পরিপাক>রেচন





তো আমরা যখন কোনো কিছু খাই সেটা আমাদের কোষের মধ্যে প্রবেশের আগে কতগুলা ধাপ পেরিয়ে যায়।
প্রথমত খাবার খেলেন সেটা মুখগহবর, অন্ননালি হয়ে পাকস্থলিতে যায়,তারপর ক্ষুদ্রান্ত বৃহদান্ত হয়ে রেক্টাম।
তো এই রাস্তায় যাবার সময় আমরা যেসব খাবার খাই তাদের মধ্যকার খাদ্য উপাদানের প্রচুর শত্রু রয়েছে। খুব পাওয়ারফুল শত্রু।
তারা আবাার অন্যদিকে আমাদের বন্ধু। তারা না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কোনো শক্তিই উৎপাদন হতো না।
পাকস্থলিতে কি ঘটে?
-->HCl এসিড খাদ্যের মধ্যে কোনো জীবাণু থাকলে তাকে খতম করে দেয়।
-->HCl নিস্ক্রিয় পেপ্সিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে (এক ধরণের এনজাইম) পরিণত করে।
।।
পেপসিনরে ঘুম দিয়া উঠালেন ও কি করবে?
ওর কাজ ভাঙচুর করা।
আপনি দুপুরে মাংস দিয়া ভাত খাইছেন ।
মাংসে ছিল প্রোটিন। প্রোটিন, পেপসিনের শত্রু তাই দেল এককালে ভাইঙ্গা দেল। পেপসিনের এলাকা,পাও্যার বেশি তাই এক লাছা দিয়া ছাইড়া দেল।
প্রোটিন বা আমিষরে পলিপেপটাইড বানাইয়া দিল।
আর বাকি শর্করা স্নেহ যার যার মতো রয়ে গেল। পাকস্থলিতে এদের কোনো শত্রু নাই।
আর অন্যদিকে ভুমিকম্প তো চলতেই আছে। মানে পাকস্থলি একবার সংকোচিত হয় আরেকবার প্রসারিত হয়। যা খাইছেন সব ভর্তা হইয়া গেল, পুরা স্যুপ!

।।
প্রথম ঘরেই জিওগ্রাফি পাল্টাইয়া গেছে।এখন পরের ঘরে যাবে।
কপাটিকা নামক দরজা দিয়া ঢুকল এটা আবার ম্যাজিক দরজা। ঢুকেছেন তো শেষ
আর বের হইতে পারলেন না।
তো ঐ স্যুপ পরের রুম মানে ক্ষুদ্রান্তে ঢুকল।
এখানে প্রতিকূল পরিবেশ!
চারদিক দিয়া আক্রমণ শুরু হবে।
এখানে এখন একটু খেলাধুলা হবে।

।।
এই ঘর আবার তিন রুমে বিভক্ত।
ডিওডেনাম ,জেজুনাম, ইলিয়াম।
এখানে বড় বড় খেলোয়াররা আসবেন।
এদের খেলাধুলা শুরু করার জন্য মাঠ ঠিক করা লাগবে না? গ্রাউন্ডস্ম্যান একটু পাশে থাকেন। আর ব্যাটস্ম্যানরা ডাগআউটে।
ডিওডেনামের সাথে একটা রাস্তা (নালি) যুক্ত আছে। যেটা কিছুদুর যাবার পর দুইভাগে ভাগ হয়ে দুই গ্রাউন্ডস্ম্যানের বা
একটা যায় যকৃত ( The biggest gland of Human body and one of the most important ones) এর মধ্যে। এখান থেকে গ্রাউন্ডস্ম্যানরা যান।
আরেকটা লাইন যায় ড্রেসিং রুমে ওই লাইন (নালি) দিয়ে খেলোয়াররা মাঢে খেলতে নামেন। প্রতিপক্ষ এসে পড়েছে।

।।
যকৃত চারটি অসম্পূর্ণ ঘরে (ভাগে) বিভক্ত। প্রত্যেকটি ভাগে আবার মৌচাকের মতো লোবিউল (কোষ) থাকে। সেখানেই গ্রাউন্ডস্ম্যান রেডি (তৈরি) হন।
এরা হলো পিত্তরস। মাঠে গোল দেতে সাহায্য করবে।
এই পিত্তরস এর জন্য স্পেশাল থাকার জায়গা আছে । পিত্তথলি। এখান থেকে তারা মাঠে যান।
-->লোবিউল কোষে পিত্তরস তৈরি হয়
-->পিত্তরস একটি নালি দিয়ে পিত্তথলিতে এসে জমা হয়।
-->পিত্তরসের বর্ণ গাঢ় সবুজ।
-->এটি তিক্ত স্বাদের।
-->পিত্তনালি অগ্নাশয় নালির সাথে মিলিত হয়ে যকৃত-অগ্নাশয় নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবশ করে।
অন্যদিকে ড্রেসিংরুমে (অগ্নাশয়) খেলোয়াররা রেডি হচ্ছেন।
লাস্যময়ী লাইপেজ 
ট্রিপসিন
অ্যামাইলেজ
-->অগ্নাশয় মিশ্রগ্রন্থি। এটি অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির মতো কাজ করে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে এটি -লাইপেজ, ট্রিপসিন ও অ্যামাইলেজ এনজাইম/উৎসেচক নিঃসরণ করে।

।।
খেলোয়ারগণ রেডি। গ্রাউন্ডস্ম্যান রেডি। গ্রাউন্ডসম্যানরা আগে গেলেন।
গ্রাউন্ডস্ম্যানরা (পিত্তরস) খাদ্যের অম্লভাব প্রশমিত করে।
অম্লীয় পরিবেশে ওসব সম্ভব না। ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
-->পিত্তরস ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর পিত্ত-লবণ চর্বি জাতীয় খাদ্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানায় পরিণত করে যাতে পরিপাক আরও সহজ হয়।
খেলোয়াররা মাঠে নেমে পড়েছেন ।
লাস্যময়ী লাইপেজ আঘাত হানলেন স্নেহার উপর ।
ট্রিপসিন প্রোটিন (পলিপেপটাইড) কে দুই চোক্ষে দেখতে পারে না। দেল কয়েকটাস ঘুষি।
বিশাল দেহি অ্যামাইলেজ এর সাথে শর্করার আদায় কাঁচকাল্য সম্পর্ক সেও শুরু করে দিল।
প্রো প্লেয়ারদের সাথে আগন্তুকরা টিকতে পারল না
সবাইকে জটিল থেকে একেবারে পানির মতো সরল রূপ দিয়ে দেয়া হলো।
-->স্নেহপদার্থ+(লাইপেজ)---> ফ্যাটি এসিড+গ্লিসারল
-->পলিপেপটাইড+(ট্রিপসিন)---> অ্যামাইনো এসিড+ সরল পেপটাইড
-->শ্বেতসার+(অ্যামাইলেজ)--->গ্লুকোজ

।।
এবার সরল জিনিসগুলা সামনের দিকে যেতেই থাকবে। ডিওডেনাম থেকে জেজুনাম সেখান থেকে ইলিয়ামে এ যাবে।
এখানে, ক্ষুধার্ত কতগুলো জীব আছে। যারা এই সরল পুষ্টিকর খাবার খাও্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করে।
জীবগুলো সাপের মত কিলবিল করে ।
এদের নাম ভিলাই ।
--> ক্ষুদ্রান্তের অন্তঃপ্রাচীরে আঙুলের মতো প্রক্ষেপিত অংশ থাকে এদেরকে ভিলাই বলে একবচনে ভিলাস।
এখন আজাইরা কথা থামাই,
ভিলাই, ছোট ভাই মাইক্রোভিলাইয়ের কারণে সার্ফেস এরিয়া বেড়ে যায় ফলে প্রচুর শোষন হয়।
ইলিয়ামের দৈর্ঘ্য ৬ ফিট [ পুরো ক্ষুদ্রান্তের দৈর্ঘ্য ১০ ফিট] এত খানি জায়গা জুড়ে শোষণ চলে।
ভিলাইয়ের মধ্যে ল্যাকটেনিয়াল নালি, লসিকা, কৈশিক নালি দিয়ে থাকে।
ছোট সাইজের কণাগুলো কৌশিকনালির মধ্য দিয়ে ঢুকে রক্তস্রোতে মিশে অন্যদিকে বড় কণাগুলো ল্যাকটেনিয়াল নালি ও লসিকা হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়।
এসব নিউট্রিয়েন্টগুলো রক্ত দ্বারা বাহিত হয়ে যকৃতে পৌছায় ।
যকৃত একটা ফ্যাক্টরি। এখানে, এই অ্যমাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন, গ্লুকোজ জমা থাকে। এবং প্রয়োজন অনুযায়ি যেখানে যতটুকু লাগে সেখানে ততটুকু পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া, এখানে অতিরিক্ত অ্যমানাইনো এসিড প্রক্রিয়াজাত হয়ে নাইট্রোজন জাতীয় বজ্র্য পদার্থ(ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি) উৎপন্ন হয় । এখন প্রশ্ন হলো অ্যমাইনো এসিড থেকেই কেন নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হবে?
কারণ একমাত্র আমিষ ( অ্যমাইনো এসিড হলো সরল রূপ) এর মধ্যেই নাইট্রজেন থাকে।
আবার যকৃত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। বেশি হলে শোষন করে, কম থাকলে ঢেলে দেয়।
অনেকে মনে করে এসব বর্জ্য পদার্থ বৃক্কে উৎপন্ন হয় আসলে এই কাজ করে যকৃত।

।।
খাদ্যের অপাচ্য অংশ ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায়।
বৃহদন্ত্রের মধ্যে পরিপাক বা কোনো বিক্রিয়া হয় না।
বৃহদন্ত্রে খাদ্যের অবশিষ্ট লুবণ বা পানি থাকলে সেটি শোষিত হয়।
উচ্ছিষ্ট অংশ মলে পরিণত হয় এবং মলাশয়ে জমা থাকে। তারপর ......
এখন সবার মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, খাদ্যগুলো মুখ থেকে এত দূর কীভাবে আসতে পারে।
কারণ দূরত্ব তো কম ছিল না।
তো খাবার এতদুর আসল কীভাবে?
পেরিস্টালসিস প্রক্রিয়ায় । খাদ্যনালির সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে।
আর এই পরিপাকের পুরো প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোন ও স্নায়ু দ্বারা।
এখন যেসব খাদ্যবস্তু শোষিত হয়েছে সেগুলো যকৃত এবং সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে কোষে কোষে যাবে।
শোষিত খাদ্য সরল অবস্থায় আছে।
ও সরল অবস্থায় কাজ করবে না, তাই কি আর করা ।
কোষ তার চিকিৎসক(এনজাইম) ছেড়ে দিবে। তারা সবগুলারে জোড়া তালি দিয়া আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
সরল খাদ্য আবার জটিল উপাদানে পরিণত হবে।
-->এই প্রকৃয়াকে বলা হয় উপচিতিমূলক প্রক্রিয়া।
এরা খুশি হয় কোষের ক্ষয়পূরণ ও গঠনে কাজ শুরু করে দিবে।

অন্যদিকে কোষের শক্তি উৎপাদনের শর্করা, প্রটিন, জৈব এসিড জারিত হয় মানে শ্বসন ঘটে।
শ্বসনের ফলে CO2 উৎপন্ন হয়। এটা বর্জ্য পদার্থ। এ বিষাক্ত।
এটার আমাদের শত্রু।
এটার কোষের মধ্যে থাকার কোনো অধিকার নেই।
এখন এটাকে ঘেট্টি ধরে বের করে দেয়া হবে।

।।
CO2 কোষ পর্দা ভেদ করে লসিকা , লসিকা থেকে কৈশিকনালির প্রাচীর ভেদ করে নালির মধ্যে প্রবেশ করে।
এখন তিন পদ্ধতিতে রক্ত ফুসফুসে পৌছায়। [ আমাদের বইয়ে এগুলো নেই ]
১।রক্তে সরাসরি দ্রবীভূত হয়ে।
২।হিমোগ্লোবিনের সাথে বন্ধন গঠন করে
৩।এবং বাইকার্বনেট আয়ন রূপে
এখন ৫-৭ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড যায় প্রথম পদ্ধতিতে মানে সরাসরি দ্রবীভূত হয়ে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড প্লাজমায় অবস্থিত প্রোটিন অথবা লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের সাথে বন্ধন গঠন করে পরিবাহিত হয় । এভাবে প্রায় ১০% পর্যন্ত CO2 এই পদ্ধতিতে যায়।

বাকি থাকল বাইকার্বনেটরূপে প্রবাহ। এটাই প্রধান । প্রায় ৮৫% কার্বন ডাই অক্সাইড এই ভাবে প্রবাহিত হয়।
এই ক্ষেত্রে bicarbonate buffer system নামে একট পদ্ধতিতে CO2 বাইকাররবনেটরূপে প্রবাহিত হয়।
তো কার্বন ডাই অক্সাইড প্রথমে লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই কণিকায় অবস্থিত Carbonic anhydrase (CA) নামক এনজাইম CO2 কে H2CO3 বা কার্বনিক এসিডে পরিণত করে।
কার্বনিক এসিড ক্ষনস্থায়ী এটি সাথে সাথে ভেঙে HCO3- (বাই কার্বনেট আয়ন) এবং H+ আয়নে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে, H+ আয়ন উৎপন্ন হয়। যেহেতু প্রতিটি কোষেই এই বিক্রিয়া চলে তাই প্রচুর পরিমাণে
হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন হবে। তাতে রক্তের pH এর মান অনেকাংশে বেড়ে যাবে। পিয়াইজ বাড়লে রক্ত এসিডিক হয়ে যাবে। এর ফলাফলটা আন্দাজ করে নিন।
আর লোহিত কণিকা Cl- কে নিয়ে HCO3- কে বের করে দেয়।কারণ H+ ও HCO3- আবার বিক্রিয়া করতে পারে বলা যায় না। এটার নাম ক্লোরাইড শিফট।

।।
তো এই সমস্যার সমাধান হলো H+ আয়ন হিমোগ্লোবিনের সাথে বন্ধন গঠন করবে। ফলে pH এর মান স্বাভাবিক থাকবে।
এখন রক্ত ফুসফুস পর্যন্ত প্রবাহিত হবে। সেখানে উপরে ঘটা ঘটনার উল্টোটা ঘটবে।
H+ আর হিমগ্লোবিনের বন্ধন ভাঙবে। লোহিত রক্তকণিকা ক্লোরাইড আয়ন রক্তরসে ফেরত দিয়ে আবার বাইকার্বনেট আয়ন ফেরত নেবে।
বাইকার্বনেট আর H+ বক্রিয়া করে কার্বনিক এসিড উৎপন্ন করবে।
[CO2+H2O⟷H2CO3(carbonic acid)⟷HCO3+H+(bicarbonate)CO2+H2O⟷H2CO3(carbonic acid)⟷HCO3+H+(bicarbonate)]
তো এইবার Carbonic anhydrase (CA) উলটা কাজ করবে। কার্বনিক এসিড ভেঙে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করবে। যা কৈশিকনালির পর্দা তারপর অ্যালভিউলাসের পর্দা ভেদ করে ঢুকবে।
এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে।

<--! বিঃদ্রঃ আমাদের বইতে যে লেখা আছে NaHCO3 রূপে প্রবাহিত হবে সেটা ভুল আছে। এই যৌগ গঠন করে প্রবাহিত হলে রক্তে অধঃক্ষেপ পড়ে যেত।
যাই হোক আমাদের টিচাররা ত তা বুঝবে না। তো পরীক্ষায় ভুলটা লিখবেন কিন্তু মাথায় সঠিকটা রাখবেন।-->

CO2 এটার রেচন শেষ।।


যকৃতে নাইট্রোজেঙ্ঘটিত বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় সেগুলো রক্তে মিশে যায়। এখন এই রক্ত পৌছাবে বৃক্কে।
বৃক্ক একটা ছাকন যন্ত্র। রক্ত থেকে রেচন পদার্থ ছেঁকে আলাদা করে মূত্র উৎপন করাই এর কাজ।
রেচন পদার্থ মূলত ওই ইউরিয়া ইউরিক এসিড ক্রিয়েটিনিন (creatine নামক একটি উয়াপদানের ভাঙনে উৎপন্ন হয়। আমাদের muscle দ্বারা ভাঙে) ও বিভিন্ন ধরণের লবণ।
আবার ইউরোক্রোম নামক আরও এক ধরণের রঙিন পদার্থের কারণে মুত্র হালকা হলুদ রঙের হয়।

পেটের পিছনে মেরুদন্ডের দুই পাশে দুটো বৃক্ক অবস্থিত। সিমের বিচির সাইজের দুইটা অর্গান।
এটার কয়েকটা অংশ আছে। বৃক্কের বাইরের অংশ উত্তল এবং ভেতর অবতল। অবতল অংশের ভাজকে বলে হাইলাস/হাইলাম।
হাইলামের ভিতর থেকে বের হয় ইউরেটর এবং রেনাল শিরা।
রেনাল ধমনী বৃক্কে প্রবেশ করে। আর শিরা বের হয়।
দুটি বৃকের দুটি ইউরেটর বের হয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে। ইউরেটর ফানেল আকৃতির। প্রশস্ত অংশকে রেনাল পেলভিস বলে।
আরও অনেক কিছু আছে বইইয়ে লেখা সেখান থেকে পড়ে নিন।

বৃক্কের কার্যকরী একক হলো নেফ্রন। প্রতিটি বৃক্কে ১০-১২ লক্ষ নেফ্রন থাকে।
নেফ্রন দুই ভাগে বিভক্ত।
১। রেনাল করপালস /মালপিজিয়ান অঙ্গঃ এটা আবার দুই ভাগে বিভক্ত।
আ)গ্লোমেরুলাস
খ)বোম্যান্স ক্যাপসুল
২।রেনাল টিউব্যুল

বোম্যান্স ক্যাপসুল হলো একটা দুই স্তরের বাটি। আর গ্লোমেরুলাস হলো হলো একগুচ্ছ কৌশিক জালিকা।
বৃক্কে যে রেনাল ধমনি ঢুকছিল সেটা থেকে সৃষ্ট অ্যাফারেন্ট ধমনী ক্যাপসুলী ঢুকে গ্লোমেরুলাস ( প্রায় ৫০ টি কৈশিক জালিকা সেগুলো আরও ক্ষুদ্র জালিকা ) তৈরি করে।
ক্যাপসুল থেকে বের হওয়ার পর ও ওর নাম পাল্টাইয়া ফালায়। হইয়া যায় ইফারেন্ট ধমনী। ইফারেন্ট ধমনী বিভক্ত হয়ে peritubular capillaries ( একধরণের কৈশিক জালিকা) তৈরি হয়। এই জালিকাগুলো রেনাল টিউব্যুলকে পেঁচিয়ে রাখে।
affe in effe out -এরকম মনে রাখতে পারেন। ( আমাদের বইতে উল্টো লিখেছে )
রেনাল টিউব্যুল তিন অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশের নাম-
Proximal Convoluted tubule ( PCT) আমাদের বইয়ের ভাষায় নিকটবর্তী প্যাচানো নালিকা ।
দ্বিতীয় অংশ হলো loop of henle বা হেনলির লুপ ।
আর তৃতীয় অংশ হলো Distal convoluted tubule (DCT)। বইয়ের ভাষায় প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা। 

।।
এই অংশটায় ঝামেলা আছে। মনযোগী হোন।
গ্লোমেরুলাসের কাজ ছাঁকা। রক্ত থেকে ইউরিয়া, পানি , খনিজ লবণ, গ্লুকোজ ইত্যাদি গ্লোমেরুলাসের মাধ্যমে ছেঁকে রেনাল টিউব্যুলে প্রবেশ করে।
এদেরকে একসাথে আল্ট্রাফিল্ট্রেট বা গ্লোমেরুলাস ফিল্ট্রেট বলে। এই ছাঁকনের পরিমাণ নির্ভর করে রক্তচাপের উপর। রক্ত গ্লোমেরুলাসের মধ্য দিয়ে যাবার সময় প্রায় এক পঞ্চমাংশ রক্ত পরিশ্রুত হয়। বাকিটা পেরিটিউব্যুলার কৈশিক নালিতে চলে যায়।
রক্তের সাধারণ উপাদানগুলোর ছাঁকন হয় না।

যেহেতু গ্লোমেরুলাসের মধ্য দিয়ে কিছু পানি ছেঁকে রেনাল টিউব্যুলে চলে গেছে। তাই ইফারেন্ট ধমনীতে যে রক্ত প্রবেশ করে সেটি তুলনামূলক ঘন হয়।
আর আল্ট্রাফিল্ট্রেটের কম তাই এখানে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রক্সিমাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে কৈশিক নালিতে পানি প্রবেশ করে।
এছাড়াও এখানে সক্রিয় শোষণ হয় যেই পদ্ধতিতে। এটা এমন এক পদ্ধতি যেখানে আয়নের বদলে আয়ন নেয়া হয়। একটা দেয় আরেকটা নিয়ে যায়।
ক্ষুদ্রান্তে মিনারেলস শোষণ আবার ওই কার্বন ডাই অক্সাইড রেচনের সময় ক্লোরিন আয়ন ও হাইড্রোকার্বনেট আয়ন আদান প্রদান হয় সেটা সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে হয়।
তো নিকটবর্তী প্যাচানো নালিতে সক্রিয় শোষণের মাধ্যমে লবণ কৈষিক নালিতে ফিরে যায় (গ্লোমেরুলাসে সব লবণ শোষণ হয় নাই) । গ্লুকোজ ও অ্যামিনো এসিড প্রত্যাবর্তন করে (কীভাবে করে জানি না)

এবার U আকৃতির হেনরির লুপে যাই। এখান থেকেও অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় পানি রক্তে ফিরে যেতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কৈশিক নালির রক্তের ঘনত্ব ও আল্লট্রাফিল্ট্রেটের ঘনত্ব সমান না হয়। এছাড়াও এখান থেকে সোডিয়াম আয়ন রক্তে ফেরত যায় ।

প্রান্তীয় প্যাচানো নালিতে আবার সক্রিয় শোষণের মাধ্যমে সোডিয়াম আয়ন রক্তে ফেরত যায় আর পটাশিয়াম টিউবে প্রবেশ করে।
এই লবণ আদান প্রদান বিভিন্ন ধরণের হরমোন (parathyroid , etc)  দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

বড়ই জটিল কার্যক্রম !
আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলে ইউরিক এসিড( C5H4N4O3) বেশি উৎপন্ন হয়।( রক্তের pH বাড়ে) বৃক্কে বেশি শোষন হয় তাই মূত্রের অম্লতা বৃদ্ধি পায়।
ফলমুল, তরিতরকারি বেশি খেলে উলটা ঘটনা ঘটে । ইউরিক এসিড কম উৎপন্ন হয় ।ফলে রক্তের pH কমে যায়। তাই মূত্র ক্ষারীয় হয়ে যায়।
এভাবে বৃক্ক দেহের pH ভারসাম্য রক্ষা করে।
প্রথম দিকে সোজা সাপ্টা কথা বলার পর শেষে এসে এত কঠিন কথা বলার জন্য আমি দুঃখিত ।
এরপর যেই তরল উৎপন্ন হয় সেটা সংগ্রাহী নালি->পেলভিস->ইউরেটর->মুত্রথলিতে যায়। আর পরিশোধিত রক্ত কৈশিক জালিকা থেকে শিরায় প্রবেশ করে।

বৃক্ক এভাবেই মানবদেহে লবণের ভারসাম্য, পানির ভারসাম্য, pH এর ভারসাম্য রক্ষা করে। 

Writer: মুনির চৌধুরি
সদস্য , ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান     

Sources:
1.Main book
2.Wikipedia.com
3.toppr.com
4.brillian.com

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form