Bluetooth Information

ব্লুটুথ ডিভাইস


আমাদের পৃথিবী যোগাযোগ উপায় দিনদিন বাড়ছে, আমরা অনেক রকমের প্রযুক্তিকে আপন করে নিচ্ছি যেগুলো পরিবার, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে সহায়তা করে। যখন তারযুক্ত মাধ্যমের অসুবিধা থেকে আমরা ওয়্যারলেস প্রযুক্তির অনুভব করি। এবং একসময়ের কল্পকাহিনির ওয়্যারলেস প্রযুক্তি আমরা বাস্তজীবনে ব্যবহার করছি। কিছু ওয়্যারলেস প্রযুক্তি যেমন, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, NFC সহ ইত্যাদি প্রযুক্তির মধ্য ব্লুটুথ সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি। নিয়মিত ব্যবহার করা প্রায় সকল ডিভাইসে ব্লুটুথ সুবিধা পাওয়া যায়। সেটা ওয়্যারলেস কি-বোর্ড, মাউস কিংবা স্মার্টওয়াচ হোক না কেন, দৈনন্দিন কাজে এর কোনো কমতি নেই।

এই প্রযুক্তির নাম ব্লুটুথ হলো কেন তা জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে দশম শতাব্দীতে। এই সময় ড্যানিশ রাজা যার নাম 'Harald Bluetooth', যিনি ডেনমার্ক ও নরওয়ের শতাব্দি ভর যুদ্ধের ইতি টেনে একতাবদ্ধ হতে ভুমিকা রাখেন। তার নামের মতোই, ব্লুটুথ SIG তৈরীর মাধ্যমে ৩৫,০০০ হাজারের বেশি ইনড্রাস্টির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড তৈরী করে একতাবদ্ধ করেছে।

ব্লুটুথ কীঃ

ব্লুটুথ একটি রেভিও ওয়েভ প্রযুক্তি। তবে এটি মোবাইল টাওয়ারের মতো বিশাল দূরত্ব কভারেজ করে না। একে ডিজাইন করা হয়েছে স্বল্প দূরত্বের এরিয়ার মধ্যে বা ১০ মিটার বা ৩০ ফুটের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। স্বল্প দূরত্বের এই প্রযুক্তি WPAN ( wireless personal area network) বলা হয়। এর স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে IEEE 802.15.1।

ব্লিটুথে রয়েছে ট্রান্সমিটার ও ট্রান্সরিসিভার যা রেভিও সিগ্যানাল গ্রহণ ও প্রেরণ করে ৭৯টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সী চ্যানেলে। ব্লুটুথ ডিভাইস কমিউনিকেট করে স্বল্প শক্তির রেভিও ওয়েভ যার ফ্রিকোয়েন্সী 2400 MHz - 2483.5 MHz এর মধ্যে। এই ফ্রিকোয়েন্সী আন্তর্জাতিকভাবে চুক্তি হয়েছে ISM (industrial, scientific and medical devices) এ ব্যবহারের জন্য।

এবার জানা যাক পিকোনেট (pikonet) সম্পর্কে। পিকোনেট হলো ব্লুটুথের মৌলিক বিষয় যার মাধ্যমে দুই বা অধিক ডিভাইসকে কানেক্ট করা যায়। ব্লুটুথ থাকা ডিভাইস হলো 'peer units' যার জন্য একটি ডিভাইস হবে মাস্টার এবং বাকি ডিভাইস হবে স্লেভ। পিকোনেটে ৭ টি মেমবার অ্যাড্রেস আছে, যেখানে সর্বোচ্চ ৮ টি ডিভাইস বা ১টি মাস্টার ও ৭ টি স্লেভ হবে।

যখন মোবাইল টু মোবাইল বা ক্যামেরাতে কানেক্ট করলে, একটি মোবাইল হবে মাস্টার ডিভাইস এবং অন্য মোবাইল বা ক্যামেরা হবে স্লেভ ডিভাইস। যখনই মাস্টার ও স্লেভ ডিভাইসের মধ্য সংযোগ হয় তখন কীভাবে কোন ফ্রিকোয়েন্সীতে ডেটা ট্রান্সমিট হবে তা ঠিক করা হয়।

📷

এখন HOP সম্পর্কে জানা যাক

HOP মূলত একটা ফ্রিকুয়েন্সি চ্যানেল থেকে আরেকটা ফ্রিকুয়েন্সি চ্যানেলে স্যুইচ করা। ব্লুটুথে ফ্রিকোয়েন্সী চ্যালেন থাকে ৭৯টি। তো যেহেতু ব্লুটুথ ডেটা প্যাকেট আকারে ডেটা ট্রান্সফার করে, তাই খুব সহজেই কোনোরকম সংঘর্ষ এড়াতে চ্যানেল দ্রুত চেঞ্জ হতে পারে যেটা সেকেন্ডে ১৬০০ বার। ট্রান্সমিশনে কোনো প্রকার packet collision যাতে না হয় বা জনবহুল স্থানেও কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য এই ব্যবস্থা। আর মোট ৬ প্রকারের হোপিং সিকোয়েন্স আছে যা ফ্রিকোয়েন্সীকে বিভিন্নভাবে সেন্ড করে।

ব্লুটুথ জেনারেশনঃ

ব্লুটুথ প্রথম ১৯৯৪ সালে বের হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। বর্তমানে ব্লুটুথ V5.0 ব্যবহার হলেও পুর্বের ভার্সনগুলো অনেক প্রচলিত।

নিচে জেনারেশনগুলোর মূল পার্থক্য দেওয়া হলো-

**Bluetooth v1.2**

এটি ব্লুটুথ V1.x এর আপডেট ও স্ট্যাবল ভার্সন। V1.x ছিল প্রোটোকল এবং উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর ভবিষ্যতের সংস্করণের ভিত্তি।

ব্লুটুথ V1.2 তে ডেটা স্পিড সর্বোচ্চ 0.7 Mbps এবং ১০ মিটার দূরত্বে সংযোগ পাওয়া যেত।

**Bluetooth v2.1 + EDR**

এটি ২০০৭ সালে রিলিজ হয় এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এবারে ব্লুটুথ enhanced data rate (EDR) এর সাথে পরিচয় করায় যার ডেটা ট্রান্সফার রেট 2.1 Mbps।

এবং secure simple pairing (SSP) এই ভার্সনে শুরু হয়।

**Bluetooth v3.0 + HS**

ব্লুটুথের এই ভার্সনে ডেটা ট্রান্সফার রেট প্রায় 24 Mbps। এমন স্প্রিডের মূল কারণ এটা WiFi (802.11).তে ট্রান্সমিট করে এবং ব্লুটুথ শুধু স্টেবল কানেকশন বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয়।

এই ভার্সনে ব্লুটুথ পাওয়ার এফিসিয়েন্সি অনেকটাই।

**Bluetooth v4.0 and Bluetooth Low Energy**

ব্লুটুথের এই ভার্সনের কাজ তিন প্রকার, ক্লাসিক বা পুর্বের ভার্সনগুলোর মতো, Bluetooth low energy (BLE) বা অনেক বেশি পাওয়া এফিসিয়েন্সি এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন।

**Bluetooth v5.0 BLE**

এই ভার্সনটা সবচেয়ে নতুন ও আগের সব ভার্সনের চেয়ে ভালো কাজ করে। খোলা স্থানে ১০০ মিটার এবং ইনডোরে ২০ মিটার পর্যন্ত কানেকশন থাকে। এটি সেকেন্ডে 2 Mbps গতি ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে। এবং আগের ভার্সনের চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি পাওয়ার এফিসিয়েন্সি।

নিরাপত্তাঃ

ব্লুটুথকে একটা নিরাপদ ওয়্যারলেস প্রযুক্তি বলা যেতে পারে। ডেটা ইনক্রিপ্ট করে সেন্ড করা হয়, পেয়ারিং করা ডিভাইসে সাথে কানেক্ট থাকে এবং প্রতিনিয়ত ফ্রিকোয়েন্সী পরিবর্তন করতে থাকে।

কিছু ডিভাইসের কোড দিতে হয় সিকিউরিটির জন্য। তাই ব্লুটুথ ডিভাইস লেভেল সিকিউরিটি দিয়ে থাকে।

এবং ব্লুটুথ গ্যাজেট অন্যান্য ডিভাইসের জন্য রেস্ট্রিকশন করলে তাকে সার্ভিস লেভেল সিকিউরিটি বলা হয়।

তবে ক্রিমিনালরা ব্লুটুথ দিয়ে ভিভাইসে সংযোগ, ম্যাসেজ প্রেরণ এবং ইনফরমেশন চুরি করতে পারে। এখনও এই প্রযুক্তিতে এমনটা করার অনেক উপায় রয়েছে। তাই খুব দরকার ছাড়া পাবলিক প্লেসে ব্লুটুথ না ব্যবহার করাটাই ভালো।

ব্লুটুথের অনেক ভালো দিক রয়েছে। যেমন, Bluetooth Tethering এর মাধ্যমে WiFi প্রযুক্তি বাদেও মোবাইল ডেটা শেয়ার করা সম্ভব। ব্লুটুথ থাকা যেকোনো দুই ডিভাইসে ডেটা ট্রান্সফার সম্ভব। কিছু মাল্টিপ্লেয়ার গেম ব্লুটুথের মাধ্যমে খেলা যায়। বিভিন্ন গ্যাজেটের মধ্যে সহজে সংযোগ দেওয়া যায় আবার একই সাথে দুইটা গ্যাজেট চালানো সম্ভব। স্মার্ট সিকিউরিটির ক্ষেত্রে ব্লুটুথের ব্যবহার রয়েছে। গাড়ির সাথে ব্লুটুথ কানেক্ট করে মোবাইলে না দেখে সেখানের ডিসপ্লেতে দেখা যায়। মজার বিষয় হলো, ইউএসবি ডাঙ্গল ব্যবহার করে ব্লুটুথ ছাড়া ডিভাইসে ব্লুটুথ কানেকশন সম্ভব।

ব্লুটুথ জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ এর এফিসিয়েন্সি এবং প্রায় সকল ডিভাইসে ব্যবহার করা হয় জন্যে। ওয়্যারলেস ইয়ারফোন, মিউজিক প্লেয়ার, সাউন্ড সিস্টেম, ক্যামেরা, স্মার্ট ওয়াচের মতো গ্যাজেট মূলত ব্লুটুথ চালিত। এগুলোর মাধ্যমে সহজে ভিডিয়ো, অডিয়ো সহ অন্যান্য ডেটা ট্রান্সফার অনেক সহজে করা যায়। ওয়্যারলেস প্রযুক্তিগুলো ভবিষ্যতময় এবং আমরা আগামিতে আরও ভালো প্রযুক্তির ছোঁয়া পাব যা জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে।

সোর্সঃ

[http://large.stanford.edu/courses/2012/ph250/roth1/](http://large.stanford.edu/courses/2012/ph250/roth1/)

[https://anusoron.blogspot.com/2019/03/blog-post.html?m=1](https://anusoron.blogspot.com/2019/03/blog-post.html?m=1)

[https://learn.sparkfun.com/tutorials/bluetooth-basics/all](https://learn.sparkfun.com/tutorials/bluetooth-basics/all)

[https://www.androidauthority.com/bluetooth-5-gary-explains-703734/](https://www.androidauthority.com/bluetooth-5-gary-explains-703734/)

[https://www.explainthatstuff.com/howbluetoothworks.html](https://www.explainthatstuff.com/howbluetoothworks.html)

[https://electronics.howstuffworks.com/bluetooth.htm](https://electronics.howstuffworks.com/bluetooth.htm)

[https://www.lifewire.com/what-is-bluetooth-2377412](https://www.lifewire.com/what-is-bluetooth-2377412)

[https://www.google.com/amp/s/www.maketecheasier.com/uses-of-bluetooth/%3famp](https://www.google.com/amp/s/www.maketecheasier.com/uses-of-bluetooth/%3famp)

Writer: Rownok Shahriar

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form