নিহারিকাঃ মহাকাশের এক অপার সৌন্দর্য


রাতের বেলা আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় অসংখ্য তারার সমাহার।এদের মধ্যে বেশিরভাগই নক্ষত্র হলেও কিছু জায়গায় রয়েছে ঘনীভূত মহাজাগতিক মেঘ;যেগুলো নীহারিকা বা নেবুলা নামে পরিচিত।মহাকাশের এক চমকপ্রদ রহস্যের নাম এই নীহারিকা বা নেবুলা (Nebula)।'নেবুলা' একটি ল্যাটিন শব্দ এবং এর অর্থ 'মেঘ',আর বাংলা অর্থ ‘নীহারিকা’।নীহারিকা বা নেবুলা হল ধুলা, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও আয়নিত গ্যাসের আন্তঃমহাকাশীয় মেঘ। আসলে যেকোনো মহাকাশীয় বস্তুর ছড়িয়ে যাওয়া অবস্থাকেই নীহারিকা বলা যায়। বস্তু বলতে তা একটি নক্ষত্র, এমনকি একটি গ্যালাক্সিও হতে পারে।আর এই নীহারিকা হলো নক্ষত্রের জন্মস্থান। এক্ষেত্রে মহাকর্ষ,ধূলিকণা এবং অন্যান্য গ্যাসীয় কণাগুলো একত্রিত হয়ে ধীরে ধীরে গঠন করে নক্ষত্র এবং তারা। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সিগুলির আসল ধর্ম জানতেন না তখন এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে এন্ড্রোমিডা নীহারিকাও বলা হত।প্রযুক্তির উন্নতিতে আজ আমরা জানতে পেরেছি তা নীহারিকা নয়, গ্যালাক্সি।

কত বড় হতে পারে এই নীহারিকাগুলো?নীহারিকা গঠন উপাদানগুলোই বা কী কী?নীহারিকা সাধারনত ০.১ আলোকবর্ষ থেকে শুরু করে অনেক বৃহৎ এলাকা জুড়ে অবস্হিত হয়। যেমন এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ছোট নীহারিকা NGC 7027 মাত্র ০.১ আলোকবর্ষ ও সর্ববৃহৎ ট্যারান্টুলা নেবুলা প্রায় ১৮৬২ আলোকবর্ষ জুড়ে অবস্হিত।পৃথিবী থেকে দূরত্বের কারণে এদের ছোট দেখা গেলেও মূলত নীহারিকা অনেক বড়!নীহারিকা প্রধানত গ্যাস, ধুলা ও প্লাজমা দ্বারা গঠিত। অধিকাংশ নীহারিকাতেই ৯০% হাইড্রোজেন, ৯% হিলিয়াম, এছাড়া বাকি ১% হিসেবে রয়েছে কার্বন, নাইট্রোজেন, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার,ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম। নীহারিকাগুলো মুলত অবস্হিত আন্তঃনাক্ষত্রিক শুন্যস্হানে।

নীহারিকার জন্ম কিন্তু খুব সাদাসিধে ভাবে হয় না।অনেক সময় প্রয়োজন হয় এদের সৃষ্টির জন্য।আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে থাকে অনেক গ্যাস ও ধুলা। কোন ভাবে মহাকর্ষ টানের মাধ্যমে যখন সেগুলো কাছাকাছি আসে তখন কাছাকাছি আসা সেসব গ্যাসের সম্মিলিত আকর্ষণ আরো শক্তিশালী হয়। ফলে সেগুলো আরো বেশি পরিমাণ পদার্থকে আকর্ষণ করতে থাকে, সংকুচিত করতে থাকে। এভাবে পদার্থ যতো কাছাকাছি আসে, আকর্ষণ ততই বাড়ে, এভাবে বাড়তে বাড়তে অনেক বিশাল পরিমাণ গ্যাসীয় অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যাকে নীহারিকা বলে৷ অনেক নীহারিকার সৃষ্টি হয় নক্ষত্র থেকে। অল্প জীবনকালের কিছু ভারী নক্ষত্রের জীবন শেষ হয় বিশাল এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে। এধরনের নক্ষত্রকে বলে সুপারনোভা। সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে তারার বাইরের অংশ, ধুলো, গ্যাস আর বিপুল পরিমাণ শক্তি অবমুক্ত করে। বিস্ফোরণের ফলে যে শক্তি নির্গত হয়, তা আশেপাশের গ্যাসগুলোতে আয়নিত করে ফেলে। তখন পুরো এলাকাটিকে উজ্জ্বল দেখায়। এভাবে সুপারনোভার ধ্বংসস্তুপ থেকে জন্ম হয় এই নীহারিকার।নীহারিকাই হলো নক্ষত্রের একমাত্র জন্মস্হান৷ নীহারিকার গ্যাস ও ধুলাই মহাকর্ষীয় টানে সংকুচিত হয়ে নক্ষত্রের জন্ম দেয়। আবার সেই নক্ষত্রই মৃত্যুর সময় নীহারিকা সৃষ্টি করে, আবার সেই নীহারিকা থেকেও আবার সৃষ্টি হয় নক্ষত্র। এভাবেই নীহারিকার জগতে চলতে থাকে ভাঙ্গা গড়ার খেলা।শেষ পর্যন্ত বলা যায়,আন্তঃনাক্ষত্রিক উপাদানগুলো যখন মহাকর্ষীয় সংবন্ধন (Gravitational Collapse)-এর মধ্য দিয়ে যায়, তখন নীহারিকা গঠিত হয়।

সর্বপ্রথম ১৫০ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত গ্রীক জ্যোতির্বিদ ক্লডিয়াস টলেমি তার ‘আলমাজেস্ট’ গ্রন্থে নীহারিকার কথা লিখেছিলেন।তিনি লিখেছিলেন, তিনি পাঁচটি আবছা তারা দেখতে পেয়েছেন। তিনি এও লিখেছিলেন, উরসা মেজর এবং লিও নক্ষত্রমণ্ডলীর মাঝখানে তারাবিহীন একটি মেঘাচ্ছন্ন এলাকা দেখেছেন। সর্বপ্রথম সত্যিকারের নীহারিকার কথা উল্লেখ করেন অবশ্য পার্সিয়ান জ্যোতির্বিদ আব্দুর রহমান আল-সুফী। তিনি এন্ড্রোমিডা ছায়াপথের কাছেই একটা মেঘাচ্ছন্ন অঞ্চল দেখতে পান।২৬ নভেম্বর ১৬১০ সাল, ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস ক্লদ ফাবরি টেলিস্কোপ দ্বারা প্রথম কালপুরুষ নীহারিকা আবিষ্কার করেন। এরপর আরো অনেক জ্যোতির্বিদ বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন নীহারিকা আবিষ্কার করেন।

নীহারিকা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। কিছু নীহারিকা নিজস্ব আলো দেয়, কিছু নীহারিকাকে অন্ধকার দেখায়, কিছু বা আবার গোলাকৃতি। প্রধানত নীহারিকে চারভাগে ভাগ করা যায়। এদের সম্পর্কে জেনে নেয়া যাকঃ

i)এইচ টু অঞ্চলঃ

‘এইচ টু’ অঞ্চলের নীহারিকাগুলো বেশিরভাগই আয়নিত হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত।এগুলো বিভিন্ন আকার-আকৃতির হয়ে থাকে।কখনো নীহারিকাগুলো একসাথে অবস্থান করে আবার কখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে।এই অঞ্চলের নীহারিকাগুলো থেকে সবসময় নতুন নক্ষত্র তৈরি হতে থাকে।তাই এদের ‘নক্ষত্র সৃষ্টির অঞ্চল’ও বলা হয়।সময়ের সাথে সাথে যখন নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে তখন এই অঞ্চলের গ্যাসগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং সৃষ্টি করে প্লাইয়েডসের (pleiades) মতো বিভিন্ন স্টার ক্লাস্টারের।ঈগল নেবুলার ‘পিলারস্ অফ ক্রিয়েশন’ অংশটিও ‘এইচ টু’ অঞ্চলে অবস্থিত!

ii)প্ল্যানেটারি নেবুলাঃ

প্ল্যানেট অর্থ গ্রহ।অনেকের মনে হতে পারে এই নীহারিকার সাথে গ্রহের কোনো সংযুক্তি আছে।কিন্তু না।এর নামের সাথে এর প্রকৃতির কোনই মিল নেই। এ নীহারিকা মুলত গোলাকার গ্যাসের শেল দ্বারা গঠিত।এদের এই গোলাকার আকৃতির জন্যে নীহারিকাগুলোকে বৃহৎ গ্রহের মতো দেখায়৷ তাই এদের এরকম নামকরণ করা হয়েছে৷ যখন কোন মধ্যম ভরের নক্ষত্রের জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে তা বিস্ফোরিত হয়ে তার পৃষ্ঠের অংশ বাইরে নিক্ষিপ্ত করে, তখন সেসব অংশই গোলাকার শেলের আকৃতি হয়ে এমন নীহারিকার সৃষ্টি করে। নক্ষত্রটির আকার কমে যাওয়ায় এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন। আর তখন তা থেকে নির্গত অতিবেগুনী রশ্মি নির্গত হতে থাকে। এ রশ্মি পরবর্তীতে নীহারিকার গ্যাসকে আয়নিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্ল্যানেটারী নেবুলাও আলো বিকিরণ করতে শুরু করে, কিন্তু তা পুরোপুরি এমিশন নেবুলার মতো হতে পারে না। কারণ, এমিশন নেবুলার তুলনায় প্ল্যানেটারির ঘনত্ব থাকে অনেক কম। আর নেবুলাটির কেন্দ্রে থাকে নক্ষত্রটির আলোতেই নেবুলাটি আলোকিত হয়।প্ল্যানেটারি নেবুলার কিছু উদাহরণ হলোঃ রিং নেবুলা, হেলিক্স নেবুলা। এছাড়া আরেকটি উদাহরণ হবে আমাদের সুর্য;একটি মধ্যম ভরের নক্ষত্র। এটি যখন ভবিষ্যতে বিস্ফোরিত হবে তখন তা একটি খুব সুন্দর প্ল্যানেটারী নেবুলার সৃষ্টি করবে৷ প্ল্যানেটারি নেবুলাগুলো বেশ দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতে থাকে। এদের গড় তাপমাত্রা থাকে ১০০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, কিন্তু কেন্দ্রের নক্ষত্রের তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি, ২৫০০০ থেকে ২ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত।

iiI)সুপারনোভা রিমনান্টঃ

যেসব নক্ষত্রের ভর সাধারন ৮ থেকে ১৫ গুন বা তারচেয়েও বেশি সেগুলো তাদের জীবদ্দশায় এক তীব্র বিস্ফোরন ঘটায়, এতে প্রচন্ড শকওয়েভ সৃষ্টি হয় এবং এর পৃষ্ঠের গ্যাসীয় উপাদানসমুহকে তীব্র বেগে শুণ্যে নিক্ষেপ করে। এসব উপাদান সমুহ পরবর্তীতে সমন্বিতভাবে নেবুলায় রুপ লাভ করে। সেসব গ্যাসীয় উপাদান গুলো কেন্দ্রে থাকা উচ্চভরের ও উচ্চতাপমাত্রার নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত হতে থাকে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরনঃ ক্র্যাব নেবুলা, যার কেন্দ্রে রয়েছে ক্র্যাব পালসার।

iv)ডিফিউজ নেবুলাঃ

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই নীহারিকার কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই অর্থাৎ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে। মহাশূন্যের বেশিরভাগ নীহারিকাই এই প্রকারভেদের মধ্যে পড়ে।ডিফিউজ নেবুলাগুলোকে দেখতে মনে হয় মহাকাশে ছড়িয়ে পড়া কোনো গ্যাসীয় পদার্থ।এদের সীমা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয় না। ডিফিউজ বা বিস্তীর্ণ নীহারিকাগুলো প্রচুর পরিমাণে অবলোহিত আলো নির্গত করে যা তাদের নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত দৃশ্যমান করতে সাহায্য করে;কিন্তু পুরোটা নয়।
সাধারণত এমিশন নেবুলা,রিফ্লেকশন নেবুলা এবং ডার্ক নেবুলাগুলো ডিফিউজ নেবুলার অংশ।

এমিশন নেবুলাঃ

এমিশন নেবুলা মুলত আয়নিত গ্যাসীয় কণা দ্বারা গঠিত, যা মুলত বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিকিরণ করে৷ এই আয়নিত গ্যাস বলতে থাকে মুলত হাইড্রোজেন গ্যাস। তবে অন্যান গ্যাসীয় উপাদানও থাকে। এখানকার হাইড্রোজেন গ্যাস আয়নিত হওয়ার প্রধান উৎস মুলত এর নিকটবর্তী উত্তপ্ত নক্ষত্রসমুহ৷ কারণ, এদের নিকটবর্তী উত্তপ্ত নক্ষত্রগুলো থেকে বিকিরিত অতিবেগুনী রশ্মি এ নীহারিকার হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত করে ফেলে, এবং এই আয়নিত হাইড্রোজেন গ্যাসীয় কণা আলোক বিকিরণ করে। আলো বিকিরণ করে বিধায় এদের বলা হয় Emission Nebula বা বিকিরণ নীহারিকা। মহাকাশের এধরনের নীহারিকার অঞ্চলগুলো মুলত নক্ষত্রের আদর্শ জন্মস্থান বলা চলে৷ কারন, এখানকার গ্যাস, ধুলা এতো পরিমানে থাকে যে গ্র্যাভিটির টানে সেগুলো কেন্দ্রীভুত হয়ে খুব সহজেই নক্ষত্রের জন্ম দিতে পারে। আর যে ধুলিময় অংশ থাকে তা গ্রহের জন্মদিতে পারে যা সে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে৷ অরিয়ন নেবুলা, ঈগল নেবুলা এ ধরনের নীহারিকার প্রকৃষ্ট উদাহরন। অরিয়ন নেবুলা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির নক্ষত্রের জন্মের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অন্ঞ্চল। অরিয়ন নেবুলার কমলা রঙের জন্যে দায়ী হাইড্রোজেন, লাল রঙের জন্যে দায়ী সালফার, সবুজ রঙের জন্যে দায়ী অক্সিজেন। মহাকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নেবুলা হলো এই এমিশন নেবুলাগুলো৷ এদেরকে বেশ খালি চোখেই দেখা যায়, তবে ছোট টেলিস্কোপেও এদের বেশ স্পষ্ট দেখায়। এদের গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫০০০ থেকে ১,৫০,০০০ কেলভিন পর্যন্ত৷

রিফ্লেকশন নেবুলাঃ

এ ধরনের নীহারিকা গুলো মুলতো আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধুলার মেঘ দ্বারা গঠিত। এদের কে রিফ্লেকশন বা প্রতিফলন নীহারিকা বলার কারণ, এদের নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে বিকিরিত আলো এদের গ্যাসীয় উপাদানগুলো খুব উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত করে। কিন্তু সেসব নক্ষত্র থেকে বিকিরিত আলোকশক্তি ততোটা শক্তিশালী হয় না যাতে এ নীহারিকার গ্যাসগুলোকে আয়নিত করে বিকিরণ নীহারিকার সৃষ্টি করবে। এদেরকে ঠিক ততোটাই উজ্জ্বল দেখায়; নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে আসা যতোটা আলো এরা বিক্ষেপণ করে। এদেরকে সাধারন নীল রঙের দেখায়, কারণ নীল রং খুব সহজেই বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। ট্রিফিড নেবুলা এ ধরনের নীহারিকার প্রকৃষ্ট উদাহরন।এদের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ১০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

ডার্ক নেবুলাঃ

নামের সাথে এই নীহারিকাগুলোর মিল বলতে গেলে পুরোটাই।যেন বিশাল আকারের কালো মেঘ!এ নীহারিকা অনেক ঘন আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ দ্বারা গঠিত৷ এই মেঘ এতোটাই ঘন হয় যে এদের নিকটবর্তী পেছনের বা পাশের নক্ষত্র থেকে বিকিরত আলো এ ঘন মেঘ ভেদ করে আসতে পারে না, বাধা প্রাপ্ত হয়। তাই এদেরকে অন্ধকার দেখায়। তাই এদের নাম ডার্ক বা অন্ধকার নীহারিকা। এতে থাকে হাইড্রোজেন অণু, হিলিয়াম পরমানু, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া, এদেরকে সাধারনভাবে অন্যান্য নীহারিকার মতো দেখায় না। এদেরকে বোঝা যায়, কোন আলোকিত অঞ্চলের মাঝে অন্ধকারময় স্থানরূপে। এদের সাধারনত, এমিশন ও রিফ্লেকশন নেবুলার সাথে অবস্হান করতে দেখা যায়। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ’হর্সহেড নেবুলা’, যা অরিয়ন নেবুলার কাছে অবস্হিত। একে অরিয়ন নেবুলার কাছে অন্ধকারময় দেখায়, যা একটি ঘোড়ার মাথা সদৃশ আকৃতির৷ তাই একে হর্সহেড নেবুলা নামকরণ করা হয়৷ এদের গড় তাপমাত্রা থাকে খুবই কম, মাত্র ১০ থেকে ১০০ কেলভিন।

এছাড়াও নীহারিকার আরো অনেক প্রকারের উপবিভাগ রয়েছে।এগুলো হলঃ

প্রোটোপ্ল্যানেটারি নেবুলাঃ

কোনো প্রধান ধারার নক্ষত্র যখন ক্রম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্বেত বামনে পরিণত হয়, তখন সেই অন্তর্বর্তী সময়ে এই জাতীয় নীহারিকার সৃষ্টি হয়। যখন কোনো নক্ষত্র তার জীবনকাল শেষ করে, তখন নক্ষত্র প্রচুর পরিমাণ ভর হারায়। এর ফলে নক্ষত্রের বাইরের হাইড্রোজেন খোলস হাল্কা হয়ে যায়। একসময় এই নক্ষত্র হাইড্রোজোনের খোলস মুক্ত হয়ে নগ্ন হয়ে যায়। এই অবস্থায় নক্ষত্রকে ঘিরে হাইড্রোজনের হাল্কা কুয়াশা থেকে যায়। নক্ষত্রের এই দশাতে দূর থেকে কুয়াশাঘন আবরণের ভিতর দিয়ে নক্ষত্রকে রঙিন দেখায়। নক্ষত্রের দশাকেই প্রোটোপ্ল্যানেটারি নেবুলা বা প্রাক্-গ্রহান্বিত নীহারিকা বলা হয়।

বাইপোলার নেবুলাঃ

মূলত প্ল্যানেটারি নেবুলার একটি উপবিভাগ হলো বাইপোলার নেবুলা।যদি প্ল্যানেটারি নেবুলার আকৃতি বাইপোলার বা দ্বিপদী আকৃতির হয় তবে তাকে বলে বাইপোলার নেবুলা।এই নীহারিকাগুলো দুইপাশে প্রজাপতির ডানার মতো ছড়িয়ে থাকে।প্ল্যানেটারি নেবুলার প্রায় ১০-২০% হলো বাইপোলার নেবুলা।যদিও বাইপোলার নেবুলা সৃষ্টির প্রকৃত কারণ জানা যায়নি,তবে মূলত পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি নক্ষত্র যখন তাদের বাইরের লেয়ারের বিস্ফোরণের মাধ্যমে একসাথে নীহারিকায় পরিণত হয় তখনই বাইপোলার নেবুলা সৃষ্টি হয়।বাইপোলার নেবুলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘বাটারফ্লাই নেবুলা’ বা ‘প্রজাপতি নীহারিকা’।

পালসার উইন্ড নেবুলাঃ

পালসার উইন্ড নেবুলা সাধারণত সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর এর ভেতর থেকে উৎপন্ন হয়।একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর পর বিভিন্ন দশা শেষ করে তৈরি হয় এই পালসার উইন্ড নেবুলা।মূলত সুপারনোভা রিমন্যান্টের মধ্যে অবস্থান করে এই নীহারিকাগুলো উজ্জ্বলতা প্রদর্শন করে।এই নীহারিকাগুলো অনেক সময় পুরোনো পালসারের পাশে খুঁজে পাওয়া যায়।মহাবিশ্বে খুব কম সংখ্যক ‘পালসার উইন্ড নেবুলা’ রয়েছে।সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলোঃক্র্যাব নেবুলা।

নীহারিকা সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
১.মহাবিশ্বের সবচেয়ে ছোট নীহারিকা হলো ‘এন জি সি ৭০২৭’ যার ব্যাস মাত্র ০.১ আলোকবর্ষ।

২.আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান অবস্থিত ‘বুমেরাং নীহারিকা’(bow tie nebula)অঞ্চলে।এখানকার তাপমাত্রা -২৭২° সেলসিয়াস যা পরমশূন্য তাপমাত্রার চেয়ে মাত্র ১ ডিগ্রী বেশি।

৩.পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের নীহারিকা হলো ‘হেলিক্স নীহারিকা’ যা পৃথিবী থেকে ৬৯৪.৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

৪.১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী ছায়াপথগুলোকেও নীহারিকা হিসেবে মনে করত।

৫.এখন থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পর আমাদের সূর্যও নীহারিকায় পরিণত হবে।

source:
1.https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE

2.https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nebula

3.https://bigganbortika.org/nebula-pillars-of-creation/

4.https://spacecenter.org/what-is-a-nebula/

5.https://www.britannica.com/science/নেবুলা


লিখাঃ রাজেশ মজুমদার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম