বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

ব্যাকরণ সত্যিই অনেক মজার। এটাকে ভাংলেই দেখো এর অর্থ পাওয়া যাবে ৷ব্যাকরণ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- বি+আ+কৃ+অন = ব্যাকরণ।
বুঝেছো। তাহলে নিচে যাও -

আচ্ছা, জানো ব্যাকরণ কি?
তোমরা তো নবম-দশম শ্রেণির বাংলা গ্রামার বইকে ধ্যান-জ্ঞান মানো, তাই না? তো ওখানে মুনীর চৌধুরী সাহেব বলেছেন -
"যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।"

তাহলে কি বলতে পারি -
যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।
হ্যাঁ, এক্সাটলি তাই বলা যায়।

ধরো, তোমাকে আমি ব্যাকরণ নামের কোনো একটা বস্তু দিলাম। তো তুমি কি না পরখ করে এটাকে মেনে নিবা? কখনোই না । যদি তোমার কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়,তবেই নিবা। এর জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য দরকার। যেমনঃ ভর,ওজন ইত্যাদি। তেমনি ব্যকরণের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেটা বলে দেয় গ্রামার বা ব্যাকরণ আসলে কি।তো চলো দেখি সেসব কি -

প্রতিটি ভাষারই ৪টি মৌলিক অংশ থাকে- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। আর তাই সব ভাষার ব্যাকরণই প্রধানত এই ৪টি অংশ নিয়েই আলোচনা করে।
অর্থাৎ, ব্যাকরণের বা বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয়/ অংশ ৪টি।এই বিষয় গুলো বলে দেয় এটি গ্রামার বা ব্যাকরণ।

১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)
--------------------------------
কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো সেই ভাষার ধ্বনি। ধ্বনি ভাষার মূল উপাদান।
এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা হয় যেমন-
ধ্বনির উচ্চারণবিধি
ধ্বনি পরিবর্তন
সন্ধি/ধ্বনিসংযোগ (সন্ধি ধ্বনির মিলন। তাই এটি ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়।)
ণত্ব ও ষত্ব বিধান।
অর্থাৎ, ধ্বনি দ্বারা যা পাও।

২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology)
শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় রূপ বা morpheme। রূপ শব্দের ক্ষুদ্রতম একক। এই রূপ বা morpheme থেকেই শব্দতত্ত্বের নাম হয়েছে রূপতত্ত্ব বা Morphology।
এখানে আলোচনা করা হয় -

সমাস (সমাস শব্দের মিলন। তাই এটি শব্দতত্ত্বে আলোচিত হয়।),

প্রকৃতি-প্রত্যয় (প্রকৃতি-প্রত্যয় শব্দ নিয়ে কাজ করে। মনে রাখা দরকার, প্রকৃতি মাত্রই প্রাতিপদিক বা ক্রিয়াপদ, অর্থাৎ স্বাধীন শব্দ।)

উপসর্গ (উপসর্গ নিজে শব্দ না হলেও শব্দ ছাড়া এর কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু উপসর্গ নতুন শব্দ তৈরির একটি উল্লেখযোগ্য হাতিয়ারও বটে।)

বচন
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
দ্বিরুক্ত শব্দ
সংখ্যাবাচক শব্দ
পদাশ্রিত নির্দেশক
ধাতু
কারক ও বিভক্তি।
খুবই খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। ।

৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax)
বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax)
(বাক্য সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়।)
পদ প্রকরণ (শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তখনই সেটাকে পদ বলে। তাই পদ বাক্যের ও পদ প্রকরণ বাক্যতত্ত্বের অন্তর্গত।)

ক্রিয়া পদ
কাল
পুরুষ
অনুসর্গ
বাগধারা
বাচ্য
উক্তি
যতি ও ছেদ চিহ্ন (বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে যতি বা ছেদ চিহ্ন ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, এরা বাক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।)

বাক্যের প্রকারভেদ
বাক্যে পদ-সংস্থাপনার ক্রম বা পদক্রম।
দেখো একটা ম্যাজিক! " ব " দিয়ে যেসব আলোচনা, বেশিরভাগ বাক্য তত্ত্বের।
তোমাদের কষ্ট বুঝেই শর্ট করলাম।

৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics)
(অর্থ সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়।)
শব্দের অর্থবিচার,বাক্যের অর্থবিচার,অর্থের প্রকারভেদ; মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ।
-আর্থ আছে যাতে,অর্থতত্ত্ব তাতে। বুঝলা?
এছাড়াও ব্যাকরণে আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অভিধানতত্ত্ব(Lexicography), ছন্দ ও অলংকার, ইত্যাদি।
থাক, এবার শেষ করি। তবে কিছু সারপ্রাইজ তো দিতেই হবে। তাই দিলাম নাও। আর ভাইকে মনে রেখ।
------------------------------------------
SPECIAL :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্নঃ
১. ব্যাকরণ’ শব্দটি গঠিত হয়েছে: (গ-২০০৮-০৯)
২.বাগধারা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়: (গ-২০০৪-০৫)
৩.‘ব্যকরণ’ শব্দের সঠিক অর্থ হল- (গ-২০০১-০২)
আজ এ পর্যন্ত। পরে আবার কোনো পোস্টে খুঁজে পাবে আমাকে। ততদিন অপেক্ষা কর।
------------------------------------------
লেখকঃঃ আরিফ আল আমিন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এক্সেকিউটিভ,সিলসা।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form