আপনি কি আসলেই মৃত?
কখনো কি ভেবে দেখেছেন "মৃত" ঘোষণা করার ব্যপারে দুইটা আলাদা শব্দ ব্যবহৃত হয়- আইনত মৃ্ত (Legally Dead) আর ডাক্তারিভাবে মৃত (Clinically Dead)।কিন্তু কেন?!
তার আগে বলুন দেখি কোন একজন মানুষ বেঁচে আছে সেটা আমরা বুঝি কি করে?
জানি উত্তর দিবেন - আরে এ কোন কথা হল?!দেখ সে নিশ্বাস নিচ্ছে কি না, তার হৃৎপিন্ড ধুকধুক করছে কি না কিংবা নাড়ীর স্পন্দন আছে কি না।
উত্তরটা আসলেই এমন হলেও এর সাথে কিছু যদি/কিন্তু লাগানো আছে।
দেহের নিশ্বাস-প্রশ্বা স আর রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলে শরীর কোন কাজ করতে পারে না। ফলে তখন নিশ্বাস নেই, হৃদস্পন্দন নেই, বডি ফাংশন নেই। মানে সে 'মৃত'। এ অবস্থাটাকেই বলা হয় ডাক্তারিভাবে মৃত কিংবা Clinically Dead।
অর্থাৎ ডাক্তারিভাবে মৃত (Clinically Dead)= কোন হৃৎস্পন্দন নেই + কোন শ্বাসপ্রশ্বাস নেই + কোন বডি এক্টিভিটি নেই
এই নিশ্বাস ও হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবার আরেকটা নাম আছে- সার্কুলেটরী/ কার্ডিওপালমোনারি ডেথ।
এ সংজ্ঞাটি মৃত্যুর সবচেয়ে সহজ সংজ্ঞা যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল। কিন্তু তখনো তো আপনার শরীরের সব অংগ-প্রত্যংগ মারা গিয়ে সারে নি, মস্তিষ্ক কোষগুলো নিশ্বাস ও রক্ত সঞ্চালন বন্ধের পরো বেশ ক'মিনিট পরে মারা যেতে শুরু করে, তাও আবার সব একসাথে নাহ। এসময়ের মাঝে যদি CPR কিংবা অন্য কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসকে আবার সচল করে ফেলা সম্ভব হয় মানে আপনাকে আবার বাচিয়ে তোলা হয়, তখন? কিন্তু আপনি তো মারা গেছিলেন!
তখন দেখা হয় আপনার মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বা ব্রেইন এক্টিভিটি। মস্তিষ্কের ভিতর কোন রকম রক্ত প্রবাহ না থাকলে ; সেরেব্রাল কর্টেক্স, ব্রেইন স্টেম পুরোপুরি অক্ষম হলে অর্থাৎ ব্রেইন নিজে থেকে কোনরুপ কার্যকলাপে সক্ষম না হলে আর এটা অপ্রত্যাগামী (irreversible) হলে তখন তাকে বলা হয় "ব্রেইন ডেথ"। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই অপ্রত্যাগামী ব্রেইন ডেথকেই আইনগত মৃত কিংবা Legally Dead বলে ধরা হয়।
তবে এমন ঘটনাও আছে যেখানে ব্রেইন ডেথ হয়েছে কিন্তু ক্লিনিক্যাল ডেথ হয় নি। মানে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে শরীরকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন - ২০০৪ সালে ৬ বছরের শিশু জেসি কিংবা এরপর ১২ বছরের ছেলে ব্রডিকে আইনগত মৃত বলে হাসপাতাল ও পুলিশ প্রশাসন রায় দিলেও পরিবার মামলা চালিয়ে তাদের ক্লিনিক্যাল ডেড হউয়া থেকে আরো বেশ কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখে। আবার এক মহিলা যে হাসপাতালে মারা যাবার পর দেখা যায় তার পেটে কয়েক মাসের বাচ্চা আছে যে তখনো মরে নি। তখন কৃত্রিম ফুসফুস, রক্ত সঞ্চারণ যন্ত্র আর স্যালাইনের মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান দিয়ে দিয়ে মহিলার শরীরটাকে কর্মখম রাখা হয়। এভাবে প্রায় ২ মাস পর বাচ্চাটি সিজারের উপযুক্ত হলে তাকে বের করে মহিলার লাশ দাফন করা হয়।
তখন দেখা হয় আপনার মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বা ব্রেইন এক্টিভিটি। মস্তিষ্কের ভিতর কোন রকম রক্ত প্রবাহ না থাকলে ; সেরেব্রাল কর্টেক্স, ব্রেইন স্টেম পুরোপুরি অক্ষম হলে অর্থাৎ ব্রেইন নিজে থেকে কোনরুপ কার্যকলাপে সক্ষম না হলে আর এটা অপ্রত্যাগামী (irreversible) হলে তখন তাকে বলা হয় "ব্রেইন ডেথ"। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই অপ্রত্যাগামী ব্রেইন ডেথকেই আইনগত মৃত কিংবা Legally Dead বলে ধরা হয়।
তবে এমন ঘটনাও আছে যেখানে ব্রেইন ডেথ হয়েছে কিন্তু ক্লিনিক্যাল ডেথ হয় নি। মানে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে শরীরকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন - ২০০৪ সালে ৬ বছরের শিশু জেসি কিংবা এরপর ১২ বছরের ছেলে ব্রডিকে আইনগত মৃত বলে হাসপাতাল ও পুলিশ প্রশাসন রায় দিলেও পরিবার মামলা চালিয়ে তাদের ক্লিনিক্যাল ডেড হউয়া থেকে আরো বেশ কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখে। আবার এক মহিলা যে হাসপাতালে মারা যাবার পর দেখা যায় তার পেটে কয়েক মাসের বাচ্চা আছে যে তখনো মরে নি। তখন কৃত্রিম ফুসফুস, রক্ত সঞ্চারণ যন্ত্র আর স্যালাইনের মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান দিয়ে দিয়ে মহিলার শরীরটাকে কর্মখম রাখা হয়। এভাবে প্রায় ২ মাস পর বাচ্চাটি সিজারের উপযুক্ত হলে তাকে বের করে মহিলার লাশ দাফন করা হয়।
এই ব্রেইন ডেথকে আইনত মৃত্যু বলার ফায়দা লুটছে কিছু অসৎ ও অর্থলোভী চক্র। অনেক দেশেই যে কেউ মারা গেলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অর্গান ডোনার হয়। এসব দেশে গভীর অচেতন কিংবা কোমাকে ব্রেইন ডেড বলে অর্গান সংগ্রহ করে বিক্রির অভিযোগ আছে বেশ কিছু ডাক্তারের বিরুদ্ধে।
কিন্তু যদি এমন হয় যে ডাক্তাররা CPR কিংবা অন্যান্য অনেক চেষ্টার পরো কাউকে বাঁচাতে পারল না। নিঃশ্বাস-রক্ত চলাচল বন্ধ EEG তেও দেখাচ্ছে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ ফ্ল্যাটলাইন। তখন ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করলেন। কিন্তু এরপর আপনি অলৌকিকভাবে বেচে উঠলেন!!!
মেডিকেল ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা নথিভুক্ত আছে। ১৯৭৬ সালে নিউরোসার্জন জর্জ রোদোনায়া মারা যাবার পর ৩ দিন তার লাশকে মর্গে ফেলে রাখা হয়। ৩ দিন পর যখন আনুষ্ঠানিকভাবে অটোপসি করার জন্য টেবিলে ফেলে তার পেটে স্কালপেল ছোঁয়ানো হয় তখন সে বেচে উঠে। ১৯৯৬ সালে ড্যাফনি ব্যাংকস মারা যাবার ৩৪ ঘণ্টা পর লাশঘরে জেগে উঠেন। আবার আরেক তরুণীকে সমাহিত করার পর ফ্লাইট জটিলতায় আটকে পড়া তার বড় বোন পরদিন পৌঁছে যখন শেষবারের মত বোনকে দেখার জন্য কফিন উত্তোলন করেন তখন দেখা যায় ধীরেধীরে জেগে ওঠছে তার আদরের ছোটবোনটি।
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে- আপনি আসলেই মারা গেছেন কি?
কেমন হবে যদি আপনাকে কবর দেয়ার পর জেগে ওঠেন কবরের ভিতরে? কিংবা শ্মশানের আগুনের ভিতর?
কেমন হবে যদি আপনাকে কবর দেয়ার পর জেগে ওঠেন কবরের ভিতরে? কিংবা শ্মশানের আগুনের ভিতর?
মৃত্যুর আধুনিক সংজ্ঞার সন্ধানে
মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সী নিকোলাস ব্রিচ নামের ছেলেটা যখন জানতে পারল যে তার ব্রেইন স্টেম উপর একটি প্রাণঘাতী টিউমার আছে, সে তার বাবা-মা, রিক এবং কিম ব্রিচকে বলে, সে অঙ্গ দাতা (অরগ্যান ডোনার) হতে চায়. তারা তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায় এবং ফিলাডেলফিয়া শিশু হাসপাতালও তাই করে। নিক এর সমাজকর্মী বারনাডেট ফলি বলেন, এটা একটা "পরিপক্ক, সংবেদনশীল ও সাহসী সিদ্ধান্ত "। অন্যদের সাহায্য করার দৃঢ় ইচ্ছার প্রতিফলন যা নিক টিউমারের সঙ্গে তার আট বছরের পৌনঃপুনিক যুদ্ধের সর্বত্রই দেখিয়ে আসছে। অরগ্যান ডোনেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়াতে নিক খুবই খুশি ছিল এই ভেবে যে- " এটা তার জীবনকে অমূল্য কিছু দিতে যাচ্ছে”।
রিসার্চার গ্যারি গ্রিনবার্গ যখন নিকের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন তার অবস্থা অনেক খারাপ। হাসপাতালের আদলে করা তাদের লিভিং রুমের বেডেই শয্যাশায়ী সে। তার জন্যে কথা বলা অনেক কষ্টের তাই সে তার কুকুর সারাহ, ভাই নাথান আর তার কিডনি, লিভার, অগ্নাশয়, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এসব দানের ব্যাপারে সামান্য কথা বলেই চোখ মুদল।
নিক ঘুমালে তার বাবা-মা গ্যারির সাথে কথা বলল। তারা নিকের এই অঙ্গদান নিয়ে যে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে তা বুঝা গেল। কারণ তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে তাদের সন্তান নিক ব্রিচকে আসলে ঠিক কখন “মৃত” বলে ধরা হবে আর তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হবে।
নিকের বাবা-মার এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব আসলে অঙ্গ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা পদ্ধতির ইতিহাসেরই এক প্যারাডক্স। অঙ্গদাতা হতে হলে আইন অনুসারে দাতাকে হতে হবে মৃত, নচেৎ এটাকে ‘খুন’ বলে বিবেচিত হবে আদালতে।তাই কোন ব্যাক্তি যত মারাত্মক অসুস্থ কিংবা সংকটাপন্ন ইনজুরিতেই পড়ুক না কেন প্রথমে তাকে মারা যেতে হবে। আবার অন্যদিকে কারো দেহে যে অঙ্গগুলো প্রতিস্থাপিত করতে হবে সেগুলোকে হতে হবে জীবিত যেমনঃ স্পন্দিত হতে থাকা হৃৎপিণ্ড কিংবা কর্মক্ষম কিডনি/ফুসফুস ইত্যাদি।
তাহলে কিভাবে কোথায় পাওয়া যাবে এমন মানুষ যার দেহ জীবিত কিন্তু নিজে মৃত?!
এই ধাঁধাঁর উত্তর খুঁজতে গিয়েই জন্ম হল “মৃত্যুর আধুনিক সংজ্ঞা”র যা চিকিৎসকদের দিল অসাধ্য সাধনের ক্ষমতা। পঞ্চশের দশকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্র বা রেস্পিরেটর প্রতিটা হাসপাতালেই ব্যবহৃত হওয়া শুরু হল। এই রেস্পিরেটরগুলো ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য ছিল পোলিও আক্রান্ত বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য ফিরে পাবার আগ পর্যন্ত তাদের শ্বাস নিতে সাহায্য করা। কিন্তু শীঘ্রই চিকিৎসকরা এর ব্যবহার শুরু করলেন মারাত্মকভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে। মস্তিষ্কের এই মারাত্মক ক্ষতির কারণ ছিল মাথায় তীব্র আঘাত কিংবা স্ট্রোক বা কার্ডিয়াক এরেস্টের সময় ব্রেইনে অক্সিজেন সংকট।
দেখা যেত- এমন রোগীদের কেউ কেউ পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে ফলে আর রেস্পিরেটর লাগছে না। কিন্তু এমন অনেক রোগী পাওয়া গেল যারা যন্ত্র ছাড়া নিজ থেকে শ্বাস নিতে অক্ষম, মস্তিষ্ক পুরোই নিষ্ক্রিয় আর প্রবল উদ্দীপনাতেও কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাত না, শনাক্ত করার মত কোন বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকর্মও তাদের মস্তিষ্কে অনুপস্থিত থাকত তবে হার্ট সক্ষম থাকত। এভাবে একটা সময় পর দেখা যেত তাদের হৃৎপিণ্ড আর চলছে না- তবে সে সময়টা কয়েক ঘন্টা থেকে নিয়ে কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্তও গড়াত।
তখন ডাক্তাররা নিজেরাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করল- “এমন অবস্থায় রেস্পিরেটর সরিয়ে নেয়াটা কি বলে বিবেচিত হবে- খুন, বেশি কষ্টে না ভুগতে দিয়ে দয়া দেখিয়ে দ্রুত মেরে ফেলা যাকে বলে মার্সি কিলিং নাকি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মৃত্যু?
এসময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানী রা অপরিহার্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়েও কাজ করছিলেন।তারা দেখলেন এসব মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় রোগীরা হতে পারে প্রতিস্থাপন উপযোগী জীবিত অঙ্গের একেবারে উৎকৃষ্ট উৎস। তখন হার্ভার্ডের এনেস্থলজিস্ট হেনরি বিচার ১০অজন চিকিৎসক, একজন আইনজীবী ও একজন ইতিহাসবেত্ত্বাক ে নিয়ে গঠন করলেন “দ্য হার্ভার্ড কমিটি” যার কাজ হচ্ছে কৃত্রিম লাইফ সাপোর্ট আর অঙ্গ দান এর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা। এর পরের বছরেই “Journal of the American Medical Association” এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারা ঘোষণা করলেন- “চিকিৎসাবিজ্ঞান মৃত্যুর এক নতুন সংজ্ঞা গ্রহণের জন্য তৈরি হয়েছে যেটা হল – যদি কোন ব্যক্তি স্থায়ী মস্তিষ্কের ক্ষতির ফলে অপ্রত্যাগামীভাব ে কোমায় চলে যায় তবে সেটাকে তাকে ‘মৃত’ বলা যাবে; তার হৃৎপিণ্ড বিট করুক বা না করুক”।
এর নাম দেয়া হল- ব্রেইন ডেড।
আর এই সংজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে বদলে গেল মৃত্যুর চিরাচরিত সংজ্ঞা। শল্যচিকিৎসা প্রবেশ করল ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব যুগে। এতে একদিকে যেমন মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় অবস্থার ব্যক্তিদের থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে কোন নৈতিক সমস্যা রইল না আর অপরদিকে এর মাধ্যমে কিছু ‘মৃত’ ব্যক্তি পাওয়া গেল যাদের হৃৎপিণ্ড তখনো ধুকধুক করছে। ফলে তাদের দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপনও করা যাচ্ছে। । সমধান মিলল “মৃত ব্যক্তি কিন্তু জীবিত দেহ” পাবার প্যারাডক্সের ( কিন্তু আসলেই কি?! )
দেখা গেল সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মোট ৫০টার মাঝে মাত্র ২৭টা রাষ্ট্র ব্রেইন ডেথের এই সংজ্ঞাকে আইনগতভাবে গ্রহণ করেছে। ফলে এমন অবস্থাটা এমন দাঁড়াল ধরেন বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগে কাউকে মৃত বলা হলেও চিটাগাঙে নিয়ে গেলে সেখানকার আইনানুযায়ী সে জীবিত! ফলে লাইফ সাপোর্ট সরালেই ডাক্তাররা হয়ে যাচ্ছে “খুনী”! বিশাল সমস্যা।
1980 সালে প্রেসিডেন্ট কার্টার দ্বারা নিযুক্ত একটি কমিশন মডেল হিসেবে সর্বজনীন মৃত্যুর সংজ্ঞা খোঁজার দিকে নজর দিল। গঠিত কমিশন ডাক্তারদেরকে হার্ভার্ড কমিটি দ্বারা প্রস্তাবিত স্নায়বিক মাপকাঠির ভিত্তিতে মৃত (ব্রেইন ডেড) ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করল। অবশেষে, এই সুপারিশ পঞ্চাশটি রাজ্যের সবকটাতেই গৃহীত হল।
এর ফলে ডাক্তারিভাবে মৃত বা ক্লিনিক্যালি ডেড না হয়েও মানুষ হয়ে যেতে লাগল আইনগতভাবে মৃত বা লিগ্যালি ডেড।
কমিশন এখানেই থামল না। তারা সকল মানুষকেও ব্রেইন ডেথই যে আসলে ডেথ এটা বোঝানোর জন্য দুইটি যুক্তির ভিত্তিতে সবাইকে বুঝাতে লাগল।
এর একটিকে বলা হয়- Higher Brain তত্ত্ব। এ তত্ত্ব মোতাবেক কোন ব্যক্তিকে ব্রেইন ডেড বলা যেতে পারে যদি তার মস্তিষ্কের “নিওকরটেক্স” যা একজন মানুষের চিন্তা, যুক্তি, আবেগ-অনুভূতি তথা সমগ্র সচেতনতা বা কনশাসনেসকে নিয়ন্ত্রণ করে তা পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেলে। কিন্তু এটা বিতর্কিত হল।
তখন দেখানো হল- Whole Brain তত্ত্বকে। যেটা বলে ব্রেইন ডেড হতে হলে নিওকর্টেক্সকে তো অকেজো হতেই হবে তার সাথে অকেজো হতে হবে ব্রেইন স্টেমকেও। যারা একটু বায়োলজি পড়েছি তারা জানি যে এই ব্রেইন স্টেম সকল মৌলিক শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রন করে যেমনঃ শ্বসন, রেচন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। কারণ এক্ষেত্রে শুধু সচেতনতাই নেই তা নয় বরং নেই পুরো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এক হয়ে কাজ করার ক্ষমতা।
নিক ঘুমালে তার বাবা-মা গ্যারির সাথে কথা বলল। তারা নিকের এই অঙ্গদান নিয়ে যে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে তা বুঝা গেল। কারণ তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে
নিকের বাবা-মার এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব আসলে অঙ্গ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা পদ্ধতির ইতিহাসেরই এক প্যারাডক্স। অঙ্গদাতা হতে হলে আইন অনুসারে দাতাকে হতে হবে মৃত, নচেৎ এটাকে ‘খুন’ বলে বিবেচিত হবে আদালতে।তাই কোন ব্যাক্তি যত মারাত্মক অসুস্থ কিংবা সংকটাপন্ন ইনজুরিতেই পড়ুক না কেন প্রথমে তাকে মারা যেতে হবে। আবার অন্যদিকে কারো দেহে যে অঙ্গগুলো প্রতিস্থাপিত করতে হবে সেগুলোকে হতে হবে জীবিত যেমনঃ স্পন্দিত হতে থাকা হৃৎপিণ্ড কিংবা কর্মক্ষম কিডনি/ফুসফুস ইত্যাদি।
তাহলে কিভাবে কোথায় পাওয়া যাবে এমন মানুষ যার দেহ জীবিত কিন্তু নিজে মৃত?!
এই ধাঁধাঁর উত্তর খুঁজতে গিয়েই জন্ম হল “মৃত্যুর আধুনিক সংজ্ঞা”র যা চিকিৎসকদের দিল অসাধ্য সাধনের ক্ষমতা। পঞ্চশের দশকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্র বা রেস্পিরেটর প্রতিটা হাসপাতালেই ব্যবহৃত হওয়া শুরু হল। এই রেস্পিরেটরগুলো ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য ছিল পোলিও আক্রান্ত বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য ফিরে পাবার আগ পর্যন্ত তাদের শ্বাস নিতে সাহায্য করা। কিন্তু শীঘ্রই চিকিৎসকরা এর ব্যবহার শুরু করলেন মারাত্মকভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে। মস্তিষ্কের এই মারাত্মক ক্ষতির কারণ ছিল মাথায় তীব্র আঘাত কিংবা স্ট্রোক বা কার্ডিয়াক এরেস্টের সময় ব্রেইনে অক্সিজেন সংকট।
দেখা যেত- এমন রোগীদের কেউ কেউ পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে ফলে আর রেস্পিরেটর লাগছে না। কিন্তু এমন অনেক রোগী পাওয়া গেল যারা যন্ত্র ছাড়া নিজ থেকে শ্বাস নিতে অক্ষম, মস্তিষ্ক পুরোই নিষ্ক্রিয় আর প্রবল উদ্দীপনাতেও কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাত না, শনাক্ত করার মত কোন বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকর্মও তাদের মস্তিষ্কে অনুপস্থিত থাকত তবে হার্ট সক্ষম থাকত। এভাবে একটা সময় পর দেখা যেত তাদের হৃৎপিণ্ড আর চলছে না- তবে সে সময়টা কয়েক ঘন্টা থেকে নিয়ে কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্তও গড়াত।
তখন ডাক্তাররা নিজেরাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করল- “এমন অবস্থায় রেস্পিরেটর সরিয়ে নেয়াটা কি বলে বিবেচিত হবে- খুন, বেশি কষ্টে না ভুগতে দিয়ে দয়া দেখিয়ে দ্রুত মেরে ফেলা যাকে বলে মার্সি কিলিং নাকি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মৃত্যু?
এসময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানী
এর নাম দেয়া হল- ব্রেইন ডেড।
আর এই সংজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে বদলে গেল মৃত্যুর চিরাচরিত সংজ্ঞা। শল্যচিকিৎসা প্রবেশ করল ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব যুগে। এতে একদিকে যেমন মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় অবস্থার ব্যক্তিদের থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে কোন নৈতিক সমস্যা রইল না আর অপরদিকে এর মাধ্যমে কিছু ‘মৃত’ ব্যক্তি পাওয়া গেল যাদের হৃৎপিণ্ড তখনো ধুকধুক করছে। ফলে তাদের দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপনও করা যাচ্ছে। । সমধান মিলল “মৃত ব্যক্তি কিন্তু জীবিত দেহ” পাবার প্যারাডক্সের ( কিন্তু আসলেই কি?! )
দেখা গেল সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মোট ৫০টার মাঝে মাত্র ২৭টা রাষ্ট্র ব্রেইন ডেথের এই সংজ্ঞাকে আইনগতভাবে গ্রহণ করেছে। ফলে এমন অবস্থাটা এমন দাঁড়াল ধরেন বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগে কাউকে মৃত বলা হলেও চিটাগাঙে নিয়ে গেলে সেখানকার আইনানুযায়ী সে জীবিত! ফলে লাইফ সাপোর্ট সরালেই ডাক্তাররা হয়ে যাচ্ছে “খুনী”! বিশাল সমস্যা।
1980 সালে প্রেসিডেন্ট কার্টার দ্বারা নিযুক্ত একটি কমিশন মডেল হিসেবে সর্বজনীন মৃত্যুর সংজ্ঞা খোঁজার দিকে নজর দিল। গঠিত কমিশন ডাক্তারদেরকে হার্ভার্ড কমিটি দ্বারা প্রস্তাবিত স্নায়বিক মাপকাঠির ভিত্তিতে মৃত (ব্রেইন ডেড) ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করল। অবশেষে, এই সুপারিশ পঞ্চাশটি রাজ্যের সবকটাতেই গৃহীত হল।
এর ফলে ডাক্তারিভাবে মৃত বা ক্লিনিক্যালি ডেড না হয়েও মানুষ হয়ে যেতে লাগল আইনগতভাবে মৃত বা লিগ্যালি ডেড।
কমিশন এখানেই থামল না। তারা সকল মানুষকেও ব্রেইন ডেথই যে আসলে ডেথ এটা বোঝানোর জন্য দুইটি যুক্তির ভিত্তিতে সবাইকে বুঝাতে লাগল।
এর একটিকে বলা হয়- Higher Brain তত্ত্ব। এ তত্ত্ব মোতাবেক কোন ব্যক্তিকে ব্রেইন ডেড বলা যেতে পারে যদি তার মস্তিষ্কের “নিওকরটেক্স” যা একজন মানুষের চিন্তা, যুক্তি, আবেগ-অনুভূতি তথা সমগ্র সচেতনতা বা কনশাসনেসকে নিয়ন্ত্রণ করে তা পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেলে। কিন্তু এটা বিতর্কিত হল।
তখন দেখানো হল- Whole Brain তত্ত্বকে। যেটা বলে ব্রেইন ডেড হতে হলে নিওকর্টেক্সকে তো অকেজো হতেই হবে তার সাথে অকেজো হতে হবে ব্রেইন স্টেমকেও। যারা একটু বায়োলজি পড়েছি তারা জানি যে এই ব্রেইন স্টেম সকল মৌলিক শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রন করে যেমনঃ শ্বসন, রেচন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। কারণ এক্ষেত্রে শুধু সচেতনতাই নেই তা নয় বরং নেই পুরো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের
আস্তে আস্তে মানুষ মৃত্যুর আধুনিক সংজ্ঞাকে বুঝতে লাগল।নিকের বাবা-মা কিছু বুঝলেন , কিছু বুঝলেন না। তারা ভয় পেতেন এই ভেবে যে- নিক মরার আগেই না তাকে ব্রেইন ডেড ঘোষণা করে তার অঙ্গগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য নিয়ে নেয়।
তবে তাদের ভয়ের আরো কারণ ছিল। নিকের
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ জানান- “নিকের টিউমারটা ব্রেইন স্টেম এ। ফলে সবচেয়ে খারাপ কেস হতে পারে যে তার পুরো দেহটা অকেজো হয়ে গেল কিন্তু নিওকরটেক্স অকেজো না হবার কারণে তার চিন্তা-চেতনার অংশটা ক্রিয়াশীল থাকল। সেক্ষেত্রে নিক হয়ে যাবে নিজের ব্রেইনের মাঝেই আটকে পড়া এক সচেতন সত্ত্বা”
এরপর কি হয়েছিল নিকের? সে কি দান করে যেতে পেরেছিল তার অঙ্গগুলো? না সে শুধু স্মৃতির মধ্যে আটকে পড়া এক বুদ্ধিমান সত্ত্বায় পরিণত হবার মত করুণ পরিণতি বরণ করেছিল?
১৭৯১ সাল,
ফরাসি জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করল যে, সব মৃত্যুদণ্ডই শিরচ্ছেদ এর মাধ্যমে কার্যকর করা উচিত। যার পরামর্শের উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তিনি হলেন ড. জোসেফ গিলোটিন যিনি বলেছিলেন “প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতির চেয়ে এটি বেশি মানবিক” । কিন্তু গিলোটিন ব্যবহার শুরু হতে না হতেইন, বিতর্ক দানা বেধে উঠল শিরচ্ছেদ কতটা মানবিক এ ব্যাপারে। যখন শার্লট কর্ডেকে ১৭৯৩ সালে গিলোটিনে শিরচ্ছেদের পর তার কাটা মাথাতে গালে চড় দিলে লজ্জা পাবার ন্যায় প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। প্রত্যক্ষদর্শীর
ড. গিলোটিন নিজেই প্রশ্ন তুললেন-
“আপনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না দ্বিখণ্ডিত হবার সাথে সাথে কি তার অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব আর আত্মমর্যাদা তাৎক্ষণিক লোপ পেয়ে যায়?” ]
“আপনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না দ্বিখণ্ডিত হবার সাথে সাথে কি তার অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব আর আত্মমর্যাদা তাৎক্ষণিক লোপ পেয়ে যায়?” ]
ব্রেইন ডেথই কি শেষকথা?
মৃত্যুর দু'মাস পর মায়ের মৃতদেহ জন্ম দিল জীবিত সন্তান!"Doctor Strange" মুভিটা যারা দেখেছেন তারা জানেন ড. নিক ওয়েস্ট এপনিয়া আর ব্রেইনস্টেম রিফ্লেক্স ফেইলুর হবার পর এক লোককে ব্রেইন ডেড ঘোষণা করে আর তার পরিবারের সম্মতিতে অরগ্যান সংগ্রহের জন্য নিয়ে যায়, তখনি ড. স্ট্র্যাঞ্জ এসে বাধা দেন। বলেন লোকটার অরগ্যান ডোনেশন দরকার না বরং দরকার সাবক্সিপেটাল ক্রেনিওটমি।তার ব্রেইনের ভিতর বুলেট ঢুকে আছে। আর বুলেটের গা শক্ত করা হয় লেড আর এন্টিমনি দ্বারা যা খুবি বিষাক্ত। এরা সেরেব্রাল স্পাইনাল ফ্লুয়িড (CSF) এর সাথে মিশে গেছে আর এজন্যেই রোগীর সেন্ট্রাল নার্ভাস শাট-ডাউন হয়েছে। মানে সে ব্রেইন ডেড বা মৃত না বরং মারা যাচ্ছে। এবং সফল অপারেশনের পর পামার গিয়ে ‘লাশ’ গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা পরিজনকে যখন এই সুসংবাদ দেয়- তাদের আনন্দের কোন সীমা থাকে না।
এখন প্রশ্ন হল- বাস্তবেও কি এমন হয়?
চলুন একটা কেইসের সাথে সাথে ব্রেইন ডেথ নির্ণয়ের প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও কিছুটা পরিচিত হয়ে আসি-
এখন প্রশ্ন হল- বাস্তবেও কি এমন হয়?
চলুন একটা কেইসের সাথে সাথে ব্রেইন ডেথ নির্ণয়ের প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও কিছুটা পরিচিত হয়ে আসি-
হাভানায় অনুষ্ঠিত "Third International Symposium on Coma and Death" এর কনফারেন্সে ক্যালিফোর্নিয়ার শিশু নিউরোবিশেষজ্ঞ ড. এলান শ্যুমন বয়োসন্ধিতে উপনিত ম্যাথিউ নামের এক ছেলের ভিডিও দেখান। তার শরীরে দুটি টিউব লাগানো - একটি পাকস্থলীতে আর অপরটি গলায়। রেস্পিরেটরের সাহায্যে তার বুক উঠা-নামা করছিল। অন্যথায় তা পুরো স্থবির । ড. এলান কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করেন ছেলেটার উপর। তিনি ছেলেটার চোখে হালকা আলো ফেললেন, মাথার কাছে বিশেষ ঝুনঝুনি বাজালেন, নাকের ভিতর দিয়ে একটা সোয়াব ঢুকিয়ে দিলেন, কানের ভিতর প্রচুর ঠাণ্ডা পানি প্রবেশ করালেন, জিহ্বায় একটু লেবুর রস দিলেন, আস্তে ঘা দিয়ে পরীক্ষা করলেন। কিন্তু এতগুলো পরীক্ষার কোনটিতেই ম্যাথিউ কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া দেখাল না।
এবারে একজন নার্স এসে গলায় লাগানো টিউবটা খুলে দিলেন আর নিঃশ্বাসের বাতাসের শুন্যতা তৈরি করলেন। দেখা গেল ছেলেটা কোন কাশি দিল না। এরপর আরো কিছু নিয়মমাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষ ায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন- যার মাঝে একটা EEG যা ফ্ল্যাটলাইন দেখাল। এরমানে ম্যাথিউ ব্রেইনডেড অর্থাৎ মৃত ।
হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঘটল। কিছু বরফ ঠাণ্ডা পানি ভুলক্রমে ছেলেটার কাধের উপর পড়ল। আর তখনই সেখানে ত্বক নড়ে উঠল আর সাথে সাথে গা কাটা দিয়ে ওঠল যা স্বাভাবিক শরীরে ঠাণ্ডা লাগার প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ব্রেইন ডেড কোন ব্যক্তি এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না। এলান ম্যাথিউর বাহু কবজিতে ধরে উচু করলেন আর হাতটা ছোট একটা ঝাঁকুনি দিয়ে চেপে এল। এলান এটাকে বললেন - ক্লোনাস অর্থাৎ অনৈচ্ছিকভাবে স্নায়ুর সংকোচন আর প্রসারণ। তখন ড, এলান জানালেন - চার বছর বয়সের মাথায় মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ছেলেটার ব্রেইন এত বেশি স্ফীত হয়ে ওঠে আর স্কালে চিড় ধরে যে, ব্রেইন ডেড হবার সব ক্রাইটেরিয়াই পূর্ণ করে। কিন্তু তার মা এত দ্রুতই তার ছোট বাচ্চাকে চিরবিদায় জানাতে তৈরি ছিলেন না আর তিনি ম্যাথিউর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলতে অস্বীকৃতি জানান। আর বাচ্চাটাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। একটা খাবারের টিউব আর একটা ভেন্টিলেটরের সাহায্যে বিগত ১৩ বছর যাবত সে এভাবেই বেড়ে ওঠেছে আর সেরে ওঠেছে আঘাত ও অসুস্থতা। তার দেহে একটা সোমাটিক সমন্বয়তা ধরে রেখেছে , একটা আভ্যন্তরিণ হারমোনি বজায় রেখে চলেছে। যদি "Whole-Brain" তত্ত্ব সঠিকই হয়, তাহলে সোজাকথায় তার এটা করতে পারা সম্ভব না। তিনি শেষ করলেন একটা প্রশ্ন রেখে-“ব্রেইনডেড মানে কি তার সত্ত্বার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই?”
এবারে একজন নার্স এসে গলায় লাগানো টিউবটা খুলে দিলেন আর নিঃশ্বাসের বাতাসের শুন্যতা তৈরি করলেন। দেখা গেল ছেলেটা কোন কাশি দিল না। এরপর আরো কিছু নিয়মমাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষ
হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঘটল। কিছু বরফ ঠাণ্ডা পানি ভুলক্রমে ছেলেটার কাধের উপর পড়ল। আর তখনই সেখানে ত্বক নড়ে উঠল আর সাথে সাথে গা কাটা দিয়ে ওঠল যা স্বাভাবিক শরীরে ঠাণ্ডা লাগার প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ব্রেইন ডেড কোন ব্যক্তি এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না। এলান ম্যাথিউর বাহু কবজিতে ধরে উচু করলেন আর হাতটা ছোট একটা ঝাঁকুনি দিয়ে চেপে এল। এলান এটাকে বললেন - ক্লোনাস অর্থাৎ অনৈচ্ছিকভাবে স্নায়ুর সংকোচন আর প্রসারণ। তখন ড, এলান জানালেন - চার বছর বয়সের মাথায় মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ছেলেটার ব্রেইন এত বেশি স্ফীত হয়ে ওঠে আর স্কালে চিড় ধরে যে, ব্রেইন ডেড হবার সব ক্রাইটেরিয়াই পূর্ণ করে। কিন্তু তার মা এত দ্রুতই তার ছোট বাচ্চাকে চিরবিদায় জানাতে তৈরি ছিলেন না আর তিনি ম্যাথিউর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলতে অস্বীকৃতি জানান। আর বাচ্চাটাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। একটা খাবারের টিউব আর একটা ভেন্টিলেটরের সাহায্যে বিগত ১৩ বছর যাবত সে এভাবেই বেড়ে ওঠেছে আর সেরে ওঠেছে আঘাত ও অসুস্থতা। তার দেহে একটা সোমাটিক সমন্বয়তা ধরে রেখেছে , একটা আভ্যন্তরিণ হারমোনি বজায় রেখে চলেছে। যদি "Whole-Brain" তত্ত্ব সঠিকই হয়, তাহলে সোজাকথায় তার এটা করতে পারা সম্ভব না। তিনি শেষ করলেন একটা প্রশ্ন রেখে-“ব্রেইনডেড
এতক্ষণ আপনারা ব্রেইনডেথ নির্ণয়ের যে একটা লম্বা কার্যপ্রণালী আছে তার কিছু অংশ দেখতে পেলেন। ব্রেইনডেথ নির্ণয় অনেক সময় ধরে চলা বিরাট লম্বা একটা প্রসেস। আর এই পরীক্ষাগুলো কমপক্ষে ৩ বার রিপিট করে ৩ জন আলাদা আলাদা ডাক্তার যদি ঘোষণা দেয় “ব্যক্তি ব্রেইনডেড” তবেই সে ব্রেইনডেড। এভাবে যাদেরকে ব্রেইনডেড ঘোষণা করা হয়েছে তাদের জেগে ওঠার কোন নজির মেডিক্যাল ইতিহাসে নেই। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই – যখন এত সময় ব্যয় না করে ২০-২৫ মিনিটে EEG করে কিংবা ECoG বা MEG বা fMRI করে একজন ডাক্তারের কথাতেই ব্রেইন ডেথ নির্ধারণ করা হয়ে যায়। যেমন হয়েছে ‘Doctor Strange’ মুভিতে। কিন্তু তবুও তো প্রশ্ন থেকে যায়- ব্রেইনডেথই যদি শেষকথা ম্যথিউর ব্যাপারটা তবে কি?
সত্যিকথা বলতে এর পরিপূর্ণ কোন ব্যাখ্যা মেডিক্যাল সাইন্স দিতে পারে না। কমেন্টে ব্রেইনডেড এক লোকের হাত নাড়ানোর একটা ভিডিও দেয়া হল। আপনারাই একটু দেখে ভাবুন তো – একে কি বলবেন?
মৃত্যুর পর এমন নড়াচড়ার ডাক্তারি নাম- ল্যাজারাস সাইন। আগের দিনে হলে মানুষ ভূত ভেবে লাশ ফেলে দৌড় দিত, এখনো দিবে যারা জানে না। আশা করি। আপনারাও এখন আর দৌড়াবেন না।
এবার আসি অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ২২ বছর বয়সী কারলা পেরেজ থাকেন নেব্রাস্কার ওয়াটারলুতে।তিনি
পেরেজের ছোট্ট মেয়ে, তার বাবা-মা তো আছেই হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা পর্যন্ত দ্বন্দ্বে পরে গেল- ব্রেইন ডেড মানেই স্রেফ ডেড।কিন্তু কিভাবে একটা দেহ যে নিজের ভিতর সম্পূর্ণ সুস্থ একজন জীবিত সত্ত্বাকে ধারণ করে আছে,যার হৃদপিণ্ড চলছে, ভেন্টিলেটরের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, শরীর স্বাভাবিক দেহের মতই উষ্ণ; তাকে স্রেফ প্রাণহীন একটা লাশ বলে ধরে নেয়া যায়?
পেটের বাচ্চার কথা চিন্তা করে ১০০ জনের উপরে মতো ডাক্তার, নার্স আর অন্যান্য হাসপাতাল কর্মীদের সমন্বয়ে একটা দল গঠিত হল যারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় রুটিনমাফিক পেরেজের রক্তচাপ, অক্সিজেন লেভেল, ফিটাসের পুষ্টির জন্য পেটে দেয়া টিউব, রেচন ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।আর সবাই পেরেজকে লাশ নয় বরং একজন জীবিত ব্যক্তির মর্যাদা-ই দিতে লাগল। দলের কো-লিডার ডাক্তার টড লভগ্রেনের ভাষায়- “আমি একজন তরূণীকে দেখছি যার হাতে নেইলপলিশ করা, চুলগুলো আঁচড়ানো, পরিপাটি পোশাক পরিহিতা যেগুলো তার মা করে দিয়েছে; আর তার হাত-পায়ের পাতা কেমন উষ্ণ......ব্রেই ন কাজ করুক বা না করুক আমি তাকে মনুষ্যত্বহীন একটা লাশ বলে ভাবতে পারছি না”
দশদিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি দেখা গেল পেরেজের রক্ত আর জমাট বাধতে পারছে না।পরিষ্কার নিদর্শন যে সে মারা গেছে। কিন্তু ২৪ সপ্তাহের ফিটাসকে সিজার করে বের করার উপযুক্ত তখনো হয় নি।
তখন ডাক্তাররা নিলেন এক অভিনব কৌশল- বিশেষ হরমোন আর ঔষধের সাহায্যে রক্তকে পানি হউয়া থেকে রোধ করলেন আর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করলেন যাতে বাচ্চার কোন ক্ষতি না নয়।
এভাবে চলতে চলতে ঠিক ৫৪ দিন পর এপ্রিলের ৪ তারিখে সিজারের উপযুক্ত হয়ে গেলে অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নিল এক সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে সন্তান। তার নাম রাখা হল- “এঞ্জেল” ।এরপর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়ে দাফন করা হল পেরেজকে।মৃত্যুর ৯ সপ্তাহ পর মৃত মা জন্ম দিল সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের!!! এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কি হতে পারে!
এখন প্রশ্ন হল- পেরেজের মৃত্যুর তারিখ আপনি কোনটা বলবেন- আদালত অনুসারে ৯ ফেব্রুয়ারি নাকি এঞ্জেলের জন্মদিন অর্থাৎ ৪ এপ্রিল?
এটাই যে আরেক বিশাল প্যারাডক্স!
দশদিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি দেখা গেল পেরেজের রক্ত আর জমাট বাধতে পারছে না।পরিষ্কার নিদর্শন যে সে মারা গেছে। কিন্তু ২৪ সপ্তাহের ফিটাসকে সিজার করে বের করার উপযুক্ত তখনো হয় নি।
তখন ডাক্তাররা নিলেন এক অভিনব কৌশল- বিশেষ হরমোন আর ঔষধের সাহায্যে রক্তকে পানি হউয়া থেকে রোধ করলেন আর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করলেন যাতে বাচ্চার কোন ক্ষতি না নয়।
এভাবে চলতে চলতে ঠিক ৫৪ দিন পর এপ্রিলের ৪ তারিখে সিজারের উপযুক্ত হয়ে গেলে অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নিল এক সুস্থ স্বাভাবিক ছেলে সন্তান। তার নাম রাখা হল- “এঞ্জেল” ।এরপর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়ে দাফন করা হল পেরেজকে।মৃত্যুর
এখন প্রশ্ন হল- পেরেজের মৃত্যুর তারিখ আপনি কোনটা বলবেন- আদালত অনুসারে ৯ ফেব্রুয়ারি নাকি এঞ্জেলের জন্মদিন অর্থাৎ ৪ এপ্রিল?
এটাই যে আরেক বিশাল প্যারাডক্স!
যে মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছে সমগ্র পৃথিবী- জাহি ম্যাকমেথ কেইস
২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর জাহি ম্যাকমেথ নামের ১৩ বছরের এক মেয়েকে ওকল্যান্ড শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় টনসিলেকটমি অর্থাৎ সার্জারির মাধ্যমে উভয় টনসিল গ্ল্যান্ড বের করে ফেলার জন্য। সার্জারির পর জাহির জ্ঞান ফেরে এবং তার মায়ের নিকট পপসিকল আইসক্রিম খেতে চায়। কিন্তু জাহির আইসক্রিম খাওয়া আর হয় না। হঠাৎই প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের ফলে সে কার্ডিয়াক এরেস্টের শিকার হয়। ১২ ডিসেম্বর মস্তিষ্কে রক্তশূন্যতার জন্য মস্তিষ্ক-ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তাকে ডাক্তাররা ব্রেইন ডেড ঘোষণা করে।
জাহির বাবা-মাকে বলা হয় তাদের মেয়ে আইনগতভাবে মারা গেছে এবং তার লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু জাহির বাবা-মা ব্রেইন ডেথ এর এই সংজ্ঞাকে মৃত্যু মানতে কোনক্রমেই রাজি হয় না। তারা লাইফ সাপোর্ট চালিয়ে যেতে বলে। ২০ ডিসেম্বর তারা আলামেডা সুপিরিয়র কোর্ট এ হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে যাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জাহির লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে না পারে। তখন আদালতের নির্দেশে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুলের নিউরোসার্জন ড. গ্রাহাম ফিশারকে নিয়োগ দেয়া হয় নিরপেক্ষভাবে জাহির মস্তিষ্ক পরীক্ষা করতে। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে পেডিয়াট্রিক নিওন্যাটোলজিস্ট ড. পল বার্ন যিনি ব্রেইন ডেথকে মৃত্যুর সংজ্ঞা মানার বরাবর বিরুদ্ধে তাকে দিয়ে জাহির অবস্থা পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষ ার পর ২৩ ডিসেম্বর ড. গ্রাহাম ফিশার জাহিকে "Whole Brain" তত্ত্ব মোতাবেক ব্রেইন ডেড বলে প্রতিবেদন জমা দেন। তাই ২৪ ডিসেম্বর আদালত পরিবারের আবেদন নাকচ করে দিয়ে জাহিকে মৃত বলে রায় ঘোষণা করে তবে পরিবারের আকুল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জাহির লাইফ সাপোর্ট ৩০ ডিসেম্বর এবং পরে আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে পরের বছর ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। ৩০ ডিসেম্বরেই পরিবার ক্যালিফোর্নিয়া আপিল কোর্ট আর আমেরিকান ডিসট্রিক্ট কোর্ট ফর নর্থ ডিস্ট্রিক্ট অফ ক্যালিফোর্নিয়াত ে দুইটা পৃথক মামলা দায়ের করে জাহির লাইফ সাপোর্ট চালিয়ে যাবার জন্য। তার মায়ের দাবী, "ইউনিফর্ম ডিটারমিনেশন অফ ডেথ এক্ট" (UDDA) এর অধীনে মৃত্যুর যে সংজ্ঞা গোটা আমেরিকায় প্রচলিত এটা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অধিকারের বিরুদ্ধে যায় কারণ জাহির হৃৎপিণ্ড তো চলছে, মানে সে জীবিত।
আর শুরু হয়ে যায় যুক্তি বনাম বিশ্বাসের এক অঘোষিত লড়াই।
জাহির বাবা-মাকে বলা হয় তাদের মেয়ে আইনগতভাবে মারা গেছে এবং তার লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু জাহির বাবা-মা ব্রেইন ডেথ এর এই সংজ্ঞাকে মৃত্যু মানতে কোনক্রমেই রাজি হয় না। তারা লাইফ সাপোর্ট চালিয়ে যেতে বলে। ২০ ডিসেম্বর তারা আলামেডা সুপিরিয়র কোর্ট এ হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে যাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জাহির লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে না পারে। তখন আদালতের নির্দেশে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুলের নিউরোসার্জন ড. গ্রাহাম ফিশারকে নিয়োগ দেয়া হয় নিরপেক্ষভাবে জাহির মস্তিষ্ক পরীক্ষা করতে। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে পেডিয়াট্রিক নিওন্যাটোলজিস্ট
আর শুরু হয়ে যায় যুক্তি বনাম বিশ্বাসের এক অঘোষিত লড়াই।
কিন্তু বিশ্বাসের স্থান আদালতে নেই।যুক্তির বিচারে আদালতের রায় বিপক্ষে চলে যায় জাহি ও ম্যাকমেথ পরিবারের।
হাসপাতাল থেকে বলা হয়, মৃত লাশের জন্য কোন ডাক্তার কিংবা নার্সের প্রয়োজন নেই। আর জাহির শরীরের মৃদু নড়চড়া “ল্যাজারাস সাইন” মাত্র। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর ম্যাকবেথ পরিবারের মধ্যে একটা মীমাংসা হয় এইভাবে- জাহিকে তারা হাসপাতাল থেকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর আর ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডসহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে পারবে তবে তারা আর কোন প্রকার সহায়তা করতে পারবে না।আর মৃতদেহ হস্তান্তরের নিয়ম অনুযায়ী তারা জাহিকে আলামেডার মর্গের করোনারের নিকট হস্তান্তর করবে যেখান থেকে জাহির ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেয়া হবে। তারপর সেখান থেকে তারা লাশকে যা করতে চায় করতে পারে। এমনকি হাসপাতাল ডাক্তারদের দিয়ে জাহির মা-বাবার করা দাবী “জাহির গলায় ট্রাকিওটমি করে খাবারের নল লাগিয়ে দেয়া”র দাবীও আদালত কর্তৃক খারিজ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আদালত এসময় জাহিকে অতীতকালের ক্রিয়া দ্বারা সম্বোধন করে কিন্তু তার মা তাকে নিয়ে কথা করে বর্তমান কালের ক্রিয়ায়। (উইকিপিডিয়াতেও তাই পাবেন)।
হাসপাতাল থেকে বলা হয়, মৃত লাশের জন্য কোন ডাক্তার কিংবা নার্সের প্রয়োজন নেই। আর জাহির শরীরের মৃদু নড়চড়া “ল্যাজারাস সাইন” মাত্র। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর ম্যাকবেথ পরিবারের মধ্যে একটা মীমাংসা হয় এইভাবে- জাহিকে তারা হাসপাতাল থেকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর আর ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডসহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে পারবে তবে তারা আর কোন প্রকার সহায়তা করতে পারবে না।আর মৃতদেহ হস্তান্তরের নিয়ম অনুযায়ী তারা জাহিকে আলামেডার মর্গের করোনারের নিকট হস্তান্তর করবে যেখান থেকে জাহির ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেয়া হবে। তারপর সেখান থেকে তারা লাশকে যা করতে চায় করতে পারে। এমনকি হাসপাতাল ডাক্তারদের দিয়ে জাহির মা-বাবার করা দাবী “জাহির গলায় ট্রাকিওটমি করে খাবারের নল লাগিয়ে দেয়া”র দাবীও আদালত কর্তৃক খারিজ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আদালত এসময় জাহিকে অতীতকালের ক্রিয়া দ্বারা সম্বোধন করে কিন্তু তার মা তাকে নিয়ে কথা করে বর্তমান কালের ক্রিয়ায়। (উইকিপিডিয়াতেও তাই পাবেন)।
করোনার অফিস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে “১২ ডিসেম্বর, ২০১৩”কে জাহির মৃত্যুদিবস ঘোষণা করে ডেথ সার্টিফিকেট লিখা হয় এবং অটোপসি করার জন্য সুপারিশ করা হয়।সেইসাথে সরকারী খাতাতেও জাহি ম্যাকমেথের নাম মৃতের তালিকায় উঠানো হয়।
২০১৪ সালের অক্টোবরের দিকে জাহির আইনজীবী ক্রিস্টোফার ডোলান এক প্রেস কনফারেন্সে জাহির কিছু ধারণকৃত ভিডিও দৃশ্য দেখিয়ে ঘোষণা করেন, জাহির সাম্প্রতিক মেডিক্যাল পরীক্ষায় জাহির শরীরে রক্তপ্রবাহ এবং মস্তিষ্কে তড়িৎক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে আর সে তার মায়ের নির্দেশে সংবেদনশীলতাও প্রদর্শন করছে যার একটাই মানে আর সেটা খুব স্পষ্ট -“Jahi McMath is NOT dead”।
২০১৫ সালের মার্চে ম্যাকমেথ পরিবার ওকল্যান্ড শিশু হাসপাতাল আর ডা. ফ্রেডরিক রোসেন যে জাহির টনসিল সার্জারি করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন।
শুরু হয় দীর্ঘ সময়ব্যাপী এক বিশাল আইনি যুক্তিতর্কের লড়াই।মামলা চলতেই থাকে, চলতেই থাকে।
২০১৪ সালের অক্টোবরের দিকে জাহির আইনজীবী ক্রিস্টোফার ডোলান এক প্রেস কনফারেন্সে জাহির কিছু ধারণকৃত ভিডিও দৃশ্য দেখিয়ে ঘোষণা করেন, জাহির সাম্প্রতিক মেডিক্যাল পরীক্ষায় জাহির শরীরে রক্তপ্রবাহ এবং মস্তিষ্কে তড়িৎক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে আর সে তার মায়ের নির্দেশে সংবেদনশীলতাও প্রদর্শন করছে যার একটাই মানে আর সেটা খুব স্পষ্ট -“Jahi McMath is NOT dead”।
২০১৫ সালের মার্চে ম্যাকমেথ পরিবার ওকল্যান্ড শিশু হাসপাতাল আর ডা. ফ্রেডরিক রোসেন যে জাহির টনসিল সার্জারি করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন।
শুরু হয় দীর্ঘ সময়ব্যাপী এক বিশাল আইনি যুক্তিতর্কের লড়াই।মামলা চলতেই থাকে, চলতেই থাকে।
মামলা চলতে থাকুক,
চলুন একটু অন্যদিকে ফিরি। ইংল্যান্ডে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে এক মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী স্টিভেন থরপ সাংঘাতিকভাবে আহত হন আর ১৮ বছর বয়সী বন্ধু মারাই যান। হাসপাতালে নেয়ার পর থরপ গভীর কোমায় চলে যান এবং ২ দিন হাসপাতালে থাকার পর একপর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষ ার পর তাকে ব্রেইন ডেড ঘোষণা করে। একজন নয়, বরং একে একে আরো ৩ জন মিলে মোট ৪ জন ডাক্তার থরপকে ব্রেইন ডেড বলে আর তার বাবা-মার কাছে তারা স্টিভেনের লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার অনুমতি চায় আর “অরগ্যান ডোনেশন” এর ব্যাপারে কথা বলে। কিন্তু বেঁকে বসেন থরপের বাবা। তিনি জানান- কস্মিনকালেও তিনি স্টিভেনের অঙ্গদানে অনুমতি দিবেন না আর লাইফ সাপোর্টও খুলতে দিবেন না কারণ তার ছেলে মৃত নয়, জীবিত। অবশেষে থরপের বাবার কথাই সত্যি প্রমাণিত হয়। ২ সপ্তাহ ধরে চেষ্টার পর চেতনা ফেরে স্টিভেন থরপের এবং সাত সপ্তাহের মাঝেই পুরো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান থ্রপ!!!
তারমানে ব্রেইন ডেড মানেই ডেড নাহ?!! ব্রেইন ডেড থেকেও কেউ বেঁচে উঠতে পারে!!! সমালোচকরা এর জবাবে বলেছেন- ডাক্তাররা স্টিভেনের কোমা নির্ণয়ে ভুল করেছেন আর তাকে ব্রেইন ডেড বলেছেন। আসলে স্টিভেন কোমায় ছিল, ব্রেইন ডেড ছিল না। কিন্তু খটকা তো লাগেই- চার চারজন ডাক্তার কি তবে ভুল করল না টাকার লোভে...?
চলুন একটু অন্যদিকে ফিরি। ইংল্যান্ডে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে এক মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী স্টিভেন থরপ সাংঘাতিকভাবে আহত হন আর ১৮ বছর বয়সী বন্ধু মারাই যান। হাসপাতালে নেয়ার পর থরপ গভীর কোমায় চলে যান এবং ২ দিন হাসপাতালে থাকার পর একপর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষ
তারমানে ব্রেইন ডেড মানেই ডেড নাহ?!! ব্রেইন ডেড থেকেও কেউ বেঁচে উঠতে পারে!!! সমালোচকরা এর জবাবে বলেছেন- ডাক্তাররা স্টিভেনের কোমা নির্ণয়ে ভুল করেছেন আর তাকে ব্রেইন ডেড বলেছেন। আসলে স্টিভেন কোমায় ছিল, ব্রেইন ডেড ছিল না। কিন্তু খটকা তো লাগেই- চার চারজন ডাক্তার কি তবে ভুল করল না টাকার লোভে...?
স্টিভেনের ব্রেইন ডেথ না হয় সংশয়ে ঘেরা কিন্তু জাহির ব্রেইন ডেথ তো আর নয়। জাহি ম্যাকমেথ প্রকৃতই ব্রেইন ডেড। কিন্তু তার মা দাবী করছেন দিনে দিনে অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে জাহির।
কিন্তু স্রষ্টা, আত্মা ও পরকালে অবিশ্বাসী ড. সুসান ব্ল্যাকমোর এর কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন- “Yeah, she’s getting better only after death”
কিন্তু স্রষ্টা, আত্মা ও পরকালে অবিশ্বাসী ড. সুসান ব্ল্যাকমোর এর কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন- “Yeah, she’s getting better only after death”
সুসানের সাথে সুর মিলিয়েছেন অন্যান্য অনেক নিউরোসার্জন, চিকিৎসক, গবেষক আর অরগ্যান ডোনেশনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গরা। এর কারণটাও যথেষ্ট বোধগম্য। কারণ জাহি ম্যাকমেথ এর চেতনা যদি কিয়দাংশও ফিরে আসে কিংবা তার মস্তিষ্কে যদি সত্যই যৎকিঞ্চিত ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটিও পাওয়া যায়, তবে তা যে মৃত্যুর সংজ্ঞাকেই পুরো বদলে দিবে তা নয়, বরং সেই ১৯৬৮ সাল থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো ব্রেইন ডেড কেস রয়েছে সবগুলো হয়ে যাবে মার্ডার আর অঙ্গ দান প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলে পরবে কুঠারাঘাত। প্রমাণিত হয়ে যাবে, আত্মার অস্তিত্ব আছে!!!
এখন সুস্পষ্ট প্রশ্নটাই সামনে চলে আসে। কে জয়ী হবে- যুক্তি নাকি বিশ্বাস?
জাহি ম্যাকমেথ কি সত্যই জেগে উঠবে?
এর উত্তরের অপেক্ষায় অপেক্ষা করছে জাহির বাবা-মা। সঙ্গে গোটা পৃথিবীর সব ডাক্তার, চিকিৎসক আর গবেষকরা।
জাহি ম্যাকমেথ কি সত্যই জেগে উঠবে?
এর উত্তরের অপেক্ষায় অপেক্ষা করছে জাহির বাবা-মা। সঙ্গে গোটা পৃথিবীর সব ডাক্তার, চিকিৎসক আর গবেষকরা।
[তবে একটা বিষয় কিন্তু ইতিমধ্যে সবাইকে ভাবাচ্ছে। এই পোস্ট লেখা অবধি এখনো জাহির হৃৎপিণ্ড চলছে অবিরত, কোন যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই।ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞনীদের যে, ব্রেইন ডেথ অর্থাৎ মৃত্যুর কতদিন (এক্ষেত্রে কত বছর) পর্যন্ত হৃৎপিণ্ড ঢিবঢিব করেই যেতে পারে?! ]
Writer: Md. Tariqul Islam Rasel