এভাবে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শক্তি রিলিজ হয়।
যদিও আমার মাথায় একটি জটিল প্রশ্ন ঘুরছে, ওটা আপাতত তোলা থাক।

কেন নিউক্লিয়ার ফিশনে নিউক্লিয়াসকে ভাঙার জন্য নিউট্রন পারটিকেল ব্যবহার করা হয়? কেন নিউট্রনের পরিবর্তে প্রোটন বা ইলেক্ট্রন ব্যবহৃত হয় না?

প্রথমত, আমরা জানি, নিউট্রন নিউট্রাল অন্য দিকে প্রোটন +ve চার্জ বিশিষ্ট পারটিকেল। ফলে নিউক্লিয়াসও +ve চার্জ বিশিষ্ট।
সো, এটা খুব স্বাভাবিক, আপনি ভাঙতে চায়ছেন নিউক্লিয়াসকে, এদিকে পাঠাতে চায়ছেন প্রোটন, তারা তো তাদের বিকর্ষণ করবেই।
অন্যদিকে আবার, আপনি e- কেও পাঠাতে পারছেন না, কারণ e- এর ভর প্রোটনের ১৮৩৬ ভাগের 1 ভাগ।
এত হালকা পারটিকেল দিয়ে আপনি ইউরেনিয়ামের মত ভাড়ী নিউক্লিয়াসকে কিভাবে ভাঙবেন!!
শেষ পর্যন্ত, এই বিপত্তি থেকে মুক্তি দিলো সাধাসিধে নিউট্রন। তবে এই সাধাসিধে পারটিকেলটি কতটা ভয়ংকর আর ধ্বংসাত্মক হতে পারে ওটা আপনারা পরে দেখবেন।
যাই হোক! নিউট্রন শক্তি উৎপাদনের জন্য ভালো প্রজেক্টাল পারটিকেল। তার নিউট্রালিটির কারণে তাকে নিউক্লিয়াসের কোন বিকর্ষণ বলকে ফেইস করতে হয়না, অন্যদিকে এটি যথেষ্ট ভাড়ী পারটিকেলও, তাই ফিশন বিক্রিয়ায় নিউট্রনই সবদিক থেকে ভালো।
ওকে, ধরে নিলাম, এবার আমরা একটি নিউট্রনকে ভাড়ী নিউক্লিয়াসের কাছে পাঠালাম। কিন্তু তার গতি স্লো হবে নাকি ফাস্ট হবে?
আপনার হয়তো মনে হচ্ছে, ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস যেহেতু যথেষ্ট ভাড়ী তাই ফাস্ট মুভিং নিউট্রনই লাগবে। নিউট্রন ঠাস করে যাবে আর ইউরেনিয়ামকে ভেঙে দিয়ে চলে যাবে, এইতো?
ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়। যদি আমরা ফাস্ট মুভিং নিউট্রন পাঠায় তা ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসকে পানচার করে দিয়ে চলে যাবে,কিন্তু আমাদের প্রয়োজন ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াসকে ভাঙা যেন আরো বেশি এনার্জি উৎপাদন করতে পারি। তাই পাঠাতে হবে স্লো মুভিং নিউট্রন।
কি?এন্টেনার উপর দিয়ে গেল??
ওকে, একটা উদাহরণ দেই।
যেমন ধরুন-- আপনার কাছে একটি ক্যারাম বোর্ড আছে। বোর্ডটির মিডেল পয়েন্টে আপনি কয়েনগুলোকে একটার উপর একটা রেখে একটি সোজা স্তম্ভ তৈরী করলেন। এরপর স্ট্রাইকারকে খুব দ্রুত স্পিডে পাঠালেন সেটাতে আঘাত করতে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, স্ট্রাইকারটা নিচের কয়েনটাকে নিয়ে বের হয়ে যায়, কিন্তু উপরের স্ট্রাকচারটি একদম নিচে বরাবর নেমে আসে।
কিন্তু আপনি স্ট্রাইকারটিকে যদি স্লো মোশনে পাঠান, তা স্তম্ভের স্ট্রাকচারটিকে একদম ভেঙে দিয়ে চলে যায়।
একই রকমভাবে, যখন আমরা স্লো মুভিং N পাঠায় তা তা ইউরেনিয়াম (২৩৫) এর নিউক্লিয়াসে গিয়ে সামান্য সময়ের জন্য অবস্থান করে তখন ভর সংখ্যা হয়ে দাড়ায় ২৩৬।
একটা বিষয় দেখুন, ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস এমনিতেই যথেষ্ট ভাড়ী, নিজে ঠিক মত নিজের লোড নিতে পারেনা, এর উপর গিয়ে যখন আরেকটি একস্ট্রা নিউট্রন কিছু সময়ের জন্য সেখানে অবস্থান করে নিউক্লিয়াসটি একদম ওভারলোডেড হয়ে যায়। এই লোডটা নিতে না পেরে সেই মুহুর্তে সে টুকরো টুকরো ছোট নিউক্লিয়াস হয়ে ভেঙে পরে, আর শুরু হয়ে যায় ফিশন বিক্রিয়া।
₀n¹ + ₉₂U²³⁵→₉₂U²³⁶→₃₆Kr⁹⁴ + ₅₆Ba¹³⁹ + 3₀n¹ + Energy
এই বিক্রিয়ায় প্রথম ধাপে ১টি নিউট্রন U(235) এর সাথে যুক্ত হয়ে U(236) এ রুপান্তরিত হল। তারপর তা ভেঙে ক্রিপটন (Kr), বেরিয়াম (Ba), ৩টি নিউট্রন ও সাথে করে রেডিয়েশনের ফর্মে হিউজ এনার্জি উৎপন্ন করে।

এখানে যেই ৩ টি N বের হয় সেগুলোও কিন্তু প্রচন্ড এনার্জি নিয়ে বের হয়ে আসে। আর হবে নাই বা কেন? তারা বের হয় মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ফোর্সের সাথে টেক্কা দিয়ে। হ্যাঁ, স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্সের কথায় বলছি, যেটা উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স, ইলেকট্রোমেগনেটিক ফোর্স ও গ্রেভিটেশনাল ফোর্স সবগুলোর চেয়ে শক্তিশালী। আর সেই স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স পরমানুর নিউক্লিয়াসে বিদ্যমান থেকে প্রোটন আর প্রোটনের মাঝে প্রচন্ড বিকর্ষণ শক্তি থাকা শর্তেও তাদের জোর করে একজায়গায় এনে আবদ্ধ করে রাখে। সুতরাং, সেই ভয়ংকর ফোর্সকে উপেক্ষা করে যেই নিউট্রনগুলো বের হয়, সেগুলোও ভয়ংকর হবে, স্বাভাবিক!
আর সেই ভয়ংকর ৩টি নিউট্রন যখন প্রচন্ড গতি নিয়ে আসে সেগুলো গিয়ে আরো ৩ টি ইউরেনিয়ামকে স্ট্রাইক করে, প্রতিটা ইউরেনিয়াম থেকে আরো ৩টি ৩টি করে N উৎপন্ন হয়, সেগুলো গিয়ে আরো আরো আরো ইউরেনিয়ামকে ভাঙতে থাকে, এভাবে জ্বালানী যতক্ষণ থাকে বিক্রিয়াটি চেইন প্রক্রিয়ায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে চলতে থাকে। তবে, একটি বিষয়--- অনেকেই ভাবে ফিশন একটি স্বতঃস্ফুর্ত বিক্রিয়া। এটি আসলে স্বতঃস্ফুর্ত নয় বরং একে স্বতঃস্ফুর্ত বানাতে হয়। আমরা যখন প্রথমে স্লো মুভিং নিউট্রনটি পাঠায় ইউরেনিয়ামকে ভাঙার জন্য তখনই বিক্রিয়াটা একটিভেট হয়ে যায়, আর জ্বালানী যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ চেইন প্রক্রিয়ায় চলতে থাকে। আরো একটি বিষয়---- এই চেইন প্রক্রিয়ায় যে সব সময় ক্রিপটন, বেরিয়াম ও ৩ টি N উৎপন্ন হবে এমন নয়।
কোন কোন ফিশন বিক্রিয়ায় Sb(১৩৩) ও Nb (99) সাথে ৪ টি নিউট্রন, আবার কোনটিতে Xe (140) ও Sr (94) সাথে ২ টি নিউট্রন বের হয়ে আসে, তবে Kr(94) ও Ba(134) এর রিয়েকশনটা বেশি দেখা যায় বলে এটাকে উদাহরণ হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হয়।
আচ্ছা, আমরা আবার পয়েন্টে ফিরে আসি।
সেই বের হয়ে আসা নিউট্রনগুলোকে যখন আমরা কন্ট্রোল করতে পারিনা তখন সেই ফিশন বিক্রিয়া রুপ নেয় Atom Bomb এর। কিন্তু আপনি যদি সেই নিউট্রনগুলোকে কন্ট্রোল করতে পারুন তাদের কাজে লাগিয়ে তবে আপনি আপনার কাছে জমা করতে পারুন প্রচুর এনার্জি।
যেমন-- একটি N একটি ইউরেনিয়ামকে ভেঙে ৩টি N বের করলো সেখান থেকে আপনি 2
২ টিকে রেখে দিলেন নিজের কাছে আর ১ টিকে পাঠালেন স্ট্রাইক করতে, সেখান থেকে আবার ২ টিকে নিজের কাছে রেখে অন্যটিকে স্ট্রাইক করতে পাঠালেন। প্রতিবারে যদি ২ টি করে করে নিউট্রন কালেক্ট করে ফেলতে পারুন তাহলে বিক্রিয়াটিও নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের ভেতর কন্ট্রোলে থাকবে আর ঐ জমা করা শক্তিগুলোকে power Plant এ কাজে প্রচুর ইলেক্ট্রিসিটি প্রোডিউস করতে পারুন।
ফিশন নিয়ে তো অনেক কথা বললাম, এবার তার বড় ভাই ফিউশন নিয়েও একটু কথা বলি। না, ভাববেন না। আমি মোটেইও ডিটেইল ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না।
আগেই বলেছিলাম, ফিউশনের ক্ষেত্রে দুটি ছোট ছোট নিউক্লিয়াস মিলে একটি বড় নিউক্লিয়াস তৈরী করে।
কিন্তু সেই নিউক্লিয়াসের পজিটিব চার্জগুলো একসাথে থাকতে গিয়ে পরষ্পরকে প্রচন্ড মাত্রায় বিকর্ষণ করে। তাই ফিউশন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে হয় না। এর জন্য প্রয়োজন 10^7 K তাপমাত্রা। একটি Atom Bomb কে ব্লাস্ট করার পর এই ধরনের তাপমাত্রা পাওয়া যায়। এত অত্যধিক তাপমাত্রা পৃথিবীতে পাওয়া যায় না বলে এখনো আমরা এখনো Power plant এ ফিউশন বিক্রিয়াকে কাজে লাগাতে পারছিনা। তবে আপনি যদি নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে Hydrogen bomb কে পৃথিবীতে ব্লাস্ট করতে চান, আগে নিউক্লিয়ার ফিশনের মাধ্যমে একটি Atom Bomb ব্লাস্ট করুন , তখন 10^7K তাপমাত্রা উৎপন্ন হবে, তার উপর এবার Hydrogen bomb কে নিক্ষেপ করুন, এটিও ব্লাস্ট হতে থাকবে.... ওহহহ! গড! কল্পনাা করুন, কি ভয়ানক ব্যাপার! মুহুর্তের মধ্যেই এশিয়া মহাদেশকে উড়িয়ে দেয়া যাবে।
যাই হোক! এই হলো Atom bomb আর H-bomb এর ইন্টারকানেকশন।

পজিট্রন হাইপোথিসিস

মহাবিশ্বে এমন অনেক ল আছে যাদের আমরা চেঞ্জ করতে পারিনা। যেমন- Conservation of mass, Conservation of Energy, এগুলো এমন কোয়ান্টিটি যে প্রকৃতি দিয়েছে, এগুলোকে আমরা সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারবো না, শুধু রুপ পরিবর্তন করতে পারবো। ঠিক একইভাবে প্রকৃতিতে যত +ve ও -ve চার্জ রয়েছে তারাও "Conservation of Charge" নীতি মেনে চলে যেন মহাবিশ্বের Net charge =0 হয়।
তো টেকনোলজি আপডেট হবার পর বিজ্ঞানীরা Atom bomb বানালো।
ম্যাংগো পাবলিকরা তখন প্রশ্ন তুললো, Atom Bomb এ যে এনার্জি বের হয়ে আসে ওটা কোথা থেকে কিভাবে বের হয়ে আসে?
তখন সামনে এসে দাড়াল-- মহামতি
আইনস্টাইন সাহেব।
উনি বললেন, আমরা ভরকে শক্তিতে, শক্তিকে ভরে রুপান্তর করতে পারি। আমরা যদি m ভরের পদার্থকে শক্তিতে রুপান্তর করি সেখান থেকে mc^2 পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। অর্থাৎ যখন Atom bomb ব্লাস্ট হয় তখন ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে ছোট পারটিকেল ইলেক্ট্রন ডেস্ট্রয় হয়ে যায়। আর ইলেক্ট্রন হলো একটি অতিক্ষুদ্র বস্তু কণা যার দ্বারা মহাবিশ্বের সকল বস্তু গঠিত হয়। আর ইলেক্ট্রন যখন ডেস্ট্রয় হয়ে যায় তা ইউরেনিয়াম থেকে এনার্জি হয়ে বের আসে ব্লাস্ট বা রেডিয়েশন রুপে।
কিন্তু ইলেক্ট্রিশিয়ানদের তো এবার চিন্তা শুরু হয়ে গেল!!
তারা বললো এটি কি করে হতে পারে? এটা যদি সঠিক হয় তাহলে তো মহাবিশ্ব থেকে কিছু e- বা -ve চার্জ কমে গেল, ফলে সেই জায়গাটা +ve চার্জ দখল করে নিল, ফলে +veচার্জ বেড়ে গেলল, কিন্তু থাকার কথা তো +Ve ও -Ve চার্জ সমান সমান, যেন Net Charge 0 হয়। তাহলে কি Conservation of charge নীতিটি ভুল? এদিকে আবার এই নীতিটি একই সাথে এটিও বলে--- চার্জ সৃষ্টি বা ধ্বংস হতে পারেনা। কিন্তু এদিকে e- বলছে সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, Atom bomb চালিয়ে প্রমাণ করে দিচ্ছে, আর আপনিও এক্সপ্লেইন করছেন, Atom bomb এ e- ডেস্ট্রয় হয়েছে, কিন্তু আমাদের চার্জ গেল কৈ?
চার্জ তো সেখানে যাবে যেখানে e- যাবে তাহলে কি চার্জও ধ্বংস হয়ে গেল আর Conservation law ফেইল?
তখন আসলো নতুন একটি হাইপোথেটিকেল সমাধান। দেখুন, যখন আমরা কোন সমস্যায় পরি তখন ওটার সমাধান দুরে গিয়ে খুঁজি, কিন্তু কখনো কখনো সমাধান সমস্যার ভেতরই রয়ে যায়।
তখন সায়েন্টিস্টরা বললো, আমাদের জ্ঞান এখনো অসম্পুর্ণ। প্রকৃতিতে আরো একধরনের পারটিকেল আছে যার ব্যাপারে আমরা জানিনা, তারা এই হাইপোথেটিকেল পারটিকেলের নাম রাখলো Positron যেটা e- এর ই স্বত্তা, শুধু বিপরীত চার্জের, একে e+ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যখন Atom bomb ব্লাস্ট হয় তখন রেডিওএকটিব পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে e- ও e+ বের হয়, তাদের মধ্যে এট্রাকটিব ফোর্স প্রবলভাবে কাজ করার জন্য প্রচন্ড গতিতে তারা একে অপরের সাথে মিলিত হয়। আর শুরু হয় Annihilation বা বিনাশ। ফলে ভরযুক্ত পারটিকেলরা ধ্বংস হয়ে বিকিরণ বা রেডিয়েশনের রুপে এনার্জি হিসেবে বের হয়ে আসে। আর আইনস্টাইনের E=mc^2 সুত্রও বেঁচে গেল।
যায় হোক! আমরা তো চার্জ নিয়ে কথা বলছিলাম। আচ্ছা, রেডিয়েশনে থাকে কি? ফোটন কণা।
তার চার্জ কত?
0।
অর্থাৎ +e এর চার্জ +1, -e এর চার্জ -1
সুতরাং +1-1=0, ফোটনের চার্জও 0। মিলে গেল। অর্থাৎ মহাবিশ্ব থেকে +ve ও -ve চার্জ সমান ভাবে কমে গেল আর মহাবিশ্বের Net charge 0 রইলো। এই যাত্রায় Conservation law ও বেঁচে গেল।
আচ্ছা,আমরা যেমন চার্জকে এনার্জিতে পাল্টে দিলাম, এনার্জিকেও কি চার্জে পাল্টে দিতে পারি? হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা এটিও প্রমাণ করে দেখালেন।
যখন গামা রে বা ফোটন কণা কোন ভাড়ী metal (যেমন- প্লুটোনিয়াম) এর উপর গিয়ে পরে তখন সেটা শোষিত হয়ে যায়। তাহলে কোথায় গেল এনার্জি? তখন আইনস্টাইনের সুত্র বলে-- এনার্জি ভরে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। কিন্তু কেমন ভর??
তখন ইলেক্ট্রিশিয়ানরা বলে ওঠে-- ভাইয়া, এখানে একটি নয়, এই এনার্জি থেকে দুটি পারটিকেল তৈরী হবে। একটি ইলেক্ট্রন, অন্যটি পজিট্রন। যাতে মহাবিশ্বের নেট চার্জ 0 থাকে। আর এই এক্সপেরিমেন্টকে বলে Pair Production.
এখন বুঝতে পারলেন, পজিট্রনের ব্যাপারে আমরা কিভাবে জানলাম? সায়েন্সের জগতে এটিই প্রথম এন্টিপারটিকেল যার খোঁজ আমরা সবার আগে পেয়েছি। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য এন্টিপারটিকেলরা আবিষ্কৃত হলো।

Writer: Arpita Arpi Das
Member, Science Across Vision

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম