৪০০ বছর আগে ২৪ বছর বালকের করা ছোট্ট একটা প্রশ্ন যা সমগ্র পৃথিবী আর মহাবিশ্বের সম্পূর্ণ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছিল
“A journey of a thousand miles begins with a single step”
দার্শনিকদের মাথায় সব সময় হাবিজাবি প্রশ্ন গিজ গিজ করে। তো এরিস্টটলের মাথায়ও এরকম হাজারটা প্রশ্ন ছিল যেগুলো তিনি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করারও চেষ্টা করে গেছেন। এরকম একটা প্রশ্ন ছিল- কেন বস্তু পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসে বা আকর্ষণ বোধ করে? এর উত্তরে তিনি যা বলেন তার ভাবগত অর্থ- কারণ বস্তু সব পৃথিবীর প্রেমে আবদ্ধ, তারা পৃথিবীকে ভালবাসে তাই এর আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারে না! অপর একটা প্রশ্ন ছিল এমন যে কেন গতিশীল বস্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে তার গতি হারায় বা থেমে যায়? এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, গতিশীল বস্তু ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাই তার গতি ধরে রাখতে পারে না!
এখনকার সময় এসব উত্তর শুনলে যে কেউ বলবেন, পাগল নাকি গাধা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এরিস্টটলের এসব মতামত পরবর্তী প্রায় ২ হাজার বছর পর্যন্ত চলেছে! এই সময়কালকে প্রাচীন পদার্থবিজ্ঞানের সময় ধরা হয়। আর এই সময়ের সমাপ্তি হয় একজন দরিদ্র, ২৩ বছর বয়সী যুবকের হাত ধরে।
প্রাচীনকাল থেকে মানুষের কাছে সব থেকে রহস্যময় আর বিষ্ময়ের যায়গা ছিল আকাশ, এতে থাকা বিভিন্ন তারকা, গ্রহ-উপগ্রহ, ধূমকেতু, উল্কা ইত্যাদি। এগুলো কেন ঘোরে, কাকে কেন্দ্র করে ঘোরে, কেন আলো দেয়, কেন বিভিন্ন সময় পর পর এদের দেখা মেলে, আবার হারিয়ে যায় ইত্যাদি নানা রকম প্রশ্ন ছিল সকলের মাথায় কিন্তু কেউ এগুলোর সঠিক উত্তর জানতো না। কুসংস্কারে ভরা ছিল সমাজ, ধূমকেতুর আগমন কেউ সুসংবাদের বাহক আবার কেউ বা বিপদের পূর্বাভাস হিসেবে দেখতো। ১০৬৬ সালে এমনই এক ধূমকেতুর আগমনে ইংল্যান্ডে রাজা হ্যারল্ডের পতন হয়েছিল এবং সেটা ছিল ব্রিটিশ ইতিহাসে রাজতন্ত্রের সূচনা। প্রশ্ন ছিল কি এই ধূমকেতু? কই থেকে আসলো এটা? এসে আবার কই হারিয়ে গেল? এটা কি তবে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সূচনা করতেই এসেছিল?
সেই একই ধূমকেতু আবারও দেখা যায় ইংল্যান্ডের আকাশে ১৬৮২ সালে। এবার মানুষের মধ্যে ভয় আরও বেড়ে যায়। এবার কি সংবাদ নিয়ে আসলো এই ধূমকেতু। মানুষ যখন কুসংষ্কারে ডুবে এসব প্রলাপ বকছে তখন এক যুবক সাহস করে চেষ্টা করছিল এসব কুসংষ্কার থেকে বেরিয়ে ধূমকেতুর আসল রহস্য উদ্ঘাটন করার। তার বয়স তখনও ৩০ পেরুবে না। মাত্র ২৩ বছর বয়সের আশেপাশে যখন তার বয়স, তখনকার ঘটনা। এই যুবক বয়সে তিনি এরিস্টটলের মত এক প্রশ্ন করেন নিজেকে, যে প্রশ্নের উত্তর হল সমগ্র পৃথিবী আর মকাশের রহস্য খোলার চাবি!
গল্পে আছে, তিনি উলস্থ্রপে একদিন হাঁটার সময় তার সামনে এক আপেল গাছ থেকে একটি আপেল মাটিতে পড়ে। এই ঘটনা দেখে তিনি আকাশে চাঁদের দিকে তাকান। আর প্রশ্ন করেন, আপেল যদি নিচে পরে, চাঁদও কি নিচে পড়ে? বা চাঁদ কেন পড়ে না? এই এক ছোট্ট প্রশ্নকে বলা হয় মানবজাতির ইতিহাসে করা যুগান্তকারী সব প্রশ্নগুলোর একটি, যা পৃথিবী তথা মহাবিশ্বের সকল বিজ্ঞানের নকশাই পালটে দেয়। এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছেন কার কথা বলছি। হ্যাঁ, সেই যুবক হলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। যার হাত ধরে সূচনা হয় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ।
নিউটনের সেই প্রশ্নের উত্তর তাহলে কি? চাঁদও কি নিচে পড়ে? উত্তর হল হ্যাঁ, চাঁদও নিচে পড়ে। এই ছোট প্রশ্নের এই ছোট উত্তর উত্তর হাজার বছরের পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ নিয়ে মানুষের কুসংস্কারকে ভেঙে চুড়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। আপেলের মত চাঁদও অনবরত নিচে পড়ছে, পৃথিবীর দিকে। কিন্তু এটা কখনও মাটিতে পড়েনা কারণ চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে আর এর উপর কাজ করছে এক ধরনের বল, যা একে পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষ থেকে রক্ষা করছে। এই বল হল মহাকর্ষ বল।
নিউটনের মনে এই চিন্তা আসার সাথে সাথে তিনি এটা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। সমসাময়িক গণিত দিয়ে বিভিন্নভাবে একে ব্যাখ্যা, প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। এবং তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে ১৬০০ শতাব্দির গণিত তখনও এতটা উন্নত হয়নি যে তিনি এই গণিত দিয়ে পড়ন্ত চাঁদের গতি হিসাব করতে পারবেন। সেই সময়ের গণিত ছিল স্ট্যাটিক জিওমেট্রি। মানে গতিশীল বস্তুর হিসাব খুব ভালোভাবে করা যেতো না, গতির পরিবর্তনও হিসাব করা যেতো না। তাহলে এখন নিউটন কি করবেন? গণিত নেই, গনিত দিয়ে প্রমাণ হচ্ছেনা তাই তার চিন্তাই বাদ দেবেন? হয়তো দিতে পারতেন, যদি সেটা করতেন তাহলে আমাদেরকে আজ এত কষ্ট করে স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এত কঠিন কঠিন অংক করতে হত না, তাই না? কিন্তু না, তিনি সেখানে থেমে যান নি। মাত্র ২৩ (মতান্তরে ২৪) বছর বয়সে নিউটন শুধু মহাকর্ষের ধারণা করেই ক্ষান্ত থাকেননি, বরং সমসাময়িক গণিত যখন তার ধারণা প্রমাণে ব্যার্থ তখন তিনি নিজেই গণিতের এক নতুন শাখা তৈরি করেন, শুধুমাত্র নিজের ধারণাকে প্রমাণ করার জন্য, নিজের মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করার জন্য। গণিতের এই শাখাকে এখন আমরা বলি ক্যালকুলাস।
নিউটন ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন পড়ন্ত চাঁদের গতি ব্যাখ্যা করার জন্য। কারণ তার সময়ের গণিত ইনভার্স স্কয়ার ফোর্স ফিল্ডে গতিশীল বস্তুর গতিপথ ব্যাখ্যা করতে অক্ষম ছিল। এজন্য তিনি নিজেই নিজের গণিত আবিষ্কার করে চাঁদের গতিপথের ব্যাখ্যা দেন। এরপরে তিনি অনুধাবন করেন যে যদি উনি চাঁদের গতি বুঝতে পারেন, এর মানে তিনি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের গতিও ব্যাখ্যা করতে পারবেন তার গণিত দিয়ে। সেটা বোঝার জন্য তিনি আবারও নিজে নিজের একটা রিফ্লেক্টিং টেলিস্কোপ উদ্ভাবন করেন, কারণ আবারও সেই একই, তার হাতে এমন কোন টেলিস্কোপ ছিল না যেটা দিয়ে মহাকাশ গবেষণা করা যাবে। তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি সেই ধূমকেতুর গতিপথের হিসাব করতে থাকেন। এই সময়ই চলছিল সেই গ্রেট প্লেগ, নিউটনের সময়ের লক ডাউন। এই লকডাউনে তার কাজ ছিল নিজের ধারণাকে নিজেরই আবিষ্কার করা গণিত দিয়ে প্রমাণ করা।
স্বাভাবিকভাবেই এই ধূমকেতু তখনকার সময় সকলের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। এই সবার মধ্যে একজন ধনী ইংলিশ বিজ্ঞানীও ছিলেন, তাঁর নাম এডমুন্ড হ্যালি। হ্যালি নিউটনের এই গবেষণার কথা জানতে পারে তার সাথে সাক্ষাত করেন। উনি নিউটনকে জিজ্ঞাস করেন, এই ধূমকেতুর ব্যাপারে তোমার মতামত কি? কেউ তো বুঝতেছে না কি জিনিস এটা, কিভাবে কই থেকে এলো। শত শত বছর ধরে এটা মানুষের বিষ্ময়ের কারণ হয়ে আছে। তো তুমি কি মনে কর, কি এটা?
নিউটন হেসে উত্তর দেন, এটাতো সহজ হিসাব। ওই ধূমকেতু একটা ইনভার্স স্কয়ার ফোর্সফিল্ডে পারফেক্ট উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে। আমি আমার টেলিস্কোপ দিয়ে প্রতিদিন এই ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ করছি আর এক নতুন পদ্ধতিতে এর ঘোরার পথ হিসাব করছি, আর হিসাব করে দেখেছি এর পথ আমার গণিতিক হিসাবকে সম্পূর্ণ সঠিকভাবে সমর্থন করে।
এরপরে হয়তো হ্যালি আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, বল কি, এ কি করে ফেলেছো তুমি, তুমি তোমার এই গণিত দিয়ে মহাকাশের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারো, যা এখনও সকলের জ্ঞানের পরিধির বাইরে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে সব থেকে বড় আবিষ্কার হতে পারে এটা, কেন তুমি একে পাবলিশ করছো না?
নিউটন হয়তো এরকম কিছু বলেছিলেন যে, নাহ, সেটা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমার কাছে এত অর্থ নাই যে আমি একে পাবলিশ করতে পারবো। আমার আবিষ্কার করা এই ক্যালকুলাসকে সাজিয়ে লিপিবদ্ধ করে সকল গ্রহ নক্ষত্রের হিসাব করা আমার জন্য অনেক ব্যয়বহুল একটা কাজ।
তখন হ্যালি বলেন, নিউটন শোন, আমি একজন ধনী ব্যক্তি, আর আমি সব সময় বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য কাজ করেছি। এবং বিজ্ঞানের ইতিহাসে তোমার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারকে যে কোন ভাষায় পাবলিশ করতে যত আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, আমি করবো। তুমি শুধু লিপিবদ্ধ কর।
এরপরে হ্যালির সহায়তায় নিউটন তার আবিষ্কারকে পাবলিশ করেন। এই বইয়ের নাম প্রিন্সিপিয়া বা প্রিংকিপিয়া। Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica (Latin for Mathematical Principles of Natural Philosophy). এটাকে বলা হয় সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে রচিত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগান্তকারী বইগুলোর একটি। এই বই মহাকাশ বিজ্ঞানের সূচনা করে। এই বই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা করে। বল- যা মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে, গ্রহের গতিপথকে হিসাব করা যায় যে গণিত দিয়ে, যেই গণিত সেই বলকে হিসাব করতে পারে যা প্রাসের গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করে, বল যা দ্বারা রকেট মহাকাশে যায়, পাখি আকাশে ওড়ে, নদীর পানি বয়ে চলে সবকিছু, সকল প্রকার গতির সঠিক হিসাব করার সূচনা করে এই বই। নিউটনের গতির সূত্র আর তারই আবিষ্কার করা ক্যালকুলাস দিয়ে হিসাব করা হয় জগতের প্রায় সব গতি। আজও যখন রকেট আকাশে যায়, মহাকাশে আমরা বিভিন্ন স্যাটেলাইট, রোবট পাঠাই, আমরা আইনস্টাইনের সূত্র ব্যবহার করি না (সেটা শুধু উচ্চ গতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), আমাদেরকে ৪০০ বছর আগে নিউটনের বলে যাওয়া মহাকর্ষ সূত্র আর গণিত দিয়েই কাজ করতে হয়।
গ্রহের হিসাব নিকাশ করার সূত্রের পাশাপাশি নিউটন আবিষ্কার করেন গতির ৩ সূত্র, যেই ৩ সূত্রের উপরে বলা যায় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম সূত্র বলে কোন বাহ্যিক বলের প্রভাব ছাড়া গতিশীল বস্তু চিরদিন গতিশীল এবং স্থির বস্তু চিরদিন স্থির থাকে। এরিস্টটল যেখানে বলেছিলেন গতিশীল বস্তু ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাই থেমে যায়। দ্বিতীয় সূত্র বলে F=ma. এই ৩ অক্ষরের সূত্র দিয়ে সূচনা হয় পৃথিবীতে শিল্প বিপ্লবের। যত রকমের মেশিন, ইঞ্জিন, মেকানিক্স কাজে লাগানো হয়, তার সবকিছুর মূলে আছে এই সূত্র। এই সূত্র সূচনা পৃথিবীতে যুদ্ধের ধারণা পালটে দেয়, আরও উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির মাধ্যমে। নিউটনের ৩য় সূত্র দিয়ে আজ আমরা মহাকাশ পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। রকেট, স্পেস প্রোব, ভয়েজার সব কিছুই সম্ভব হয়েছে এই সূত্রের জন্য।
নিউটন পদার্থবিজ্ঞানের সর্বপ্রথম বলের ধারণ দেন। সেখান থেকে শুরু। সেই ধারণা থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভোলিউশনের সূচনা, স্পেস রিসার্চের সূচনা। যা পৃথিবী আর মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনা পালটে দেয়, দেশের রাজনীতি পালটে দেয়, ক্ষমতার ব্যালেন্স এপার ওপার করে দেয়, শত বছর ধরে চলে আসা সামন্ত্রতন্ত্রক ে উপড়িয়ে ফেলে। বিগত হাজার বছরে পৃথিবী যতদূর না এগিয়েছে, তার সূত্র দিয়ে মাত্র কয়েক শতাবিদের মধ্যের পৃথিবী তার থেকেও বেশি এগিয়ে যায়, এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথের সূচনা হয়। আর এতকিছু সব সম্ভব হয় সেই ২৩ বছর বয়সী এক যুবকের এক ছোট্ট কৌতুহলের জন্য- চাঁদও কি নিচে পড়ে?
[মূল ন্যারেটিভঃ মিশিও কাকু]
মজার ব্যাপার হল নিউটন যে বয়সে আর যে গতিতে তার ক্যালকুলাস ডেভেলপ করেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের সেই একই বয়সে, একই গতিতে ক্যালকুলাস শেখানো হয়। অবশ্য অনেক দেশে তার আগেও শিখিয়ে ফেলে, যেমন আমাদের দেশে কলেজ লেভেলেই নিউটনের ক্যালকুলাস শেখানো হয়। আর গল্পটা আমার কাছে অনেক ইন্সপায়রেশনাল মনে হল তাই লিখা। ইন্সপায়রেশন, মোটিভেশন একটা রুট লেভেলের জিনিস যেগুলোর প্রতি পদে দরকার হয়। কিন্তু আমাদের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় এই জিনিসটার উপরে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়না। না এসব গল্প বলা হয়, না এসবের অতীত-বর্তমান-ভব িষ্যতের ছবি দেখানো হয়। শুধু গেলানো হয়, খিচুড়ি বানিয়ে।
এই লকডাউনে সোশাল মিডিয়ায় একটা ছবি খুব বেশি লক্ষ্য করলাম যে নিউটন তার সময়ের লকডাউনে বসে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু দেখলাম এই গল্পের ডিটেইলস আর কেউ কোথাও লিখেনাই। লকডাউনে বসে বসে কি হঠাৎই নিউটনের মাথায় ক্যালকুলাসের মত একটা জিনিসের আইডিয়া এসেছিল? এই ছবিটাকে অনেকে ট্রল হিসেবেও ব্যবহার করেছেন যে নিউটন লকডাউনে সেই গণিত আবিষ্কার করেছিলেন আর এই করোনার লকডাউনে আমরা কে কি করছি। কিন্তু আমার মতে মহত্ব আবিষ্কারের সাথে সাথে এই আবিষ্কারের পেছনের কারণটারও। He did this because he had to, he had a reason to and because he had no other choice. আমাদের কাছে যদি কোন কারণ, কোন ইন্সপায়রেশনই না থাকে, মুক্তভাবে, ভিন্নভাবে চিন্তা করাই যদি আমাদেরকে না শেখানো হয় তাহলে নতুন কিছু কিভাবে সম্ভব?
তো গল্পটা বলার উদ্দেশ্য সেই প্লেগের ছবিকে ব্যাখ্যা করা না। এই গল্প ক্যালকুলাস আবিষ্কারেরও না। এই গল্প সেই আবিষ্কারের পেছনের ইন্ধনের, সেই কারণের যেটা নিউটনকে এক রকম বাধ্য করেছিল সব পথ এড়িয়ে নিজের নতুন পথ খুঁজে বের করার। এই গল্প ২৩ বছর বয়সের এক যুবকের সাহস আর ডেস্পারেশনের। এই গল্প সেই ধূমকেতুর, যেটা দেখা না দিলে হয়তো এত কৌতুহলের সূচনা হত না। আর এই গল্প একটা ছোট্ট প্রশ্নের, যে প্রশ্নটা সেদিন তার মাথায় না এলে পৃথিবী হয়তো আরও শত শত বছর পিছিয়ে যেতো।
এই গল্পে যে ধূমকেতু আসার কথা বলা হল সেটাই আসলে হ্যালির ধূমকেতু। এই ধূমকেতুর হিসাব নিকাশ নিউটন শুরু করলেও নিউটন তার হিসাব ছিল অসম্পূর্ণ। সেই সময় ধূমকেতু পর পর দুই বছর, ১৬৮০ এবং ১৬৮১ সালে দেখা গিয়েছিল। নিউটন বলেছিলেন এই দুই ধূমকেতু আসলে একই, একটা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার আগে আর একটা পরে। কিন্তু তিনি প্রিন্সিপিয়ায় তার মডেলে এই ধূমকেতুর হিসাব সম্পূর্ণভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারেননি। পরবর্তিতে নিউটনের এই ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়। ১৭০৫ সালে এডমুন্ড হ্যালি নিউটনেরই আবিষ্কার করা সব সূত্র ব্যবহার করে এই ধূমকেতুর সম্পূর্ণ অরবিট ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন। এজন্য একে হ্যালির ধূমকেতু বলা হয়। নিউটনের সময় এই ধূমকেতুর প্রথম দর্শন মানে ১৬৮০ সালের আগমনকে বলা হয় গ্রেট কমেট অফ ১৬৮০ বা নিউটনের ধূমকেতু। এর কোডনেম হল Komet C/1680 V1 এবং একে Kirch’s comet – ও বলা হয় কারণ Gottfried Kirch ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি টেলিস্কোপ দিয়ে এই ধূমকেতু আবিষ্কার করেন। সে হিসেবে টেলিস্কোপ দিয়ে আবিষ্কৃত প্রথম ধূমকেতুও এটা। এটা ছিল সপ্তদশ শতাব্দির সবথেকে উজ্জ্বল ধূমকেতু যা দিনের বেলায়ও খালি চোখে পরিষ্কার দেখা যেতো।
যাইহোক, তো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল প্রশ্ন করা। প্রশ্ন করতে শেখা। সেটা যত পাগল, উলটাপালটা আর যাই হোক না কেন। পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না। That's why I like questions. Especially questions that start with what, why, or how. Because these simple 'wh' questions have the potential of changing the world. All the exciting things in the world started with these 'wh' words. Civilization is driven by these 'wh' words. So be curious to discover a question and courageous to find an answer, and do not stop until you find it.
“People of accomplishment rarely sat back and let things happen to them. They went out and happened to things”
Writer: Omar Khalid Shohag
Tags:
পদার্থবিজ্ঞান